কাজী আরেফ হত্যার মূল খুনিকে রক্ষার জন্য পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল্টু গ্রুপ) লোকদের ফাসি দেয়া হচ্ছে কি ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৩৫:২৬ বিকাল
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কেন্দ্রীয় নেতা , জাহানারা ইমামের রাজনীতির কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রধান কাজী আরেফ আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির ফাঁসি বৃহস্পতিবার কার্যকর করা হবে।
তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড ৭ জানুয়ারী ২০১৬ বৃহস্পতিবার রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হবে জানিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান।
যাদের ফাঁসি কার্যকর হবে তারা হলেন— কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব, একই উপজেলার কুর্শা গ্রামের মৃত উম্মতের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু।
যশোরের পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনিসহ জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়েছেন। ফাঁসির রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে।
১৯৯৯ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় জাসদের একটি সমাবেশে দুর্বৃত্তরা ব্রাশফায়ার করলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফসহ ৫ জন নিহত হন।
জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যার আগে ইনুর ঢাকার বাসায় পরিকল্পনা করা হয় ।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি
কাজী আরেফ হত্যার পরিকল্পনা ইনুর বাসায়!
(সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১১)
জাসদ নেতা কাজী আরেফকে হত্যার আগে দলীয় নেতা হাসানুল হক ইনুর ঢাকার বাসায় বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চরমপন্থী নেতা নুরুজ্জামান লাল্টু ও তার অনুসারীদের কাজে লাগানো হয়। কাজী আরেফসহ পাঁচ জাসদ নেতাকে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল রোববার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে ঝন্টুর মৃত্যুদন্ড মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামের ঝন্টুর বোনের বাড়িতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঝন্টুর বড় ভাই মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মন্টু। এ সময় তাঁর বোন নারগিস আক্তার উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম মন্টু দাবী করেন, সিরাজ বাহিনীর সদস্যরা তাঁর নানা, চার মামা, এক মামীসহ পরিবারের ১০ জন সদস্যকে খুন করায় প্রতিশোধ নিতে ঝন্টু চরমপন্থী নুরুজ্জামান লাল্টুর দলে যোগ দেয়। কাজী আরেফ আহমেদসহ পাঁচ জাসদ নেতা হত্যার দায়ে ঝন্টুকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আলোচিত ওই খুনের ঘটনার পর ঝন্টু তাঁর ভাই মন্টুর কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যা আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। হাসানুল হক ইনু পূর্ব শত্রুতার কারণে কাজী আরেফ আহমেদ ও লোকমানকে হত্যার নীলনকশা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি
কাজী আরেফ হত্যার পরিকল্পনা ইনুর বাসায়!
(তারিখ: ১০-১০-২০১১)
http://archive.prothom-alo.com/detail/news/192592
জাসদের নেতা কাজী আরেফ আহমেদ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দলীয় নেতা হাসানুল হক ইনুর ঢাকার বাসায় করা হয় বলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
কাজী আরেফসহ জাসদের পাঁচ নেতা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল্টু গ্রুপ) আঞ্চলিক নেতা রাশিদুল ইসলাম ঝন্টুর পরিবার গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করে। এতে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চরমপন্থী নেতা নুরুজ্জামান লাল্টু ও তাঁর অনুসারীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও নগদ টাকা।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য কল্পনাপ্রসূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণে দ্রুততম সময়ে এ বিচার করা গেছে। এ খুনিচক্র শুধু কাজী আরেফকেই হত্যা করেনি, তারা জাসদের অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।’
মূল খুনিকে রক্ষার জন্য গরিব অসহায় লোকদের ফাসি দেয়া হচ্ছে কি ? প্রশ্নের কেন ?
জাসদের নেতা কাজী আরেফ আহমেদ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দলীয় নেতা হাসানুল হক ইনুর ঢাকার বাসায় করা হয়। ভয়ে কেউ মুখ খুলে নামটি উচ্চারণ করছে না তাই নয় কি ?
হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতা খুনের ঘটনায় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদমত্মকারী কর্মকর্তারা। জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, কাজী আরেফ হত্যাকান্ড কোন সাধারন হত্যাকান্ড ছিল না। গভীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। তাই এ ঘটনার পিছনে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছেন, অর্থ দিয়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এটা আমাদের চাওয়া। পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারী হিসেবে যাদের নাম এসেছিল , তারা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
মামলার অন্যতম স্বাক্ষী হন কারশেদ আলম।
কারশেদ আলম। সেদিন ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারীর জনসভা পরিচালনাকারী হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আমলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি কারশেদ আলম। টাকার বিনিময়ে এবং জাসদ ( ইনুর ) বাহিনীর পাহারা নিয়েই আদালত থেকে বাড়ি যাওয়া আসা করেছিলেন। হাসানুল হক ইনুর গোপন বাহিনী ( সর্বহারা একটি অংশ ) এখনো দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
আদালতে আসামী যারা -
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান হাবির বাড়ি মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের রাজপুর রাজনগর গ্রামে। তার পিতার নাম ইসমাইল হোসেন।
অন্য দুই আসামী আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামে। আর রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি একই ইউনিয়নের কুলপাড়া মলিকপুরে। মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামী পলাতক রয়েছে। তারা হলেন, মান্নান জালাল ওরফে বাশার, রওশন আলী, বাকের আলী ও জাহান আলী। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ৫ জন গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে মান্নান জালাল ওরফে বাশার, জাহান ও জালাল ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
কাজী আরেফ আহমেদ মুলতঃ
১৯৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর স্কুল মাঠে দলীয় জনসভায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ জাসদ নেতা খুন হন। কাজী আরেফ ছিলেন আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক। অথচ কাজী আরেফকে হত্যা করার জন্য কুষ্টিয়াতে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে রেডি করে রেখেছিল তারই সাধারন সম্পাদক হাসানুল হক ইনু। কাজী আরেফ ঐ দিন ঢাকা থেকে যাত্রা করার পরে প্রতি আধ ঘন্টা পর পর হাসানুল হক ইনু ফোনে কাজী আরেফের স্ত্রী রওশন জাহান সাথীর কাছে জানতে চান কাজী আরেফের অবস্থান কোথায়। রওশন যখনই আরেফের অবস্থান জানতে পারতেন, তা হাসানুল হক ইনুকে সহজ সরল মনে টেলিফেনে জানিয়ে দিতেন। কিন্তু রওশন জানতেন না ওই দিন এত খোঁজ নেয়ার পিছনে রহস্য ছিল কাজী আরেফকে হত্যা করা ।
আরেফ হত্যার কারণ -
মূলত হত্যা কান্ডের উদ্দেশ্য ছিল - জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ কে খুন করে না সরালে , হাসানুল হক ইনু সারা জীবনেই সভাপতি হতে পারবেন না। এক সময়ে সর্বহারা নেতা হাসানুল হক ইনু জাসদের জঙ্গি গণ বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। রাষ্ট্রের বিরদ্ধে বে আইনি কর্মকান্ড করাই ছিল গণ বাহিনীর কাজ।
জাসদ ২ ভাগ হয়ে যাবার পর এক অংশে মোহাম্মদ শাহজাহান সভাপতি আর সেক্রেটারি আ স ম আব্দুর রব, অন্য অংশে কাজী আরেফ সভাপতি এবং সেক্রেটারি হাসানুল হক ইনু। কিন্তু ইনুর বেশ কিছু কাজে একমত হতে পারতেন না কাজী আরেফ, এমনকি বিদেশী গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে বেশি যোগাযোগ দেখে হাসানুল হক ইনুকে এক সময় কড়া ভাষায় সতর্ক করেছিলেন আরেফ। অবশেষে পথের কাঁটা সরিয়ে দেবার জন্য সন্ত্রাসী দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে কাজী আরেফকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেন হাসানুল হক ইনু। এরপরে ধীরে ধীরে জাসদের পুরো দায়িত্ব চলে আসে ইনুর হাতে।
নিহত কাজী আরেফের স্ত্রী রওশন জাহান সাথীর অক্লান্ত চেষ্টায় আওয়ামীলীগের আগের বার মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইদের চাপে কাজী আরেফের হত্যাকারী ইনুকে বিদেশ থেকে আসার পথে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে গ্রেফতার করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে জাসদের মাইনউদ্দিন খান বাদলের তৎপরতায় তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক তাদের কথা থেকে সরে আসেন। এরপর মাইনউদ্দিন খান বাদল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে তাড়াহুড়া করে বিমান বন্দরে লাগেজ রেখেই ইনুকে নিয়ে সটকে পড়েন। সেই যাত্রায় আর ইনু বেঁচে যান । বার বার ক্ষমতা পরিবর্তন হলে ইনু বার বার এমনি বহু সুযোগ কাজে লাগান।
ইতিহাসের নির্মম পরিহাসের শেষ দৃশ্য হলো - হাসানুল হক ইনুর চাপে জাসদে না থাকতে পেরে এবং ক্ষমতার লোভে কাজী আরেফের স্ত্রী রওশন জাহান সাথী আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হয়েছিলন। এখন তিনি জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের সভানেত্রী।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ইনুর নির্দেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ( আসম রব) নির্বাচিত প্রার্থী মারেফত আলীকে হত্যা করা হয়। কারণ মারেফত আলী প্রার্থী না থাকলে ইনুর বিপক্ষে জাসদের কোনো প্রাথী থাকবে না। সেই মারেফত আলীর নামে এখন একটা কলেজ আছে কুষ্টিয়াতে। যদিও ১৯৯১ সালে ইনু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেল করে ৪ নম্বর হন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় নেতা কাজী আরেফ। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে বিতর্কিত একপেশে এবং বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নের আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও সংগঠক ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। ১৯৬৬ সালে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে কাজী আরেফ । ১৯৭০ সালে গঠিত তত্কালীন জঙ্গি সংগঠন ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য - লেখাটির কিছু অংশ ২০১১ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে লেখা (আমার নিজের) সোনার বাংলা ব্লগ।
বিষয়: বিবিধ
২২২৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন