আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ

লিখেছেন লিখেছেন নেহাল ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩৩:১৭ রাত

মুল: শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে আব্দুল হালীম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)

অনুবাদ: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ভূমিকা

{আলোচ্য ভূমিকাটি ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা’ কর্তৃক উপস্থাপিত}

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাচ্ছি। আর তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদের মন্দ কৃতকর্ম, এবং আত্মার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় নিচ্ছি, আল্লাহ তা'আলা যাকে হিদায়াত করেন তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়াত করার কেউ নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, আর ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার ব্যাপারটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়। পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা রাখেনা। ফলে আমরা আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি, যে সাহায্য করার কথা তিনি কুরআনে তাঁর কাছে আশ্রয় কামনা এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করার শর্তে ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ বলেন : (আর মু'মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব)। {সূরা আর-রূম: ৪৭} (যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পদযুগলে স্থিতি দিবেন)। {সূরা মুহাম্মাদ: ৭}

(আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সম্মান, আর তাঁর রাসূলের জন্য, এবং মু'মিনদের জন্য)। {সূরা আল-মুনাফিকূন: ৮}

(তোমরা দুর্বল হয়োনা, এবং তোমরা চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও)। {সূরা আলে-ইমরান: ১৩৯}

সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে মাধ্যম বলতে কি বুঝায়, এ ব্যাপারে মানুষ তিনটি দলে বিভক্তঃ

একঃ একদল হচ্ছে তারা যারা শরীয়ত প্রণেতা হিসাবে প্রেরিত একমাত্র মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মানতে নারাজ, বরং তারা দাবী করছে, - আর কত জঘন্যই না তাদের এ দাবী - যে, শরীয়ত শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য, উপরন্ত তারা এ শরীয়ত কে "ইলমে জাহীর" বা প্রকাশ্য বিদ্যা হিসাবে নামকরণ করেছে, তারা তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে কতেক বাজে চিন্তা-ধারণা ও কুসংস্কারকে গ্রহণ করে "ইলমে বাতেন" বা গোপন বিদ্যা নামে চালু করেছে, আর এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তার নাম দিয়েছে (কাশ্ফ)। মূলত তাদের এই কাশ্ফ ইবলীশি কুমন্ত্রণা আর শয়তানী মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয়, কারণ এটা ইসলামের সাধারণ মুলনীতির পরিপন্থী, এ ব্যাপারে তাদের দলগত শ্লোগান হলোঃ এ কথা (আমার মন আমার রব থেকে সরাসরি বর্ণনা করেছে)।

এতে করে তারা শরীয়তের আলেমদের সাথে ঠাট্টা করছে, এবং এ বলে দোষ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বিদ্যা অর্জন করছ ধারাবাহিক ভাবে মৃতদের থেকে আর তারা তাদের বিদ্যা সরাসরি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী রব এর কাছ থেকে অর্জন করছে।

এ সমস্ত কথা দ্বারা তারা অনেক সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের পথভ্রষ্ট করছে। আর শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেক কাজ তারা এভাবে জায়েয করেছে যার বিবরণ তাদের কুসংস্কারপূর্ণ বই গুলিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলে এ ব্যবস্থার অবসান কল্পে আলেমগণ তাদেরকে কাফের এবং ধর্ম বিচু্যতির কারণে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ তারা জানতনা বা জেনেও না জানার ভান করত যে, ইসলামের প্রথম মূলনীতি হলোঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবতীর্ণ পদ্ধতির বাইরে কেউ আল্লাহর ইবাদাত করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে; কেননা আল্লাহ বলেন: (সুতরাং তারা যা বলছে তা নয় বরং আপনার রবের শপথ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার মাঝে বিচারক মানবেনা অতঃপর তাদের অন্তরে আপনার ফয়সালার ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্বের অস্তিত্ব থাকবেনা, এবং পরিপুর্ণভাবে তা মেনে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবেনা)। {সূরা আন্-নিসা: ৬৫}

আর এভাবেই শরীয়তের ইলমের বিরোধীতা ও তার আলোকে নির্বাপিত করার কাজ শয়তান তাদের মনে সৌন্দর্য মন্ডিত করে দেখায়। ফলে তারা নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা তাদের যে চিত্র অংকন করেছেন তা তাদের ক্ষেত্রে সঠিক বলে প্রতিয়মান হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন : (বলুন: আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো ঐ সব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা)। {সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৫}

এ গ্রুপ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ তারা সহজ সরল পথ থেকে দূরে সরে গেছে, যে পথ ছিল আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথ, অভিশপ্ত বা পথহারাদের পথ নয়।

তাদের সমস্ত গ্রুপই জাহান্নামে যাবে, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: (আমার উম্মত তিয়াত্তর ফেরকা বা গ্রুপে বিভক্ত হবে, বাহাত্তরটি জাহান্নামে আর একটি জান্নাতে যাবে - যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছি, তার উপর থাকবে)। হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি সবাই আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।

দুইঃ যারা মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে, আর মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে এর উপর এমন কিছু জিনিস চাপিয়েছে, যা চাপানো কক্ষনো জায়েয নয়।

তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবী ও নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে এমনভাবে মাধ্যম মানতে শুরু করেছে যে তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলা কারো কোন আমল এদের মাধ্যম হয়ে না আসলে কবুল করবেননা; কারণ এরাই হচ্ছে তার কাছে যাওয়ার অসীলা। (নাউজুবিল্লাহ)। এতে করে তারা আল্লাহ তা'আলাকে এমন সব অত্যাচারী বাদশাহদের বিশেষণে বিশেষিত করেছে যারা তাদের প্রাসাদে প্রচুর দারোয়ান নিযুক্ত করে রেখেছে যাতে করে কোন শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে পৌঁছা কক্ষনো সম্ভব হয়ে উঠেনা।

অথচ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন: (যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন (বলুন) আমি নিকটে, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, সুতরাং তারা যেন আমার হুকুম মেনে নেয় এবং আমার উপরই ঈমান আনে যাতে করে তারা সৎপথ লাভ করে) আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর সাথে পূর্ব বর্ণিত লোকদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু?

এ আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা। দৃশ্যনীয় যে, এ আয়াতে ইবাদতের কথা ঈমানের পূর্বে উল্লেখ করে নেক আমল বা সৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে; কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার জান্নাত হাসিলের জন্য এটা প্রধান শর্ত।

আল্লাহ তা'আলা কুরআনে অসীলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন কারণ এটা (অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার রহমতের দরজা খুলতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। তাই বলছেনঃ (হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসীলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য) অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।) {সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৫}

নেককার বান্দাদেরকে যারা অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এমন মুর্খ, চেতনাহীন লোকদেরকে আল্লাহ তা'আলা পরিহাস করেছেন কারণ তারা নেককার বান্দাদেরকে অসীলা বানাচ্ছে, অথচ নেককার বান্দারা নিজেরাই এই অসীলা তথা আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী।

আর এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের দ্বিতীয় কোন পথ নেই, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন: (তারা যাদের আহবান করছে তারা নিজেরাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা খুঁজছে। তারা তার রহমতের আশা করছে, তার শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয়ই আপনার প্রভুর শাস্তি ভীতিপ্রদ)। {সূরা আল-ইসরা: ৫৭}

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এ সমস্ত অমনযোগী লোকেরা যাদেরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার উপর ভরসা করে থাকার ফলে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকছে, খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হয়েছে। তারা ভুলে গেছে বা ভুলে থাকার ভান করছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে - যিনি সমস্ত মানব সন্তানের নেতা - তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ (বলুনঃ আমি আমার নিজের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখিনা)। {সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৮}

অনুরুপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ (হে ফাতিমা ! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা )। {বুখারী ও মুসলিম}

তিনি আরো বলেন : (যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবলমাত্র তিনটি আমল ব্যতীত...)। {মুসলিম}

যদি নবীগণ ও নেক্কার লোকদের ব্যক্তিসত্তার অসীলা গ্রহণ জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল না থাকত, বরং আমাদের সামনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) এর সেই ঘটনাটিই শুধু থাকত, যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃতু্যর পর তাঁর অসীলা বাদ দিয়ে তার চাচা আব্বাসের দুআ'র শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তবে অসীলাবাদী এ দলের মুলোৎপাটনে তাই যথেষ্ট হত।

ইমাম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) কতই না সুন্দর বলেছেন: "আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর মাধ্যমে কিছু চাওয়াকে হারাম মনে করি" দুররে মুখতার ও হানাফীদের অন্যান্য কিতাবে তা ইমাম সাহেব থেকে বর্ণিত আছে। যদি ব্যক্তি স্বত্বা দ্বারা অসীলা দেয়া জায়েজ হতো, তবে কুরআন ও হাদীসের যাবতীয় দুআ' যার সংখ্যা অগণিত তা ব্যক্তি সত্তার অসীলা দিয়েই আসত। (কিন্তু তার একটিও সেভাবে আসেনি)।

তিনঃ যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম বলতে বুঝেছেন সেই রিসালাতকে যার মানে হলো দ্বীন প্রচার, শিক্ষাদান ও দ্বীনের প্রশিক্ষণ। তারা এই রিসালাতের উচ্চ মর্যাদা এবং এর প্রতি মানব জাতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। ফলে তারা শরয়ী বিধান লাভের উদ্দেশ্যে এবং ঐশী বাণী বা ওহীর আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বড় মাধ্যম এবং বৃহৎ অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যেমনিভাবে তারা কুরআন অধ্যয়ন করছেন তেমনিভাবে তারা রাসূলের পবিত্র জিবনী ও তার সুন্নাত অধ্যয়ন করছেন। এতে তাদের শ্লোগান হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ (নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে নূর এবং সুস্পষট গ্রন্থ এসেছে, এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষটির পিছনে ধাবিত হয় আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত প্রদান করেন, আর তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান, এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেন )। {সূরা আল-মায়িদাহ্: ১৫, ১৬}

এরাই হলো মুক্তি প্রাপ্ত দল যাদের কথা পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এবং তাদেরকেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়: এ গ্রুপের পথ বিপদসংকুল, কন্টকাকীর্ণ। কেননা সত্যিকার ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মুসলমান এর থেকে অনেক দুরে সরে গেছে। তারা এ দ্বীনকে বিদআ'ত ও মনগড়া রসম রেওয়াজে পরিবর্তন করেছে।

এই রোগ অতি পুরাতন, এ ব্যাপারে সংস্কারকদের ভুমিকা খুব ভয়াবহ ও কষ্টসাধ্য।

উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন (আমরা এমন কাজ সংসকার করতে চেষ্টা করছি যাতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারী নেই, যে কাজ করতে গিয়ে বৃদ্ধরা তাদের জীবন শেষ করেছে, আর ছোট ছোট ছেলেরা যুবক হতে চলেছে, বেদুঈনগণ তাদের বাস্তু ত্যাগ করে চলে গেছে। তারা এটাকে দ্বীন (ধর্ম) মনে করেছে অথচ এটা আল্লাহর কাছে দ্বীন বলে সাব্যস্ত নয়।)

অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনের এ করুণ দৃশ্যের কথা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন (ইসলাম অপরিচিত হিসাবে শুরু হয়েছে। যেভাবে তা শুরু হয়েছিল সেভাবে আবার (অপরিচিত) অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং গরীব (এই অপরিচিত) দের জন্যই সুসংবাদ) হাদীসটি মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু)থেকে বর্ণিত।

অপর বর্ণনায় এসেছে (বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল এই গরীব (অপরিচিত) রা কারা? বললেনঃ বিভিন্ন গোত্র থেকে উত্থিত বিক্ষিপ্ত কতক ব্যক্তিবর্গ) আহমাদ, ইবনে মাজা।

তিরমিযির এক (হাছান) বর্ণনায় এসেছে (এই গরীবদের জন্য সুখবর যারা আমার সুন্নাতের যে অংশ মানুষ নষ্ট করেছে তা পূণঃ সংস্কার করে চালু করেছে)।

মুসনাদে আহমাদে অপর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে (এই গরীব (অপরিচিত) গণ হলোঃ অনেক খারাপ লোকের মাঝখানে এমন কিছু ভাল লোক, যাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধীরাই হবে বেশী)।

সুতরাং এ গ্রুপকেই সংসকার কাজে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কারের আলোতে মুসলমানদের জাগিয়ে পুনরায় সঠিক ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর বিরোধীতা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আমরা তাই বলব যা আল্লাহ তা'আলা তাদের পূর্বসুরীদেরকে বলেছেনঃ (আমাদের কি হলো যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করবনা অথচ তিনি আমাদেরকে যাবতীয় পথের দিশা দিয়েছেন? আর আমরা তোমাদের শত আঘাতের বিপরীতে ধৈর্য্য ধারণ করবো, ভরসাকারীগণ যেন শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করেন)। {সূরা ইব্রাহীম: ১২}

এবার আমরা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) এর কথায় এসে পৌছেছি, যিনি তার এই মুল্যবান প্রবন্ধে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানা সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করবেন। প্রত্যেক মুসলমানকে এটা বুঝা, এবং এর আলোচনা করার আজ বড়ই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

আল্লাহ আমাদের নেতা যাবতীয় কল্যাণের পথ-প্রদর্শক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠ করুন। অনুরূপভাবে তার যাবতীয় পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের উপরও। আমাদের সর্বশেষ দোআ' হলো: সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

(বলুনঃ আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা, সালাম তার মনোনীত বান্দাদের প্রতি, আল্লাহ তা'আলা কি শ্রেষ্ঠ, না সে সব সত্বা যাদেরকে তারা তার সাথে শরীক সাব্যস্ত করছে?)। {সূরা আন্-নমল: ৫৯}

আলোচ্য প্রবন্ধে এমন দুইজন লোকের বিতর্ক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যাদের একজন বলেছেঃ আমাদের এবং আল্লাহর মাঝে মাধ্যম মানা অবশ্যম্ভাবী, কারণ আমরা এ ছাড়া আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পারবনা। এ বক্তব্যের উত্তর হিসাবে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিচের বিশদ আলোচনাটি পেশ করেন।

রাসূলগণ দ্বীন প্রচার ও দাওয়াতের মাধ্যম

সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

যদি ঐ লোকটি যে বলেছে "আমাদেরকে অবশ্যই মাধ্যম মানতে হবে", এ কথা দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নেয় যে, আমাদেরকে অবশ্যই এমন মাধ্যম ধরতে হবে যারা আমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন প্রচার করবে তাহলে তার একথা হক ও যথার্থ। কেননা সৃষ্টি জগত আল্লাহ তা'আলার সন্তুুষ্টি ও ভালবাসা, তার আদেশ, নির্দেশ তার অলীদের জন্য যে সম্মান এবং তার শত্রুদের জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করেছেন, তা উপলব্ধি করতে অক্ষম, একইভাবে তারা এও জানেনা যে আল্লাহ তা'আলার কি কি ভাল নাম ও মহৎ গুণাবলী থাকতে পারে, যে গুলোর গূঢ় রহস্য বিবেক নির্ধারণ করতে অপারগ। এ সমস্ত ক্ষেত্রে অবশ্যই মাধ্যম হিসাবে আল্লাহর প্রেরিত রাসূলদের উপর নির্ভর করতে হবে।

সুতরাং রাসূলের উপর যারা ঈমান আনবে এবং তাদের অনুসরণ করবে তারাই সঠিক সরল পথের অধিকারী। তারাই আল্লাহর নিকট সুমহান মর্যাদা এবং ইহ ও পারলৌকিক সম্মান লাভে ধন্য হবে। আর যারা রাসূলগণের বিরোধিতা করবে তারা হবে অভিশপ্ত। সঠিক পথ বিচু্যত, তাদের প্রভুর দর্শন লাভ থেকে বঞ্চিত। আল্লাহ বলেছেনঃ (হে আদম সন্তান ! যখন তোমাদের কাছে তোমাদের থেকে রাসূলগণ আসবেন, তারা তোমাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ (নিদর্শনাবলী) বর্ণনা করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হবে তাদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবেনা, আর যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং অহংকার বশতঃ দুরে থাকবে তারাই হবে জাহান্নামবাসী, সেখানেই তারা অনন্তকাল থাকবে)। {সূরা আল-আ’রাফ: ৩৫, ৩৬}

অন্য আয়াতে বলেন: (তারপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত (দিক নির্দেশনা) আসবে তখন যারা আমার হিদায়াতকে গ্রহণ করবে তারা পথভ্রষ্ট হবেনা দুর্ভাগাও হবেনা আর যারা আমার যিক্র (স্মরণ) থেকে বিমুখ হবে তাদের জন্য থাকবে সংকীর্ণ জীবন, আর কিয়ামতের দিন আমরা অন্ধ অবস্থায় তার হাশর করব, সে তখন বলবে: হে প্রভূ আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় হাশর করেছেন আমি তো দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ছিলাম, উত্তরে (আল্লাহ) বলবেন: অনুরূপভাবে তোমার নিকট (দুনিয়াতে) আমার আয়াতসমূহ এসেছিল কিন্তু তুমি তা ভুলে বসেছিলে, ঠিক আজকের দিনে তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে)। {সূরা ত্বা-হা: ১২৩-১২৬} অর্থাৎ এখানে রেখে দেয়া হবে।

ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) বলেন: যারা কুরআন পড়বে ও তার হিদায়াত মোতাবেক আমল করবে, আল্লাহ তার জন্য জামিন হলেন যে, দুনিয়াতে সে বিপথগামী হবেনা, আর পরকালে সে দুর্ভাগাদের মাঝে পড়বেনা।

আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের অধিবাসীদের সম্পর্কে আরো বলেন: (যখনই কোন একটি দলকে এতে (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করা হবে তখনি তার দারোয়ানরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের কাছে কি ভয় প্রদর্শনকারী (রাসূল) আসেনি? উত্তরে তারা বলবেঃ হাঁ, অবশ্যই আমাদের নিকট ভয় প্রদর্শনকারী এসেছিল কিন্তু আমরা তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি, আর বলেছিঃ আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি, তোমরা তো কেবল বড় রকমের গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছো।) {সূরা আল-মুলক: ৮, ৯}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (আর কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দল বেঁধে টেনে নেয়া হবে। যখন তারা সেখানে আসবে তখন জাহান্নামের দরজা সমুহ খুলে দেয়া হবে, আর তার (জাহান্নামের) পাহারাদারগণ তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের স্বজাতি থেকে রাসূলগণ এসে তোমাদের প্রভূর আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনাননি? এবং এই দিনের সাক্ষাতের ভয় দেখাননি? তারা উত্তরে বলবেনঃ হাঁ, কিন্তু শাস্তি প্রদানের (নির্দেশ) কাফেরদের উপর যথার্থভাবে কার্যকরী হয়েছে।) {সূরা আয্-যুমার: ৭১}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (আমি রাসূলদের কেবলমাত্র শুভসংবাদ প্রদানকারী এবং ভয় প্রদর্শনকারী রূপেই প্রেরণ করেছিলাম ফলে যারা ঈমান এনেছে এবং সঠিক পথে পরিচালিত হয়েছে (ঈমান অনুসারে নিজেদের গঠন করেছে) তাদের কোন ভয় ও পেরেশানী থাকবেনা, আর যারা আমার আয়াত সমুহের উপর মিথ্যারোপ করেছে, তাদের অবাধ্যতার কারণে শাস্তি তাদের স্পর্শ করবেই )। {সূরা আল-আন’আম: ৪৮, ৪৯}

আল্লাহ আরো বলেন : (আমি নূহ এবং তার পরবর্তী নবীদের কাছে যেভাবে অহী প্রেরণ করেছি ঠিক তেমনিভাবে আপনার কাছেও অহী প্রেরণ করেছি, অনুরূপভাবে অহী প্রেরণ করেছি ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার সন্তান সন্ততিগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারুন, সুলাইমানের কাছে, এবং দাঊদকে যাবুর কিতাব প্রদান করেছি, আর অনেক রাসূল রয়েছেন যাদের কথা আপনাকে বলেছি, আবার এমন ও অনেক রাসূল আছেন যাদের কথা আপনার কাছে বিবৃত করিনি, আর আল্লাহ মুসার সাথে সরাসরি কথোপকথন করেছেন। এই রাসূলগণ ভীতি প্রদর্শনকারী ও শুভ সংবাদ প্রদানকারী হিসাবে ছিলেন, যাতে করে রাসূল আসার পর মানুষ আল্লাহর বিপক্ষে (ঈমান না আনার ঊপর কোন) যুক্তির অবতারণা করতে না পারে )। {সূরা আন্-নিসা: ১৬৩-১৬৫} পবিত্র কুরআনে এধরনের অসংখ্য আয়াত রয়েছে।

আর এ ব্যাপারে ইয়াহুদী, নাসারা একং মুসলমান এ তিন জাতির সবাই একমত; কারণ তারা আল্লাহ ও তার বান্দাদের মাঝে রাসূলদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর নির্দেশাবলী ও তাঁর সম্পর্কিত খবরাখবরের জন্য মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (আল্লাহ ফেরেশ্তা ও মানব জাতিদ্বয় থেকে রাসূলদের নির্বাচিত করে থাকেন।) {সূরা আল-হাজ্জ: ৭৫} যারা এ মাধ্যম মানতে অস্বীকার করবে তারা সমস্ত জাতির (ইয়াহুদী, খৃস্টান এবং মুসলমান) ঐক্যমতে কাফির।

যে সমস্ত সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে যেমন; আনআ'ম, আ'রাফ, (আলিফ, লাম, রা,) (হামীম) (ত্বা,ছিন) ইত্যাদি সূরাগুলি মূলত দ্বীনের মূলনীতিকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে যেমন আল্লাহ, রাসূল এবং পরকালের উপর ঈমান আনার উপর জোর দিয়েছে। অনুরূপভাবে সে গুলোতে আল্লাহ তা'আলা নবীদেরকে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, এবং কিভাবে তিনি তাদের ধ্বংস করেছেন আর তার রাসূল ও মুমীনদের কিভাবে সাহায্য করেছেন তা বিবৃত করেছেন।

আল্লাহ বলেন: (আর নিশ্চয়ই আমার বান্দা রাসূলদের জন্য আমার বাণী পূর্বেই নির্দিষ্ট হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, আর নিশ্চয়ই আমার বাহিনীই জয়ী হবে।) {সূরা আস্-সাফ্ফাত: ১৭১-১৭৩}

আরো বলেন: (নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূল ও মুমীনদেরকে দুনিয়ার জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীগণ সাক্ষ্যদানের জন্য দাঁড়াবে সেদিন সাহায্য করব।) {সূরা আল-গাফির: ৫১}

সুতরাং এ সমস্ত মাধ্যমের আনুগত্য ও অনুসরণ করতে হবে এবং তাদেরকে আদর্শ হিসাবে মানতে হবে, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন: (আর আমি রাসূলদেরকে কেবল আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক আনুগত্য করার জন্যই প্রেরণ করেছি।) {সূরা আন্-নিসা: ৬৪}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন : ( যে রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।) {সূরা আন্-নিসা: ৮০}

আরো বলেন : (বলুনঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর পরিণামে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।) {সূরা আলে-ইমরান: ৩১}

আরো বলেন : (সুতরাং যারা তার উপর ঈমান আনবে ও তাকে সাহায্য সহযোগিতা করবে, এবং তার কাছে অবতীর্ণ নূরের (কুরআন) অনুসরণ করবে তারাই সফলকাম হবে।) {সূরা আল-আ’রাফ: ১৫৭}

আরো বলেন : (নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম সুন্দর আদর্শ তোমাদের মাঝে যে আল্লাহ ও পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করে)। {সূরা আল-আহযাব: ২১}

রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা

আর যদি মাধ্যম দ্বারা ঐ ব্যক্তি (যে বলেছিল যে,"আমাদেরকে অবশ্যই মাধ্যম ধরতে হবে") উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন যে, উপকার লাভ করা ও ক্ষতিকর বিষয় সমুহ প্রতিহত করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই মাধ্যম ধরতে হবে, যেমনঃ বান্দার জন্য রিজিক, সাহায্য বা হেদায়াত আহরণের জন্য তাদেরকে মাধ্যম হিসাবে সাব্যস্ত করে তাদের কাছে তা প্রার্থনা করতে হবে, বা তাদের দিকেই এ সব ব্যাপারে প্রত্যাবর্তন করতে হবে তবে এটা আল্লাহর সাথে সবচেয়ে বড় শির্কের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত, যার কারণে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে কাফের বলেছেন। কেননা তারা আল্লাহ ছাড়া অনেক অলী এবং সুপারিশকারী নির্ধারণ করে তাদের কাছে উপকার লাভ ও অপকার ঠেকানোর আহবান করত। অথচ আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্য কেহ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখেনা, আল্লাহ তা'আলা বলেন : (আল্লাহই আসমান, জমীন ও তার মাঝের যা কিছু আছে সব গুলিকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশের উপর উঠেছেন। তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন অভিভাবক, কোন সুপারিশকারী নেই, তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করছনা?) {সূরা আস্-সাজদাহ: ৪}

আরো বলেন : (আর আপনি (কুরআন) এর দ্বারা যারা তাদের রব এর কাছে একত্রিত হওয়াকে ভয় পায় তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন তিনি ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারী (গার্জিয়ান) ও সুপারিশকারী নেই।) {সূরা আল-আন’আম: ৫১}

আল্লাহ আরো বলেন : (বলুনঃ তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে উপাস্য বলে বিশ্বাস করে থাক তাদের আহবান কর, দেখবে তারা তোমাদের উপর আপতিত বিপদ থেকে তোমাদেরকে মুক্তি ও (সে বিপদকে) অন্যদের দিকে ফিরিয়ে দিবার ক্ষমতা রাখেনা। তারা যাদেরকে ডাকছে তারাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা (বা সৎকাজের মাধ্যমে নৈকট্য) খুঁজে বেড়াচ্ছে যে তাদের মধ্যে কে সর্বাধিক নিকটবর্তী (অর্থাৎ তারা বেশী নৈকট্য লাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত), তাঁরা (আল্লাহর) রহমতের আশা করছে, তার শাস্তিকে ভয় করছে, (কেননা) নিশ্চয়ই আপনার রব এর শাস্তি ভীতিপ্রদ।) {সূরা আল-ইসরা: ৫৬-৫৭}

আরো বলেন : (বলুন: আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা (সাহায্যকারী) বিশ্বাস করে নিয়েছিলে তাদের আহবান কর, দেখবে তারা আসমান ও জমীনের অণূ পরিমাণ বস্তুরও অধিকারী নহে, আর এ দুটোতে তাদের জন্য কোন শরীক ও নেই, এবং তাদের মধ্য হতে কোন সাহায্যকারীও নেই, আর তার কাছে তার অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ ছাড়া কারও কোন সুপারিশ কাজে আসবেনা।) {সূরা সাবা: ২২, ২৩}

সলফে সালেহীনদের একদল বলেছেন যে, কোন কোন সম্প্রদায় ঈসা, উযায়ের (আঃ) এবং ফেরেশ্তাদেরকে বিপদাপদে সাহায্য করার জন্য ডাকত তখন আল্লাহ তা'আলা এ কথা ঘোষণা করলেন যে, ফেরেশ্তা আর নবীরা বিপদ দুর করতে বা বিপদের মোড় ঘুরিয়ে দিতে অপারগ বরং তারা নিজেরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টায় বিভোর, তারা তার রহমতের আশা ও আজাবের ভয় করছে।

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন : কোন মানুষের জন্য এটা উচিত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান, নবুওত দিবার পর সে লোকদের বলবে যে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার ইবাদত কর, বরং (বলবে) তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দেয়া ও পাঠ নেয়ার পর সংস্কারক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, আর সে (নবী) ফেরেশ্তা ও নবীদেরকে রব মানারও নির্দেশ দিতে পারেনা, সে কি তোমাদেরকে মুসলমান হওয়ার পরে কুফরীর নির্দেশ দিবে?) {সূরা আলে-ইমরান: ৭৯, ৮০}

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, ফেরেশ্তা ও নবীদেরকে রব মানা কুফরী, ফলে যে কেহ ফেরেস্তা ও নবীদেরকে মাধ্যম ধরে তাদেরকে ডাকবে, তাদের উপর ভরসা করবে, তাদের কাছে কোন কল্যাণ লাভের ও অকল্যাণ ঠেকানোর প্রার্থনা করবে (যেমন তাদের কাছে গোনাহ মাফ, অনতরের হেদায়েত, বিপদমুক্তি, অভাব-অনটন দুর করার আহবান জানাবে) সে মুসলমানদের ঐক্যমতে কাফিরদের মধ্যে গণ্য হবে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন: (আর তারা বলছে যে, দয়াময় আল্লাহ একজনকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেছেন অথচ তিনি (একথা থেকে) কতই না পবিত্র ! বরং এরা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তারা আল্লাহর কথার অগ্রগামী হয়না, আর তারই নির্দেশ পালন করে থাকে, তিনি তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা আছে সবই জানেন, তারা আল্লাহ যার উপর খুশী হন সে ছাড়া অন্যদের জন্য সুপারিশ করবেনা, বরং তারা তার ভয়ে সদা ভীত, আর তাদের মধ্য থেকে যে একথা বলবে যে তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই মাবুদ তাকে আমি জাহান্নাম দিয়ে প্রতিফল দেব, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের শাস্তি বিধান করে থাকি।) {সূরা আল-আম্বিয়া: ২৬-২৯}

আরো বলেন: (মসীহ (ঈসা) কক্ষনো আল্লাহর বান্দাহ হতে লজ্জাবোধ করেননা, অনুরুপ আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেস্তা গণও নয়, আর যারা তাঁর ইবাদত করতে লজ্জাবোধ এবং অহংকার করবে অচিরেই তিনি তাদের সবাইকে তার কাছে একত্রিত করবেন।) {সূরা আন্-নিসা: ১৭২}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (আর তারা বলছে রাহমান সন্তান গ্রহণ করেছেন, নিশ্চয়ই তোমরা বড় জঘন্য কথা নিয়ে এসেছ, আকাশ ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয়, জমিন ফেটে যাবার অবস্থা হয়, আর পাহাড় গুলি নড়ে উঠে, যখন তোমরা রাহমান (আল্লাহ) এর জন্য সন্তান সাব্যস্ত কর, রাহমানের জন্য সন্তান নেয়া কখনো উচিত নহে, আসমান ও জমীনের সবকিছু কেবল তারই বান্দা হিসাবে সদা হাজির, নিশ্চয়ই তিনি তাদের পরিসংখান নিয়েছেন, এবং তাদেরকে নির্ভুলভাবে গণনা করেছেন, আর তাদের প্রত্যেকে কিয়ামতের দিনে একাকী তার নিকট হাজির হবে।) {সূরা মারয়াম: ৮৮-৯৫}

আল্লাহ আরো বলেন: (তারা আল্লাহকে ছেড়ে যারা তাদের কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখেনা তাদের ইবাদত করছে আর বলছে এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী, বলুন: তোমরা কি আল্লাহকে আসমান ও যমীনের অজ্ঞাত কোন বস্তুর খবর দিচ্ছ? তাঁরই পবিত্রতা, তিনি তারা যে সব শির্ক করছে তার থেকে উর্ধ্বে)। {সূরা ইউনুস: ১৮}

আল্লাহ আরো বলেন : আর আসমানে কত ফেরেশ্তাই না রয়েছে যাদের সুপারিশ সামান্যও কাজে আসবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকেন তার জন্য )। {সূরা আন্-নাজম: ২৬}

আরো বলেন : (কে এমন আছে যে, তাঁর কাছে তার অনুমতি ব্যতিরেকে সুপারিশ করে?)। {সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫}

আরো বলেন : (আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন বিপদে ফেলেন তবে তিনি ব্যতীত আর কোন উদ্ধারকারী নেই, অনুরূপভাবে যদি তিনি আপনার কোন মঙ্গল চান তার অনুগ্রহে বাধা দেবার কেউ নেই)। {সূরা ইউনুস: ১০৭}

আরো বলেন : (মানুষের জন্য আল্লাহ যে রহমতের দরজা খুলেন সেটায় বাধা প্রদান কারী কেউ নেই, আর যদি বন্ধ করেন তবে সেটা তিনি ছাড়া প্রবাহিত কারীও কেউ নেই)। {সূরা আল-ফাতির: ২} আরো বলেন : (বলুন: তোমরা কি দেখতে পাচ্ছনা তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছ, যদি আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি বা বিপদ দিতে ইচ্ছা করেন তারা কি আমাকে সে বিপদ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন: আমার আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট, নির্ভরকারীগণ যেন তার উপরই নির্ভর করে)। {সূরা আয্-যুমার: ৩৮} পবিত্র কুরআনে এ ধরনের অনেক আয়াত এসেছে।

আলেমগন নবীদের ওয়ারিস

আর ধর্মীয় জ্ঞানে গুণান্বিত আলেম ও মাশায়েখগণকে যদি রাসূল ও তার উম্মতের মাঝে এই মর্মে মাধ্যম নির্ধারণ করা হয় যে, তারা তাদের কাছে দ্বীন প্রচার করবে, তাদের শিক্ষিত, শিষ্টাচারী বানাবে, তাদেরকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে, যদি মাধ্যম গ্রহণ দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নেয়া হয় তবে তা সম্পূর্ন সত্য ও বাস্তব। এই আলেমগণ যখন কোন ব্যাপারে একমত হয় তবে তাদের এই ঐক্যমত শরীয়তে অকাট্য দলীল হিসাবে গৃহিত হবে; কারণ তারা কোনদিন বিভ্রান্তির উপর একমত হবেনা, যদি তারা কোন ব্যাপারে পরস্পর বিভিন্ন মতের উৎপত্তি হতে দেখে তখন সাথে সাথে তারা এটাকে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়; কারণ একক ভাবে তাদের কেউই ভুলভ্রান্তি মুক্ত নহেন, বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা ছাড়া সমস্ত মানুষের কথাই গ্রহণ করা বা ত্যাগ করা যেতে পারে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: (আলেমগণ নবীদের ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী) তবে বাস্তবে নবীগণ দীনার, দিরহাম উত্তরাধিকার ভিত্তিতে রেখে যাননি, বরং তারা রেখে গেছেন শরীয়তের জ্ঞান, ফলে যে তা (ইলম) গ্রহণ করতে পেরেছে, সে পরিপূর্ণ অংশ নিতে সক্ষম হয়েছে)। {আবূ দাউদ ও অন্যান্যরা উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আর যে তাদেরকে মাধ্যম বানানো দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নেয় যে, রাজা ও প্রজাদের মাঝে যেমন দারোয়ান থাকে তেমনি এরাও আল্লাহ ও তার বান্দাদের মাঝে দারোয়ান হিসাবে কাজ করে থাকেন। তারাই আল্লাহর দরবারে বান্দার চাহিদা তুলে ধরবে, আল্লাহ তার বান্দাদেরকে তাদের মাধ্যমেই সৎপথ দিয়ে থাকেন, রিজিক বন্টন করে থাকেন যেমন রাজা বাদশাদের দরবারে একান্ত লোকেরা নিজেদের নৈকট্যের খাতিরে রাজার কাছ থেকে মানুষের জন্য সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেন। অথবা বাদশার দরবারী লোকদের কথা সাধারণ লোকের চেয়ে বেশী গ্রাহ্য হবে মনে করে তাদের দ্বারা সুপারিশ করে কিছু আদায় করার চেষ্টা করেন, যদি মাধ্যম মানা দ্বারা এ ধরনের অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে সে সম্পূর্নভাবে কাফের হয়ে যাবে, আল্লাহর সাথে শির্ককারীদের (মুশরিকদের) দলভূক্ত বলে বিবেচিত হবে, যদি তাওবা করে তবে ক্ষমা করা হবে, নতুবা (মুরতাদ হিসাবে) হত্যা করা হবে, কেননা এরা স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করছে, আর আল্লাহর অনেক সমকক্ষ স্থির করে নিচ্ছে (শরীক বানাচ্ছে)।

শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ

পূর্ব বর্ণিত মাধ্যম সাব্যস্তকারীদের কথা ও দাবী নাকচ করার জন্য কুরআনে এতবেশী দলীল-প্রমাণাদি দেওয়া হয়েছে যে, এই ছোট্ট নিবন্ধে সে সবের স্থান সংকুলান হবার কথা নয়, কেননা রাজা ও প্রজার মাঝে মধ্যস্থতা করার তিনটি কারণ থাকতে পারে:

প্রথমত: হয়ত তারা তাকে এমন সংবাদ পৌঁছাবে যা রাজার কাছে অজানা রয়ে গেছে, ফলে রাজার কাছ থেকে তার প্রজাদের কাছে কোন প্রকার সাহায্য পৌঁছার জন্য এমন কিছু মধ্যস্থতাকারী দরকার যারা তাকে তা জানিয়ে দিবে, এমন রাজাও এরকম মধ্যস্থতা কারীর সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করছে।

যদি অবস্থা এ রকমই হয়, এবং কেউ বলে বা মনে করে যে, আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের অবস্থা জানার জন্য ফেরেশ্তা বা নবীদের সংবাদ দেয়ার মুখাপেক্ষী, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে, বরং আল্লাহ তা'আলা মানুষের অন্তরের মাঝে যা গোপন রেখেছে, বা যা অন্তরের মাঝে গোপন করতে চেষ্টা করবে সবই জানেন, আসমান ও জমীনের এমন কিছু নেই যা তিনি জানেন না, তিনি সবকিছু দেখেন এবং শুনেন, বান্দার বিভিন্ন প্রকার চাহিদা পুরণের জন্য বিভিন্ন ভাষার হরেক রকমের শব্দ তিনি শুনতে পান, কারো কথা শুনতে যেয়ে অপর কারো কথা বাধ সাধে না, প্রার্থনার ভীড় তাকে তাতে সাড়া দিতে কোন প্রকার বিভ্রান্তিতে ফেলেনা, অনবরত আর্জীতেও তিনি অধৈর্য্য হন না।

দ্বিতীয়ত: রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মধ্যস্থতা গ্রহণ করার দ্বিতীয় কারণ এ হতে পারে যে, বাদশাহ তার প্রজাদের পরিচালনা, ও শত্রুদের মোকাবিলা করায় অক্ষম, ফলে সে তার দীনতা, হীনতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্তির জন্য কিছু সাহায্যকারীর প্রয়োজন অনুভব করছেন।

কিন্তু আল্লাহ তা'আলার জন্য হীনতা বশত: কোন সাহায্যকারী, বন্ধু অবিভাবক নেই বা প্রয়োজন নেই, (ফলে তার মধ্যে এবং তার বান্দাদের মধ্যে মাধ্যম গ্রহণের কি যুক্তি থাকতে পারে?)আল্লাহ তা'আলা বলেন: ( বলুন: তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছ তারা আসমান ও যমীনের অণু পরিমাণেরও মালিক নয়, আর এ দুটোয় (আসমান ও যমীনে) তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, যেমনিভাবে তার কোন সাহায্যকারী নেই )। {সূরা সাবা: ২২}

(আরো বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তার রাজত্বে কোন অংশীদার নেই, হীনতা বশত: তার কোন বন্ধুও নেই, আর তার শ্রেষ্ঠত্বই বেশী করে বর্ণনা কর)। {সূরা আল-ইসরা: ১১১}

কার্য্য সিদ্ধির স্বার্থে যত প্রকার উপায় উপকরণ আছে তার সবগুলির স্রষ্টা, রব ও মালিক হলেন তিনি আল্লাহ, কারও কাছে তিনি মুখাপেক্ষী নন, সবাই তার মুখাপেক্ষী, সুতরাং রাজা বাদশাদের সাথে তার তুলনা চলেনা, কারণ রাজা বাদশাগণ মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, ফলে এরা (মধ্যস্থতাকারীরা) মুলত তার রাজত্বের অংশীদার।

অথচ আল্লাহ তা'আলার রাজত্বে কারও কোন অংশীদারিত্ব নেই, বরং শুধু তিনি (আল্লাহ) ছাড়া যথাযথ কোন মা'বুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, তারই সার্বভৌমত্ব, সমস্ত প্রশংসা, তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন।

তৃতীয়ত: রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মাধ্যম গ্রহণের তৃতীয় আরেকটি কারণ এও হতে পারে যে, হয়ত: বাদশা বাইরের কোন প্রকার চাপ ছাড়া তার প্রজাদের কল্যাণ বা দান দাক্ষিণ্য করতে নারাজ, তখন বাদশাকে যারা উপদেশ দেয় ও সম্মান করে, যারা তার সাথে উঠাবসা করে, হাসি তামাসা করে এমন লোক তাকে যদি প্রজাদের ব্যাপারে সম্বোধন করে তবে প্রজাদের চাহিদা পুরণে সে উদ্বুদ্ধ হবে, তখন মাধ্যম নেয়া হতে পারে, কেননা তখন উপদেশ দানকারীর উপদেশ কিংবা রং তামাশাকারীর অনুরাগ বিরাগের কারণে বাদশা তা করতে বাধ্য হন।

কিন্তু আল্লাহ তা'আলা সব কিছুরই পালনকর্তা রব, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহের চেয়ে যার দয়া অনেক বেশী, যার ইচ্ছায়ই সব কিছু সংঘটিত হয়ে থাকে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তা হয়, আর যা ইচ্ছা করেননা তা হয়না, তিনি এই সমস্ত ব্যাপারে যেমন কারো থেকে উপদেশ নেয়া, কাউকে সম্মান দেখানো, কারো অনুরাগ বিরাগে পড়া থেকে অনেক উর্ধ্বে। কেননা, তিনি যখন বান্দাদেরকে একে অপরের উপকারার্থে পরিচালনা করার ফলে কারও প্রতি দয়া, দুআ', সুপারিশ করে তখন এসব কিছু তিনিই তার মনের মধ্যে সৃষ্টি করে থাকেন, সুতরাং এখানে আল্লাহকে উদ্বুদ্ধকারী কোন কিছুর কল্পনা করা বাতুলতা বৈ কিছুই নয়।

আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পরিচালিত করে বা তিনি জানেন না এমন জিনিস তাকে জানিয়ে দেয়, বা রব কতৃক কাউকে ভয় বা কারও কাছে কিছু আশা করে এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই, এজন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (তোমাদের মাঝে এ কথা যেন কেহ না বলে যে, হে আল্লাহ যদি তোমার ইচ্ছা হয় আমাকে মাফ কর, যদি ইচ্ছা হয় আমাকে দয়া কর, বরং দৃঢ়ভাবে প্রার্থনা কর, কেননা তাকে বাধ্যকারী কেউ নেই)। {সহীহ্ বুখারী: ১১/১১৮, মুসলিম: ২৬৭৯}

যে সমস্ত সুপারিশকারী তার দরবারে সুপারিশ করবেন তারা তার অনুমতি ব্যতীত কক্ষনো সুপারিশ করবেন না।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (কে সে ব্যক্তি যে তার অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করে? )। {সূরা আল-বাকারাহ্: ২৫৫}

আল্লাহ আরো বলেন : (তারা (সুপারিশকারীগণ) আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্যই শুধু সুপারিশ করবেন)। {সূরা আল-আম্বিয়া: ২৮}

আল্লাহ আরো বলেন : (বলুন আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা উপাস্য হিসাবে বিশ্বাস করেছিলে তাদেরকে আহবান করো (দেখবে) তারা আসমান ও জমীনের অনু পরিমাণেরও মালিক নহে, আর এ দুটোতে না আছে তাদের কোন অংশীদারিত্ব, এমনিভাবে তাদের থেকে তাঁর কোন সাহায্যকারীও নেই, আর তাঁর নিকট অনুমতি ব্যতীত কোন সুপারিশই গ্রহণযোগ্য হবেনা)। {সূরা সাবা: ২২, ২৩}

এ আয়াত সমুহে আল্লাহ তা'আলা এ কথা স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ব্যতীত আর যাদেরকে ডাকা হয় তাদের না আছে কোন কিছুর পূর্ণ মালিকানা, না আছে অংশীদারিত্ব, আবার তারা তাঁর জন্য সাহায্যকারীও নহে, আর তার অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের সুপারিশও গ্রহণযোগ্য নহে।

এগুলি রাজা বাদশাদের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন, কেননা রাজা-বাদশাদের কাছে সুপারিশকারীর মালিকানা থাকতে পারে, আবার কখনো কখনো সে তাদের মালিকানায় অংশীদারও হতে পারে, নতুবা তাদের রাজত্ব রক্ষায় সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে।

আর যারা রাজা বাদশাদের কাছে সুপারিশ করেন তারা বাদশার অনুমতি নেন্না, বাদশা তাদের নিকট প্রয়োজন আছে বিধায় তাদের সুপারিশ কবুল করতে বাধ্য হন, আবার কখনো কখনো তাদের ভয়ে ভীত হয়ে সুপারিশ গ্রহণ করে থাকেন, অনুরুপভাবে কোন কোন সময় তাদের উপকারের বিনিময় ও পুরস্কার দিতে গিয়ে তাদের কথা মানতে বাধ্য হন, আর এজন্যই রাজা বাদশাগণ আপন ছেলে- সন্তান স্ত্রী-পরিজনের সুপারিশ ও গ্রহণ করে থাকেন, তারা তাদের সন্তান সন্ততি পরিবার পরিজনের কাছে ঋণী থাকেন, কারণ যদি তার সন্তান সন্ততি বা স্ত্রী তার থেকে বিমুখ হয় তবে তাকে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হবে সুতরাং তাদের সন্তুষ্টির খাতিরে তাদের সুপারিশ ও গ্রহণ করে থাকে, এমনিভাবে সে তার দাস দাসীর সুপারিশ গ্রহণেও বাধ্য হয়, কারণ যদি তার সুপারিশ গ্রহণ করা না হয় তাহলে তার অবাধ্য হওয়া বা ক্ষতি করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বান্দার কাছে বান্দার সুপারিশ সব গুলিই এ ধরনের। কারণ তারা অনুরাগ বা বিরাগের কারণেই সুপারিশ গ্রহণ করে থাকে, কিন্তূ আল্লাহ তা'আলা তিনি কারও কাছ থেকে কোন কিছুর আশা করেন না, কাউকে ভয় ও করেন না, কারো কাছে তিনি মুখাপেক্ষী ও নন। বরং তিনিই কেবল অমুখাপেক্ষী অন্য সব কিছুই তার মুখাপেক্ষী, আল্লাহ বলেন : (সাবধান ! নিশ্চয়ই আসমান ও জমীনের সবকিছু আল্লাহর আর যারা আল্লাহ ছাড়া অনেক অংশীদার (শরীক)দের আহবান করে তারা কেবল ধারণার অনুসরণ করে চলছে, তারা শুধুমাত্র মিথ্যাই বলছে)। {সূরা ইউনুস: ৬৬}

তারপরই বলছেনঃ (তাঁরই পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা, তিনি অমুখাপেক্ষী, আসমান ও জমীনের সবকিছু তারই)। {সূরা ইউনুস: ৬৮}

আর মুশরিকগণ সুপারিশের এ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়েই তাদের জন্য অনেক সুপারিশকারী গ্রহণ করার মাধ্যমে শির্ক করেছিল।

আল্লাহ বলেন: (তারা আল্লাহ ছাড়া যারা তাদের কোন উপকার বা অপকার কিছুই করতে পারেনা এমন সব বস্তুর ইবাদত করছে আর বলছেঃ এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী, বলুনঃ তোমরা কি আসমান ও জমীনের এমন কোন সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি জানেন না? তাদের অংশীদার কৃত বস্তু সমুহ থেকে তিনি কতই না পবিত্র, আর কত উচুতেই না তার অবস্থান)। {সূরা ইউনুস: ১৮}

আরো বলেন: (আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা (তাদের ভক্তি অর্ঘ্য ও ধন সম্পদ) উৎসর্গের মাধ্যমে ইলাহ (উপাস্য) হিসাবে বেছে নিয়েছে, তারা কেন তাদেরকে সাহায্য করেনি? বরং তারা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে, আর এটা (আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ নির্ধারণ করা) তাদের সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ যে অপবাদ তারা দিচ্ছিল।)। {সূরা আল-আহকাফ: ২৮}

আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের মাধ্যম গ্রহণের কারণ তাদের মুখের ভাষায় বর্ণনা করছেন, (আমরা এদের ইবাদত এ জন্যই করি যে, এরা সুপারিশ করে আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করবে)। {সূরা আয্-যুমার: ৩}

আরো বলেন : (কোন নবী তার অনুসারীদেরকে এও নির্দেশ দিবেনা যে, তোমরা ফেরেশ্তা এবং নবীদেরকে রব (হালালকে হারাম কারী, হারামকে হালালকারী) হিসাবে গ্রহণ কর, সে কি তোমাদেরকে মুসলমান হওয়ার পরে কুফরী(করা)র নির্দেশ দিবে?)। {সূরা আলে-ইমরান: ৮০}

শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (বলুনঃ তাঁকে(আল্লাহকে) ছাড়া আর যাদেরকে তোমরা (সুপারিশকারী, ক্ষমতাধর বলে) বিশ্বাস করো তাদেরকে আহবান করো (দেখবে) তারা তোমাদের থেকে বিপদ দুরীভুত করার বা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেবারও ক্ষমতা রাখেনা, তারা যাদের আহবান করছে তারা তাদের প্রভূর নিকট কে বেশী নৈকট্য লাভে সমর্থ হবে তার জন্য নেক আমল দ্বারা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তারা তাঁর রহমতের আশা করছে, আর তাঁর শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয় আপনার প্রভুর শাস্তি ভয়ানক)। {সূরা আল-ইসরা: ৫৬-৫৭}

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা এ ঘোষণাই দিচ্ছেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছে, তারা বিপদমুক্তি বা বিপদের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা, পক্ষান্তরে তারা তাঁর রহমতের আশা এবং শাস্তির ভয় করছে, আর তারা তাঁর নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়ার চেষ্টা করছে, সুতরাং আল্লাহ তা'আলা ফেরেশ্তা ও নবীদের জন্য কেবল তার অনুমতির পরে সুপারিশ করা সিদ্ধ করেছেন। তবে এ সুপারিশ হলো দুআ' করা, আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সৃষ্ট জগতের একে অপরের জন্য দুআ' করলে তা কাজে লাগে। কেননা এ দুআ' করার নির্দেশ আল্লাহ তা'আলা নিজেই দিয়েছেন, কিন্তু দুআ'কারী, সুপারিশকারী সুপারিশের ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে দুআ' বা সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখেনা, ফলে নিষিদ্ধ কোন প্রকার সুপারিশ তারা করতে পারবেনা, যেমনঃ আল্লাহর সাথে শির্ক কারীদের জন্য সুপারিশ, তাদের জন্য দুআ', তাদের পাপমুক্তির জন্য প্রার্থনা করা যাবেনা, আল্লাহ বলেন : (নবী ও মুমীনদের জন্য উচিত নয় (জায়েয নয়) যে তারা শির্ককারী (মুশরিক)দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যখন তাদের কাছে তাদের দোজখবাসী হওয়ার ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে পড়বে, যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হোক, আর ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কেবলমাত্র কৃত অঙ্গীকার পালনার্থে করেছিলেন, কিন্তু যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হলো যে, সে (তার পিতা) আল্লাহর দুশমন তখনি তিনি তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন)। {সূরা আত্-তাওবা: ১১৩-১১৪}

আল্লাহ তা'আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন: (আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর নাই করুন আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেননা।)। {সূরা আল-মুনাফিকূন: ৬}

সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মুনাফিক এবং মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করেছেন, এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেননা, যেমনঃ আল্লাহ তা'আলা তার এক বাণীতে বলেছেনঃ (নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেননা, আর এটা বাদে যা কিছু (গুনাহ) আছে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন ক্ষমা করে দিবেন।)। {সূরা আন্-নিসা: ৪৮}

আরো বলেন : (তাদের কেহ মারা গেলে আপনি কক্ষনো তাদের কবরের পাশে দাঁড়াবেননা, নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, এবং ফাসেক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে)। {সূরা আত্-তাওবা: ৮৪}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (তোমরা তোমাদের রবকে কাতর স্বরে এবং চুপিসারে ডাক, নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘন কারীদের পছন্দ করেননা)। {সূরা আল-আ’রাফ: ৫৫}

অর্থাৎ: দুআ' করতে যেয়ে সীমালঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেননা।

আর দুআ' করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন বলতে আল্লাহর কাছে এমন কিছু চাওয়া ও গন্য, যা আল্লাহ তা'আলা কক্ষনো কবুল করবেননা। যেমনঃ নবী না হওয়া স্বত্বেও কেহ আল্লাহর কাছে নবীদের স্থান প্রার্থনা করা, অথবা আল্লাহর অবাধ্য হতে হয় এমন কিছু চাওয়া, যেমনঃ কুফরী, ফাসেকী, গুনাহের কাজে সাহায্য চেয়ে দুআ' করা।

মোট কথাঃ সুপারিশকারী হলোঃ

১. ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা'আলা সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন।

২. আর তার সুপারিশ হতে হবে এমন দুআ' দ্বারা যাতে সীমালঙ্ঘন নেই।

৩. (সুপারিশকারীদের) মধ্যে যদি কেহ তার নিকট এমন কোন দুআ' চায় যা তার জন্য উপযুক্ত নয়, তখন তার সে দুআ' কবুল করা হবেনা, তাকে এরকম দোআ করতে নিষেধ করা হবে। কেননা যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা সুপারিশকরার অনুমতি দিয়েছেন তারা হলেন রাসূল সমপ্রদায়, তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা কোন ক্রমেই অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখেননা। যেমন নুহ (আলাইহিস্ সালাম) বললেনঃ (আমার পু্ত্র আমার পরিবারের সদস্য, আর আপনার অঙ্গিকার যথাযথ, আর আপনি সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ বিচারক)। {সূরা হূদ: ৪৫} আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ (হে নুহঃ সে তোমার পরিবারের (দলভুক্তদের) মধ্যে নয়, কারণ, তার কর্মকান্ড সুন্দর নয়, সুতরাং যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই সে ব্যাপারে আমার কাছে প্রার্থনা করোনা, যেন তুমি মূর্খদের অন্তর্ভূক্ত না হও সে ব্যাপারে তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তিনি বললেনঃ হে প্রভু ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যা জানিনা তা তোমার কাছে প্রার্থনা করার থেকে, যদি তুমি আমাকে ক্ষমা না কর এবং রহমত না কর তবে আমি হব ক্ষতিগ্রস্থদের একজন)। {সূরা হূদ: ৪৬-৪৭}

৪. আর আল্লাহর কাছে দুআ'কারীর দুআ' এবং সুপারিশকারীর সুপারিশ আল্লাহ তা'আলা কতৃক পুর্ব নির্ধারিত তাকদীরের (ভাগ্যের) অনুকুলেই হবে, তারই ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে ঘটবে, তিনিই তো এদের দুআ' ও সুপারিশ কবুল করবেন, তিনিই (আল্লাহই) যাবতীয় উপায় উপকরণের সৃষ্টিকর্তা এবং এর দ্বারা কার্যোদ্ধারের হোতা, আর সুপারিশ ও দুআ' মুলত ঐ সমস্ত উপায়, উপকরণের মধ্যে যা আল্লাহ তা'আলা কতৃক ভাগ্যে (তাকদীরে) নির্ধারিত রয়েছে।

উপায় - উপকরন গ্রহনের মাপকাঠি

এখন এটা স্পষ্ট হলো যে, দুআ' ও সুপারিশ মুলত আল্লাহ কতৃক পুর্ব নির্ধারিত কার্যসিদ্ধির উপায়-উপকরণ সমুহের একটি মাত্র। তিনিই এগুলোর মাধ্যমে কোন কিছু বান্দাকে দিবেন বলে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করার সময় নির্ধারন করে রেখেছেন।

তবে, উপায় উপকরণ গ্রহনের পরে সম্পূর্ণভাবে এর প্রতি ঝুকে পড়া, এর উপরই ভরসা করে বসা আল্লাহর একত্ববাদে শির্ক করারই নামান্তর। {টিকা: যদি উপায়-উপকরণ গ্রহণকারী মনে করে যে, এ সমস্ত উপায়-উপকরণ সমূহ স্বতন্ত্রভাবে কার্যসিদ্ধির ব্যাপারে প্রভাব ফেলে কার্যসিদ্ধি করে, এতে উপায়-উপকরণের যোগদানদাতা আল্লাহ্ তা’আলার কোন হাত নেই, এরকম কিছু মনে করার অর্থই হলো আল্লাহর একত্ববাদে শির্ক করা।}

আর কোন কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণ বলে প্রমাণিত হওয়া স্বত্বেও সে সমস্ত উপায়-উপকরণ সমুহ গ্রহণ না করা, বা মেনে না নেয়া স্থুলবুদ্ধির পরিচায়ক।

অনুরূপভাবে, কার্যোদ্ধারের জন্য উপায় অবলম্বন করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা শরীয়তের উপর অপবাদ দেয়ার শামিল। {বরং প্রত্যেক মুমীনের উপর ওয়াজিব সে যেন শরীয়ত সমর্থিত উপায় অবলম্বন করে তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করে, কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে বলেছেনঃ (তুমি তোমার উট প্রথমে বেধে রাখ, তার পর আল্লাহর উপর ভরসা কর) হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলে মত প্রকাশ করেছেন।}

বরং বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে দুআ', প্রার্থনা, অনুরাগ করা উচিত, তাঁকে ভালবাসা উচিত, যাতে করে আল্লাহ তা'আলা এগুলোর বিনিময়ে তার কার্যসিদ্ধির যে কোন ব্যবস্থা করে দেন।

মহৎ ব্যক্তি যেমন সাধারণ লোকের জন্য দুআ' করতে পারেন তেমনিভাবে সাধারণ লোকও মহৎ ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা (দুআ') করতে পারেন। সর্ব সাধারণের জন্য মহৎ ব্যক্তির দুআ'র উদাহরণ হিসাবে পেশ করা যায় সাহাবায়ে কিরাম কতৃক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য দুআ' ও সুপারিশ চাওয়া, অনুরুপভাবে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) কতৃক আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আন্হুম) এর কাছে আল্লাহর নিকট দুআ' করার অনুরোধ করা, তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবীদের কাছে আল্লাহর দরবারে সুপারিশের প্রার্থনা করা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত সুপারিশকারীদের প্রধান এবং বিভিন্ন প্রকার সুপারিশের মালিক হওয়া স্বত্বেও উম্মতের কাছে তার জন্য দুআ' করার আহবান জানিয়েছেন, যদিও তাঁর এ আহবান উম্মতের কাছে চাওয়া পাওয়া হিসাবে নয়, বরং এ নির্দেশ তাঁর অপরাপর নির্দেশের মতই, এ নির্দেশ পালনকারী আনুগত্যকারী হিসাবে গণ্য হবে, ফলে উম্মতের সাওয়াব লাভের পাশাপাশি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য প্রত্যেক আমলকারীর আমলের সমপরিমাণ সওয়াব লিখা হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতৃক দুআ' করার এ আহবান জানানো সাধারণ কতৃক মহৎলোকের জন্য প্রার্থনা (দোআ') করার বৈধতার যথার্থ প্রমাণ। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: (তোমরা যখন মুয়াজ্জিনের ধ্বনী শুনতে পাও তখন তোমরা সে (মুয়াজ্জিন) যেমনটি বলে তেমনটি বলবে, তারপর আমার উপর দরূদ পড়বে, কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি দশবার দরূদ পড়বেন (তাকে প্রশংসার সাথে স্মরণ করবেন), তারপর তোমরা আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করিও, কারণ অসীলা বেহেস্তের এমন একটি বিশেষ স্থানের নাম, যা কেবলমাত্র আল্লাহর এক বান্দাহর জন্যই নির্দিষ্ট, আর আমি আশা করছি আমিই হবো সে বান্দাটি, সুতরাং যে আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলার প্রার্থনা করবে কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ (শাফায়াত) দ্বারা ধন্য হবে।)

অনুরূপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) কে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা যাওয়ার প্রাক্কালে বিদায় লগ্নে বলেছিলেনঃ (আমাকে তোমার দুআ'য় ভুলনা ভাই)। {এর সনদে আসেম ইবনে আবদুল্লাহ নামীয় একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন।}

এতে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মাতের কাছে তাঁর জন্য দুআ' করতে বলেছেন। তবে তাঁর জন্য দুআ' করা দ্বারা আমরা যেমন সওয়াব পাব ঠিক তেমনিভাবে তিনিও তার অধিকারী হবেন, কারণ সহীহ হাদীসে এসেছে তিনি বলেছেনঃ (কেহ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা, আর কেহ ভ্রান্ত পথে ডাকলে যতজন তার অনুসারী হবে প্রত্যেকের গুনাহের সমান ভাগ সে পাবে, তবে অন্যদের গোনাহে কোন প্রকার কমানো হবেনা)। {সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪}

আর যেহেতু রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই উম্মাতকে সর্বপ্রকার হিদায়াতের দিকে আহবান করেছেন সেহেতু যতজনই তার অনুসরণ করবে সবার সওয়াব তাঁর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে তারা যখন তাঁর উপর দরূদ পড়ে তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে প্রত্যেক বারের বিনিময়ে দশবার প্রশংসার সাথে স্মরণ করেন। আর রাসূলের জন্য তাদের দুআ' কবুল হওয়ার পাশাপাশি তাদের যত সওয়াব হওয়ার কথা তার সম পরিমাণ সওয়াব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। ফলে দুআ' দ্বারা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলার অসীম দান হিসাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এর দ্বারা উপকৃত হবেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অপর এক বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেছেনঃ (যখন কোন মুসলমান বান্দা তার এক ভাইয়ের জন্য অগোচরে দুআ' করে তখন আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশ্তা নিয়োগ করে দেন, ফলে সে যখনই তার জন্য কোন দুআ' করে তখন ঐ ফেরেশ্তা বলেঃ আমীন (কবুল কর) আর তোমার জন্যও অনুরূপ হোক)। {সহীহ্ মুসলিম}

অন্য হাদীসে এসেছেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : (সবচেয়ে দ্রুত গৃহীত দুআ' হলো একজন কতৃক অন্য জনের অগোচরে কৃত দুআ'।)। {এর সনদে আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ নামীয় একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন।}

সুতরাং বুঝা গেল যে, অপরের জন্য দুআ' করলে যিনি দুআ' করেন এবং যার জন্য দুআ' করা হয় উভয়েই লাভবান হয়ে থাকে, যদিও যিনি দুআ' করবেন তার মর্যাদা যার জন্য দুআ' করবেন তার চেয়ে বেশী। ফলে কোন মুমীন তার ভাইয়ের জন্য দুআ' করলে দুআ' কারী ও দুআ'কৃত ব্যক্তি উভয়েই উপকৃত হয়ে থাকেন।

কেহ যদি অন্যকে বলেঃ আমার জন্য দুআ' করো এবং তার উদ্দেশ্য থাকে উভয়েরই লাভ হওয়া, তাহলে সেও তার অপর ভাই সৎ কাজে একে অপরের সহযোগী হলো, কারণ সে ঐ ব্যক্তিকে এমন বস্তুর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যাতে উভয়ই উপকৃত হতে পারে। আর অপর ব্যক্তিও এমন কাজ করেছে যাতে উভয়েরই লাভ হয়।

ব্যাপারটা এরকম হলো যেমন কেহ অপরকে নেক্কার ও পরহেজগার হতে বলল,্এতে নির্দেশপালনকারী তার কাজের সওয়াব পাবে, আর নির্দেশকারীও তার মত সওয়াবের অধিকারী হবে কেননা সেই এটা করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

বিশেষ করে ঐ সমস্ত দুআ'র ব্যাপারে তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যা করার জন্য আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেমনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন : (হে নবী আপনি নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, এবং ঈমানদার নর-নারীদের জন্যও)। {সূরা মুহাম্মাদ: ১৯}

এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। অন্য আয়াতে বলেছেনঃ (আর তারা যদি আপন নাফসের উপর অত্যাচার করার পরে আপনার কাছে ধর্ণা দেয়, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, অনুরূপভাবে রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে অধিক তাওবা কবুলকারী এবং অত্যন্ত দয়াশীল পাবে)। {সূরা আন্-নিসা: ৬৪}

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা চাওয়া এবং রাসূলের ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন, আর আল্লাহ তা'আলা তার কোন সৃষ্টিকে অপর সৃষ্টির কাছে ঐ সময়ই কিছু চাইতে বলেন যখন সৃষ্টি জগতের কাছে তা চাওয়ার অনুমতি দেয়া থাকে।

আল্লাহ কতৃক বান্দার জন্য যে কোন প্রকার নির্দেশ - ফরজ, মুবাহ, মুস্তাহাব যাই হোক না কেন তা - পালন করা আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য এবং তাঁরই নৈকট্য বলে বিবেচিত। পক্ষান্তরে তা নির্দেশ পালনকারীর জন্য নেককার ও আদর্শবান হওয়ার উপর প্রমাণবহ। আর এ গুলো করতে সক্ষম হওয়াও আল্লাহ কতৃক তার উপর বর্ষিত সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হিসাবে ধরে নিতে হবে। বরঞ্চ বান্দার উপর আল্লাহর সর্ব উৎকৃষ্ট নেয়ামত হলো তার ঈমান নসীব হওয়া। আর ঈমান যেহেতু মুখে উচ্চারণ ও আমল করার নাম সেহেতু যখনই কেহ নেক্কাজ বেশী করে করবে তখনই তার ঈমানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, আর এটাই মুলতঃ সত্যিকার নেয়ামত যা সুরায়ে ফাতিহায় বর্ণিত হয়েছে। (ঐ সমস্ত লোকদের পথ(দেখান) যাদের উপর আপনি করুনা বর্ষন করেছেন)। {সূরা আল-ফাতিহা: ৭} আর যা অন্য আয়াতে এসেছে (আর যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ করবে তারা আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তদের সাথে সম্পৃক্ত হবে)। {সূরা আন্-নিসা: ৩৯}

বরং দ্বীন ও ঈমানের নেয়ামত ব্যতীত অন্যান্য নেয়ামত সমুহ সত্যিকারের নেয়ামত কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট মত হলো যে, দ্বীন ও ঈমানের নেয়ামত ছাড়া অন্যান্য নেয়ামত একদিক থেকে নেয়ামত হিসাবে ধরা হবে যদিও তা পরিপূর্ণ নিয়ামত বলা যায়না।

আর যে দ্বীনের নেয়ামত দ্বারা ধন্য হওয়া প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব তা হলোঃ আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া, চাই সে সমস্ত নির্দেশাবলী অবশ্য করনীয় নির্দেশ হোক বা দিক নির্দেশনা পূর্ণ নির্দেশই হোক। আর এই কামিয়াবীর পথই প্রত্যেক মুসলমানকে খুজতে হবে। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্কীদা মতে আল্লাহই ভাল কাজ করার এবং ভাল হওয়ার মত নেয়ামত প্রদান করেন। আর যারা ভাগ্যকে অস্বীকার করে তাদের নিকট প্রত্যেকে ভাল কাজ ও মন্দ কাজ করার ক্ষমতা রাখে, তবে ভাল কাজ করার ক্ষমতা বেশী হওয়াই তার জন্য নেয়ামত হিসাবে ধরা হবে। (এ মত শুদ্ধ নহে)।

মোট কথাঃ সৃষ্টি জগতের একে অপরের কাছে কিছু চাওয়া, চাই তা ওয়াজিব বস্তু হোক, বা মুস্তাহাব বস্তুই হোক, এই চাওয়া আল্লাহ তা'আলা ঐ সময়েই অনুমোদন করেন যখন এ চাওয়াতে তার (প্রার্থনাকারীর) কোন সুনির্দিষ্ট স্বার্থ থাকবে।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বান্দার কাছে একমাত্র তার কাছেই কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করুক এটাই চান। সুতরাং অন্য কারো কাছে সেটা কিভাবে চাইতে বলতে পারেন? বরং অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ব্যাতিরেকে মানুষের জন্য একে অপরের কাছে কিছু চাওয়া হারাম করেছেন।

সুতরাং (যদি কেউ অন্য কাউকে দুআ' করতে বলে তখন) যদি তার উদ্দেশ্য থাকে যে, দুআ'কারীর স্বার্থ অথবা দুআ' যার জন্য করা হয়েছে, এবং দুআ'কারী উভয়েরই যুগপৎ স্বার্থ অর্জিত হবে, তবে সে এ দুআ' চাওয়া দ্বারা আল্লাহর দরবারে সাওয়াবের অধিকারী হবে। আর যদি (তার দুআ' চাওয়া দ্বারা) শুধুমাত্র তার নিজের স্বার্থ সিদ্ধিই উদ্দেশ্য হয়, যার কাছে দুআ' চাওয়া হয়েছে সে ব্যক্তির কোন প্রকার স্বার্থ হাসিল হোক এটা তার মনে না আসে তবে এটা শরীয়ত সম্মত দুআ' চাওয়া নহে, ফলে এতে দুআ'প্রার্থী কোন সওয়াবের অধিকারী হবেনা। আর এ রকমের দুআ' চাওয়া আল্লাহ তা'আলা কক্ষনো অনুমোদন করেন না। বরং তার থেকে নিষেধ করেন। কারণ এটা শুধু তার নিজ স্বার্থ সিদ্বির প্রচেষ্টা, যিনি তার জন্য দুআ' করবেন তার কোন স্বার্থের খেয়াল রাখা হয়নি।

আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তার ইবাদত করতে, তার দিকে ধাবিত হতে, তার বান্দাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সুতরাং শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য অপরকে দুআ' করতে বলে তার কাছে যে চাওয়া হলো তা শরীয়ত সম্মত কিভাবে হতে পারে?)।

তবে যদি কারো কাছে দুআ' চাওয়া দ্বারা কোন কিছুই উদ্দেশ্য না থাকে (প্রার্থিত বা প্রার্থনাকারীর স্বার্থ কোনটাই উদ্দেশ্য না হয়) আল্লাহর ভালবাসার আকাংখা, তাঁর অনুরাগী হওয়ার বাসনা না থাকে (যা নামাজ দ্বারা অর্জিত হয়), বা মানুষের প্রতি দয়ার ইচ্ছা না হয় (যা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে থাকে) তাহলে সে যদিও এ রকম চাওয়া, দুআ' দ্বারা গুনাহগার হবেনা, কিন্তু এর মাঝে এবং যাতে উপরোল্লেখিত বস্তু সমুহ সম্বলিত থাকবে তার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, কারণ এখানে একটা পার্থক্য লক্ষ্যনীয় যে, কোন কোন বিষয় সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দেন, আবার কোন কোন বিষয় করার অনুমতি দেন, এতদোভয়ের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তাদের বিশেষত্ব হলো, তারা কারো কাছে ঝাঁড় ফুঁক চায়না যদিও ঝাঁড়, ফুঁক গ্রহণ করা জায়েয।

এখানে একথা বলা উদ্দেশ্য যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার বান্দার মাঝে রাজা ও প্রজার মাঝে যে রকম মাধ্যম থাকে সে রকম কিছু মাধ্যম সাব্যস্ত করবে সে আল্লাহর সাথে শরীক করল এবং মুশরিক হলো। বরং তাদের এ সমস্ত কর্মকান্ড দ্বারা তারা আরবের পৌত্তলিক মুশরিকদের দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে যারা (তাদের উপাস্য দেবদেবীসমুহ দেখিয়ে) বলত যে, এগুলো (মুর্তি) নবীদের এবং নেক্কার লোকদের প্রতিমুর্তি মাত্র, এরা এমন কিছু মাধ্যম যাদেরকে মাধ্যম ধরলে আমরা আল্লাহর নৈকট্য পাব। {টিকা: আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (আর যারা আল্লাহ্‌ ছাড়া অনেক অভিভাবক গ্রহণ করেছে (এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো ) আমরা তো কেবল আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তারা তাঁর নৈকট্যে পৌঁছাবে এ বিশ্বাসে এদের ইবাদত করে থাকি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদের ঝগড়ার মিমাংসা করবেন নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা‘আলা মিথ্যুক, অস্বীকারকারী এবং কাফিরদের হেদায়েত দেন না (সূরা আয-যুমার - ৩)} এরকম বলা ও বিশ্বাস করা শির্ক তথা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে তার ইবাদত ও সার্বভৌমত্বে শরীক করারই নামানতর। আল্লাহ তা'আলা নাসারাদের এ মতকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে বলেন: (তারা তাদের আলেম ও আবেদ দেরকে আল্লাহ ছাড়া তাদের রব (হালাল-হারামকারী) বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে শুধু এক মা'বুদ (আল্লাহ) এর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তিনি ব্যতীত আর কোন যথার্থ মা'বুদ নেই, তারা তাঁর সাথে যাদেরকে অংশীদার বানাচ্ছে তার থেকে তিনি কতইনা পবিত্র!)। {সূরা আত্-তাওবাহ্: ৩১}

আল্লাহ আরো বলেন: (আর যখন আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন): নিশ্চয়ই আমি নিকটে। আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই, যখনি সে আমাকে আহবান করে। সুতরাং আমার ডাকেই তারা সাড়া দিক, (আমার কাছেই তারা দুআ' কবুলের কামনা করুক) আর আমার উপরই তারা ঈমান আনুক যাতে করে তারা সঠিক পথ পেতে পারে)। {সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৬}

অর্থাৎ আমি যখন তাদেরকে আদেশ বা নিষেধের ডাক দিব তখন যেন তাতে তারা (আনুগত্যের মাধ্যমে) সাড়া দেয়, আর আমার উপর একথা বিশ্বাস করুক (ঈমান রাখুক) যে, তারা যদি কাকুতি মিনতি ভরে আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিব।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (সুতরাং যখনি আপনি অবসর হবেন তখনি তাঁর ইবাদতে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করুন, আর আপনার প্রভুর প্রতিই অনুরাগী হোন।) {সূরা আশ্-শারাহ্: ৭-৮}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন : (আর যখন সাগর বক্ষে তোমরা বিপদগ্রস্থ হও তখন তিনি ব্যতীত অপর যাদের তোমরা ডেকে থাক তারা (যেন) হারিয়ে যায়।) {সূরা আল-ইসরা: ৬৭}

তিনি আরো বলেন : (বলতো কে বিপদগ্রস্থ যখন তাকে ডাকে তখন তার আহবানে সাড়া দিয়ে তাকে বিপদমুক্ত করেন? এবং কে তোমাদেরকে যমীনে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন?) {সূরা আন্-নমল: ৬২}

তিনি আরো বলেন : (আসমান ও জমীনে যারা আছে তারা তার কাছেই চায়, প্রত্যেক দিন তিনি (আল্লাহ) কোননা কোন কাজে আছেন।) {সূরা আর্-রহমান: ২৯}

অর্থাৎ দুআ' কবুল করেন, গুনাহ মাফ করেন, কাউকে সম্মানিত করেন, আবার অন্য কাউকে অসম্মানিত করেন ইত্যাদি।

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে তার একত্ববাদের কথা বর্ণনা করেছেন, সাথে সাথে যাবতীয় শির্কের মুলোৎপাটিত করেছেন। যাতে করে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করে, তাঁর কাছ ছাড়া অন্য কারো কাছে কোন কিছুর কামনা বা আশা না করে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপরে ভরসা না করে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করোনা, আমাকে ভয় করো, আর আমার আয়াতের (শরয়ী আয়াত বা নিদর্শনাবলী যেমন কুরআনের আয়াত সমুহ, অথবা প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী এগুলোর) বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করোনা।) {সূরা আল-মায়িদাহ্: ৪৪}

আরো বলেন : (শয়তান শুধু তোমাদেরকে তার মুরুব্বীদের ভয় দেখাচ্ছে অতএব যদি তোমরা ঈমানদার হও তাহলে তাদেরকে ভয় না করে আমাকেই ভয় করো।) {সূরা আলে-ইমরান: ১৭৩}

অর্থাৎ শয়তান শুধুমাত্র মুরুব্বী, বন্ধু, অনুসারীদের অনিষ্টের ভয়ই তোমাদের দেখাচ্ছে। (তাদের ভয় পেওনা।)।

আল্লাহ তা'আলা আরোও বলেন : (আপনি কি এদের দেখেননা যাদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের হাত নিয়ন্ত্রণ করো, (আক্রমণ করোনা) নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর, অতঃপর যখন তাদের উপর জি্বহাদ ফরজ করা হলো তখন তাদের মধ্যকার একদল লোক আল্লাহ তা'আলা কে যে রকম ভয় করা উচিত, মানুষ (কাফের) দেরকে সে রকম ভয়, কিংবা তার চেয়েও বেশী ভয় পেতে লাগল।) {সূরা আন্-নিসা: ৭৭}

তিনি আরো বলেন : (নিশ্চয়ই আল্লাহর মসজিদ সমুহ কেবল ঐ লোকই আবাদ করে যে আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে ভয় করেনা।) {সূরা আত্-তাওবা: ১৮}

আরো বলেন : (আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহকে ভয় পাবে, এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে, তারাই সফলকাম হবে।) {সূরা আন্-নূর: ৫২}

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আনুগত্য হবে আল্লাহর ও তার রাসূলের, কিন্তু ভয় ও তাকওয়া শুধুমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে।

তিনি আরো বলেন : (আর যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূল যা তাদের দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকত, এবং বলতঃ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আমাদেরকে আল্লাহ তাঁর রহমতে আরো বাড়িয়ে দিবেন, আর তাঁর রাসূলও আমাদেরকে প্রদান করবেন।) {সূরা আত্-তাওবা: ৫৯}

অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (যাদেরকে লোকেরা বলল যে, নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্ধে অনেক লোক একত্রিত হয়েছে, তোমরা তাদের ভয় করো, তখনি এ কথা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দিল এবং তারা বললঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা ভাল কার্য সম্পাদন কারী)। {সূরা আলে-ইমরান: ১৭৩}

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উম্মতের জন্য তাওহীদের বাস্তব প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। তাদের সামনে থেকে শির্কের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন যাবতীয় পথ রুদ্ধ করে গেছেন। আর এটাই মুলতঃ কালেমা তাইয়্যেবা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোন ইলাহ - মাবুদ নেই) এর বাস্তব রুপ। কেননা "ইলাহ" বা মাবুদ বলতে তো সেই স্বত্বাকেই বুঝায় যাকে অন্তরের যাবতীয় পরিপূর্ণ ভালবাসা, সম্মান, শ্রেষ্টত্ব, মর্যাদা, ভয় ও আশার মাধ্যমে উপাসনা করা হয়।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে সাহাবাদের বলেছেনঃ (তোমরা একথা বলোনা যে, যা আল্লাহ, এবং যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছা করেছেন, বরং এভাবে বলো যে, যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছা করেন। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদ বর্ণনা করেছেন।}

অন্য একজন তাঁকে বললঃ যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন, এবং আপনি ইচ্ছা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছ? বল : যা কেবলমাত্র আল্লাহ ইচ্ছা করেন।)। {হাদীসটি ইমান নাসায়ী তার সুনানে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আরো বলেন : (যে শপথ করতে ইচ্ছা করে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, নতুবা চুপ থাকে)। {বুখারী, মুসলিম}

আরো বলেন : (যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করবে সে অবশ্যি শির্ক করলো)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আর ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেনঃ (যখন তুমি কোন কিছু চাইবে তখন শুধু আল্লাহর কাছেই চাইবে, আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে, তোমার জন্য যা বরাদ্ধ তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে, সমস্ত সৃষ্টি জগত যদি তোমার ভাল করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, তবুও আল্লাহ যা লিখেছেন তার বাইরে তোমার জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারবেনা, আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করার শত চেষ্টাও করে তার পরও তোমার ভাগ্যের লিখার বাইরে তোমার ক্ষতি সাধন করতে পারবেনা।) {তিরমিযী (বিশুদ্ধ)}

আরো বলেছেনঃ (খ্রীষ্টানরা যেভাবে মরিয়ম পুত্র ঈসার ব্যাপারে সীমলংঘন করেছে তোমরা সেভাবে আমার প্রশংসায় সীমালংঘন করোনা, কেননা আমিতো কেবলমাত্র একজন দাস- বান্দাহ, সুতরাং তোমরা বলঃ আল্লাহর বান্দা (দাস) ও তাঁর রাসূল।) {সহীহ্ বুখারী}

আরো বলেন : (হে আল্লাহ ! আমার কবরকে পুজা করা হয় এমন প্রতিমায় পরিণত করোনা)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আরো বলেন : (তোমরা আমার কবরকে সম্মিলন স্থল পরিণত করোনা, আর আমার উপর দরূদ পড়তে থাক, কেননা তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

তিনি তাঁর মৃত্যু শয্যায় বলেছিলেন : (ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লানত পতিত হোক, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মাসজিদে রূপান্তরিত করেছে)। এর দ্বারা তিনি তারা যা করেছে তা থেকে দুরে থাকার জন্য লোকদের সাবধান করে দিচ্ছেন, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : যদি এ সমস্ত কর্মকান্ড হওয়ার ভয় না থাকতো তাহলে তাঁর (রাসূলের) কবরকে প্রকাশ্য স্থানে দেয়া হতো, কিন্তু তার কবরকে মসজিদে রুপান্তরিত করার ভয় করা হচ্ছিল। {বুখারী, মুসলিম}

এ বিষয়টি এতই ব্যাপক যে, এখানে তা লিখে শেষ করা যাবেনা।

মু'মিন ব্যক্তি মাত্রই জানে যে, আল্লাহ তা'আলা সব কিছুর রব, পালনকর্তা ও মালিক। তবে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত উপায় উপকরণাদি, এবং কোন কিছু সংঘটিত হওয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ কারণও সৃষ্টি করেছেন তা অস্বীকার করা যায়না, যেমনঃ উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিকে আল্লাহ তা'আলা কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন, মু'মিন মাত্রই তা স্বীকার করে, আল্লাহ তা'আলা বলেন: (আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি অবতীর্ণ করেন তা দ্বারা ভূমিকে মৃতু্যর পর জীবিত করেন, আর জমীনে ছড়িয়ে দেন যাবতীয় জীব জন্তু)। {সূরা আর-বাকারাহ্: ৬৪} অনুরূপভাবে বিভিন্ন বস্তুর সৃষ্টির কারণ হিসাবে চাঁদ ও সূর্যকে নির্ধারণ করেছেন।

তেমনিভাবে শাফায়াত ও দুআ'কে (এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তা হাসিলের) উপায়, উপলক্ষ, বা উপকরণ হিসাবে স্থির করেছেন,) যেমন মৃত ব্যক্তির লাশের উপর নামাজ আদায় করা, এটাকে আল্লাহ তা'আলা তার রহমত লাভের উপায়, আর মুসল্লীদের জন্য সওয়াবের ভাগী হওয়ার উপকরণ হিসাবে অনুমোদন করেছেন। (তবে এ ব্যাপারে মূল কথা হলোঃ এ সমস্ত মাধ্যম, উপায়, উপকরণ শরীয়ত কতৃক স্বীকৃত ও নির্ধারিত হতে হবে।)

জায়েয উপায় অবলম্বন, আর হারাম উপায় অবলম্বন

কোন কিছু অর্জনের জন্য উপায় অবলম্বন, বা স্বার্থ সিদ্ধির উপলক্ষ নির্ধারনে তিনটি ব্যাপার জানা অত্যাবশ্যক:

এক : এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, এ সমস্ত উপায় উপকরণ সমূহ অবলম্বন উদ্দেশ্য হাসিলে স্বয়ংসম্পূর্ণ নহে, বরং এর সাথে অন্যান্য বেশ কিছু উপকরণ যোগ হতে হবে, এতদসত্বেও তা অর্জনে বাধা বিঘ্নও আছে, তা দূরীভূত হতে হবে, ফলে যখন সর্ব প্রকার উপকরণের কোর্স পূর্ণ না হয়, এবং বাধা সমুহ দূরীভূত না হয়, তখন সে উদ্দেশ্য হাসিল হয়না, বা সে বস্তু অস্তিত্বে আসেনা।

অথচ আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, যদিও মানুষ তা ইচ্ছা না করুক, আর মানুষ যা চায় তা আল্লাহর ইচ্ছা না হলে কক্ষনো হবে না।

দুই : কোন বস্তুকে কোন বিষয় অর্জনের ক্ষেত্রে উপায়- উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করতে হলে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অকাট্য জ্ঞান থাকতে হবে, নতুবা তা উপায় হিসাবে বিশ্বাস করা জায়েয হবেনা। সুতরাং কেহ বিনা দলীলে কোন উপায় নির্ধারণ করলে বা শরীয়তের নিষিদ্ধ পন্থায় কোন কিছু অর্জনের উপায় উপকরণ অবলম্বন করলে তা বাতিল হতে বাধ্য, যেমনঃ কেহ যদি ধারণা করে যে, মানত করা বালা মুসিবত, বিপদাপদ দুরীকরণে বা কোন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে, নেয়ামত লাভের উপায় হবে, তার এ ধারনা প্রত্যাখ্যাত হবে, কারণ বুখারী ও মুসলিমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মানত করার নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তিনি বলেছেনঃ (মানত কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, অর্থাৎ ভাল করার কোন ক্ষমতা মানতের নেই, বরং কৃপনের থেকে তা কিছু বের করে আনে মাত্র।)

তিনঃ ধর্মীয় কোন কাজে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন উপায় উপকরণ শরীয়ত সম্মত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে তা উপায় উপকরণ হিসাবে স্থির করা যাবেনা, কেননা ইবাদতের মূল ভিত্তি হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কতৃক নির্দিষ্ট পন্থা (অর্থাৎ যা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তার উপরই শুধু নির্ভর করা) সুতরাং কোন মানুষের জন্য এটা জায়েয হবেনা যে, সে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে, আর তাকে আহবান করবে, যদিও সে মনে করে যে, এটা তার কতক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য উপায় উপকরণ অবলম্বন মাত্র। আর এ জন্যই শরীয়ত বিরোধী বিদ'আত দ্বারা আল্লাহর ইবাদাত করা যাবেনা, যদিও বিদআতকারী মনে করে যে, সে ইবাদত করছে, এবং এতে তার উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে; কেননা কখনো কখনো শয়তান কোন মানুষকে যখন সে শির্ক করে তখন তার উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়তা করে থাকে, আবার কখনো কখনো কুফরী, নাফরমানী, দ্বারা মানুষের কিছু কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, কিন্তু তাই বলে তা করা জায়েয হয়ে যাবে না; কেননা এর মাধ্যমে যে সুবিধা সে অর্জন করছে তার থেকে অনেক বেশী গুণ ক্ষতির সম্মুখীন তাকে হতে হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় ক্ষতিকারক, অনাসৃষ্টিতে সহায়ক, ফাসাদ সৃষ্টিকারক বস্তু বন্ধ করতে, বা পারত পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করতে ও কমাতে তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণ করেছেন, সুতরাং আল্লাহ যা কিছুর নির্দেশ দিয়েছেন তা উপকারী হওয়াই মুখ্য, আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা ক্ষতিকারী, বা তাতে অপকারী দিকটাই প্রধান।

এ বিষয়টি আরো অনেক বেশী ব্যাখ্যার দাবী রাখে কিন্তু এ সামান্য কিছু কাগজে তার স্থান সংকুলান সম্ভব নয়।

আল্লাহ সবচেয়ে বেশী জানেন।

সমাপ্ত

অনুবাদক পরিচিতি: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

এম.এম (ঢাকা), লিসান্স, এম.এ, এম.ফিল, পি এইচ, ডি (মদীনা)

সহকারী অধ্যাপক, চেয়ারম্যান, আল-ফিকহ বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়, কুষ্টিয়া

বাংলাদেশ

বইটি প্রকাশ ও প্রচারে

ইমাম ইবনে তাইমিয়া ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।

বিষয়: বিবিধ

২২৭৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

171809
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:১২
তহুরা লিখেছেন :
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৫৪
125582
হতভাগা লিখেছেন : এভাবে বসার স্টাইল ঠিক হয় নাই ।

এখানে স্বামীর ২ টি স্ত্রী বলে মনে হতে পারে , উল্টোভাবে স্ত্রীরও ২ টি স্বামী বলার মতও পরিস্থিতি আছে ।

স্বামী-স্ত্রী-স্ত্রী-স্বামী-স্বামী-স্ত্রী-স্ত্রী-স্বামী-.....

এভাবে বসাতে পাড়তো ।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১৯
125615
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ইজতেমার বিয়েতে কি এভাবে ছেলে মেয়েদের বসানো হয়? আমি যতদূর জানি – এভাবে বসানো হয় না।
171851
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০৪
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ প্রত্যেকের বিচার আলাদা আলাদা ভাবে করবেন , মাধ্যমের মাধ্যমে নয় ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File