গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আসামী। পাঁচ কোটি টাকা দিয়েও রেহাই মেলেনি ।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৪ জুলাই, ২০১৫, ০৪:০৭:৩৫ বিকাল
জীবনে কোনো দিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা মো. ফজলুল হক রহিম। তবুও গ্রেফতার হয়েছিলেন গাড়ি পোড়ানোর মামলায়। পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দুই উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আলিম ও নজরুল ইসলাম তার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন নগদ টাকা, ফ্ল্যাট ও গাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদ। এত কিছুর পরও ক্ষান্ত হননি পুলিশের ওই দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যরা। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২৫ জুন থেকে আবার নিখোঁজ ফজলুল হক। এ ঘটনার পর চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা। নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্ত্রী তাহ্মিনা আক্তার বৃষ্টি।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে করা আবেদনসূত্রে জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনদুপুরে রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে ডিবির এসআই মো. আবদুল আলিম ও নজরুল ইসলামসহ ডিবির তিন-চার জন সদস্য ডেভেলপার ব্যবসায়ী ফজলুল হককে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে ডিবি অফিসে নিয়ে যান। ক্রসফায়ার ও গুমের ভয় দেখিয়ে তার কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করে পুলিশ। স্বামীকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে ভুক্তভোগীর স্ত্রী বৃষ্টি প্রথম পর্যায়ে পুলিশকে ১০ লাখ টাকা দেন। এর মধ্যে ৬ লাখ টাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যাংকের (চেক নম্বর ২৫১১৯২২৪) মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবুও মুক্তি মেলেনি ফজলুল হকের। দ্বিতীয় দফায় ২ মার্চ প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ভুক্তভোগীর একটি প্রাডো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-১৬১০) ডিবি অফিসে নিয়ে আটকে রাখে পুলিশ। পরদিন ৩ মার্চ তিন দফায় নয়টি চেকের মাধ্যমে মোট ৯০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পুলিশ। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা করে ব্র্যাক ব্যাংকের তিনটি চেকের মাধ্যমে (চেক নম্বর : ৩২১৭৮৫৪, ৩২১৭৮৫৫, ৩২১৭৮৫৬) ৩০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। আশা ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেডের নামে ১০ লাখ টাকা করে ব্র্যাক ব্যাংকের চারটি চেকের (৩২১৭৮৫৭, ৩২১৭৮৫৮, ৩২১৭৮৫৯ ও ৩২১৭৮৬০) মাধ্যমে ৪০ লাখ এবং ১০ লাখ টাকা করে আইএফআইসি ব্যাংকের দুটি চেকের মাধ্যমে (২৫১১৯২৫, ২৫১১৯২৬) ২০ লাখ টাকা নেয় পুলিশ। এর বাইরে হাজতখানায় ‘মিল্কি প্রপার্টিজ’-এর হোল্ডিং নম্বর- ৯/২ কল্যাণপুর, ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাট আজিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে ৩০ লাখ টাকা দিতে অথবা তাকে ফ্ল্যাটটি লিখে দিতে হবে উল্লেখ করে ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় পুলিশ। একই হোল্ডিংয়ের চতুর্থ তলার আরেকটি ফ্ল্যাট ফজলুল হক নামের আরেক ব্যক্তির নামে ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে হাতিয়ে নেয়। এর পরও থামেনি পুলিশ।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দারুস্সালাম থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় ৪ মার্চ ফজলুল হককে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। একই সঙ্গে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ফজলুল হককে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে লেনদেনের বিষয় গোপন রাখতে পুনরায় ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়। ২০ এপ্রিল জামিনে মুক্ত হন ফজলুল হক।
http://www.bd-pratidin.com/lead-news/2015/07/04/91430
২৪ জুন পুলিশ সদর দফতরের ডিসিপ্লিন বিভাগ থেকে (বার্তা নম্বর-১৩৬/ডিসিপ্লিন) ঢাকা মহানগর পুলিশের শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রীকে সশরীরে পুলিশ সদর দফতরে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু পরদিন ২৫ জুন বিকালেই নিখোঁজ হন ফজলুল হক।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন