আওয়ামীলীগ এবং জাসদ , বাম সহ অনেকে বলছেন জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংলাপ। কিন্তু সেই জামায়াতের সাথে বছরের পর বছর এক সাথে সংলাপ কি ভুলে গেলেন ?

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৭ জুলাই, ২০১৬, ১০:৫৪:০৫ সকাল



আওয়ামীলীগ এবং জাসদ , বাম সহ অনেকে বলছেন জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে জোট থেকে জামায়াত কে বের করে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয় সংলাপ হবে।

তাহলে আওয়ামীলীগ এবং জাসদ বাম নেতারা যখন জামায়াতের সাথে একসঙ্গে জাতীয় সংলাপ বৈঠক করেন সেই ইতিহাস কি ভুলে গেলেন ? সঙ্গে থাকলে সঙ্গী , না থাকলে জঙ্গি রাজাকার।



আওয়ামী লীগই আবার ১৯৯৪ সালে এসে জামায়াত প্রদত্ত তত্ববাধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে যোগ করার জন্য জামায়াতের সাথে জোট বাঁধে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে এক মঞ্চে বৈঠক, সমাবেশ, জনসভা, হরতাল, সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেই বৈঠক সমাবেশ গুলোতে তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন জামায়াত পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত , আমির হোসেন আমু , শেখ সেলিম সহ আরো অনেকে অন্যান্যরা উপস্থিত থাকতেন।





মিস্টার মেনন আজ জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলেন , গালি দেন। কিন্তু জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে কোলাকুলির ছবি কি বলে ?




এখন প্রশ্ন হচ্ছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যদি ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ করে থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের সাথে বিরতিহীন ১২ বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, সভা সমাবেশ, বাইরে, প্রকাশ্য-গোপনে অসংখ্য বৈঠক ও সাংবাদিক সম্মেলন করলো কিভাবে?

আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে জামায়াতের সাথে কোয়ালিশনে গিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাবই বা দিলো কিভাবে?

আবার কোন অপরাধীকে সাথে নিয়ে ১৯৯৪-৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার আন্দোলন করেছে?

তখন কি তারা অপরাধী ছিল?

অপরাধী হয়ে থাকলে তারা শেখ হাসিনার সাথে যৌথ আন্দোলন করল কিভাবে?

এর পূর্বে ও আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াত ছিল -

১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল জামায়াত-আওয়ামী লীগ কখনো একমঞ্চে কখনো যুগপৎভাবে স্বৈরাচার হুমু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এসাথে শীর্ষ পর্যায়ে ছিল । গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের অসংখ্য বৈঠক হয়েছে। এই গুরুত্ব পূর্ণ বৈঠক গুলোর সমন্বয়ে থাকতেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আবদুল কাদের মোল্লা। এই সব বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা, মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, আমীর হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম , শেখ সেলিম , নুরুল ইসলাম এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং আবদুল কাদের মোল্লা উপস্থিত থাকতেন।

১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার সাথে বৈঠকের কথা কি শেখ হাসিনার মনে পড়েনা ?

কতশত বার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার সাথে বৈঠক করেছে তা কি মনে পড়ে?

আজ সেই জাসদের নেতারা অন্যদের খুনি , জঙ্গি বলে।

জাসদের নেতা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট অফিসারের স্ত্রী সহ ১৩ জন তরুণ অফিসারকে হত্যা করা হয়।




জাসদের নেতৃত্বে কর্নেল তাহেরের ভাইয়েরা ভারতীয় দুতাবাসে হামলা করে রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করতে চেয়েছিল।

জাসদের কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে লেফটেন্যান্ট অফিসারের স্ত্রী সহ ১৩ জন টগবগে অফিসারকে হত্যা করা হয়।

সামিয়া রহমানের উপস্থাপনায় 'একাত্তর সংযোগ' টকশোতে '৭৫ এর হত্যাকাণ্ড : ষড়যন্ত্রের রাজনীতি' বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে গত ৭ই নভেম্বর ২০১৫ সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অবHappy জাফর ইমাম বীর বিক্রম বলেছেন,

'কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ১৩ জন টগবগে অফিসারকে হত্যা করা হয় এবং তার সাথে এক লেফটেন্যান্ট অফিসারের স্ত্রী কে ও হত্যা করা হয়'

কর্নেল (অবHappy জাফর ইমাম বীর বিক্রম বলেন, সৈনিক সংস্থা সংগঠিত হয়েছিল কর্নেল তাহেরের মাধ্যমে এবং ইনু ছিল তার সহযোগী। সৈনিক সংস্থা কিন্তু বঙ্গবন্ধু থাকাকালীন গঠন করা হয়েছিল। এবং সেই সৈনিক সংস্থা ৭ই নভেম্বর যখন রাত্রে 'সিপাহী-জনতা ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই' স্লোগান দিয়ে যখন পুরো ক্যান্টনমেন্টে গুলাগুলি শুরু করে দিলো, সে দিন রাতে সৈনিক সংস্থা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে ১৩ জন টগবগে অফিসারকে মারা হল। এবং তার সাথে এক লেফটেন্যান্ট অফিসারের স্ত্রী কে ও হত্যা করা হয়। তিনি সেক্টর কমান্ডার মেডিক্যাল অফিসার উসমানের স্ত্রী। এদের কে তো জিয়াউর রহমান মারে নাই, মেরেছে জাসদ, মেরেছে সৈনিক সংস্থা।

জাসদের নিষিদ্ধ রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি গণবাহিনীর সাথে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত রক্ষী বাহিনীর হামলা পাল্টা হামলার ইতিহাস এখনো জলজ্যান্ত। রক্ষী বাহিনী হত্যা করে আওয়ামী বিরোধী মতের নেতা কর্মী , মেধাবী তরুণদের। পাল্টা হামলা চালিয়ে জাসদের জঙ্গি গণ বাহিনী হত্যা করে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে নির্বাচিত বহু জন প্রতিনিধিকে। উভয় পক্ষ হত্যা করে প্রায় ৫০ হাজারের উপর বাংলাদেশিকে। এমনকি জাসদের জঙ্গি সংগঠন গণবাহিনী ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে হামলা করে ভারতের রাষ্ট্র দূতকে জিম্মি করার সময় জাসদের কর্নেল তাহেরের ভাই সহ ৩ জন ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্বা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়।

জঙ্গি দমনের জন্য আজ জামায়াতের সঙ্গে এতো কাদা ছুড়াছুড়ি কেন ? নিজেদের অপকর্ম গায়েব করে জাতিকে ধোকা দেয়ার জন্য নয়কি ?

বিষয়: বিবিধ

৫২৯৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374829
১৭ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:১৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : জামায়াত ছিল আছে এবং থাকবে বাংলার প্রতি ইন্চি মাটির পরতে পরতে। এই বাংলার জমিন আল্লাহর দ্বীনের জন্য তথা ইসলাম বিজয়ের জন্য কবুল হয়ে গেছে। যে জমিন মুমিনের রক্তে রন্জিত হয়েছে সে জমিন কাফের মুনাফেকদের জন্য নয়। হে আল্লাহ তোমার ইজ্জতের কসম আমরা প্রতিটি শহীদের বদলা নেব এবং তোমার দ্বীন ইসলামকে বিজয় করবো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
374840
১৭ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:৩৯
হতভাগা লিখেছেন : জামায়াত যদি ১৯৯৪-৯৫ এ বিএনপির কাছ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মুলা না দিত তাহলে আজ তাদের এই পরিনতি বরণ নাও করতে হত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File