১৯৮৮ সালের ২৭ জানুয়ারি বিবিসির কাছে মিথ্যা তথ্য দিতে গিয়েই হাতে নাতে ধরা খেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:৪৮:১৭ দুপুর



১৯৮৮ সালের ২৭ জানুয়ারি বিবিসির কাছে মিথ্যা তথ্য দিতে গিয়েই হাতে নাতে ধরা খেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

বিবিসি বাংলার সাবেক প্রধান সিরাজুর রহমানের কলাম থেকে নেয়া

https://shar.es/1pcJWR

তারিখটা ১৯৮৮ সালের খুবসম্ভবত ২৭ জানুয়ারি। বিবিসিতে নিজের অফিস থেকে স্টুডিওতে যাওয়ার সময় হয়েছে। হঠাৎ টেলিফোন বাজল। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ চাটগাঁ থেকে ফোন করেছেন। বললেন, সিরাজ ভাই, আমি তোফায়েল। নেত্রী আপনার সাথে...। তার কথা শেষ হলো না। টেলিফোন ছিনিয়ে নিলেন শেখ হাসিনা। আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন শেখ হাসিনা? তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, কেমন থাকব! আমাকে হত্যা করার জন্য গুলি করেছে। আমি উদ্বিগ্ন হলাম। বললাম, গুলি আপনার গায়ে লাগেনি তো? তিনি বললেন, না, লাগেনি; তবে গুলি আমার গাড়ির কয়েক গজ দূর দিয়ে চলে গেছে। আমি জানতে চাইলাম, গুলি কে চালাল। তিনি বললেন, কে আবার? এরশাদ ছাড়া আর কে? আমি বললাম, এরশাদ কেমন ঘাতক পাঠাল আপনাকে হত্যা করতে, যার গুলি গাড়ির কয়েক গজ দূর দিয়ে চলে যায়?

শেখ হাসিনা চটে গেলেন আমার ওপর। বললেন, আমার কোনো কথা আপনার বিশ্বাস হয় না! এই বলে টেলিফোন তিনি তোফায়েল সাহেবের হাতে ছেড়ে দিলেন। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম, আওয়ামী লীগের মিছিল যাচ্ছিল লালদীঘি ময়দানের কাছে। পুলিশ সেখানে গুলি চালিয়েছে এবং প্রায় ১৫ জন মারা গেছে। এর পর আমি চাটগাঁয় আমার নিজস্ব দুই ‘সোর্স’কে টেলিফোন করে জানলাম, পুলিশ গুলি চালিয়েছে ঠিকই, কয়েকজন লোক মারাও গেছে, তবে শেখ হাসিনা সেখানে ছিলেন না। তিনি চট্টগ্রাম বার কাউন্সিলের সভায় বক্তৃতা করছিলেন।

প্রতিবাদে শেখ হাসিনা ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় শহীদ মিনারে সমাবেশ ডাকেন। সেদিন স্টুডিওতে যাওয়ার আগে ঢাকায় বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদকে ফোন করে খবর জেনে নিতে চাইলাম। সামাদ তো হেসে কুটিপাটি। বললেন, শেখ হাসিনা সমাবেশে আসেননি, এসেছিলেন খালেদা জিয়া এবং তিনি হাসিনার হাজার চল্লিশেক সমর্থক নিয়ে মিছিলে বেরিয়েছেন। আমি শেখ হাসিনাকে ফোন করলাম। জানতে চাইলাম তিনি কেন সমাবেশ ডেকে সেখানে যাননি। কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে তিনি বললেন, আমি গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলাম যে পুলিশ সমাবেশে গুলি চালাবে।... পুরনো পাঠকদের মনে থাকার কথা, সে সময় খালেদা জিয়া সামরিক স্বৈরতন্ত্রের পতনের সংগ্রাম করছিলেন, আর শেখ হাসিনা সকালে আন্দোলনে আর বিকেলে এরশাদের পক্ষে থাকতেন।

তারপর থেকে শেখ হাসিনা কতবার দাবি করেছেন যে, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে সে হিসাব কে রাখে ? আর ‘নাটক‘ ও ‘চমক‘ কথা দুটো কতশত বার তিনি উচ্চারণ করেছেন তারও হিসাব সম্ভব নয়।

সিরাজুর রহমান

বিবিসি বাংলার সাবেক প্রধান

(লন্ডন, ২১.০৪.২০১৫)

বিষয়: বিবিধ

১৯৮৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

316791
২৫ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : জননেত্রীকে হত্যা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে খুনীরা বিভিন্ন জনের বেশে , বিভিন্ন আমলে হামলা চালিয়েছেন।

কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে উনি দিব্যি সুস্থ আছেন । কারণ উনার চোখ বন্ধ হলে বাংলাদেশের যে কি দশা হবে তা আল্লাহ মালুম।
২৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৪৭
258032
রাজ্পুত্র লিখেছেন : তাহলে বাংলাদেশ ভারতের হানা মুক্ত হবে। সীমান্তে আর বাংলাদেশীরা মরবেনা।
316810
২৫ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধরা খাইলেও কি!!!
আওয়ামি লিগ তো নেত্রির মুখের কথাই সত্য কবলে মনে করে!
316813
২৫ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৩
খান জুলহাস লিখেছেন : চেতনা নিয়ে মিথ্যা বললে সমস্যা নাই।
316853
২৫ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৩০
মৃনাল হাসান লিখেছেন : খুব মজার কাহিনীতো!
317061
২৭ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:২৮
কাঁচের বালি লিখেছেন : দারুন ইতিহাস তুলে এনেছেন আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File