সীমান্তে শুধুই গরুর কারবারীরা মারা যায়, ফেনসিডিল কারবারীরা নয়
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:৫১:৪৮ রাত
চোরাকারবারী রোধে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ পেট্রোল বা টহল সম্পর্কে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, আমি যৌথ পেট্রোল সমর্থন করি না। কারণ আমার ফোর্স আমি কীভাবে ব্যবহার করবো সেটা আমার বিষয়। আমার ফোর্সের শক্তিমর্তা রণকৌশল আমার শত্রুকে জানতে দিব কেন? আমার সময় এটা হয়নি কখনো।
‘১৯৭৫ সালের বর্ডার গাইড লাইনের তোয়াক্কা করছে না বিএসএফ’ https://shar.es/1hldMz
বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, ১৯৭৫ সালের বর্ডার গাইড লাইন মানছে না ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিলে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, বেআইনিভাবে কেউ সীমান্ত অতিক্রম করলে সীমান্তরক্ষীদের কাজ হবে তাকে গ্রেফতার করে তাদের দেশের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা। পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করবে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত বা সাজা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশে এনে তার সাজা ভোগ করতে হবে। ভারতীয় নাগরিকরা বেআইনিভাবে আমাদের দেশে আসার বেলায় যেমন তেমনি ভারতে বেআইনিভাবে বাংলাদেশীরা গেলে একই নিয়ম। বর্ডার গাইড লাইনের কোন স্থানেই উল্লেখ নেই যে বর্ডার ক্রস করলে তাকে গুলী করে মারতে হবে। কিন্তু বিএসএফ গাইড লাইন অনুসরণ না করে পাখির মত গুলী করে আমাদের দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে।
অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ রাইফেল্স (বিডিআর) এর মহাপরিচালক থাকাকালে তার সময়েই সিলেটের পাদুয়া উদ্ধার, কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়িতে বিএসএফ’র শোচনীয় পরাজয়, আখাউড়ায় বিএসএফ কমান্ডারের নিহত হওয়ার ঘটনাসহ বিডিআরের শৌর্য-বির্যের অনেক প্রমাণ মেলে। সাম্প্রতিক সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকা- বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দৈনিক সংগ্রামের এই প্রতিবেদকের সাথে তিনি বেশ খোলামেলা কথা বলেন।
সীমান্তে সাম্প্রতিক বিএসএফের গুলীতে বাংলাদেশীদের হত্যাকা- প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনা বিচারে গুলী করে কাউকে হত্যা করার নিয়ম পৃথিবীর কোথায়ও নেই। এই অধিকার কাউকেই দেয়া হয়নি। কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হতে পারে। বিচারে তার মৃত্যুদ- হলে তা কার্যকর করা যেতে পারে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তার সমস্ত প্রকার আইনি, নাগরিক ও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে অধিকার দিতে হবে। কিন্তু বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করা যায় না। বাংলাদেশ বা ভারতের কোন আইনে সেটা নেই। আর অন্যান্য সভ্য দেশের আইনেও সেটা নেই।
অভিযোগ করা হয় যে, আক্রান্ত হলেই কেবল বিএসএফ গুলী করে। এই অভিযোগের কোন সত্যতা আছে কিনা? জানতে চাইলে সাবেক বিডিআর প্রধান বলেন, আমি যখন বিডিআরের মহাপরিচালক ছিলাম তখনো তারা এ ধরনের অভিযোগ করেছে। আমি প্রতিবারই তাদেরকে পাল্টা জিজ্ঞেস করেছি- কি অস্ত্র দিয়ে আমাদের দেশের লোকেরা আপনাদের আক্রমণ করেছে? সেই অস্ত্র দেখান। যাকে মেরেছেন তার লাশ তো আপনাদের কাছে। সে যদি অস্ত্রধারী হয় তাহলে সেই অস্ত্র দেখান। এটা তারা কখনোই দেখাতে পারেনি। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কখনোই তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, বিএসএফ যেসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং হঠকারী। এর কোন বিচার হয় না। তাদেরকে কখনো বিচারের সম্মুখিন হতে হয় না। ফেলানীর নৃশংস হত্যার যখন বিচার হয়নি তখন আর কিসের বিচার হতে পারে? আমার মনে হয় না যে ভবিষ্যতেও কোন সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার তারা করবে।
জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, সীমান্তের চোরাকারবারীর শতকরা ৯০ ভাগ অপরাধ করে তারা, আর ১০ ভাগ অপরাধ করে আমাদের লোকেরা। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে মধ্যে গেট আছে। এই গেইটের তালার চাবি থাকে বিএসএফের হাতে। তারা গেট খুলে না দিলে চোরাকারবারী হয় কি করে? কখনো তো গোশত নিয়ে কেউ আসে না, আসে গরু নিয়ে। গরুর টাকা তাদের পকেটে ঢোকার পরে গরু নিয়ে আসার সময় গুলী করে হত্যা করে। তারা বর্ডার গাইড লাইনের মোটেই তোয়াক্কা করে না। তারা ব্যবসাও করবে, আমাদের দেশের টাকাও নিবে আবার গুলী করে হত্যা করবে। একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক তাতে বেরিয়ে আসবে যে, আমাদের লোকেরা কতটুকু অপরাধ করে আর তারা কতটুকু অপরাধ করে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশের টিভি চ্যানেল ভারত দেখায় না। তাদের দেশে আমাদের দেশের চ্যানেলের কোন চাহিদা নেই। কিন্তু তাদের চ্যানেল আমরা দেখি। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উচ্চমাত্রার কোডিন ফসফেটযুক্ত ফেনসিডিল তারা খায় না, আমরা খাই; তাই তারা পাঠায়। আমাদের দেশপ্রেম, মানুষপ্রেম আর তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। মোটিভেশন করতে চাইলে এই জায়গায় করা দরকার।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন