ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন আর নেই , তার কিছু কথা।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫২:১৬ দুপুর
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন আর নেই। আজ বুধবার সকাল ৯টায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনকে শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বন্দী করেছিলেন।
প্রথমবার গ্রেফতার ও জেল ১৯৪৯
দ্বিতীয়বার গ্রেফতার ও জেল ১৯৫২ – ১৯৫৩
তৃতীয়বার গ্রেফতার ও জেল ১৯৬২-১৯৬৫
চতুর্থবার গ্রেফতার ও জেল ১৯৭২-১৯৭৭
পঞ্চমবার গ্রেফতার ও জেল ১৯৮৬
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের জন্ম ৩ ডিসেম্বর ১৯২৬। সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার ধুবুলিয়া গ্রামে। মা আমেনা বেগম, বাবা আবদুল জলিল সরকার। ১৫ ভাইবোনের মধ্যে প্রথম। স্ত্রী গুলবদন নেসা মনিকা। দুই মেয়ে মাতিয়া বানু শুকু ও মালিহা শুভন।
ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের রাজনৈতিক জীবন : ১৯৪৮ সালে কার্জন হলে সমাবর্তন অনৃষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে ‘নো নো’ বলে প্রতিবাদ। একই বছর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের প্রতিষ্ঠা
হয় ২০০১ সালে।
প্রতিষ্ঠা থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সভাপতি। ২০০৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের ৫০ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহবায়ক ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান । নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
দৈনিক জনকণ্ঠ গুণীজন ও প্রতিভা সম্মাননা ১৯৯৮ : পুরস্কার বাবদ ১ লাখ টাকা এবং প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করা হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০০: প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবর্ধনা। তিনি চার মাস সেখানে অবস্থান করেন।
একুশে পদক ২০০১।
২৮ ডিসেম্বর ২০০১ : বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেলোশিপ প্রদান।
২০০২ সাল: জাদুঘর কর্তৃক সম্মাননা স্মারক ২০০২ প্রদান ।
২০০২ সাল: ভাষা সৈনিক সম্মাননা পরিষদ, সিলেট কর্তৃক ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে সংবর্ধনা প্রদান।
১৩ আগস্ট ২০০৪: জাতীয় প্রেস কাব কর্তৃক উন্নয়ন অর্থনীতি স্বর্ণপদক ২০০৪ প্রদান।
২০০৪ : শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার ২০০৪।
১৪ মে ২০০৫: মুক্তিযুদ্ধ গণপরিষদ কর্তৃক সম্মাননা প্রদান।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬: দৈনিক আমাদের সময় কর্তৃক সম্মাননা প্রদান।
২০০৮ সাল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪৪ তম সমাবর্তন উপলক্ষে একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক ‘ডক্টর অব ল’জ’ (সম্মান সূচক ডিগ্রি) প্রদান।
ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার ২০০৮।
একুশে টিভির পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ২০১০ পুরস্কার।
মহাত্মা গান্ধী পিচ অ্যাওয়ার্ড ২০১০।
ভাষাসৈনিক চারণ সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহম্মদ স্মারক সম্মাননা ২০১০।
ঢাকার ৪০০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকারত সম্মাননা ২০১০।
মানবাধিকার ও পরিবেশ সোসাইটি (মাপসাস) কর্তৃক মাপসাস শান্তি পদক ২০১০।
শিক্ষাজীবন : ১৯৩২ সালে ছয় বছর বয়সে ভারতের দার্জিলিংয়ের মহারানী গার্লস হাইস্কুলে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি। ১৯৩৬ সালে দার্জিলিং গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি এবং ১৯৪৩ সালে এন্ট্রাস (মাধ্যমিক) পাস। ১৯৪৫ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) পরীক্ষায় উত্তির্ণ। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি এবং রাজনৈতিক কারণে লেখাপড়া অসমাপ্ত হয়।
শেষ জীবনী -
লাশ দেয়া হবে ঢাকা মেডিক্যালকে, কর্ণিয়া সন্ধানীকে।
৬ অক্টোবর ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালকে মরণোত্তর দেহ দান করেন। আর নিজের চক্ষু দিয়ে গেছেন সন্ধানীকে।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের লাশ গবেষণার জন্য দান করা হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। এছাড়া তার কর্ণিয়া দেয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন