বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৩৩:০৮ দুপুর



ইংরেজী Secularism শব্দটির বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ। Oxford ডিকশনারিতে Secular শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে Not religious or spiritual অর্থাৎ ধর্ম বা আধ্যান্তিকতাবিহীন। সুতারাং Secularism শব্দের অর্থ ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নয়, এর সঠিক অর্থ হবে ধর্মহীনতা।

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেস ছিল মূলত: একটি হিন্দু সমিতি। পরে একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। মুসলমান নেতারা শুরুতে কংগ্রেসেই ছিলেন। এমন কি স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। তিনি হিন্দু মুসলমান ঐক্য ও সম্প্রীতির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গান্ধী কংগ্রেসকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলে পরিণত করেছিলেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কারণে কংগ্রেস কখনই সার্বজনীন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়ে পারেনি। কংগ্রেস নেতাদের রাজনতিক ও সামাজিক ব্যবহারের প্রিক্রিয়া হিসাবে মুসলীম লীগের জন্ম হয়। শুরুতে মুসলীম লীগ ইংরেজ শাসক ও কংগ্রেসের সাথে নিজেদের স্বার্থ অধিকার নিয়ে দর কষাকষিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আসলে কংগ্রেস নেতারা একটি হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। অখন্ড ভারতে কোটি কোটি মুসলমানদের অবস্থান কি হবে ব্যাখ্যা করতে হিন্দু নেতারা ব্যর্থ হন। এই কারণেই মুসলমান রাস্ট্র হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আসে। তখন যদি ভারতকে কনফেডারেশন করার প্রস্তাব দেয়া হতো তাহলে হয়ত পাকিস্তান সৃষ্টির সুযোগ হত না।

ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশই বিরল রাষ্ট্র যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা সরাসরি ধর্মহীন।

বিশ্লেষণ করেন মুক্তিযোদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল তার বইয়ে এভাবেই উল্লেখ করেন -





মুক্তিযোদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল তার বইয়ে মুক্তি যোদ্ধের পর পরি সব কিছু পাল্টে ধর্ম নিরপেক্ষতার বীজ বপন করার রহস্য উন্মোচন করেন ।




বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা ও মর্মাথ সরাসরি ধর্মহীন যার কারণে ’৭২ এর ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধানে ধর্মীয় কোন রাজনীতির স্থান ছিল না, অথচ ভারতে কেবল বিজেপি নামক কট্টর ধর্মবাদী দল যারা দু’ দুবার সরকার গঠনের সুযোগ লাভ করেছিল তারা ছাড়াও ভারতীয় মুসলিম লীগ এমনকি জামায়াতে ইসলামী হিন্দ এর অস্তিত্বও রয়েছে।

খ্রিস্টান ইস্ট মার্কিন ভূ-রাষ্ট্রে রয়েছে প্রচুর সংখ্যক খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি। মার্কিন রিপাবলিকান পার্টি বাস্তবে একটি কট্টর ডানপন্থী মার্কিন রাজনৈতিক দল পালাবদলে ক্ষমতায় আসে যায়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালীন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র হতে তেলাওয়াতে কোরআন, ইসলামের আলোকে’ শীর্ষক নিয়মিত অনুষ্ঠানে কোরআন সূন্নাহ’র আলোকে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করে ধর্মপ্রাণ তরুণ মুসলিমদের মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হলেও বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এ অজুহাতে ১৬ ডিসেম্বর/৭১ সালের বিজয় দিবস হতেই ভারতের পরামর্শে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন হতে তেলাওয়াতে কোরআন সম্প্রচার নিষিদ্ধকরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইক্বরা বিসমি রব, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হতে মুসলিম শব্দ বাদ (হাইকোর্টের রায়ে পুনরায় সংযোজন) কবি নজরুল ইসলাম কলেজ হতে ‘ইসলাম শব্দ বাদ দেয়া হয়েছিল। আরো বেশ কয়েকটি বিষয় থেকে ইসলামের নামটি সরিয়ে ফেলা হয়।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি। কয়েকটি দলের জোরালো দাবি­ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

যারা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে তাদের জনসমর্থন শূন্য দশমিক শূন্য থেকে দশমিক দুই শতাংশের মধ্যে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচনে জাসদ ০.২১ শতাংশ, ওয়ার্কার্স পার্টি ০.০৭ শতাংশ, সিপিবি ০.১ শতাংশ, সাম্যবাদী দল ০.০১ শতাংশ, গণতন্ত্রী পার্টি ০.০১ শতাংশ, ন্যাপ ০.০১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। (সূত্র - নির্বাচন কমিশন )



ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বিষয়ে সেসব গণতান্ত্রিক দেশের অবস্থান কেমন ?


শতাব্দীর আলোচিত মতবাদ সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কার্ল মার্কস ও হেগেল জার্মানির।

সেই জার্মানিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটির নাম ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। সহযোগী আরেকটি দল ক্রিশ্চিয়ান সোসালিস্ট ইউনিয়ন। বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এই দলেরই নেত্রী। বহুদিন থেকে তারা জার্মানির বৃহত্তম দল হিসেবে পরিচিত। শাসন করেছে অনেক অঙ্গরাজ্য। কেউ কোনো দিন দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে বলে শোনা যায়নি। এমনকি এই সব নিয়ে সেই দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের চেতনার কথা শুনা যায় না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় দলের নাম।

ইসরাইলে রয়েছে ইহুদি , জৈনিস্ট সহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল।

লিকুদ পার্টি - ইহুধি

দ্যা জুইস হোম

ইউনাইটেড আরব লিস্ট -তা 'আল

হাত্জোহার - রেভিসীয়নীস্ট জীয়নিস্ট পার্টি

পপুলার আরব ব্লক

ন্যাশনাল রিলিজিয়াস পার্টি (এনআরপি ) জুইস ফান্ডালীজম।

ওয়েস্ট মিনিস্টার ধারার গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাজ্য। সেখানে দিব্যি স্কটিশ ক্রিশ্চিয়ান পার্টি নামের দলটি বৈধভাবেই রয়েছে। তারা ২০০৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে স্কটল্যান্ড থেকে নির্বাচন করে ১.৮ শতাংশ ভোটও অর্জন করে। ব্রিটেনের রানী অ্যাংলিকান চার্চের প্রধান। এ ছাড়া ব্রিটিশ লর্ড সভার ২৫টি আসন চার্চের ধর্মীয় যাজকদের জন্য সংরক্ষিত ।

ইউরোপের অন্যতম একটি গণতান্ত্রিক দেশ নেদারল্যান্ডস। চার দলের কোয়ালিশন সরকার বর্তমানে ক্ষমতায়। বৃহৎ দলটি ডাচ ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। কোয়ালিশন সরকারের শরিক দলও ধর্মভিত্তিক ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) সিডিইউ’র মূল আদর্শ খ্রিষ্টান গণতন্ত্র। দলের মূলমন্ত্রে বলা হয়েছে, বাইবেলই একজন সদস্যের অনুপ্রেরণার উৎস। এক কথায় বলা চলে বাইবেলই একজন সদস্যের মানতে হবে।

সুইজারল্যান্ড এর মত দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় ডজন দল পার্লামেন্টে সক্রিয়। এর মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান পিপলস পার্টি, ক্রিশ্চিয়ান সোস্যাল পার্টি, ইভানজেলিক পিপলস পার্টি নামের তিনটি দলের মূল ভিত্তিই ক্রিশ্চিয়ান গণতন্ত্র। ক্রিশ্চিয়ান পিপলস পার্টি পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি বর্তমান সরকারের কোয়ালিশন পার্টনার। সেখানে কেউ ক্রিশ্চিয়ান গণতন্ত্র বন্ধের দাবি তুলে না।

বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ ইতালি। বর্তমানে প্রথম ৭ টি প্রধান দলের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান ইউনিয়ন অন্যতম। পার্লামেন্টে এদের সমর্থক প্রায় ৩০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে।

ইউরোপের অন্যতম ধনী ও গণতান্ত্রিক দেশ অস্ট্রিয়া। চরম ডানপন্থী আন্দোলনের নেতা ভিয়েনার মেয়র কার্ল লুগারের নেতৃত্বে গঠিত হয় ক্রিশ্চিয়ান সোস্যাল পার্টি (সিএসপি)। ১৯৪৫ সালে অস্ট্রিয়ার স্বাধীনতা লাভের পর সিএসপি নাম পরিবর্তন করে অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি নাম ধারণ করে। ২০০০ সালে আরেকটি ডানপন্থী দল অস্ট্রিয়ান ফিন্সডম পার্টির সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। মাত্র দুই বছর পর ২০০২ সালে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে দলটি এককভাবে আবার সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। সংসদে কোয়ালিশন সরকার ক্রিশ্চিয়ান নীতির ধারক হয়ে আছে।

এ ছাড়াও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ডেনমার্ক, আলবেনিয়া, হাইতি, হাঙ্গেরি, লেবানন, নরওয়ে, সিরিয়া, সুইডেন, দক্ষিন আফিন্সকা, সার্বিয়া, রোমানিয়া, পানামা, পাপুয়া নিউগিনি, বলিভিয়া প্রভৃতি দেশে বিদ্যমান।

কানাডার কুইবেক রাজ্যে ২০০০ সালে রোমান ক্যাথলিকদের সহযোগিতায় গঠিত হলো ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। পার্টির মূলনীতিতে বলা হয়েছে, ‘অর্থোডক্স খ্রিষ্টীয় মতবাদ ও কুইবেক জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ই হবে দলের প্রধান লক্ষ্য। তারা সংসদে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামেই বহাল।

বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ অস্ট্রেলিয়া। রাজনীতিতে বিরাজমান ডজনখানেক ভিন্নধর্মী আদর্শের দল। নিউ সাউথ ডয়েলসেন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাদের অন্যতম।

মালয়েশিয়া। দীর্ঘকাল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল পার্টি বেশ দাপটের সাথেই শাসন করে চলেছে। একমাত্র উলেস্নখযোগ্য বিরোধী দলটি (পাস) ধর্মভিত্তিক।সহজ-সরল জীবনযাপনের জন্য পাসের নেতা নিক আবদুল আজিজের নাম অনেকেরই জানা। অতীতে সেখানে তিনটি রাজ্য শাসনেরও অভিজ্ঞতা আছে দলটির।

মুসলিম প্রধান দেশগুলোতেও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ।

মরক্কতে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, সুদানে ইসলামিক ফন্সন্ট, আফগানিস্তানে হেজবে ইসলামি, বাহরাইন ও ইয়েমেনে আল ইসলাহ পার্টি, মিসর, সিরিয়া, জর্ডানে ইখওয়ানুল মুসলিমিন, লেবাননে হিজবুলস্নাহ,তিউনিশিয়ায় আন নাহদাহ পার্টি, তুরস্কে সাদাত পার্টি ও একে পার্টি, পাকিস্থানে জামায়াত ও জমিয়তে ইসলামি উলেস্নখযোগ্য। এমনকি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপেও ইসলামি দল আদালত পার্টি বিদ্যমান।

প্রতিবেশী দেশ ভারত। কাগজে-কলমে অবশ্য সেকুলার রাষ্ট্রও বলা হয়। হিন্দু পুনর্জাগরণবাদী রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার ভাবধারার দলটি (বিজেপি) ৫০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ ভেঙে সমালোচিত হলো।গুজরাটের দাঙ্গার মূল তান্ডব চালিয়েছিল ভারতের বিজেপি। হিন্দুসংঘের পরিকল্পনায় ১৯৮০ সালে গঠিত হিন্দু ধর্মভিত্তিক দল বিজেপি। ১৯৮৪ সালে মাত্র দু’টি আসন নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৫ বছরের (১৯৯৬) ব্যবধানে ভারতের ক্ষমতায় বসে । উগ্র হিন্দু মতালম্বী বিজেপি দু-দু’বার সরকার পরিচালনার পর এখন তারা দেশটির বিরোধী দলে। শিখদের উগ্র সংঘঠন সিবসেনা দের বার বার দেখা যায় তরবারী হাতে স্বর্ণ মন্দিরের ঘটনায়। এ ছাড়াও ভারতে মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামের ধর্মীয় দলগুলোও তো রয়েছে বহাল তবিয়তে। এবং তারা সংসদ নির্বাচনে কয়েকটি আসন পেয়ে ভারতের রাজনীতিতে রয়েছে।

আরো কিছু দেশের ইতিহাস

২। ইন্দোনেশিয়া-ইন্দোনেশিয়ান ধর্ম এওয়েকেনিং পার্টি।

৩।নেপাল- নেপাল শিবসেনা।

৪। বাংলাদেশেও বঙ্গসেনা ,বীর বঙ্গসেনা, বীর বঙ্গ হিন্দু প্রজাতন্ত্র, স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন , উদ্ভাস্তু উন্নয়ন পরিষদ নামে কয়েকটি হিন্দু দল কাজ করছে।এদের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ভারত।

৮০ শতাংশেরও বেশি হিন্দু অধ্যুষিত দেশ নেপাল। ১৮ মে ২০০৬-এর পূর্ব পর্যন্ত ছিল পৃথিবীর একমাত্র ঘোষিত হিন্দু রাষ্ট্র। নেপালে রয়েছে সনাতন ধর্ম সমিতি, নেপালি জনতা পার্টি (বিজেপি’র নেপালি সংস্করণ) প্রধানতম ধর্মীয় দল, যা হিন্দুদের নিয়ন্ত্রনাধীন সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য।

অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে দেয়া হয়নি আলেজেরিয়ার ধর্মভিত্তিক দল ইসলামিক সালভেশন ফন্সন্টকে। ১৯৯০ সালে পরাশক্তিগুলোর সরাসরি মদদে ক্ষমতা কেড়ে নেয় সামরিক জান্তা । ধর্ম নিরপেক্ষতার অজুহাতে ১৯৯৭ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাফাহ পার্টির প্রধান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আরবাকানকে সেনাবাহিনীর হুমকিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

তারা বাংলাদেশের জনগনেক বোকার রাজ্যে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

কানাডা, আমেরিকা, ইউরোপে ধর্মভিত্তিক দল এমনকি ক্রিশ্চিয়ান দল, মুসলিম দল, হিন্দু দল নামে কোনো দল আছে কি না, রাজনীতিতে নির্বাচনের আগে ধর্মের ব্যবহার কেমন হয় খোজ নিলেই জানা যায়।

পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমের সাথে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের গোয়েবলসীয় প্রচারণা দেখে মনে হয় খ্রিষ্টবাদী পশ্চিমা দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। এমন কি বাংলাদেশের মানুষকে জুজুর ভয় দেখিয়ে ভুয়া তথ্য দিয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার বানিজ্য করছে।

নিচে বিভিন্ন উন্নত দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কিছু উদাহরন দেয়া হলো;

আমেরিকা ও কানাডা

খ্রিষ্টান ডেমোক্রেট অরগানাইজেশন অফ আমেরিকা এটি একটি আম্বরেলা প্রতিষ্ঠান।এর অধীনে দক্ষিন আমেরিকার ২৬টি দেশের ৩৩ টি খ্রিষ্টান রাজনৈতিক দল রয়েছে।

১। খ্রিষ্টান হেরিটেজ পার্টি অফ কানাডা

২। খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ কিউবেক

৩। দি ইসলামিক পলিটিকাল পার্টি অফ আমেরিকা

দক্ষিন আমেরিকাঃ

১। আফ্রিকান খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি ।পার্লামেন্টে তাদের উপস্থিতি রয়েছে

২। খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি , এটি অনেকটা ঐক্যজোট টাইপের হার্ডকোর খ্রিষ্টান পার্টি।

৩। ইউনাইটেড খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি ।আফ্রিকান পার্লামেন্টে তাদেরও উপস্থিতি রয়েছে।

আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও রয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ব্যাপক উপস্থিতি।

অস্ট্রেলিয়া:

১। খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি। এছাড়াও পৃথিবীর আরো বহু উন্নত দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম রয়েছে।

যুক্তরাজ্য:

১। খ্রিষ্টান পার্টি

২। দি খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি

৩। খ্রিষ্টান পিপলস এলাইয়েন্স

৪। ইসলামিক পার্টি অফ বৃটেন

ইউরোপ:

১।ডেনমার্ক- খ্রিষ্টান ডেমোক্রেট

২। চেক প্রজাতন্ত্র- খ্রিষ্টান এন্ড ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন , ভোট এবং সাপোর্টারের দিক থেকে এই পার্টির অবস্থান অনেকটা বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামীর মত।

৩। ফিনলেন্ড- খ্রিষ্টান ডেমোক্রেট পার্টি।

৪।ফ্রান্স- খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক পার্টি।

৫। জার্মানী-জার্মানীর ক্ষমতাসীন দল এবং সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ।ই্উরোপের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বলা চলে এই দলটাকে।ই্উরোপিয়ান পার্লামেন্টেও রয়েছে এদের শক্ত অবস্থান(৩৪ টি সিট) ।জার্মানীর বর্তমান চ্যানসেলর(প্রেসিডেন্ট)এই দল থেকে নিযুক্ত।মজার ব্যাপার হচ্ছে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর পরই এই দলটির জন্ম হয়।

(৬) সেন্টার পার্টি খ্রিষ্টান সোসাল ইউনিয়ন বাভারিয়া , জার্মানীর আরেকটি শক্তিশালী আন্ঞলিক দল।

(৭) গ্রিস- নিউ ডেমোক্রেসি । গ্রিসের সবচেয়ে বড় দুই দলের একটি। ইউরোপের আরেকটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল,ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের যাদের ৮ জন মেম্বার রয়েছে।

(৮) পপুলার অর্থডক্স রেলি । আরেকটি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিক দল। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তাদেরও রয়েছে ২ জন মেম্বার।

( ৯ ) ইটালি- ইউনিয়ন অফ খ্রিষ্টান এন্ড সেন্টার ডেমোক্রেটস। মোভমেন্ট ফর অটোনমিস। খ্রিষ্টান ডেমোক্রেসি , আরেকটি কট্টর রাজনীতিক দল

(১০) ইউ ডি ইউর পপুলারস । শক্তিশালী আঞ্চলিক আরেকটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল।

ইউরোপের ছোট দেশগুলোতেও রয়েছে বহু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ইউরোপে ধর্মীয় রাজনীতির যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান,তাই বলে কি ইউরোপ উন্নতি করেনি? তাদের দেশে তো কথিত চেতনার দোহাই দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবী হয় না। সারা বিশ্বের সব দেশে ধর্ম ভিত্তিক দলের রাজনীতি আছে।

শুধু বাংলাদেশে কিছু বিতর্কিত মানুষ বলছে ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে ইসলামী দল নিষিদ্ধের।

সারাবিশ্বে যুগযুগ ধরে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চলছে।

তাহলে বাংলাদেশ কে নিয়ে কেন এত মাথা ব্যাথা ? নেপথ্যে যারা , তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতার বানিজ্যি যারা করছে , তারা বিশ্বের তথ্য গায়েব করে , ভুল ধারণা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত , বিবর্জিত কতিপয় ব্যাক্তি কোনো বানিজ্য না পেয়ে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়েই বানিজ্য করছে।

উল্লেখ - এই লিখাটি ২০১০ সালে লিখা

বিষয়: বিবিধ

৩১৫৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

290438
০২ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৫২
কাঁচের বালি লিখেছেন : অনেক কিছু শিখলাম , জানলাম , আসলে সত্যি কথা কি আমাদের দেশ ডিজিটাল তো তাই । ভালো লেগেছে পোস্ট ।
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩৭
235461
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত , বিবর্জিত কতিপয় ব্যাক্তি কোনো বানিজ্য না পেয়ে বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়েই বানিজ্য করছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File