যদি এরা যুদ্ধাপরাধী হয় , তাহলে অতীতে পিরিতি কেন ছিল ? প্রশ্নের জবাবে চেতনা নির্বিকার কেন ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০০:২২ রাত
আজ যে আওয়ামিলীগ কথার শুরুতে জঙ্গি জামায়াত , রাজাকার জামায়াত ,
বাক্যের মধ্য খানে জঙ্গি জামায়াত , রাজাকার জামায়াত ,
বাক্যের শেষে জঙ্গি জামায়াত , রাজাকার জামায়াত ,
বলে গালি দিচ্ছেন --------- তখন এই চেতনা কি হারিয়ে গিয়েছিল ?
ছবিটা একটু বড় করে দেখলে রাজনৈতিক মহব্বতের দৃশ্য ভালই দেখায়
আজ যে আওয়ামিলীগ বলছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সাথে বৈঠকের প্রশ্নই আসে না। তাহলে কি আওয়ামিলিগ ভুলে গেছে সেই অতীতের ১৬ বছরের জামায়াতের সাথে মহব্বতের রাজনীতির কথা ?
আওয়ামীলীগ ও জামাতের সাথে কি বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল মনে হয়। নিচের ছবি তারই প্রমাণ।
আপনার কি বলেন....?
সঙ্গে থাকলে সঙ্গী
সঙ্গে না থাকলে
জঙ্গি , রাজাকার
ছবিতে যারা আছেন- আওয়ামীলীগের শেখ হাসিনা , সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আওয়ামীলীগের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান , তোফায়েল , সাজেদা , সুরঞ্জিত , আব্দুস সামাদ সহ আরো অনেকের সাথে রাজনৈতিক সভায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
আমি জামায়াতের ও নেত্রী : হাসিনা
সেই কথাটি এখনো জাতীয় সংসদে লিপিবদ্ধ আছে।
অপরাধী হয়ে থাকলে তারা শেখ হাসিনার সাথে যৌথ আন্দোলন করল কিভাবে?
আওয়ামিলিগ এবং জামায়াতের রাজনীতির ময়না তদন্ত করা জরুরি -
১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোন দলই একক শক্তিতে ক্ষমতায় যাবার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি। ওই সময় জামায়াত ১৮টি আসন পেয়েছিল। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমীর হোসেন আমু এ মর্মে সরকার গঠনে জামায়াতের সাহায্য চেয়েছিল যে, জামায়াতের ১৮ জন এমপি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে তাহলে তারা সংরক্ষিত মহিলা আসনের কয়েকটি এমপি পদ ছাড়াও জামায়াতকে ২/৩টি মন্ত্রীত্বের পদ দিতে রাজি আছেন। জামায়াতের কাছে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি। তারা বিনাশর্তে বিনা মন্ত্রীত্বে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করে। বিএনপির সরকার গঠনের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে জামায়াতের সেই সময়ের শীর্ষ নেতা গোলাম আযমের কাছে পাঠান সমর্থন ও দোয়া আদায় করতে ।
আওয়ামী লীগই আবার ১৯৯৪ সালে এসে জামায়াত প্রদত্ত তত্ববাধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে যোগ করার জন্য জামায়াতের সাথে জোট বাঁধে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে এক মঞ্চে বৈঠক, সমাবেশ, জনসভা, হরতাল, সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেই বৈঠক সমাবেশ গুলোতে তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন জামায়াত পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত , আমির হোসেন আমু , শেখ সেলিম সহ আরো অনেকে অন্যান্যরা উপস্থিত থাকতেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যদি ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ করে থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের সাথে বিরতিহীন ১২ বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, সভা সমাবেশ, বাইরে, প্রকাশ্য-গোপনে অসংখ্য বৈঠক ও সাংবাদিক সম্মেলন করলো কিভাবে?
আওয়ামী লীগ ১৯৯১ সালে জামায়াতের সাথে কোয়ালিশনে গিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাবই বা দিলো কিভাবে?
জামায়াত সে প্রস্তাব গ্রহণ করলে মন্ত্রী হতো নিজামী-মুজাহিদ। এরপর কোন অপরাধীর কাছে আওয়ামী লীগ তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন লাভের উদ্দেশ্য পাঠিয়েছিল?
আবার কোন অপরাধীকে সাথে নিয়ে ১৯৯৪-৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার আন্দোলন করেছে?
তখন কি তারা অপরাধী ছিল?
অপরাধী হয়ে থাকলে তারা শেখ হাসিনার সাথে যৌথ আন্দোলন করল কিভাবে?
আবার শেখ হাসিনাও তাদেরকে মন্ত্রী করার অফার কিভাবে দেয়?
তখন নিশ্চয় তারা অপরাধী ছিলনা। তখন অপরাধী না হয়ে থাকলে এখন এসে অপরাধী হয় কিভাবে?
১৮ থেকে ৩ সিটে নামাতে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত চুপ করেছিল। আবার যখন দেখল জামায়াতের কারণে ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সিট পেয়ে গেল তখন আওয়ামী লীগ আবার সরব হতে শুরু করেছিল। বিশেষ গুষ্টি আবার সক্রিয় হয়ে জামায়াতের নেতাদের উপর মরণ কামড় দিতে শুরু করে । আবার মাঠে নামানো হয় একটি দেশের বেতন ভুক্ত কিছু লেখকদের।
এর পূর্বে ও আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াত ছিল -
১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল জামায়াত-আওয়ামী লীগ কখনো একমঞ্চে কখনো যুগপৎভাবে স্বৈরাচার হুমু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এসাথে শীর্ষ পর্যায়ে ছিল । গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের অসংখ্য বৈঠক হয়েছে। এই গুরুত্ব পূর্ণ বৈঠক গুলোর সমন্বয়ে থাকতেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আবদুল কাদের মোল্লা। এই সব বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা, মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, আমীর হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম , শেখ সেলিম , নুরুল ইসলাম এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং আবদুল কাদের মোল্লা উপস্থিত থাকতেন।
১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার সাথে বৈঠকের কথা কি শেখ হাসিনার মনে পড়েনা ?
কতশত বার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার সাথে বৈঠক করেছে তা কি মনে পড়ে?
কিভাবে আওয়ামী লীগ তাদের পুরোনো দিনের কাহিনী ভূলে গেল?
কই তখন তো একবারের জন্যও শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ বলেনি, আপনারা যুদ্ধপরাধী আপনাদের সাথে কোন বৈঠক হবেনা, কোন কথা হবেনা, কোন সমর্থন লাগবেনা। তখন ভাল লেগেছিল এখন খারাপ লাগছে কেন?
তাহলে কি এটা বলা যুক্তি সম্মত হবে না ?
বিষয়: বিবিধ
২৬৫৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জামায়াতকে সেভাবেই ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ ।
মাথামোটা জামায়াত আওয়ামী লীগের কাছে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মুলা তুলে দিয়ে যে দারুন দুরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছিল তা এখন ভালই বুঝতে পারছে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন