ফিলিস্তিনের ডায়রী , সাগরের মধ্যে আলপিন খুজছি

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:৩৮:২৬ সন্ধ্যা



ডায়রির পাতা থেকে পোস্ট করা কি ঠিক?

নিজের দেখা বিষয় গুলোতো আর অন্য উপায়ে বলতে পারছি না।

মনে হলো যদি কোনো দুর্ঘটনায় হারিয়ে যায় , তাহলে একটু হলেও জানানো গেল না। তাই ডায়রির পাতা থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি।

ফিলিস্তিনের হাসপাতাল --

বাহিরের দৃশ্য দেখে মনে হবে এখানে কোনো একটি হাসপাতাল আছে। কিন্তু ভিতরে ?

ভয়াবহ অবস্থা। ফিলিস্তিনি এবং বিদেশী ডাক্তার , স্বেচ্ছাসেবকদের বিরামহীন কাজ।

আর্তনাদের কারণে মনে হচ্ছে এই হাসপাতালে এই মাত্র নারকীয় বর্বরতা চালিয়েছে কেউ।

না , এখানে নয় , ইসরাইলি বাহিনী বর্বরতা চালিয়েছে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনে।

সামনে এগুলাম , বিদেশী একজন ডাক্তারকে পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলার সময় আবদার করলাম। অপেক্ষা করলাম প্রায় ৩০ মিনিট।

এর মধ্যে দেখতে হলো বিশ্বের সবচেয়ে বর্বর ইসরাইলিদের বোমার আঘাতে ফুটফুটে শিশুদের লাশ। একি !!! এত লাশ ? এত সুন্দর মায়াবী নিষ্পাপ বাচ্চাদের হত্যা করতে পারলো ? নাহ , ওদের ছবি তুলবো না। ওদের ছবি তুলে তাদের পবিত্রতা নষ্ট করব না ....

সন্তান হারা বহু পিতা , মাতার মত একজন তরুণ পিতার সাথে কথা হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। প্রশ্ন করলাম এখানে কি করেন ?

বললেন - আমার কলিজার টুকরো এই হাসপাতালে।

কোথায় ? কি হয়েছে ?

তরুণ পিতা কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন - আমার বুকের মধ্যে , কিন্তু তাকে মর্গে রাখা হয়েছে।

আমার বাকরুদ্ধ হয়ে আসছে। নিজেকে অসহায় মনে হলো।

আমি তার হাতে হাত রেখে বললাম - তাহলে চলে যান , যখন সময় হবে আসবেন , শিশুকে নিয়ে যাবেন।

লোকটি বললেন - নাহ ভাই , যাব না , কোথায় যাবো ? কার কাছে যাবো ? যখন মর্গ খুলে , ঠিক তখন দৌড়ে যাই , আমার বাচ্চাকে একটু দেখে আসি।

এভাবে কত দিন ? প্রশ্নের উত্তরে বললেন - জানি না , জানা নাই। তবে আমি এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি হামাসে যোগ দেবো।

আসে পাশে কিছু ইসরাইলের গুপ্তচর দেখা গেল। যদিও তারা খুব ভালো অভিনয় করে যাচ্ছে , কিন্তু পারল না , ধরা পড়ে যাচ্ছে। সরিয়ে নেয়া হলো তাদের।

ডাক্তার এলেন - ভিতরে গেলাম। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না। চার দিকে শুধু আহতদের লাইন।

ডাক্তারের নিজের রুমে অস্থায়ী বেডে চলছে চিকিত্সা। হাসপাতালে জায়গায় নাই। যা জানার জেনে আসলাম। কারো মুখ ভুলতে পারছি না। প্রায় তরুনদের মুখে শুনলাম - তারা নিজের ভূমি , মানবতা , অধিকার রক্ষায় যুদ্ধে যাবে। হয়ত তারা গাজী হবে , না হয় শহীদ হবে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের দৃঢ়-সংকল্পের সাথে সবাই একমত। বীরযোদ্ধা হামাসের সামরিক অভিযানের সঙ্গে জড়িত একজন আমাদের নিয়ে গেল অন্য একজায়গায়। বিনয়ী বিচক্ষণ এবং খুব নরম সুরে কথা বলেন আমাদের সাথে। তারা দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান সামরিক কৌশল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।

নিজের মনের সাথে প্রশ্ন করলাম - বাংলাদেশের শাপলা চত্তর , সাতক্ষীরা , চট্টগ্রাম সহ কয়েকটি এলাকা এবং মিশরে নিজের চোখে দেখা বর্বর সিসির নির্দেশে মিশরের নিরীহ জনতাকে গণহত্যার মিল আছে ?

সব গণহত্যাকারীদের বৈশিষ্ট এক। বাংলাদেশ থেকে মিশর , ফিলিস্তিন। তারা সবার লক্ষ্য একই। ক্ষমতায় থাকতে যা খুশি তাই করছে। রক্তে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ইসরাইলিরা আগ্রাসন চালিয়ে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করছে , মানুষ হত্যা করছে। মিশরের সেনা প্রধান সিসি বিদেশীদের তুষ্ট করতে , জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডক্টর মুরসিকে কারাগারে বন্দী রেখেছে। প্রতিবাদী জনগনের উপর লেলিয়ে দিয়েছে সেনা , পুলিশদের। তান্ডব চালিয়ে গণহত্যার ববর নজির স্থাপন করেছে।

বাংলাদেশের কথা সবার জানা। প্রতিদিন চলছে হত্যা।

রিমান্ড , গুম। বর্বরতা যেন থামছে না। শাপলা চত্তরে মাত্র কয়েক ঘন্টায় তান্ডব চালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে। ক্ষমতাসীনরা বলেছে - কেউ নিহত হয়নি , অনেকে নাকি রং মেখে অভিনয় করেছে। কিন্তু দেশী বিদেশী মিডিয়াতে লাশের ছবি দেখে মানুষ স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল।

ইসরাইল বার বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজার নিরীহ জনগণের ওপর হামলা চালায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা অল্প অস্ত্র এবং অল্প জনবল নিয়ে লড়ে যাচ্ছে বিশ্বের অতি আধুনিক মরনাস্ত্র সজ্জিত বর্বর ইসরাইলিদের বিরোদ্ধে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নিরীহ মানুষদের উপর ইসরাইলি বর্বরতার বিরদ্ধে আজ বিশ্ব বাসী জেগে উঠেছে। এখন ফিলিস্তিনের হামাসের পাল্টা হামলায় আতংকিত ইসরাইলিরা।

( ডায়রির পাতা থেকে - ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা , তারিখ - ৪ আগস্ট ২০১৪)

বিষয়: বিবিধ

১৮৪৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

256802
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ইদানিং এ ধরণের লিখা গুলো পড়তে পারি না। বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব হয়। তাই এড়িয়ে যাই। কিন্তু এড়িয়ে গেলেও ব্যথা থেকে মুক্ত!!! তা কিন্তু নয়। হয়তো এই হত্যা কাণ্ডের পরিসমাপ্তি ও ভুমি হারাদের ভুমি ফিরিয়ে দিলেই বুকের ব্যথা চূড়ান্ত ভাবে পশমিত হবে।
256806
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর লিখেছেন। শুকরিয়া
256809
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২২
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : Prayingমনটা খারাপ হয়ে গেল
256814
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কি মন্তব্য করতে পারি???
ভাষা হিন।
256820
২১ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কি মন্তব্য করতে পারি???
ভাষা হিন।
256891
২১ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪৪
আজিম বিন মামুন লিখেছেন : মনে সহমর্মিতা পোষন আর দোয়া ছাড়া কি করতে পারব আমরা।হামাসে যোগদান তো আর সম্ভব না।
256915
২২ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০৬
আবু সাইফ লিখেছেন : আহ্‌, যদি আপনার সাথে থাকার সুযোগ পেতাম..


কিন্বা হামাসে যোগদান করার সুযোগ পেতাম..
263166
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩৩
কাঁচের বালি লিখেছেন : পড়েছি সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজে এই দৃশ্য দেখতে পারতাম না , যেটুকু পড়ে জেনেছি তাতেই মন অনেক খারাপ হয়ে গেছে । তাহলে বাস্তব কতখানি নির্মম যা আপনি বুঝেছেন । ধন্যবাদ আপনাকে এই কথা গুলো শেয়ার করবার জন্য ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File