আওয়ামীলীগের নেতাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডনীয় রায় দেবেন ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৪:৩২ দুপুর
আওয়ামীলীগের নেতাদেরকে আদালত কি এখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ রায় দেবেন ? সংসদ ভেঙে কি এখন তাদের অবৈধ ঘোষণা করবেন ?
বাংলাদেশের আইনে কি বলে দেখুন -
এইসব হুমকি-ধমকী দিয়ে তারা সংবিধানে বর্ণিত বিচার বিভাগের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয়কে পরাহত করেছেন। যা সংবিধানের ৭ক(২) অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। যা মৃত্যুদণ্ডের সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ।
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আইন হিসেবে গণ্য এবং তা সকলের ক্ষেত্রেই মানা বাধ্যতামূলক। তাহলে, এইসকল প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কি আইনের উর্ধে?
অতীতে আওয়ামীলীগের নেতারা আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করেছিল। তাদের বিচার কোন আদালত করেনি। এমনকি আদালতের ইজ্জত ও নষ্ট হয় নাই।
এবার দেখুন আওয়ামীলীগের নেতাদের দাম্ভিকতা -
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধী বাতিলের রায় নিয়ে লাফালাফি করার কিছু নেই। কোর্ট আপনাদের ক্ষমতায় বসাবে না। তাহলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই কেন আদালতের রায়ের উপর লাফ দিয়ে তত্ববধায়ক সরকার কেন আওয়ামীরা বাতিল করেছিল - বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণের প্রশ্ন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই হঠাৎ করেই সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে নৈশভোজে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেন।
আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধী বাতিলের রায় রেশ যেন রাষ্ট্রের ওপর না পড়ে সে জন্য সঙ্কটের সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে তার বাসায় নৈশভোজে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন - ‘আদালতের হাত এত বড় লম্বা হয়নি যে সংসদ ছুঁতে পারে।’ 'সংসদ নিয়ে ধৃষ্টতা দেখানোর অধিকার কারও নেই।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। আজকে অনেকেই অনেক রকমভাবে আকারে ইঙ্গিতে ইতিহাস বিকৃতি করতে চায়। এরাও একই গ্রুপের লোক, তা বলতে আমার দ্বিধা নেই।’শেখ সেলিম বলেন, ‘ক্ষমতার কোনো চেয়ারে বসে যা খুশি তাই করবেন-তা করা যায় না। এ দেশের জনগণ সময় মত সঠিক উত্তর দেবে।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত-
'আদালত যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করবে, আমরা ততবার সংসদে বিল পাস করব। তা আমরা অনবরত করতে থাকব। দেখি জুডিশিয়ারি কত দূর যায়।'
'জুডিসিয়াল কন্ডিশন আনটলারেবল। সংসদের উপর তারা পোদ্দারি করবে। এদেরকে আমরা চাকরি দেই।'
গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন-
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে যা বলছেন, তা ঠিক নয়। বাংলার মানুষ জানে, আপনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।’
বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তার (প্রধান বিচারপতি) যদি সামান্যতম জ্ঞান থাকে, সামান্যতম বুঝ থাকে, তাহলে তার স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া উচিত। তা না হলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন। এখন আর চোখ বুজে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর কোনো রক্তচক্ষু সহ্য করব না। অবশ্যই আমরা তার অপসারণ চাই।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন-
'সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধুর প্রতি কটাক্ষ করার ‘ধৃষ্টতা’ দেখিয়েছেন।' এ রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ব্যাপকভাবে অসাংবিধানিক ও অনৈতিক কথাবার্তার অবতারণা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এমনকি রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেননি, আমরা ধিক্কার জানাই।'
তুমি অবৈধ চিফ জাস্টিস
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘পার্লামেন্ট যদি অবৈধ হয়, তোমার নিয়োগও অবৈধ। কারণ এ পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে। সে রাষ্ট্রপতি তোমাকে নিয়োগ দিয়েছে। তোমার নিয়োগ অবৈধ, তুমি অবৈধ চিফ জাস্টিস।’
আইনজীবীদের বক্তব্য -
প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য দিতে পারেন কিনা- জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রীর কামরুল ইসলামের এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নীতিনৈতিকতা ও শিষ্টাচারের দৈন্যতাই ফুটে উঠেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এ ধরনের ব্যক্তিরাই বছরের পর বছর মন্ত্রী পদে বহাল থাকেন।’ এই বক্তব্য দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী আদালত অবমাননা করেছেন কিনা জানতে চাইলে ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘যাদের নিজেদের আত্মসম্মান বোধ নাই, তাদের পক্ষে অন্যের মানসম্মানের বিষয়টা অনুধাবন করা অসম্ভব।’
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুূল হোসেন বলেন, ‘দেশে এখন ভদ্রতা, শিষ্টাচার এগুলো এখন নাই। এই নিয়ে চিন্তা করে লাভ নাই। নির্বাচন ছাড়া এই ধরনের একটা সরকারকে যে জাতি সহ্য করতে পারে, তাদের তো এগুলো সহ্য করতেই হবে। একজন মন্ত্রী প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। পাগলের দেশেও এটা হয় না। আমরা একটা অসভ্য ব্যবস্থার মধ্যে আছি।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধী বাতিলের রায় নিয়ে লাফালাফি করার কিছু নেই। কোর্ট আপনাদের ক্ষমতায় বসাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তিনি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই মন্তব্য করেন।
তার স্ট্যাটাসটি আরটিএনএন পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:- ‘আমার ধারণা বিচারপতি খায়রুল হকের এজেন্ডা হচ্ছে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়া!’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিচারপতি খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে যেসব কথা বলছেন তা আদালত অবমাননাকর। এ জন্য খায়রুল হকের বিরুদ্ধে এখনই কিছু করা দরকার। তাকে বিচারের আওতায় আনা দরকার।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আযোজন করে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আদালত অবমাননার জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হয়েছে। আমি আদালত অবমাননা করিনি। অবমাননা করেছেন বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং অর্থমন্ত্রী। তাদেরও বিচার হওয়া দরকার।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন