উদ্দেশ্য ছিল একটাই পিন্ডি থেকে মুক্ত বাংলাদেশ দিল্লির পদানত
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:১৩:১০ দুপুর
১৯৭২-এর ২ অগাস্ট। ঠিক আট মাস আগেই শেষ হয়েছে ১৩ দিনের ভারত-পাক যুদ্ধ। এদিন দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সিমলা চুক্তি। আর ফলে ভারত ৯৩০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। ৭১-এর যুদ্ধ চলাকালীন এদের বন্দি করা হয়েছিল ভারতে। এটা ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত একটি সিদ্ধান্ত।
ভারতীয় কূটনীতিকের বর্ণনা -
কিসের জন্য ইন্দিরা? সেই রহস্য উদঘাটন করেছেন এক অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
THE WIRE পত্রিকায় তিনি লিখেছেন সেই ইতিহাস। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করে ঢাকায়। ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা। ভারত আর বাংলাদেশের জন্য সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কিন্তু সেইসময় ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত অন্য এক বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। একদিকে, যুদ্ধের বিপুল খরচ, তার উপরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা প্রায় ১ কোটি শরণার্থী, যারা পাক সেনার অত্যাচারে সীমান্ত পার করে চলে এসেছিল তাদের খরচ। তার মধ্যে বাড়তি খরচ এই ৯৩০০০ পাক সেনা।শিমলা চুক্তির মাধম্যে ভারত আদায় করে নেয় সকল খরচ।
ইন্দিরা গান্ধীর মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল, কিভাবে সেকথা তিনি একজনকেই বলেছিলেন। তিনি হলেন তৎকালীন RAW প্রধান রাম নাথ রাও। তাই মুজিবর রহমানকে ভারত না পেলে ভারতের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। এটাই ছিল ভয়।
এদিকে, পরাজয়ের অপমান সহ্য করতে না পেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহা খান। আমেরিকায় থাকা জুলফিকর আলি ভুট্টোকে ফোন করে সেকথা জানান। দায়িত্ব দিয়ে যান ভুট্টোকেই। তড়িঘড়ি রাওয়ালপিন্ডির বিমান ধরেন ভুট্টো।
ইন্দিরার কূটনীতি:
ভুট্টোর ফেরার খবর পেয়েই জরুরি মিটিং ডাকেন ইন্দিরা গান্ধী। ভুট্টোর বিমান রিফুয়েলিং-এর জন্য থামার কথা ছিল হিথরো বিমানবন্দরে। ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন, সেইসময় সেখানে উপস্থিত থাকুক কোনও ভারতীয় প্রতিনিধি। যাতে তিনি জানতে পারেন, মুজিবর রহমানকে নিয়ে কি ভাবছেন তিনি? সেই বৈঠকে ছিলেন বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা দূর্গা প্রসাদ ধর, RAW প্রধান রাম নাথ কাও, প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পিএন হাসকার, বিদেশ সচিব টিএন কাউল।
মুজফ্ফর হোসেন, পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ভারতে যুদ্ধবন্দি হন এবং ডিপি ধরের বাড়িতে অতিথির মর্যাদায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন লন্ডনে। ফলে সেইসময় কূটনীতিকদের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন স্বামী-স্ত্রী। অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনিই দু’জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন ফলে দু’জনের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। লায়লা ছিলেন ভুট্টোর একসময়ের বান্ধবী। সেই লায়লাকেই কাজে লাগান ইন্দিরা। ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে পাঠান লায়লাকে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই।
মুজিবরকে নিয়ে কি ভাবছেন সেটা জানা। এই শশাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ই লায়লাকে জানান, তিনি আতে হিথরো বিমানবন্দরে গিয়ে একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভুট্টোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে ভারত থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে। সেইমত এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে দেখা হয় দু’জনের। কথাবার্তা শেষে লায়লাকে কাছে টেনে তাঁর কানে কানে একটা বার্তা দেন ভুট্টো। বলেন, ‘লায়লা আমি জানি, তুমি কি জানতে এসেছ। একটা মেসেজ দিও ইন্দিরা গান্ধীকে। কি চাইব? সেটা পরে জানাব।’
বার্তা জানান লায়লা। তবুও সন্দেহ দূর হয় না। ভারতকে ভুল পথে চালিত করছেন না তো ভুট্টো ? কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সন্দেহের অবসান হল। খবরটা সত্যি সেটাই জানা গেল। চাওয়া হল ৯৩০০০ যুদ্ধবন্দিকে। ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি মুজিবর রহমান ।পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তিনি।
ইন্দিরা গান্ধী শুরু করেন বাংলাদেশ নিয়ে গোলামী চুক্তির খেলা। শেখ মুজিব ৪০ বছরের গোলামী চুক্তিতে সই করেন। পিন্ডি থেকে মুক্ত বাংলাদেশ হয়ে গেলো দিল্লির পদানত।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন