২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার আওয়ামী বর্বরতার তাণ্ডব দিব। আওয়ামী লীগ এ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহার করে।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৪৭:৩৩ সকাল
১৮ সেপ্টেম্বর ’০৬ পল্টনের মহাসমাবেশ থেকে আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন লগি-বৈঠা-লাঠি নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য। নেতাকর্মীদের বুঝতে বাকি রইল না- কী করতে হবে তাদের।
সেই ২৮ অক্টোবরের প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে হায়েনার মতো উল্লাস প্রকাশের সেই দৃশ্য মনে হলে মানুষ আজও শিউরে ওঠে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাহী আদেশবলে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের সরকার।
সেদিন শুধু ঢাকাতেই নয়, লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা সেদিন সারাদেশে চালিয়েছে এই নারকীয় তান্ডব। ওইদিন লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডবে ঢাকাসহ সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৭ জন। ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ৩ দিনে নিহত হয়েছিল চারদলীয় জোটের ৫৪ নেতাকর্মী।
লগি-বৈঠার তান্ডব কত যে ভয়ঙ্কর, সারা পৃথিবীর মানুষ তা দেখেছিল সেই ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে পল্টন মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্যাডাররা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনেই ৭ জনকে হত্যা করে। আওয়ামী লীগের মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় শুধু হত্যাই নয়, এরপর লাশের ওপর তারা উল্লাস-নৃত্য করে। বিষাক্ত সাপকে যেভাবে পিটিয়ে মারা হয়, সেভাবেই মারা হয়েছিল মানুষকে। সরাসরি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভয়াল সেই দৃশ্য দেখে গোটা বিশ্ববিবেক সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানবতা-মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে লগি-বৈঠাধারী আওয়ামী হায়েনাদের ভয়ঙ্কর বর্বরতার সেই ২৮ অক্টোবর আজ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু সাঈদ পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে একটি পত্র দেয়। ১৭ আগস্ট আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে।
সারাদেশে লগি-বৈঠা নিয়ে মহাজোট নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়ায় এ মামলায় শেখ হাসিনাকে চার্জশিটে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে।
আইন অনুযায়ী যেকোন হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহার করার সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার তাই করেছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন এলাকায় ১৪ দলীয় জোটের লগি-বৈঠা বাহিনীর বর্বরতা অন্ধকার যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিলো। সেদিন লগি-বৈঠা, পিস্তল ও বোমার মাধ্যমে যেভাবে মানুষ খুন করা হয়েছে তা সভ্য সমাজের জন্য একটি কলংকজনক ঘটনা। তাদের পৈশাচিকতা ও বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পায়নি মায়ের কোলের শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং নিরীহ জনগণ। এই সহিংসতার পথ ধরেই ১/১১ সৃষ্টি হয়। তারপথ ধরেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়।
পরদিন (২৯ অক্টোবর) দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়,
কানাডার ‘কানাডিয়ান প্রেস' ও ‘টরেন্টো ডেইলী নিউজ', তুরস্কের ‘তার্কিস', ফ্রান্সের ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরান্ড ট্রিবিউন', ইউএই'র ‘খালিজ টাইমস', আমেরিকার ‘বোস্টন হেরাল্ড' ও ‘ওয়াশিংটন পোস্ট' সহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনীর বীভৎসতার দৃশ্য ফুটে ওঠে।
এ ঘটনায় দেশে বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের হত্যার দৃশ্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। যুক্তরাজ্যে সিএনএন, এবিসি, এনবিসি, সিবিএসসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে পিটিয়ে হত্যার ঐ দৃশ্যটি বারবার প্রদর্শিত হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে রয়টার হেড কোয়ার্টারের ওপর স্থাপিত বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে ওয়ার্ল্ড নিউজের শিরোনামে বাংলাদেশ ঘটনাবলীর মধ্যে ঐ দৃশ্যটি প্রদর্শিত হয়েছে বারবার। আমেরিকানদের অনেকেই সেই ঘটনার বীভৎসতা দেখে বিস্মিত হন।দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়,
‘‘সকাল থেকেই জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অবস্থান করছিল। দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে হাজি সেলিমের সমর্থনে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ কর্মীরা বৈঠা ও লাঠি হাতে বিশাল মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ে আসে। মিছিলকারীদের ‘ধর ধর' বলে জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
হত্যাকান্ড সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়, ‘‘১৪ দলের কর্মীরা তাকে তুলে পল্টন মোড়ে এনে বৈঠা ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে এবং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ১৪ দলের কয়েকজন কর্মী নিহত মুজাহিদের হাত ও নাকে হাত দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে। এক পর্যায়ে ১৪ দলের শত শত নেতাকর্মী নিহত মুজাহিদের লাশকে ঘিরে উল্লাস করে এবং বৈঠা ও লাঠি উঁচিয়ে ‘হৈ হৈ রৈ রৈ জামায়াত শিবির গেল কই' বলে শ্লোগান দেয়।’’
দৈনিক দিনকাল ‘হাসিনার লাঠি বৈঠার উপহার ১৭ লাশ' শীর্ষক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ তার দলের নেতাকর্মী ঠিক ঠিকভাবে পালন করেছে। নেত্রীর নির্দেশ মতো তারা হাতে লগি, বৈঠা আর গজারির লাঠি এবং পকেটে পিস্তল নিয়ে নেমে এসেছিল রাজপথে। গুলী চালিয়েছে নিরীহ মানুষ ও চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বুকে। নেত্রীকে তারা একে একে ১৩টি লাশ উপহার দিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরো কয়েকশ' চারদলের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে অন্তত বিশজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ রিপোর্টটি পাঠকের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত হয়তো লাশের সংখ্যা আরো বাড়বে।’’
পরদিন (২৯ অক্টোবর) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতের সমাবেশস্থল পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তারা ৩জন শিবির কর্মীকে প্রহার ও কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে রাস্তায় ফেলে রাখে।’’
২৯ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘‘বিকেল পৌনে পাঁচটায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে নির্ধারিত মঞ্চে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী বক্তৃতা দিতে উঠলে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা জামায়াতের সমাবেশ লক্ষ্য করে অন্তত ১২টি বোমা নিক্ষেপ করে।’’
নিউইয়র্ক থেকে নিউজ ওয়ার্ল্ড পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ‘‘নিউইয়র্ক বাংলাদেশী অনেকেই তাদের সন্তান-সন্ততিরা যাতে জীবন্ত মানুষ হত্যার দৃশ্য না দেখে সে জন্য টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখাই বন্ধ রেখেছিলেন।’’
‘‘ভারতের ‘হিন্দুস্থান টাইমস' এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের উন্মুক্ত কর্মীরা তাদেরকে পিটিয়ে হত্যা করে।’’
অস্ট্রেলিয়ার দ্যা অস্ট্রেলিয়ান এ উল্লেখ করা হয়, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বাংলাদেশ জুড়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত টানা ৩ দিনের মতো অব্যাহত থাকে। ৪ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত পক্ষে ১৪ ব্যক্তি প্রাণ হারায়।’’
বিষয়: বিবিধ
২৩৪৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দিনবদলের দিন আসবেই ইনশাআল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন