১৪ ফেব্রুয়ারি জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস"

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২৭:৫০ সকাল



মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে এই ছাত্র জমায়েত। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ছাত্র জমায়েত।

শিক্ষার ঔপনিবেশীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ, দলীয়করণ-ফ্যাসিকরণ রুখে দেয়ার ঐতিহাসিক দিন।

এরশাদের সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে। ২৪ মার্চ কলাভবনে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় ছাত্রনেতা শিবলী কাইয়ুম, হাবিব ও আ. আলী, আবুল কাশেম , সিকদার আব্দুল্লাহ । পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদন্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াই।

১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পরপরই তাকে ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। একইসাথে শুরু হয় ধরপাকড়। প্রথমদিনেই কলাভবনে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেফতার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ছাত্রনেতা শিবলি কাইয়ুম,হাবিবুর রহমান ও আব্দুল আলী , আবুল কাশেম , সিকদার আব্দুল্লাহ সহ আরো কয়েকজন । কিন্তু এর মধ্যে ছাত্রলীগের কেউ ছিল না।

১৯৮২ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ঐকমত্যে পৌঁছে। সেই সময় ও ছাত্রলীগের নিরবতা ছিল ষড়যন্ত্র

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। মিছিলে সেনাবাহিনী চলে আসে, স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন।

ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এরশাদের পক্ষে গোপনে তথ্য পাচার করতে থাকে। সেই সময় ছাত্রলীগ এরশাদের অদৃশ্য প্রিয় সংঘঠনে পরিচিতি লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত থাকে। সেই কারণে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন , জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলছাত্র শিবিরের মত ছাত্র সংগঠনগুলোর কিছু কর্মী আক্রান্ত হয়।

মজিদ খানের শিক্ষানীতি নীতির ব্যাপক বিরোধিতা করে ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা দিবসে এ শিক্ষানীতি বাতিল করার পক্ষে ছাত্র সংগঠনগুলো একমত হয়। ছাত্রলীগের নেতারা বৈঠকে জানান - তাদের নেত্রী এই বিষয়ে আপাতত কোন নির্দেশনা দেননি , তাই ছাত্রলীগ মজিদ খানের শিক্ষানীতি নীতি বাতিল করার আন্দোলনে থাকবে না।

এরই ধারাবহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্ম।

হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলটি হাইকোর্টের গেটের সামনে ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়ে এবং এসময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে তারের একপাশ সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে দিয়ে রঙ্গিন গরম পানি ছিটাতে থাকে, বেধড়ক লাঠিচার্জ, ইট-পাটকেল ও বেপরোয়া গুলি ছুড়তে শুরু করে। অনেকে হতাহত হন। এরশাদ সরকার জানায় ওই দিন পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার জন প্রায় এক হাজারের মত ছাত্র , পথচারীকে আটক করা হয়। তত্কালীন কয়েকটি পত্রিকা সরকারী সূত্রের দাবি করে জানায় আটকের সংখ্যা ৩০০।



এরশাদ সরকারের সেই বিবৃতি দেড় শতাধিক আহত , ৩৮ জন গ্রেফতার ও মুক্তি লাভ।




ছাত্রলীগের অনুপস্থিতির জন্য ছাত্রলীগের দায় ছিল না। কারণ ছাত্রলীগের মূল সংগঠন আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সেই সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের কোনো দিক নির্দেশনা ছিল না। অনেক লেখকের আর্টিকেল থেকে জানা যায় - এরশাদের সাথে শেখ হাসিনার গোপন যোগাযোগের কারণেই ছাত্র লীগের রাজনীতি ছিল তখন এরশাদের পক্ষে।



১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন , জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ছাত্র শিবিরের নেতা কর্মীরা হতাহত হলেও - ছাত্রলীগের কোনো নেতা কর্মী হতাহত হয়নি। যদিও সেই সময় ছাত্রলীগের কয়েটি গ্রুপের নামে রাজনীতি দেখা যেত।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File