১৭ মার্চ শেখ মুজিবের জন্ম দিনে ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:৪৪:০৯ দুপুর
১৭ মার্চ শেখ মুজিবের জন্ম দিনে ঢাকার রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল।
এদিন পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করে।
১৭ মার্চ জাসদের মিছিলে রাজপথে গুলি চালায়।
জাসদের মিছিলে রক্ষীবাহিনীর গুলিতে নিহত ৫০ ।
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক কালো অধ্যায়। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জাসদ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে এদিন পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করে।
১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ তারিখে এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক কালো অধ্যায়। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে এদিন পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করে। এতে জাসদ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবসহ দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়। জাসদ নেতৃবৃন্দের মতে, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী নিহত অধিকাংশের লাশ গুম করে ।
তত্কালীন মুজিব সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও সীমাহীন লুটপাটের প্রতিবাদে জাসদের উদ্যোগে এদিন ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় ২৯ দফা দাবি আদায়ের প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সভা শেষে সন্ধ্যায় স্মারকলিপি প্রদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল ও আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে একটি মিছিল স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ( বর্তমান আওয়ামীলীগের নেতা নাসিমের পিতা ) বাসবভনের উদ্দেশে রওনা দেয়। মিছিলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির কাছে পৌঁছলে রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ মিছিলকারীদের ওপরনির্বিচারে গুলি চালায়। টানা প্রায় একঘণ্টা যাবত্ চলে এ বেপরোয়া গুলি বর্ষণের ঘটনা।
পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বিক্ষোভকারীদের হত্যার পাশাপাশি চালায় গ্রেফতার অভিযান। এসময় পুলিশ জাসদ সভাপতি মেজর এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব, মহিলা সম্পাদিকা মমতাজ বেগম এবং জাসদ সমর্থিত কৃষক লীগের ( জঙ্গি গণবাহিনীর কমান্ডার ) সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুসহ বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করে। এদিন রাতে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনী জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকণ্ঠের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আর শেষ রাতে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী গণকণ্ঠ অফিসে তল্লাশি চালায় ও ছাপার জন্য তৈরি কপি, সিলোফিন প্রভৃতি আটক করে। ফলে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।
পরদিন অর্থাত্ ১৮ মার্চ সকালে পুলিশ দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে এদিন (১৮ মার্চ) আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি জঙ্গি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। অস্ত্র হাতে জঙ্গি বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীনতার শত্রুরা হুঁশিয়ারি’, ‘সমাজতন্ত্রের শত্রুরা হুঁশিয়ার’, ‘সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা বাংলা ছাড়ো’ ইত্যাদি সেম্লাগান সহকারে বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে এবং বেলা ১২টার দিকে মিছিলকারীদের একাংশ জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে।
কর্নেল তাহেরের জঙ্গি বাহিনীর ঢাকার জঙ্গি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর বাহিনী পিছন থেকে গুলি ছুড়ে। তাদের গুলিতে ও জাসদের বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়।
দৈনিক গণকন্ঠে (১৬-৩-১৯৭৪) 'সময় শেষঃ এবার প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পালা' শীর্ষক সংবাদের বিবরণ মতে, 'জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেছেন, শেষ সময় পার হয়ে গেছে।
১৭ মার্চ দৈনিক গণকন্ঠ বিশাল হেডলাইন 'আজ পল্টনে জাসদ-এর জনসভাঃ শোষিত জনতার ২৯ টি দাবী আদায়ের জন্য প্রত্যক্ষ কর্মসূচী দেয়া হবে'-শীর্ষক সংবাদে বলে, 'ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ ... ১৭ মার্চ শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর গুলীবর্ষণ করেই মুজিব সরকার বসে থাকেনি, জাসদের মুখপত্র দৈনিক গণকন্ঠের ওপরও একই দিনে হামলা চালায়। ... রক্ষী বাহিনীর গুলি তখনো থামেনি। ... ঘেরাও মিছিলে জাসদ কর্মী হত্যা এবং দলের অফিস আক্রমণের প্রেক্ষিতে দেশের প্রায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সরকারী ভূমিকার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে।
তত্কালীন মুজিব সরকারের আমলে টেন্ডার ও পারমিটবাজি, দ্রব্যমূল বৃদ্ধি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এ লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ পল্টনে এক জনসমাবেশের আয়োজন । এদিন সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে হাজার হাজার মানুষের একটি মিছিল স্মারকলিপি দেয়ার জন্য তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন মিন্টো রোডের দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি পল্টন থেকে রওনা হয়ে মিন্টো রোডের কাছে পৌঁছলে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী বিনা উস্কানিতে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। প্রায় একঘণ্টা ধরে একটানা চলে এ গুলি। পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর গুলিতে ছাত্রলীগ নেতা (জাসদ) জাফর, জাহাঙ্গীরসহ প্রায় পঞ্চাশজন নিহত হয়।
১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এবং জাসদ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।(দৈনিক সংবাদ : ১৯ মার্চ ১৯৭৪)
(দৈনিক সংবাদ : ১৮ মার্চ, ১৯৭৪)
সম্পাদক গ্রেফতার
গতকাল গণকণ্ঠ বেরোয়নি
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
দৈনিক গণকণ্ঠ সম্পাদক জনাব আল মাহমুদকে গতকাল সোমবার সকালে ঢাকায় তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সোমবার দৈনিক গণকণ্ঠ বের হয়নি। গত পরশু রোববার শেষ রাতে দৈনিক গণকণ্ঠের অফিসে পলিশ ও রক্ষীবাহিনী তল্লাশি চালায় ও ছাপার জন্য তৈরি কপি, সেলোফিন প্রভৃতি আটক করে বলে জানা যায়। (দৈনিক সংবাদ : ১৯ মার্চ ১৯৭৪)
বিষয়: বিবিধ
১২০০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন