(পঙ্গু) হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়,বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:৩২:০৮ দুপুর
গুলি করার আগে পুলিশ তাদের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে জিজ্ঞেস করে তোদের গুলি করার অর্ডার এসেছে, কোথায় গুলি করব বল। তখন ছেলেরা বলে, আমরা অসহায়। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই গুলি করতে পারেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ ছেলেদের কাছে জোর করে এই মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে যে, তারা নাশকতাকারী।
#()# নয়ন বাছাড় (২৩)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবা নেই। পরিবারের একমাত্র সন্তান। চার বছর ধরে ঢাকায় আছেন তিনি। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাস থেকে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নামতেই বাধে বিপত্তি। হঠাৎ তাকে ধরে ফেলে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজের পরিচয়ও তুলে ধরেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে, দাবি নয়নের। গুলিবিদ্ধ নয়ন এখন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।
#()# মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক মাসুম (২৮)। মেরুল বাড্ডার নিমতলায় বসে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে তাকেসহ পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আফতাবনগরে অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন মাসুম। তিনিও ভর্তি পঙ্গু হাসপাতালে।
শুধু নয়ন, মাসুমই নন, ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের মতো অন্তত ১৭ জন, যাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। প্রত্যেকেরই পায়ে গুলি। সরেজমিন জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও বেশির ভাগই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। চলমান সহিংসতার সুযোগ নিয়ে পুলিশ এসব গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন আহতদের স্বজনেরা। কড়া পুলিশি পাহারায় তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে পুলিশ বলছে এরা বন্ধুকযুদ্ধে আহত।
পঙ্গু হাসপাতালের এবি ওয়ার্ডে ৬৯ নম্বর জেনারেল বেডে ভর্তি আছেন নয়ন। নয়নের খালাতো ভাই প্রিন্স জানান, নয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন নয়ন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান গিয়েছিলেন জুতা কিনতে। রাত ৮টার দিকে জুতা কিনে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে গাড়ি থেকে নামেন নয়ন। এ সময় হঠাৎ একটি গাড়িতে আগুন আতঙ্কে ছুটোছুটি করতে থাকেন লোকজন। ওই সময় ডিবি পুলিশ এসে নয়নকে ধরে ফেলে। নয়ন ডিবি পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেন, আমি পিকেটার নই। আমি হিন্দু ধর্মের অনুসারী। নয়নের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে তাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশেকে ফোন করা হয়। সূত্রাপুর থানা পুলিশ এসে নয়নের বাম পায়ে দু’টি গুলি করে। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার নামে নাশকতার মামলা দেয়া হয়। জানা গেছে, নয়নের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে।
নয়নের মা শিখা রানী বলেন, ‘ঘটনার সময় নয়নের কাছে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। চোখের সামনে একমাত্র ছেলের এই অবস্থা দেখে কী যে কষ্ট হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এখন ঠাকুরই একমাত্র ভরসা।’
আইজে ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর জেনারেল বেডে গাড়িচালক স্বপন (২২) ও ইআর ওয়ার্ডের অতিরিক্ত ৯ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুম (২৮)। স্বপনের মা নাজমা জানান, আমার ছেলে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালায়। বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। থাকেন মেরুল বাড্ডায়। নাজমা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গুলি করেছে পুলিশ। গাড়িচালক হিসেবে ছেলের লাইসেন্স দেখিয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সাত মেয়ের পর আমার একটি ছেলে হয়েছে। বহু আশা নিয়ে তাকে বড় করেছি। প্রথমে রিকশা চালাত। পরে সিএনজি আটোরিকশা। এরপর তাকে মাইক্রোবাস চালানো শিখিয়েছিলাম। তার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারব না। তিনি জানান, গত ৮ জানুয়ারি মেরুল বাড্ডার নিমতলা এলাকায় বসে কয়েক বন্ধু মিলে চা খাচ্ছিল স্বপন। এ সময় স্বপন, মাসুম, মনির (২৮) ও পিন্টুসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। সবাইকে থানায় নেয়া হয়। কাস্টডিতে দু’জনকে রেখে স্বপন, মাসুম ও মনিরকে নেয়া হয় আফতাবনগরে। সেখানে নিয়ে তিনজনকে গুলি করা হয়। স্বপনের পায়ে দু’টি গুলি করা হয়েছে। এরই মধ্যে মনিরের পা কেটে ফেলা হয়েছে। স্বপনের রিকশাচালক বাবা নূর ইসলামের প্রশ্ন, আমার ছেলে তো রাজনীতি করত না। তাহলে তার এ অবস্থা হলো কেন? তিনি বলেন, গ্রেফতারের পরপরই আমরা থানায় গিয়ে হাজির হই। পুলিশ আমাদের টাকা ম্যানেজ করতে বলে তিনজনকে নিয়ে থানার বাইরে যায়। আমরা সারা রাত থানায়ই অবস্থান করি। পরে পুলিশ আমাদের খবর দেয়, স্বপনসহ তিনজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, গুলি করার আগে পুলিশ তাদের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে জিজ্ঞেস করে তোদের গুলি করার অর্ডার এসেছে, কোথায় গুলি করব বল। তখন ছেলেরা বলে, আমরা অসহায়। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই গুলি করতে পারেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ ছেলেদের কাছে জোর করে এই মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে যে, তারা নাশকতাকারী।
ইআর ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন জামায়াতে ইসলামীর মোহাম্মদপুর থানার রোকন আবুল কাশেম ফজলুল হক (৩৭)। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। তিনি জানান, আমি ও আমার বন্ধু নাজমুল মিলে গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। ওই গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে ডিবি পরিচয়ে আমাদের কাছে জানতে চায় আমরা কোথায় থাকি ও কী করি। এরপর তারা থানায় ফোন করে বলেন, ‘আমরা নাকি শিবির ধরতে পারি না। এবার ধরেছি। ককটেল রেডি করেন।’ এরপর থানায় নিয়ে আমাদের বেধড়ক পেটানো হয়। পরে একটি গাড়িতে করে থানা থেকে আমাদের মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে। আমাদের পরিবার বোধহয় লাশও পাবে না। কিন্তু গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাদের দু’জনের হাঁটুতে গুলি করা হয়। পরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
http://dev.dailynayadiganta.com/detail/news/1399
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব গুলির ঘটনা ঘটছে তার নমুনা
হাজার হাজার গুলিবিদ্ধদের থেকে এমন বেশ কয়েকজনই ভর্তি আছেন সেখানে। যন্ত্রণায় কাতর তাদের মুখ। কারও কারও পাহারায় পুলিশ। বেশির ভাগের চোখে-মুখেই আতঙ্ক। নাম-পরিচয় দিয়ে কোন কথাই বলতে রাজি নন। তাদের আশঙ্কা- কথা বললেই কোনরকমে বেঁচে যাওয়া জীবনটাও হারাতে হতে পারে।
নাজমুলের সামনেই ছিল পুলিশের গুলিতে আহত আরও তিনজন। তারাও পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তারা কোন কথাই বলতে চাননি। আহতদের নিরপরাধ দাবি করে তাদের স্বজনরা জানান, কথা বললে আরও সমস্যা হবে। এ সময় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ অহিদুল ইসলাম কেঁদে ওঠেন। মানুষ সত্যটা জানুক- এমন কথা বললেও এর বেশি বলতে চাননি আহত একজনের স্বজন। ওই স্বজন আরও জানান, সত্য বললে তাদের আরও বেশি সমস্যা হবে। সেখানে গুলিবিদ্ধ চিকিৎসাধীন অপর দু’জনও পরস্পর আত্মীয়। হাসপাতালের পাশাপাশি আরেকটি ওয়ার্ডে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন আছেন বাগেরহাটের নয়ন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি এবং তার স্বজনরা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন সাংবাদিকরা আমাকে বাঁচাতে পারবে না। হাসপাতালের প্রিজন সেলে পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিলেন আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি। তবে তারাও কথা বলতে চাননি। সেখানে লক্ষ্মীপুর থেকে আসা পায়ে গুলিবিদ্ধ এক যুবক বলেন, গুলি করার পর আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সাংবাদিকরা লেখার পর আরও চারটি মামলা হয়েছে।
হাসপাতালের বেডেও আতঙ্ক
আমার একটা পা চলে গেছে। আপনারা কি চান আমার বাকি পা-টাও চলে যাক? আমি গুলি খাওয়ার পর অনেক সাংবাদিক এসেছেন। অনেক লিখেছেন। আমি তখন অনেক খুশি হয়েছি। তখনতো বুঝিনি আমার কি সর্বনাশ করেছেন। পেশা কি জানতে চাইলে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমি একজন সন্ত্রাসী। পারলে এটা লিখে দেন। আমার উপকার হবে। এ সময় বারবার জিজ্ঞেস করার পরও তিনি তার নাম-ঠিকানা বলেননি। বলেন, এখানে পুলিশ আছে। তাদের কাছেই জানেন আমি কি। ছোট্ট একটি প্রিজন সেলে কর্তব্যরত পুলিশের সংখ্যা ছিল ৯ জন।
জরুরি বিভাগের তথ্যমতে গত একমাসে এখানে গুলিতে আহত হয়ে ভর্তি হন ২৬ জন।
এরা হলেন- ঢাকার আজিমপুরের তানজিলা আক্তার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার ফারুক, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জাহাঙ্গীর, ঢাকার কলাবাগান এলাকার হাবিব উল্লাহ, কুমিল্লার মো. এনায়েত, দক্ষিণখান আজমপুরের ফয়েজ আলী সরকার, নোয়াখালী সেনবাগের এরশাদ উল্লা লেভিন, কুমিল্লা মেঘনা থানার মাসুম, হোমনা থানার স্বপন, শরীয়তপুরের মনির হোসেন, মানিকগঞ্জের খোরশেদ, ময়মনসিংহের নাফি আহম্মেদ, মেহেদী, চাঁদপুরের আব্দুল বারেক, গোপালগঞ্জের রুবেল, বাগেরহাটের মোফাজ্জেল, মিরপুরের অনিক মল্লিক, রাজু, গাজীপুরের ফুলমামা, নাদির, রোমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনিসুর রহমান, মোহাম্মদপুরের রাসেল, সোহরাব, বাগেরহাটের নয়ন, চুয়াডাঙ্গার মতিয়ার। এদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ
কথিত বন্দুকযুদ্ধ
গুলিবিদ্ধ ১৫–র ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি
গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ২৬ দিনে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ সময়ে কতজন আহত হয়েছেন, তার সঠিক কোনো হিসাব মেলেনি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর যাঁদের ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে আনা হয়েছে, প্রথম আলো শুধু তাঁদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পেরেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সত্যতা মেলেনি।
http://m.prothom-alo.com/bangladesh/article/454186/%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A7%A7%E0%A7%AB%E2%80%93%E0%A6%B0-%E0%A7%AF-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%87-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
পুলিশের গুলি পা কেড়ে নিল দুই ইমামের
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে থাকা মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলাল ও মাওলানা আবু ইউসুফ এর পা কেটে ফেলা হয়েছে।
তারা এখন পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। -
http://www.sheershanews.com/2015/02/17/69380#sthash.0btBJUM4.dpuf
মানব জমিন
http://mzamin.com/details.php?mzamin=NjQxNDk=&sMg==
বিষয়: বিবিধ
১৬৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন