কি অপরাধ দিনমজুর মইদুরের ? ময়লা একটা পাঞ্জাবি ও টুপি ?

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৫ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৩:০১ সকাল



কি অপরাধ দিনমজুর মইদুরের? এমন অপশাসনের রাহু থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।

ঘটনার দিন ময়লা একটা পাঞ্জাবি ও টুপি পরে গিয়েছিলেন স্থানীয় জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করতে। স্ত্রী জোবেদা খাতুনের ভাষায় এই পাঞ্জাবি ও টুপি পরাই কাল হলো তার।

নিরীহ পথচারী মইদুর আলীকে ডান পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছিল পুলিশ।

মইদুর আলীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে ‘ওই টুপি আর পাঞ্জাবিওয়ালারে ধর!’ এসময় মইদুর আলী পুলিশের উদ্দেশ্যে কাকুতি মিনতি করে বলতে থাকেন ‘বাবারা, আমি কামলা দেই। গরিব মানুষ। আমি কিছু জানি না। নামাজ থেকে ফিরছি। তোমরা আমার ছেলের বয়সী। আমারে ছাইড়া দেও।’ একথা বলার পরপরই ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ তার চুলের মুঠি ধরে কিল, ঘুষি, থাপ্পড় দেয়। এরই মধ্যে একজন পুলিশ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে।

দিনমজুর মইদুর আলী (৫৫)। পেটের দায়ে কাজের নেশায় এলাকার অন্যদের সঙ্গে এসেছিলেন নরসিংদী জেলার বেলাবো থানার বাড়ৈচা এলাকায়। গত ৬ বছর ধরেই শীত মওসুমে তিনি এ এলাকায় দিনমজুরি করতে কিশোরগঞ্জের ইটনা থেকে আসেন। এবারেও এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশের নির্মম বর্বরতার শিকার হলেন মইদুর আলী। যে নির্মমতায় ইতিমধ্যে তার জীবন বাঁচাতে ডান পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। তবে পা কেটে ফেললেও এখনও আশঙ্কামুক্ত নন তিনি।

নিরীহ পথচারী মইদুর আলীকে ডান পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছিল পুলিশ। কাটা পা নিয়ে তিনি এখন জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল)-এর ইআর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে কাতরাচ্ছেন। হতদরিদ্র আলীর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে ইতিমধ্যে তার স্ত্রী জোবেদা খাতুন ছোট মেয়ে আল্পনা (৮)-কে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষায় নেমেছেন।

বর্বর এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ৯ই নভেম্বর নরসিংদীর বেলাবোর বাড়ৈচা এলাকায়। ওইদিন সন্ধ্যায় তাবলীগ জামাত, এলাকাবাসী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের মাঝে পড়ে পাশেই বটতলার একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন মইদুর আলী। সেখানে পুলিশ সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে কিছুদূর নিয়ে ডান পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের কালীপুর। প্রতি বছরই শীত মওসুমে কাজের সন্ধানে তিনি নরসিংদীর বেলাবোর বাড়ৈচা আসেন। সেখানে তিনি ওঠেন স্থানীয় ইদ্রিস মাস্টারের বাড়িতে। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন। কোন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান মইদুর আলী। ঘটনার দিন ময়লা একটা পাঞ্জাবি ও টুপি পরে গিয়েছিলেন স্থানীয় জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করতে। স্ত্রী জোবেদা খাতুনের ভাষায় এই পাঞ্জাবি ও টুপি পরাই কাল হলো তার।

মইদুর আলী জানান, নামাজ পড়ে তিনি স্থানীয় একটি পান দোকানে বসে পান খাচ্ছিলেন। এ সময় শুনতে পান বাড়ৈচা এলাকায় গ-গোল হচ্ছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হচ্ছে। ভয়ে তিনি পান দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে হাজির হয় ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন পুলিশ।

তাদের একজন লুকিয়ে থাকা মইদুর আলীর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে ‘ওই টুপি আর পাঞ্জাবিওয়ালারে ধর!’ এসময় মইদুর আলী পুলিশের উদ্দেশ্যে কাকুতি মিনতি করে বলতে থাকেন ‘বাবারা, আমি কামলা দেই। গরিব মানুষ। আমি কিছু জানি না। নামাজ থেকে ফিরছি। তোমরা আমার ছেলের বয়সী। আমারে ছাইড়া দেও।’ একথা বলার পরপরই ৪ থেকে ৫ জন পুলিশ তার চুলের মুঠি ধরে কিল, ঘুষি, থাপ্পড় দেয়। এরই মধ্যে একজন পুলিশ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে।

মইদুর আলী বাঁচার জন্য দৌড়ে গিয়ে পাশেই একটি লেগুনার পাশে আশ্রয় নেন। তখনও ভয়ের চোটে তিনি বুঝতে পারেননি তার পায়ে গুলি করা হয়েছে। কোমরের নিচে রক্তে ভেসে গেছে। হঠাৎ নিচে তাকিয়ে দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে সব। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেও হামলে পড়ে পুলিশ। তাকে টেনে বের করে আবারও নির্যাতন শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে নির্যাতনের মাত্রা কিছুটা কমে এলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে চ্যাংদোলা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লেগুনাতেই তুলে দেয়। পাঠিয়ে দেয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে।

http://mzamin.com/details.php?mzamin=NTE3ODk=

বিষয়: বিবিধ

১৪০৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

287773
২৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৯
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : এ দেশের পুলিশ গুলো আসলেই পশু হয়ে গেছে
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৯
233197
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : তার পর ও তারা বিশেষ দলের বিশেষ সেবা দিয়ে ধন্য হচ্ছে। এরাই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে গত ৫ বছর।
287785
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : নির্মম মন্তব্যের ভাষা নেই..... Praying Day Dreaming অনেক ধন্যবাদ
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
233198
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : মানবাধিকার লাঞ্চিত হচ্ছে পদে পদে
287800
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১১
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : খবরটা নিয়ে মিডিয়াতে মাতামাতি নেই।
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
233199
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : মিডিয়া তে আসবে না , কারণ বিশেষ চেতনার কারবার বলে একটা কথা আছে না ?
287839
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৪
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : পুলিশি রাস্ট্রে কার কাছে সালিশ আশা করেন?
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
233202
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : আইনের কথা বলে ঘরে ঘরে যখন লাশের পাহাড় , তখন কি জাতি স্বাধীন হিসাবে অধিকারের কথা বলতে পারে ?
287842
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাই কিছু বলার ভাষা নাই!
বাংলাদেশের পুলিশ মানুষ নয়। আর দাড়িটুপি পরাই এ্খন অপরাধ!!!
আল্লাহতায়লা মানুষটিকে সুস্থতা দিন। তাকে সাহাজ্য করা প্রয়োজন আমাদের সবার।
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৮
233206
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : টুপি পরলেই হামলার পিছনের অপ শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে , বিধায় বার বার এমন নগ্ন হামলার সাহস করছে এরা।
287852
২৫ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : হে আল্লাহ তুমি এর বিচার করিও। Sad Praying
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
233209
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : মানুষের ও কিছু করার আছে। আমরা জনগণ সেটাকে সহজ করে দিয়েছি বলেই এমন মানবতা বিরোধী কাজ হচ্ছে।
287882
২৫ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১০
ফেরারী মন লিখেছেন : Sad Sad লেখাটা কষ্টের, বেদনার। এই পৃথিবীটা ভালো মানুষের জন্য নয়।
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
233211
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : পৃথিবী ভালো মানুষের জন্য। কিন্তু যারা এই সব কাজ করছে ওদের ঠিক মত আইনের অধীনে না আনার কারণে পশুত্ব বেড়েই চলছে।
287889
২৫ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
আফরা লিখেছেন : আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম আল্লাহ এই জুলুমের বিচার অবশ্যই করবেন ।
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫২
233214
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : জুলুমের বিচার মানুষের কাছে ও আছে।
রাষ্ট্রকে ওরা নিয়ে গেছে অন্ধকারে। ওদের বিচার জনগনকেই করতে হবে।
289084
২৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৩৪
কাঁচের বালি লিখেছেন : দাড়ি , টুপী হাসিনার শত্রু , তাই কে পড়লো দেখার দরকার নেই , তার পোষা চামচা পুলিশ গুলো দিয়ে নির্মম অত্যাচার শুরু করে দেই , আসলে বাংলাদেশে মানবতা বলে কিছু আছে নাকি ?
২৯ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
233215
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : এই ঘটনার মত এমন বহু অপরাধ আছে। এরা রাষ্ট্র , ধর্ম এমনকি মানবতা বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাধীন দেশের এই অবস্থা ? বর্বর ইসরাইলিদেরকে এরা হার মানিয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File