ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিল শিখ সংগঠন। কেমন ছিল রায়ট ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৫:৫৫:২১ বিকাল
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীদের ‘শহীদ’ আখ্যা দিল শিখ সংগঠ।
রোববার দিল্লিতে শিখদের এক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারীদের পরিবারের লোকজনদের সম্মানিত করা হয়। ইন্দিরা গান্ধীর ঘাতক কেহর সিং, সতবন্ত সিং এবং বিয়ান্ত সিংয়ের স্মরণে এদিন বিশেষ ‘ভোগ’ এবং ‘অখণ্ড পাঠ’-এর আয়োজন করা হয়। গুরুদোয়ারার প্রধান ‘গ্রন্থী’ বা পুরোহিত কেহর সিংয়ের বিধবা স্ত্রীকে ‘শিরোপা’ প্রদান করে সম্মানিত করেন।
অনুষ্ঠানে দিল্লি শিখ গুরুদোয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি (ডিএসজিএমসি)-র সাবেক প্রধান অবতার সিং হিত, ধর্মীয় প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান পরমজিত সিং এবং শিখ স্টুডেন্টস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট গুরমীত সিং উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে গুরমীত সিং বলেন, ‘শিখদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা ‘অকাল তখত’-এর পক্ষ থেকে আগেই কেহর সিং, সতবন্ত সিং এবং বিয়ান্ত সিংকে ‘শহীদ’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা কেবল তাদের মৃত্যু বার্ষিকী পালন করছি।’
রাজধানী দিল্লিতে মোতিবাগ গুরুদোয়ারায় শিখ স্টুডেন্টস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হত্যাকারীদের ‘শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে বিজেপি জোটের সহযোগী দল অকালি দলের নেতারা উপস্থিত থাকায় বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করার দায়ে কেহর সিং এবং সতবন্ত সিংকে ফাঁসি দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করার সময়েই বিয়ান্ত সিংকেও হত্যা করে নিরাপত্তারক্ষীরা।
ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন ৩১ অক্টোবর। রায়ট শুরু হয় ১ নভেম্বর থেকে। কিছু কিছু এলাকায় তা চলে কয়েক দিন ধরে। রায়টে দিল্লিতে মারা যায় তিন হাজার শিখ, আর সারা দেশের আরো ৪০টি শহরে মারা যায় আরো আট হাজার। সুলতানপুরি, মঙ্গলপুরি, ত্রিলকপুরি ও দিল্লিই ছিল সবচেয়ে বেশি হারে দাঙ্গার শিকার। জনতা রড, ছোরা ও কেরোসিনসহ আরো দাহ্য পদার্থ নিয়ে হামলা চালায়।এ ধরনের দাঙ্গা পুলিশের সহায়তা ছাড়া ঘটতে পারে না।
দূরদর্শনের অ্যাংকর টেলিভিশন সাংবাদিক সালমা সুলতানা ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর দূরদর্শনের সন্ধ্যার খবরে ইন্দিরা হত্যার খবর প্রচার করেন। এ খবর প্রচারিত হয় তাকে গুলি করার ১০ ঘণ্টা পর। সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে নেয়া হয় অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। সেখানে তার ওপর অপারেশন চালানো হয়। বেলা ২টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর চলে ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্ত দলের নেতৃত্ব দেন ডা: টি ডি ডোগরা। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৩০টি বুলেট বিদ্ধ হয় ইন্দিরার শরীরে। বুলেট ছোড়া হয় স্টেনগান ও পিস্তল থেকে।
জঙ্গিবাদের জনক রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত। মাত্র একটু উদাহরণ। মাওবাদী জঙ্গি , এই সেই বহু নাম রয়েছে প্রায় ১২৮ টি জঙ্গি গুষ্টি। এদের হাতে ভারতের পুলিশ , সেনা বাহিনী কে মরতে হয়। গড়ে প্রতি মাসে ৩৯/ ৫৩ জন পুলিশ , সেনা বাহিনীকে হত্যা করে ওই সব ভারতীয় জঙ্গিরা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে , ভারতের মিডিয়া , রাষ্ট্র এই বিষয়ে নিরবতা পালন করে। প্রদেশ ভিত্তিক কিছু মিডিয়া ৩/২ ইঞ্চি কলামে জঙ্গিদের হাতে পুলিশ , সেনা বাহিনী হত্যার খবর প্রকাশিত হয়।
১৯৭৩ সালে শিকদের রাজনৈতিক দল ‘শিরোমনি আকালি দল’ ও অন্যান্য শিখ গ্রুপ ঘোষণা করে ‘আনন্দপুর সাহিব রেজুলেশন’ নামের বিবৃতি। এতে অন্যান্য দাবিদাওয়ার মধ্যে পাঞ্জাব ও শিখদের জন্য ‘বিশেষ মর্যাদা’ দাবি করা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে পাঞ্জাবের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে রাজ্যপর্যায়ে। এর ফলে রাজ্য সরকারকে বাতিল করা হয়। জার্নাল সিং বিন্দ্রাওয়ালের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। কিছু বিদ্রোহী শিখ গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাঞ্জাবে খালিস্তান নামে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। তারা লড়বে ভারত সরকার ও ভরতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
১৯৮৩ সালে পাঞ্জাবের অবস্থা খুবই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে বছরের অক্টোবরে কিছু শিখ বিদ্রোহী একটি বাস থামিয়ে বাসের ছয়জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করে। একই দিনে অন্য একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী একটি ট্রেনে দুইজন কর্মকর্তাকে হত্যা করে।
ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের দুই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী। খুন হন ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে। এ সময় তিনি ছিলেন তার নয়াদিল্লির সফদর জং রোডের বাসভবনে। তাকে গুলি করে হত্যা করে তার দু’জন শিখ দেহরক্ষী সতওয়ান্ত সিং ও বেয়ান্ত সিং। এর কয় মাস আগে জুনের প্রথম দিকে ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে পাঞ্জাবের অমৃতসরে শিখদের স্বর্ণমন্দিরে পরিচালিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ নামে সামরিক অভিযান। এ অভিযানে স্বর্ণমন্দিরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। বলা হয়ে থাকে, সে অভিযান ইন্দিরা সরকারের প্রতি শিখসমাজকে ব্যাপকভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। অনুমান করা হয়, সে সূত্রেই সৃষ্ট ক্ষোভের জের হিসেবেই ইন্দিরা গান্ধী খুন তার দুই শিখ দেহরক্ষীর হাতে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরুর একমাত্র সন্তান। ১৯৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর উত্তরাধিকারী হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন