বিশাল আয়তনের শিলাখণ্ড পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে গেল

লিখেছেন লিখেছেন শরীফযিকাওসার ২০ মার্চ, ২০১৩, ১২:০৮:০২ দুপুর



পৃথিবীর কক্ষপথের খুব কাছ থেকে অতিক্রম করে গেল ১৫০ ফুট ব্যাসের অর্থাত্ ফুটবল মাঠের অর্ধেক আয়তনের একটি শিলাখণ্ড। শনিবার ভোর ৩টা ২৪ মিনিটে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মাইল দূরত্বে পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করে ‘১৯১২ডিএ১৪’ নামের এই শিলাখণ্ডটি। নাসার বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, পৃথিবীতে আঘাত করেনি কিন্তু এ থেকে অতিক্রম করা শিলাখণ্ডের মধ্যে এটিই সর্ববৃহত্। পৃথিবীর সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ এই শিলাখণ্ডটির ন্যূনতম দূরত্ব আনুপাতিক হারে দু’টি উড়ন্ত বাণিজ্যিক বিমানের আকাশে ১৫০ ফুট দূরত্বে ভ্রমণের মতো, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ‘ডিএ১৪’ নামের একটি শিলাখণ্ড ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত করলে হিরোশিমায় ব্যবহৃত আণবিক বোমার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। ১০৫ বছর আগে ৩০০ ফুট ব্যাসের একটি শিলাখণ্ড ভূ-পৃষ্ঠের সাইবেরিয়া অঞ্চলের তাঙ্গুস্কা নদীর উপর আছড়ে পড়েছিল। জনবসতি না থাকায় খুব বেশি প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও কয়েক হাজার বর্গমাইল এলাকার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া সাত কোটি ৫০ লাখ বছর আগে আনুমানিক ১০ কিলোমিটার ব্যাসের একটি শিলাখণ্ড আঘাত করলে ডাইনোসর জাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ‘ডিএ১৪’ নামের শিলাখণ্ড সাধারণত কয়েকশ’ বছরের ব্যবধানে ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত করে। তবে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস মতে, পৃথিবীর সঙ্গে এ ধরনের শিলাখণ্ডের সংঘর্ষ আগামী একশ’ বছরের মধ্যে সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

১০০ ফুটের বেশি ব্যাসের অযুত শিলাখণ্ড মহাকাশে প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছে। উদ্বেগের কারণ হলো পৃথিবীর খুব কাছে বিপজ্জনক দূরত্বে এসে গেলেই কেবল এদের শনাক্ত করা সম্ভব। যেমন কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে ‘ডিএ১৪’ প্রতি ১০০ বছরে একবার পৃথিবীর কক্ষপথ ভেদ করছে। কিন্তু এগুলো আবিষ্কার হয়েছে এক বছরেরও কিছু কম সময় আগে। ভূ-পৃষ্ঠের টেলিস্কোপ শুধু রাতে মহাকাশের এসব শিলাখণ্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। দিনের আলোয় সূর্যের দিক থেকে ছুটে আসা কোনো বস্তু শনাক্ত করা টেলিস্কোপের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া আজ পর্যন্ত পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের কোনো স্থাপনাও নেই। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল অনেক।

‘ডিএ১৪’ আবিষ্কারের ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ। গত বছর ফেব্রুয়ারির কোনো এক রাতে একজন তরুণ চিকিত্সক নৌকায় স্পেনের ভূমধ্যসাগর উপকূলে ভ্রমণের সময় তার ল্যাপটপে রাতের আকাশের একটি উজ্জ্বল আলো ধরা পড়ে। তিনি তত্ক্ষণাত্ ম্যাসাচুসেটসের একটি মহাশূন্য ও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রকে জানিয়ে দেন। মহাকাশের এই আলোকোজ্জ্বল বস্তুটিই ছিল ‘ডিএ১৪’। এদিকে একটি গ্রহাণুপিণ্ডের পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে যাওয়া ও একই দিন রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলে উল্কাপাতের ঘটনা দুটি পরস্পর সম্পর্কিত নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একই দিন এ ধরনের দুটি ঘটনার সম্মিলনকে কাকতালীয় বলে উল্লেখ করে এটিকে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখছেন তারা। উল্কা বলে চিহ্নিত ওই ছোট বস্তুটি রাশিয়ার আকাশে ঢোকার সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কয়েকটি শহরের ঘরবাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে ছিটকে অন্তত ১২শ’ লোক আহত হয়।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোরে রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় শহর চেলিয়াবিনস্কে পড়া মহাশূন্য বস্তুটির গতি ও গ্রহাণুপিণ্ডটির (ডিএ১৪) গতি আলাদা এবং বস্তু দুটি আলাদা দিক থেকে এসেছে। চেলিয়াবিনস্কে পড়া বস্তুটি প্রায় ১৫ মিটারের একটি ছোট গ্রহাণু। এর ভর প্রায় ৭ হাজার টন এবং এটি সেকেন্ডে ১৮ কিলোমিটার বেগে রাশিয়ার আকাশে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছে নাসা। আর গ্রহাণুপিণ্ড ডিএ১৪ প্রতি সেকেন্ডে ১৩ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে যায়। এর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটলে ২৪ লাখ টন ডিনামাইটের সমপরিমাণ বিস্ফোরণ ঘটত যা কয়েকশ’ হিরোশিমা ধরনের পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সমান। ‘এটি নিছক একটি কাকতালীয় ঘটনা,’ বলেন পল। পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা ১ কিলোমিটার ও তার চেয়ে বড় মহাশূন্য বস্তুগুলো চিহ্নিত করার জন্য নাসাকে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস। নির্দেশ অনুসরণ করে কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতুর বেগ পৃথিবীমুখী কিনা তা খতিয়ে দেখছেন নাসার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। এই অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য, এ

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File