১৯৭২ সালে আওয়ামীলীগের তদন্ত রিপোর্টে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রকৃত সংখ্যা ৫৬ ৭৪৩ জনের কথা বলা হয়েছিল। সেই ৩০ লাখের তেলেসমাতি”
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৪১:২৮ দুপুর
১৯৭১ সালের মৃতদের ( রাজাকার, বাংলাদেশী , বিহারিদের লাশ ) ব্যাপারে চমকপ্রদ কিছু মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামীলিগ নেতা এম এ মোহাইমেন ১৯৯০ সালে।
(আবদুল মোহাইমেন, ভাষা সৈনিক,মুক্তিযোদ্ধা,লক্ষীপুর থেকে ১৯৭০ সালে আওয়ামীলিগ এমপি নির্বাচিত। এই সাক্ষাতকারটি ইয়াহিয়া মির্জা কর্তৃক ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ ধারনকৃত যা প্রকাশিত হয়,সাপ্তাহিক তারালোক এর পরবর্তী সংখ্যায়]
কিছু মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামীলিগ নেতা এম এ মোহাইমেন ১৯৯০ সালে। তার বক্তব্য অবশ্য ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়কালীন সময়ে মৃতদেরকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছিল বলে প্রতিয়মান। তার বক্তব্য নিন্মরুপ;
“আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ঘোষণা দিয়েছি,তাতে আমরা নিহতের সংখ্যা তিন লক্ষ্য বলে ঘোষণা করেছিলাম এবং এই হিসাবটিও আমরা তখন কলকাতায় বসে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শরনার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে খবরাখবর নিয়ে একটি আনুমানিক সংখ্যা দাঁড় করিয়েছিলাম।পরবর্তিকালে ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে নিহতের সঠিক সংখ্যা বের করার দায়িত্ব গণপরিষদের সদস্য হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছিল।আমি বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়নের সংগে যোগাযোগ করে যে সংখ্যা পেয়েছিলাম,সেটা সাত হাজারেরও কম,নিহত রাজাকারদের সংখ্যা ধরেও সাড়ে সাত হাজারের বেশি দাঁড়ায়নি।
তখন বাংলাদেশে ১৯টি জেলা ছিল।সব কয়টি জেলাতেই যুদ্ধ সমভাবে হয়নি।যেসব জেলাতে যুদ্ধের প্রকোপ বেশি হয়েছিল,তার মধ্যে নোয়াখালী একটি।দেশে এমন কয়েকটি জেলাও আছে যেখানে যুদ্ধ তেমন হয়নি,তাই সেসব অঞ্চলে মৃতের সংখ্যাও অনেক কম হয়েছিল বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারন আছে।যুদ্ধ সাধারণত বেশি হয়েছিল সীমানতবর্তী জেলাগুলোতে কিন্তু ঢাকা জেলা ব্যতীত আভ্যন্তরীন অনেক জেলায় তেমন উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তাই নোয়াখালী জেলায় মৃতের সংখ্যা যা দাড়িয়েছিল,গড়ে ঐ সংখ্যা যদি সব জেলাতে ধরা যায়,তাতেও লাখ সোয়া লাখের বেশি মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় না।
১৯৭১ সাল ও তার পরবর্তী সময়ে লোক মারা গেছে অন্তত ৪ পর্যায়ে
১। ২৫ শে মার্চের পূর্ব পর্যন্ত (অধিকাংশই আওয়ামীলিগ-বামপন্থি বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের হাতে যার স্বীকার মুলত অবাঙালী, বিহারী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী নাগরিক,সরকারী অফিসার, আর্মির লোক ও তাদের পরিবার)
২।২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর (মুক্তি বাহিনী ও পাকিস্তান বাহিনী উভয়ের হাতে এবং তাদের উভয়পক্ষের মধ্যে)
৩। ১৬ ই ডিসেম্বর থেকে অস্র জমা দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত (যেমন; রাজাকার, বিহারী,আল-বদর ইত্যাদি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষের লোক)
৪। ১৯৭২ থেকে অস্র জমা দেয়ার পর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে খুন .
এবার বলছি কি করে এলো ৩০ লাখের কাহিনী।
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বৃটেনের বিমান বন্দরে নেমে সংক্ষিপ্ত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টের সংগে সাক্ষাতাকারে শেখ মুজিবুর রহমান তিন মিলিয়ন বলে ফেলেন এবং এরপর থেকেই চালু হয়ে গেল ৩০লক্ষ লোক মারা গিয়েছে।
১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টের সংগে সাক্ষাতাকারে শেখ মুজিবুর রহমান তিন মিলিয়ন বলে ফেলেন এবং এরপর থেকেই চালু হয়ে গেল ৩০লক্ষ লোক মারা গিয়েছে। কেউ সেটা শোধরাননি কিংবা প্রতিবাদ করেননি মুজিববাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর ভয়ে।
এমন কি তখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজী জহিরুল কাইয়ুম “একাত্তরের রণাঙ্গন” খ্যাত এই লেখকের আর একটি গ্রন্থ “একাত্তরের বিজয়” গ্রন্থে একটি সাক্ষাতকারে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩ লক্ষ লোকের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন,এর প্রতিবাদও কোন আওয়ামীলিগ বেতা-কর্মী করেননি।
৩০ লক্ষ লোক যে মরেনি তার উদাহরন
১৯৭২ সালে সরকারের তরফ থেকে প্রতি নিহত জনের জন্য ২০০০ টাকা করে ঘোষণা করা হয়েছিল।অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে যতটুকু জানা গেছে মাত্র ৭২ হাজার দরখাস্ত পরেছিল।তার মধ্যে ৫০ হাজার নিহতের আত্নীয়দের ঘোষিত অর্থ দেয়া হয়েছে।এই ৭২ হাজারের মধ্যে আবার বহু ভুয়া দরখাস্তও ছিল, এমনকি অনেক রাজাকারও ছিল।
সাংবাদিক জুহুরীর বই “৩০ লাখের তেলেসমাতি” একটি ঐতিহাসিক বই। মুক্তি বাহিনী , ভারতের সেনা , নৌ , বিমান , ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান দের সাক্ষাত্কার সহ বইয়ে লেখা আছে
শেখ মুজিব সরকার ১৯৭২ সালের ২৯ শে জানুয়ারী শনি বার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান এবং নিহতের সংখ্যা বিষয়ে একটি কমিটি ঘটন করে।
সেই কমিটি সারা দেশে অনুসন্ধান করে ৫৬ ৭৪৩ জনের কথা লিখা দেখে শেখ মুজিব ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন " আমি বলেছি ৩০ লক্ষ, তাই সেটাই হবে। কথা বদলানো যাবে না। আর এই কারণেই সেই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। আজ পর্যন্ত জাতি জানতে পারেনি ১৯৭২ সালের অনুসন্ধানী রিপোর্টের কথা।
সেই কমিটি সারা দেশে অনুসন্ধান করে ৫৬ ৭৪৩ জনের কথা লিখা দেখে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে মুক্ত স্বাধীন সংগ্রামে শহীদের সংখ্যা নিয়ে একাডেমিক গবেষণা মূলক বই লিকেহ্ন
ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইতিহাসবিদ ডক্টর আবদুল মু’মিন চৌধুরী। তিনি লিখেন; কি করে ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায় ?
Behind the Myth of Three million by M. Abdul Mu'min Chowdhury
Notes and References
1. Robert Fick, The Social Organisation in North-East India in
Buddhist Time, tr. S.K. Maitra, Indological Book House, Baranasi,
1972
2. Suniti Kumar Chatterji, Languages and Literatures of Modern
India, Bengal Publishers, Calcutta, 1963: 160-61
3. Denesh Chandra Sen, Brihath Bango (Greater Bengal), Dey's
Publishing, Calcutta, 1993 : 333.
4. George Roerich (tr.), Biography of Dharmasvamin (Chag lo-tsaba
Chosrje-dpal): a Tibetan Monk Pilgrim, K.P.Jawaswal Research
Institute, Patna, 1959
5. Kulacharya Jnanasri, Bhadrakalpadruma, in Some Tibetan
Reference to Muslim Advance into Bihar and Bengal, Journal of
Brendra Oriental Research Society, Rajshahi, December, 1940.
6. S.K.Biswas, Autochthon of India and the Aryan Invasion,
Genuine Publications & Media Pvt Ltd, New Delhi, 1995
7. Subir Bhaumik, Insurgent Crossfire: North-East India, Lancer
Publishers, New Dehli, 1996: 10
8. William Drummond, The Missing Millions, The Guardian,
London, 6 June, 1972.
9. Osman Abdullah, Sonar Bangla Swashan Keno? (Why Golden
Bengal Has Turned Graveyard?), Bangladesh Mukti Front, London. E -13, 1974.
10. Abul Mansur Ahmed, Post-editorial, The Ittefaq, 13 October,
1973; Abdul Hamid Khan Bhashani, Awami League's Words and
Deeds, Tangail, 1973;
11. Ghulam Mohiuddin, Muktijuddher Bilombitha Sriticharan
(Delayed Reminiscences of Liberation War), Dainik Millat, Dhaka, 26
January, 1996.
12. Jyoti Sen Gupta, Freedom Movement in Bangladesh, 1943-
1973: Some Involvement, Naya Prakash, Calcutta, 1974: 305.
13. After Pakistan came East Pakistan's Communist Party continued
as an affiliate of the Communist Party of India. Following the split
between the followers of Soviet and Chinese lines the Pro-Moscow
communists in East Pakistan under their mainly Hindu leadership
maintained their organisational affiliation with the Communist Party of India.
14. Cf Congress leader Monoranjan Dhar's interview in Basant
Chatterjee, Inside Bangladesh Today: An Eye Witness Account, S.
Chand & Co. (Pvt) Ltd, New Delhi, 1973.
15. Jyoti Sen Gupta, op cit: 434-36
16. Jyoti Sen Gupta was originally from my home district Sylhet. In
1972 I had a meeting with him in Dhaka at the house of Justice
Ranadhir Sen where in presence of journalist Mubaidur Rahman he
narrated many stories about 1971 including how he supported a number
of top Awami League leaders in 1971 by obtaining financial assistance
from the Soviet embassy.
17. Oriana Fallaci, An Interview with Sheikh Mujibur Rahman,
L'Europeo, Rome, 24 February, 1972. [Cf the Text in Appendix - 1]
18. Subir Bhaumik, op cit: 39
19. Abdur Razzak, Interview, in Weekly Meghna, vol. III no. 14,
Dhaka, 18 March, 1987.
20. ibid; and Subir Bhaumik, op cit: 33
21. Abdur Razzak, ibid
22. Jyoti Sen Gupta, op cit: 318-22
23. Asoka, Raina, Inside RAW: the story of India's secret service,
Vikas Publishing House Pvt Ltd, 1981 : 51
24. Cf The Hansard of 29 March, 1971.
25. Cf The Resolution moved by the Prime Minister of India, in The
Proceeding of the Indian Parliament of 27 March, 1971.
26. Subir Bhaumik, op cit: 32
27. V.K.R.V. Rao ed. Bangladesh Economy: Problems and
Prospects, Delhi, 1972; Austin Robinson, Economic Prospects of
Bangladesh, Overseas Development Institute Ltd, London, 1973; and
M.R. Akhtar Mukul, op cit :: 53-54, 168-69
28. Wolpert, Zulfi Bhutto of Pakistan, Oxford University Press,
Oxford, 1994 [CL the Text in Appendix - 2]
29. Anthony Mascarenhas, A Legacy of Blood, [Bengali tr.
Muhammed Shajahan], Haqqani Publishers, 141 Dhaka Stadium,
Dhaka, 1995 : 8
30. Jyoti Sen Gupta, op cit: 445
31. Anthony Mascarenhas, op cit: 8-9
32. M.R. Akhtar Mukul, op cit : 121
33. Subrata Banerjee, Stray Memories, in Abdul Gaffar Choudhury
ed. Sheikh Mujib, Radical Asia Books, 317 Seely Road, London SW
17, 1977 :52-53.
34. Zainal Abedin, Raw and Bangladesh, Fatema Shahab,
Fakirapool, Dhaka, 1995
35. Subir Bhaumik, op cit: 32
36. This includes the needs of Indian business to compete in the
emergent South-East Asian market, especially those in Indo-China
which were so long under state monopoly.
37. Cf. Minute of Mountbatten's meeting with B.C.Roy on 12
January, 1948 in Appendix -3
38. Wolpert, op cit, [Cf. the Text of the Bhutto-Mujib Exchange in
Appendix -2]
( পূর্বে লেখাটি সোনার বাংলা ব্লগে লিখেছিলাম )
বিষয়: বিবিধ
৭৭৮৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১৯৭২ সালে সরকারের তরফ থেকে প্রতি নিহত জনের জন্য ২০০০ টাকা করে ঘোষণা করা হয়েছিল।অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে যতটুকু জানা গেছে মাত্র ৭২ হাজার দরখাস্ত পরেছিল।তার মধ্যে ৫০ হাজার নিহতের আত্নীয়দের ঘোষিত অর্থ দেয়া হয়েছে।এই ৭২ হাজারের মধ্যে আবার বহু ভুয়া দরখাস্তও ছিল, এমনকি অনেক রাজাকারও ছিল।
শেখ মুজিব সরকার ১৯৭২ সালের ২৯ শে জানুয়ারী শনি বার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান এবং নিহতের সংখ্যা বিষয়ে একটি কমিটি ঘটন করে।
সেই কমিটি সারা দেশে অনুসন্ধান করে ৫৬ ৭৪৩ জনের কথা লিখা দেখে শেখ মুজিব ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন " আমি বলেছি ৩০ লক্ষ, তাই সেটাই হবে। কথা বদলানো যাবে না। আর এই কারণেই সেই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। আজ পর্যন্ত জাতি জানতে পারেনি ১৯৭২ সালের অনুসন্ধানী রিপোর্টের কথা।============
সব কিছুর জরিপ হয় , এইই অমিমাংসিত ইসুটির জরিপ হয়না কেন? এটা নিয়ে এত বিতর্কের অবসান হওয়া চাই ,
আসলে যত টুকু আমি বুঝি তিন লক্ষ ও হবেনা শহিদের সংক্ষ্যা, তদন্ত কমিটি সারা দেশে অনুসন্ধান করে যে ৫৬ ৭৪৩ জনের কথা বলেছিলেন হয়তোবা তার চেয়ে ডিঙ্গিয়ে লাখ খানিক হবে এর চেয়ে বেশী হওয়র কথা না।
কারন বর্তমান সময়ের মত এত উন্নত অস্র তখন ছিলনা , বর্তমান এত উন্নত অস্র দিয়ে যুদ্ধ করার পরও ইরাক -আফগান সব মিলীয়েও ১০ লক্ষ হবেনা আর যে সময় সাধারন অস্র দিয়ে যুদ্ধ হওয়ার পরও৭ কোটি অধ্যুশীত দেশে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হবে ,এটা বিশ্বাস করার মত নয়।কিন্তু শেখ সাহেব জোসের বশতি হয়েই তিন মিলিয়ন বলে ফেলেছিলেন
আমরা কি আজীবন এই তর্কের মধ্যেই আমাদের প্রিয় স্বাধীনতাকে বার বার রক্তাত করবো ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন