কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারকে ভয়াবহ নির্যাতন করে ভারতের শাসক শ্রেণী।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:৫৪:১৩ সকাল
কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের উপর
নির্যাতনের মাত্রা কতটা ভয়াবহ ছিল তার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হলো সে সময় চুরুলিয়া কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাজী পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন কাজী আলী হোসেন। সহজ সরল জনগনের মধ্যে গ্রামের নির্যাতিত কৃষক মজুরদের মহাজনী ও জোতদারী ঋণের বোঝা থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি ঋণ সালিশি বোর্ড নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়িক বুদ্ধিচালিত কংগ্রেস রাজনীতি এই ঋণ সালিশি বোর্ড নিয়ে কাজের বিষয়টাকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা তাঁকে ১৯৫১ সালের ৭ জানুয়ারি নিজের বাড়ির সামনেই নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার আজও পাওয়া যায়নি। এবং ভারতের কোনো সরকার সেটা করবেও ও না।
সবচেয়ে যে জিনিসটা ভয়ঙ্কর তা হলো নজরুল পরিবারকে ভারতের তত্কালীন কংগ্রেস সরকার চিহ্নিত করে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসাবে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার যার নাম কাজী পরিবার। সেই কাজী পরিবারের উপর ১৯৬৩ সালে সরাসরি আঘাত রাজনৈতিক দিক থেকে। পাকিস্তানের দালাল আখ্যা দিয়ে জেলে পাঠানো হয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী মজহার হোসেনকে। তত্কালীন ভারতীয় সরকার দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করে নজরুলের আরেক ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলী রেজাকে। ভারতীয় সরকারি অভিযোগে বলা হয়েছিল, ‘চুরুলিয়া গ্রামে অভিযুক্তরা গভীর রাতে পাকিস্তানি হেলিকপ্টার এনে দেশের সব গোপন দলিল পাকিস্তানকে দিয়ে দিয়েছিল।’ এই উদ্ভট ও হাস্যকর , চরম বানোয়াট , অভিযোগের জবাবে কবি কাজী নজরুলের ভ্রাতৃবধূ শহীদ আলী হোসেনের ক্ষুব্ধ জননী পশ্চিমবঙ্গের সেই সময়কার প্রধান কংগ্রেস নেতা অতুল্যঘোষকে সরাসরি বলেছিলেন, ‘আমার ছেলেরা যদি দেশদ্রোহী হয়, তাহলে প্রকাশ্য রাজপথে তাদের গুলি করে মারুন। না হলে সসম্মানে ছেড়ে দিন। আমার ছেলে যদি দেশদ্রোহী হয় তাহলে ভারতীয় সেনাবাহিনীও তাই।’
তারপর অশেষ অত্যাচার নির্যাতন আর রিমান্ডের অনবরত জিজ্ঞাসাবাদের যন্ত্রণা সয়ে এরা মুক্তি পান। কিন্তু তাদের উপর নারকীয় নির্যাতনের ফলে কাজী পরিবারের মানসিক চাপ তৈরী করে ভারতীয় সরকার।
কবি কাজী নজরুলকে ভারতীয়রা পাকিস্তানি চেতনার কবি বানিয়ে ফেলেছিল সে সময়। তারা কাজী নজরুলের কবিতা , গান কে পাক সংগীত বলে প্রচারে নেমে যায়। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছিল যে, ভারতীয় শাসকরা রেডিও-টিভিতে নিষিদ্ধ করে দেয় নজরুল সঙ্গীতের প্রচার ও পরিবেশন। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞাটি বলবত্ ছিল।
আবার নতুন রূপে চালানো হয় কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের উপর আইনি তান্ডব।
১৯৭০ সালেও আঘাত আসে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের ওপর। ভারতীয় প্রিভেনটিভ পাওয়ার অ্যাক্টে আবারও গ্রেফতার করা হয় নজরুল পরিবারের সদস্যদের। ১৯৭২ সালে ভারতীয় সিআরপির ( সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ) হামলায় ভণ্ডুল হয়ে যায় নজরুল জয়ন্তীর উত্সব। ১৯৭৪ সালে আবার গ্রেফতার করা হয় কবি পরিবারের সদস্যদের। ভারতীয় শাসক এবং ভারতীয় রাজনৈতিক নেতারা এমন করে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারের উপর বার বার হামলে পরে। কিন্তু একটিবার ও তারা রবীন্দনাথের পরিবারকে নির্মম নির্যাতন করেনি। বরণ করেছে রাজকীয় ভাবে। কিন্তু জনমানুষের কবি , অধিকার রক্ষার সৈনিক সেই কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারতীয়রা এখনো কি মেনে নিয়েছে ? কিন্তু আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। কাজী নজরুল ইসলামের পরিবারকে ভয়াবহ নির্যাতন করে ভারতের শাসক শ্রেণী।
সুত্র - ""অপ্রকাশিত সত্য"" নামে একটা বইয়ের কিছু অংশ।
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাজী আলি হোসেন কবির ছোটভাই ছিলেন। কিছুদিন আগেও নজরুল এর জন্মস্থানে কলেজ স্থাপন নিয়ে ঘটনায় তাদের উপর পুলিশি অত্যাচার হয়েছে।
অএঙ্ক কিছু জানলাম আজকে ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন