লুটপাট এত বেশী যে, পরবর্তী লুটপাট আগেরটা চাপা পড়ে যায়।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ মে, ২০১৬, ০১:৩৩:৫৫ দুপুর
আগে সমাজের দুর্বত্তরা দল বেঁধে ধনীর ঘরে হামলা করে ডাকাতি করতো। এখন ঐসব দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক নেতা সেজে সরকারী তথা জনগণের সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত ।
কখোনো কখোনো এই লুটপাটের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যায়। তখন হৈ চৈ হলে ক্রমশঃ জানা যায় জনগণের কত টাকা বেহাত হলো। কিন্তু ঐ টাকা আর ফেরত আসে না। কেউ খোঁজও নেয় না। এই লুটপাট এত বেশী যে, পরবর্তী লুটপাট আগেরটা চাপা পড়ে যায়।
দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক নেতা সেজে সরকারী তথা জনগণের সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত।
কিছু বললেই চেতনার ধোহাই দিয়ে গলাবাজি
ব্যাংকের রিজার্ভ সহ সরকারী , বেসরকারী ব্যাংকের টাকার চুরির হোতাদের আড়াল করতে কৌশলী প্রচারণা। ব্যাংকের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা চুরিকে সুইফটের সাথে জড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ঘটছে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। কিছুই যেন করার নেই। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা লুটপাট । এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-১২ সময়ের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপই হাতিয়ে নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
এসব ঘটনা বারবার কেন ঘটছে তার কারণ খুঁজতে গেলে আমাদের চোখে ধরা দেয় ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়া।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে গত বছরের ৮ জুলাই ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেবার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করে বাচ্চুর কোনো ‘দায়’ খুঁজে পাননি। এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের যতগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বড় ঘটনা হলমার্ক কেলেঙ্কারি।
এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর ‘এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হইচই করারও কিছু নেই’—মন্তব্য অপরাধীদের আস্কারা বৈ আর কিছু দেয় না। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করা হলেও তারও কোনো বিচার হয়নি।
২০১০ সালের ধসের পর শেয়ারবাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ লুট; ডেসটিনি, ইউনিপেটু—এসব ভুঁইফোড়েরা দেশের মানুষের টাকা কেড়ে নিয়েছে, যা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা এসব ঘটনারই ধারাবাহিক প্রতিফলন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকার চুরির ঘটনা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই বলছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম সুইফট বার বার দাবি করছে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তাদের সার্ভার হ্যাক হয়নি।
এ দিকে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রিজার্ভ চুরির মূল হোতারা থাকেন ভারতে।
২০১০ সালের দিকে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট।
২০১১ থেকে ২০১২ সালে হয় বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ কেলেঙ্কারি।
২০১২ সালে ঘটে ৪ হাজার ১১৯ টাকার আত্মসাতের ডেসটিনি কেলেঙ্কারি।
জনতা ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ।
২০১৩ সালের অর্থচুরির ঘটনা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তখনকার সচিব এম আসলাম আলম সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশ করেন। সরকারি বাণিজ্যিক এ ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মূদ্রায় ১ কোটি ৯৬ লাখ প্রায়) তুলে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২০১৩ সালে এ চুরি হলেও তা এতদিন ছিল ফাইলবন্দি।
২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের পাচার হওয়া আড়াই লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমান ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।
ঋণের কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করেছে দুর্বৃত্তরা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের পরিমান ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, বেসরকারি ৩৯ ব্যাংকের ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৪ কোটি, বিদেশি ৯ ব্যাংকের ২৪ হাজার ২৫৯ কোটি এবং বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের ২১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। ঋণের কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অর্থমন্ত্রী সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের হাতিয়ে নেয়া ৪৫০০ কোটি টাকাকে ‘কিছু না’ বলেছিলেন। এই অর্থমন্ত্রীর আনুকূল্যে ডেসটিনি গ্রুপ হাতিয়ে নেয় ৪১১৯ কোটি টাকা। তাঁর আমলে শেয়ার বাজার লুটপাট হয়েছে ১৫০০০ কোটি টাকা।
বিসমিল্লাহ গ্রুপ মেরে দিয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাই সাহেব ঐ ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৪৫০০ কোটি টাকা। (প্রথম আলো ২৭.০৩.১৬)।
এছাড়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে গেছে ৭৫০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি তিতাসে জালিয়াতির খবর পাওয়া গেলো ৩১৩৯ কোটি টাকা।
ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের লুটপাট অব্যাহত আছে।
২০১৬ সালে রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়াও গত সাত বছরে দেশের আর্থিক প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরির অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগরিটি’র এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০০৪ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অন্ততঃ ৫,৫৮৭.৭০ কোটি ডলার বা ৪,৪৭,০১৬ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে (বণিক বার্তা ১৮-১২-১৫)।
অন্য এক হিসাবে ঐ সময়ে এর পরিমাণ ৫,৪১,৪২৪ কোটি টাকা। ২০০৪ সালের আগে ও ২০১৩ এর পরে যা’ পাচার হয়েছে তার অংক যোগ করলে এযাবৎ কত তা’ আন্দাজ করা যায়।
অর্থ পাচারের ঐ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বণিক বার্তার এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার না করে বলেন, ’অর্থ পাচার রোধে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারী বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক সক্রিয়।’
বিষয়: বিবিধ
১১৬৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন