শেখ হাসিনার নির্দেশে লগি বৈঠার আক্রমনে রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:০৮:৫১ বিকাল
২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে ওয়াদা করেছিল তারা বিরোধীদলে গেলেও আর হরতাল করবেনা সে আওয়ামী লীগ ২০০১-২০০৬ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছিল।
প্রকাশ্য গুলিতে অনেকের শরীর ঝাঝরা করে দেয়া হয়েছে, লগি-বৈঠা দিয়ে অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। লাশের উপর নৃত্য করেছে। কারও কারও মাথা ফেটে মগজ পর্যন্ত বেরিয়ে গেছে। নির্মম আঘাতে অনেকের চেহারাও বিকৃত হয়ে গেছে। এর পর আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা লগি বৈঠার কর্মসূচী সফল করায় নেতাকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছিলেন।
পূর্বনিধারিত কর্মসূচী হিসাবে ২৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াত সমাবেশের আয়াজন করেছিল। একই দিনে পল্টন ময়দান সহ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ সমাবেশের আয়োজন করে।
জামায়াতের নির্ধারিত সভাস্থলে বিনা উস্কানিতে দখলের চেষ্টা করে সাহারা, তোফায়েল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মায়া, ডাক্তার ইকবাল ও হাজী সেলিমের লগি-বৈঠা বাহিনীর নেতৃত্বে। তাদের গতিবিধি আচার-আচরণে দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছিল যে এ ধরেনের আচরণ ছিল অত্যন্ত পূর্ব-পরিকল্পিত।
সকাল ১০ টা থেকে আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল আসা শুরু হল। মিছিলকারী সকলের হাতে ছিল লগি-বৈঠা, লাঠি, হকিষ্টিক সহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র। মিছিলগুলো আমাদের পাশ দিয়ে পল্টন মোড় ক্রস করে মুক্তাঙ্গন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিল আবার কোনো কোনো মিছিল বায়তুল
মোকাররম দক্ষিন গেট দিয়ে পল্টন ময়দানের দিকে প্রবেশ করছিল। ধীরে ধীরে পল্টন এলাকা এবং তার আশেপাশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল থেকে উসকানি মূলক স্লোগান দেয়া হচ্ছিল।
বেলা ১১ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম ও এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে দুটি মিছিল অত্যান্ত পরিকল্পিত ভাবে ধর ধর বলে এক যোগে জামায়াতের সমাবেশকে ভন্ডুল করার জন্য মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের দিকে ঢুকে পড়ে সেখানে শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব পালনরত জামায়াত-শিবিরের উপর লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বর হামলা চালায়। পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান করা নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপর একযোগে হামলা করে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জামায়াত শিবিরের জনশক্তিদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল। এ হামলায় পিস্তল সহ বিভিন্ন ধারনের আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এইচ বি এম ইকবাল ও তার বাহিনী নিয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিল ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড। পল্টন এলাকার অসংখ্য বানিজ্যিক ভবন, বিপনী বিতান সহ গুরুত্বপূর্ন অফিস আদালতে তারা আগুন লাগিয়ে দিল।
পুরো পল্টন এবং এর আশেপাশে এলাকা জুড়ে চলছিল ঘন্টার পর ঘন্টা লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডব। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকে অসহায় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম তখন পল্টন মোড়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। তাকে দেখে এক যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর। আওয়ামী হায়েনাদের লগি-বৈঠার উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুজাহিদ। তার পর নরপিশাচরা লগি-বৈঠা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে নির্মমভাবে শহীদ করে । জামায়াত কর্মী জসীমকে প্রীতম হোটেলের সামনে একাকী পেয়ে লগি-বৈঠা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। তিনি বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তাকে আঘাত করতে করতে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। এলোপাতাড়ি আঘাতের পর আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের ওপর ওঠে নৃত্য উল্লাস করতে থাকে। এই দৃশ্যই টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখা যায়। সেদিন আওয়ামী হায়েনারা জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমানকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি লাশটি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল গুম করার জন্য। কিন্তু পুলিশের সহায়তায় যখন লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো সেখানেও চলতে থাকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম বাহিনীর লাশ দখলের খেলা। তারা নকল বাবা মা সাজিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল লাশটি। পরবর্তীতে এ কারসাজি ধরা পড়ায় নকল বাবা মা সটকে পড়ে। এখানেই শেষ নয় আওয়ামী লীগ হাবিবুর রহমানকে নিজেদের কর্মী দাবী করে তার লাশের ছবি ব্যবহার করে পোষ্টারও ছেপেছিল। লাশ নিয়ে রাজনীতির এর চেয়ে জঘন্য নমুনা আর কী হতে পারে ?
প্রকাশ্য গুলিতে অনেকের শরীর ঝাঝরা করে দেয়া হয়েছে, লগি-বৈঠা দিয়ে অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। লাশের উপর নৃত্য করেছে। গণ হত্যার দায় থেকে হাসিনা মুক্তি পাবেন কি করে ? কারণ শেখ হাসিনা নিজেই লগি-বৈঠা নিয়ে আওয়ামীলীগের কর্মীদের আসতে বলেছিলেন।
কেন এই গণহত্যা ?
২৮ অক্টোবরের ঘটনা ছিল একটি পরিকল্পিত ঘটনা। চারদলীয় জোট সরকারের কার্যকালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগ যখন বুঝতে পেরেছিল নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়, তখন তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ঘটনা সংঘটিত করে। লগি-বৈঠার তাণ্ডবে মানুষ হত্যা করে দেশের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করে অরাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় এনে একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে মহাজোটকে ক্ষমতায় বসানোর উদ্দেশ্যেই সেই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তারই ফলশ্র“তিতে ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করে দেয়া হয়েছিল। ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য দুই বছরব্যাপী প্লান প্রোগ্রাম করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে প্রহসনের নির্বাচন দেয়া হয়েছিল। সেই কথা আওয়ামী লীগের নেতারা এমন কি আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে নির্বাচনের পর প্রদত্ত বক্তব্যেও স্বীকার করেন।
আর এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জানুয়ারি ২০১৪ এর নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতার নিশ্চয়তা পেয়ে যায়।
খুনিদের কি হয়েছে ?
২৮ আক্টোবরের ইতিহাসের নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড জাতির কলংক। ২৮শে অক্টোবর শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলংকজনক দিন। সেদিনের পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা দেখে বাংলাদেশী জাতি কেঁদেছে এবং বিশ্ববিবেক বাকরুদ্ধ হয়েছে। বর্তমান অবৈধ সরকার ( বিনা ভোট ) ২৮শে অক্টোবরের চিহ্নিত খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও পূনর্বাসন করেছে।
বিষয়: বিবিধ
৩৪৫৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বন্দী অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা জনাব সিরাজ সিকদারকে নির্মমভাবে পাশবিক অত্যাচার করে হত্যা করার পর শেখ মুজিব স্বয়ং সংসদ অধিবেশনে ক্ষমতার দম্ভে বলেছিলেন, “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?”
বস্তুতঃ শেখ মুজিব তার নিজের ও পরিবারের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী একটা ভিত্তি দেয়ার লক্ষ্যেই বাকশালী স্বৈরাচার কায়েম করেছিলেন। বাকশালীরাও শ্লোগান তুলেছিল,
“এক নেতা, এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।”
“রক্ষীবাহিনী ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী কাজ শুরু করে, ৮ই মার্চ আইন করে বৈধতা দেয়া হয়। এই বাহিনী ৪০ হাজার লোককে খুন করে কিন্তু একটি খুনের ও বিচার হতে পারেনি। ৪০ হাজার লোকের হত্যার জন্য রক্ষীবাহিনীকে দায়মুক্তি প্রদানের কাজটি মরহুম শেখ মুজিব করেন। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের সরকারই ইনডেমনিটি প্রবর্তনের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন