ভ্যান গাড়ী এবং বিশাল বিমান বহর ভ্রমণ।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪১:১৯ রাত



বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্রতম দেশ। দেশের অনেক মানুষ এখনও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।সেই দেশের হয়ে জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে যোগ দিতে শেখ হাসিনার বিশাল বিমান বহর ভ্রমণ।

১০১ জন (প্রকৃতপক্ষে ১১৯ জন) বৃহৎ বিশাল বহর নিয়ে শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনে যোগ দেন।

জাতিসঙ্ঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে যান । ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদের কোনো দেশেরই রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের প্রতি বছর সাধারণ পরিষদে যোগদানেরও কোনো নজির নেই।

এবার ২২১ জনের বিশাল বহর নিয়ে নিউ ইয়র্কে গেলেন হাসিনা। গতবার অবশ্য এ সংখ্যা ছিল ১৮০।

তার এই সফরসঙ্গীর বিশাল বাহিনী মন্ত্রী পরিষদ, পরিবারের সদস্যবর্গ, নিরাপত্তাকর্মী, রাজনৈতিককর্মী, আমলা-কামলাসহ যাদের মধ্যে ৭১জন গিয়েছেন সরকারী খরচে।

(সূত্র : বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০)

প্রতিনিধিদের সংখ্যা নিয়ে কিছু তথ্য জাতিকে স্বরণ করিয়ে দিতে চাই। ১৩৪ জনের কথা স্বীকার করা হলেও মূলত ছিল ১৪০একটি দল যদি নিউইয়র্কের মত শহরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যান তাহলে ?

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, শেখ হাসিনার সফর সঙ্গীদের জন্য নিউইয়র্কে অত্যন্ত ব্যয়বহুল গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে ৬১টি এবং ম্যানহাটনের হ্যাম্পটন হোটেলে ৬টি বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের অধিকাংশই সিঙ্গেল রুমে থাকবেন। তবে গণমাধ্যম ও জুনিয়র কর্মকর্তারা ২ বেডের কক্ষে অবস্থান করবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে যারা নিউইয়র্ক গেছেন তাদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন, শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ছাড়াও সরকারি দল, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির ৯ জন এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক জোট ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নেয়া ১৮ জন, খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব (?), কবি, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাছাইকৃত এটিএন নিউজের মুন্নি সাহাসহ ৫ জন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ৪১ জন ব্যবসায়ী প্রমুখ।

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩

১৪০ জনের বিশাল লটবহর নিয়ে শেখ হাসিনার আমেরিকা ভ্রমন -২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩

২০০৯ সালে তিনি ৮১+১২ জন, ২০১০ সালে ১০২ জন, ২০১১ সালে ৮৭ + ১৯ জন, ২০১২ সালে ৮৯+ ১৩ জন এবং ২০১৩ সালে ১৪৮ জন নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেন ।

আওয়ামীলীগের সরকারি সূত্র কখনই অগ্রবর্তী দলের হিসাব প্রকাশ করেনি।যদি তা যোগ করা হয় তাহলে বিশাল ভ্রমণের বহর আরো বাড়বেই।

জাতিসংঘ সফরসহ ৪৮টি বিদেশ সফরে তিনি কত টাকা ব্যয় করেছেন, শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বিদেশ সফরে কত টাকা ব্যয় করেছেন এবং দেশ তাদের এই সফর থেকে কতটুকু লাভবান হয়েছে আমরা আশা করি সরকার দেশবাসীকে তা জানাবেন। শেখ হাসিনার সরকারি সফরসঙ্গী হিসেবে মারাত্মক খুনি ও অপরাধীরাও বিদেশ গেছেন।

এক হিসাব অনুযায়ী নিউইয়র্ক শহরের মাঝারি মানের হোটেলসমূহে অবস্থান করতে গেলেও তাদেরকে দৈনিক সিট ভাড়া বাবদ ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া আছে তাদের পকেট এলাউন্স, খাবার ও পানীয় বাবদ খরচ। এই বাবদ যদি আরো ১৩ লাখ টাকা ধরা হয় তা হলে দৈনিক খরচের পরিমাণ আসে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। প্রতিনিধি দল যদি নিউইয়র্কে ৬ দিন অবস্থান করে তাহলে মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর সাথে বিমান ভাড়া যোগ করলে মোট খরচ হবে ৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। এই খরচের সাথে বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর এসএসএফ নিরাপত্তা বাবদ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আধুনিক সিঙ্গাপুরের অবিসংবাদী নেতা লি কুয়ান ইউ তার আত্মজীবনীমূলক এক গ্রন্থ লিখেছেন। বইটির নাম হচ্ছে, ‘ফ্রম থার্ড ওয়ার্ল্ড টু ফার্স্ট; দ্য সিঙ্গাপুর স্টোরি : ১৯৬৫-২০০০’। লি কুয়ান তার আত্মজীবনী গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে ৩৬৩-৩৬৪ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কাছ থেকে দেখার একটি স্মৃতির কথা বলেছেন এভাবে-

‘অটোয়া সম্মেলনের সময় আরেকজন মানুষকে দেখার কথা স্মরণ করতে পারি, প্রাইম মিনিস্টার শেখ মুজিবুর রহমান।... পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরের নেতা। তিনি নিজস্ব বিমানে চড়ে বেশ ভাব নিয়ে অটোয়ায় এসে পৌঁছান। একটি পাবলিক বিমানে করে আমি যখন ওখানে ল্যান্ড করলাম, গায়ে ‘বাংলাদেশ’ খচিত একটি বোয়িং ৭০৭ থামানো দেখলাম। সম্মেলন শেষে যখন অটোয়া ছেড়ে যাচ্ছিলাম, বিমানটি তখনো ওখানে ঠায় দাঁড়িয়েছিল। আট দিন ধরে এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বিমান! কোনো উপার্জন ছাড়া অনর্থক ও বেকার পড়ে থাকা। ফেরার সময় যখন এয়ারপোর্টের উদ্দেশে হোটেল ছেড়ে বের হচ্ছিলাম বাংলাদেশী বিমানটার জন্য জিনিসপত্র দিয়ে দুইটা বিশাল ভ্যান বোঝাই করা হচ্ছিল। অথচ সম্মেলনে মুজিবুর রহমান তার দেশের জন্য শুধু সাহায্য আর অনুদান চেয়েই কথা বলছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৬৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ১৮০ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে নিউইর্য়ক গিয়েছিলেন। এই সফরে একজন সফরসঙ্গীর পেছনে সরকারের ন্যূনতম ব্যয় পাঁচ লাখ টাকার অধিক হয়েছে। অতীতে কখনও কোনো প্রধানমন্ত্রী এত বিশাল বহর নিয়ে যায়নি। এর পূর্বেও গত বছর ১৪০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক সফর করেছিলেন। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের এত অর্থ ব্যয়ের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা জাতির অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে।

শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আক্রোশে আওয়ামীলীগ সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করেছে,অথচ এই নাম পরিবর্তনে ১ পয়সার ও কোন লাভ হয়নি ।

গত শেখ হাসিনা সরকার আমলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীপু মনি সবচেয়ে বেশি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রায় পাঁচ বছরে তাঁর বিদেশ সফরের সংখ্যা ছিল ১৮০। এ সময় তিনি প্রায় ৬০০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন।

দীপু মনির দপ্তর, তথ্য অধিকার আইনে প্রদত্ত বিবরণী ও ঘোষিত সফরসূচি মতে, প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে (২০০৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশ সফর শুরু করেন) গত ৫৪ মাসে (১০ই জুলাই, ২০১৩ পর্যন্ত) ১৮৭টি সফর করেছেন তিনি। এই সময়ে প্রায় ৬০০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন।

আন্তর্জাতিক গুরুত্বহীন কয়েকটি সেমিনার সম্মেলনে একই কায়দায় বিশাল বহর নিয়ে শেখ হাসিনা ভ্রমণ করেন।

বিষয়: বিবিধ

৩০৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381559
৩০ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৩:৪০
কাঁচের বালি লিখেছেন : সেই মুজিব কালের থেকেই চলছে -----হাসিনার গুষ্টি সহ বিদেশ ভ্রমন তাহলে বাবার কাছ থেকেই পাওয়া বুঝতে পারছি
381562
৩০ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৮:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : ভ্যান চালককে নাকি বিমানবাহিনী চাকরি দিয়েছে ?
381574
৩০ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০২:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এখন ভ্যান এ করে যাবে!!!
381603
৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:৫১
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ছাত্রজীবনে মাঝে মধ্যে রিক্সা/ভ্যান চালককে মজা করে পাইলট ডাকতাম। কিন্তু তাদের মধ্যে যে বিমান চালানোর প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে সেটা চিরকাল অজানাই থেকে যেত যদিনা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ভ্যানে না চড়তেন!!
ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File