রক্ষী বাহিনীর দায়মুক্তি এবং জাতির বুকে কলঙ্ক
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ৩০ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৫৮:০১ দুপুর
১৯৭৪ সালের ১১নং আদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের সংসদ থেকে পাস করা এই সংশোধনী কার্যকারিতা দেখানো হয় ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারী থেকে।
১৯৭৪ সালের রক্ষীবাহিনী সংশোধনী আইনের ১৬(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়, রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের যে কোনো কাজ সরল বিশ্বাসে করেছেন বলে গণ্য করা হবে এবং এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের, অভিযোগ পেশ কিংবা আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।
রক্ষীবাহিনীকে অত্যাচার, নির্যাতন, লুটতরাজ ও গোপনে-প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের দায় থেকে মুক্তি দিতে জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইনে এ সংশোধনী আনা হয়। এটা ছিল ১৯৭৪ সালের ১১নং আদেশ। ১৯৭৪ সালে জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইনের সংশোধনী এনে এই ইনডেমনিটি দেয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই রক্ষী বাহিনীর খুনিদের বাচানোর জন্য স্বাধীন দেশে এই আইনটি করেছিলেন।
অর্থাৎ রক্ষীবাহিনী কার্যক্রমের শুরু থেকে যা কিছু করেছে সবই দায়মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালের সংশোধনীতে।
সংশোধনীর ৮(ক) অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়, রক্ষীবাহিনীর যে কোনো সদস্য বা অফিসার ৮নং অনুচ্ছেদবলে বিনা ওয়ারেন্টে আইনের পরিপন্হী কাজে লিপ্ত সন্দেহবশত যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে। এছাড়া যে কোনো ব্যক্তি, স্হান, যানবাহন, নৌযান ইত্যাদি তল্লাশি বা আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে-এমন যে কোনো সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং তার সম্পত্তি হস্তগত করার পর একটি রিপোর্টসহ নিকটতম থানা হেফাজতে পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহণ করতে পারবে।রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের আরও লোমহর্ষক বর্ণনা
সাংবাদিক আহমেদ মুসার ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’ বইয়ের ৫৩নং পৃষ্ঠায় রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের শিকার শরীয়তপুরের অরুণা সেনের বর্ণনা
সাংবাদিক আহমেদ মুসার ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’ বইয়ের ১৩৬ নং পৃষ্ঠায় রক্ষীবাহিনী ময়মন সিংহে ১৫০০ কিশোর তরুণ কে হত্যা করে জানুয়ারী মাসেই।
রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার ও হত্যার লাইসেন্স দেয়া প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালে ২ এপ্রিল ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার ‘স্যাংশান টু দ্য কিল ডিসেন্টার’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব যখন প্রকাশ্যে জনসভায় নির্দেশ দিলেন, “নক্সালদের দেখামাত্র গুলী কর” তখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড চালানোর জন্য অন্য কোনো অনুমোদনের আর দরকার পড়ে না।’
আওয়ামীরীগ সরকারের সময়ের সরকারের রক্ষীবাহিনী (বেসরকারী সামরিক বাহিনী) গঠনের পর ক্রসফায়ারে মারা যায় বহু মানুষ। প্রথম উদাহরন সিরাজ সিকদার।
ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার ১৯৭৩ সালের ২০ মে প্রকাশিত ‘ভিসেজ অব কাউন্টার রেভ্যলুশন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, “রক্ষীবাহিনী হচ্ছে প্রতি বিপ্লবের অস্ত্র, যার উপর এমনকি সর্বভুক শাসক শ্রেণীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভারতীয় শাসক শ্রেণীর অনুগত এক সরকারকে এবং ভারতীয় উপ-সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণবাদী স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য এটা হচ্ছে সিআরপির সম্প্রসারণ। এর নিঃশ্বাসে রয়েছে মৃত্যু আর ভীতি। আপনি অথবা আমি যে কেউ হতে পারি এর শিকার এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের পুস্তকে আমাদের পরিচিতি হবে ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসাবে।”
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল ও গ্রামের তত্কালীন শেখ মুজিব সরকারবিরোধী মানুষকে যখন তখন রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিলো। কেউ গুম হয়েছেন আর ফিরে আসেননি। কাউকে প্রকাশ্যে মারা হয়েছে। এমনকি বহু তরুণী কে তুলে নিয়ে যাবার পর তাদের লাশ পায়নি কেউ।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হক কথা। জাসদের মুখ পত্র গণ কন্ঠ পত্রিকা ,সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিলের অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বই ,বাম লেখক আহমেদ ছফার বই , বাম সিপিবি রাজনীতিবিদ হায়দার রনো। আরো রয়েছে সাবেক বিচার পতি হাবিবুর রহমানের বই , নির্মল সেনের বই সহ অনেক আর্টিকেল , বই হচ্ছে জ্বলন্ত প্রমান।
যুদ্ধকালীন হত্যা আর একটি স্বাধীন দেশে ক্ষমতাসীনদের হাতে গণ হত্যার বিচার আলাদা। যুদ্ধকালীন গণ হত্যার চেয়ে ঠান্ডা মতে তান্ডব চালিয়ে হাজার হাজার হত্যার বিচার কি বেশি জরুরি নয় কি ?
বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের, অভিযোগ পেশ কিংবা আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। এই কালো আইনের জনকের এবং সেই সাথে জড়িত মানবতা বিরোধী রক্ষী বাহিনীর বিচারের জন্য কেন আদালত ঘটন করা হচ্ছে না ?
১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত রক্ষী বাহিনী দিয়ে গণ হত্যা সম্পদ লুণ্ঠনের অনিবার্য পরিনিতিতে দুর্ভিক্ষ একদলীয় বাকশাল গঠন এসবই দু:সহ অতীত হিসেবে আমাদের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।
বিষয়: বিবিধ
৩৬১১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন