নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বীরযোদ্ধা হামাস , সাবাস।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৪৪:০২ সকাল



ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে আসলে কী পরিমাণ হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে নিজ দেশের জনগণকে এখনো অন্ধকারে রেখেছে বর্বর ইসরাইল। বিশ্বের সর্বাধুনিক মরনাস্ত্র নিয়েও হেরে গেল কুখ্যাত ইসরাইল।

ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী হামলা করে ইসরাইল , কিন্তু সাহসী ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বীর যোদ্ধা হামাস ইসরাইলের তথ্য ও হিসাব পাল্টিয়ে দিয়েছে। হতবাক হয়ে গেছে ইসরাইলি গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ।

ফিলিস্তিনিদের বীরযোদ্ধা হামাসের সাথে স্থল যোদ্ধে পরাজিত হয়ে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সর্বত্র ব্যাপকহারে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে যায়নবাদী ইসরাইলি সেনারা।

গত ৪ সপ্তাহে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালানোর সময় কমপক্ষে ১,৭৯০ ইসরাইলি সেনা আহত এবং ৬৪ জন নিহত হয়েছে। ৬৮০ বেশি বেসামরিক ইসরাইলি নাগরিক আহত হয়েছে। ইসরাইলি বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য গোপন করছে ইসরাইলি জারজ সরকার। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জদিন আল কাসসাম ব্রিগেডের দাবি তাদের হাতে অন্তত প্রায় ২০০ ইহুদী ইসরাইলি সেনা খতম হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের উপর আগ্রাসনে ইসরাইলের দৈনিক খরচ ৭০০ কোটি শেকেল বা ২০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা। সূত্র: ডেইলি হারেত্জ

ফিলিস্তিনের গাজায় এবারের আগ্রাসনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রায় ২০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৬০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্বর ইহুদি ইসরাইলের রেভিনিউ (কর )কর্তৃপক্ষের প্রধান মোশে আসার ।

মঙ্গলবার চ্যানেল টেনকে দেয়া সাক্ষাত্কারে আশার বলেন, যুদ্ধের ফলে ইসরাইলি অর্থনৈতিক উত্পাদন ৪৫০ কোটি শেকেল কমে যেতে পারে। সারা বিশ্বে যে ভাবে মানুষ ইসরাইলি পণ্য বয়কট করা সুরু করেছে এতে এরই মধ্যে এক মাসে ৩৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি কমে গেছে। ইসারিলি পণ্য বয়কট অব্যাহত থাকলে বিরাট আর্থিক বিপর্যয়ে পড়বে ইসরাইল।

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রকেট হামলার ভয়েই দখলদাররা জারজ ইসরাইলি রা গাজার আশে-পাশের এলাকা থেকে ৭৫ শতাংশ ইহুদী পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইসরাইলের এশকল শহরের জেলা কাউন্সিলের প্রধান হাইম ইয়েলিন বিদেশী মিডিয়াকে জানিয়েছেন - গাজার আশে-পাশের এলাকা থেকে যেই ৭৫ শতাংশ ইহুদী তাদের বসতি ছেড়েছেন তারা উত্তরের দিকে চলে গেছে।

গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইহুদিবাদী সেনা কর্মকর্তারা মন্ত্রীসভাকে জানান, গাজা উপত্যকার বড় শহরগুলোর প্রায় প্রত্যেকেটি বাড়িতে ইসরাইলি সেনাদের হত্যা করার জন্য ফাঁদ পাতা আছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, যুদ্ধে ৬৪ ইসরাইলি সেনা প্রাণ হারিয়েছে। তবে হামাস যোদ্ধারা বলছে তাদের প্রতিরোধে প্রায় ২০০ ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফা জানান, গাজার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি ডলারের।

৮ জুলাই শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় ১,৯৭৫ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ৫০০ শিশু । এছাড়া, আহত হয়েছেন প্রায় ১০,০০০ জনের বেশি নাগরিক।

ফিলিস্তিনের উপপ্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফা জানান, গাজা পুনর্গঠনে ৬০০ কোটি ডলার (প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা) দরকার হবে।

অবশেষে গাজা থেকে বিদায় নিল বর্বর ইসরাইলি বাহিনী।

গাজাকে কোনো অবস্থায় রেখে পালিয়ে গেছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী।

হতাহত:



জাতিসংঘ কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাংবাদিক: নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ১২ জন। জাতিসংঘের স্টাফ ৯ জন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নিহত হয়েছেন গাজার ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী।

স্বাস্থ্য সেবা: ১৭টি হাসপাতাল, ১৪টি ক্লিনিকি ও ২৬টি অ্যাম্বুলেস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া আরো ৩৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস: ১০৫ টি সরকারি ওবং ৯০টি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গাজার ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

উদ্বাস্তুর সংখ্যা:

গাজা উপত্যকার ১৭ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৫ লাখ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এর মধ্যে ঘরবাড়ি ধ্বংসের কারণে প্রায় ২ লাখ এবং ইসরাইলি বর্বরতার হুমকির কারণে ৩ লাখ উদ্বাস্তু হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ৫৪ হাজার জন।

ঘরবাড়ি ধ্বংস: ফিলিস্তিনের গাজার প্রায় ১১ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে ১,৮২৪টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান: প্রায় ৫০০ টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২ লাখ লোক বেকার হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ২৫ টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে।

ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৫০০ টি মাছ ধরার নৌকা। এতে ৪ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন।

মসজিদ ধ্বংস: ৪২টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৫ টি মসজিদ।

অন্যান্য স্থাপনা: গাজার ৮টি পানি সরবরাহ কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭ লাখ মানুষ।

প্রধান বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলোই ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে। এতে গাজার ১৭ লাখ ২০ হাজার বাসিন্দাই বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের ও বেশি অস্ত্র ইসরাইলকে দেয় - [/b



[b]গাজা দখল করা যাবে না: ইসরাইলি মন্ত্রিসভা


ফিলিস্তিনের ভূমিতে জারজ ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এভিগডোর এবং কৌশলগত ও গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী ইউভাল স্টেইনির পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি দখল করে নেয়ার দাবি জানানোর পর ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভার ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিলাদ এরদান বহু আগে থেকে গাজা উপত্যকাকে পুনর্দখল করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু ইসরাইলের তেল আবিবে বসে গাজাকে দখল করার দাবি জানানো যতটা সহজ যুদ্ধক্ষেত্রে কাজটি যে ততটাই কঠিন তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছে ইসরাইলি সেনাপ্রধান জেনারেল বেনি গান্‌তজ। তাই নিজেই মন্ত্রিসভাকে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার আহ্বান জানায় । বর্বর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী গণ হত্যার নায়ক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিদের উদ্দেশ করে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলে - গাজা দখলের পক্ষে কি কেউ ভোট দেবেন? শেষ পর্যন্ত বৈঠকে গাজা দখলের পরিকল্পনা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

ইসরাইলি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী ইসরাইলের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক হারেতজকে জানান, “বৈঠকে তারা (সেনা কর্মকর্তারা) এমন অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন যেন তারা তা অর্জন করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে। গাজাকে সামরিক উপায়ে দখলের বিষয়টি আলোচনার টেবিল থেকে বাদ দেয়ার জন্যই মূলত এ বৈঠক ডাকা হয়েছিল।”

সবশেষে বলা যায় - বর্বর ইসরাইলি এত শক্তি প্রযোগ করেও ফিলিস্তিনের গাজা , খান ইউনুস , সুজারিয়া সহ ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি এক ইঞ্চি ও দখল করতে পারেনি। আয়রন ড্রম সহ সকল আধুনিক প্রযুক্তি কে পরাজিত করেছে ফিলিস্তিনি বীর যোদ্ধারা।

৫ আগস্ট -২০১৪ , ফিলিস্তিনের অবরদ্ধ গাজা থেকে

বিষয়: বিবিধ

৩১১৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

251792
০৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:৪০
কাহাফ লিখেছেন : ....তোমরাই হবে বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হতে পারো। আল কুরআন আল কারীম।
251847
০৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৫২
হতভাগা লিখেছেন : যুদ্ধ করতে টাকা লাগে । এটা পাওয়া খুব একটা সহজ ব্যাপার না । আবার যুদ্ধ করতে এসে টাকার অভাবে কেউ কেউ পিছু হটা শুরু করে ।

সেজন্যই ইরাক , আফগানিস্তানকে গিলতে পারলেও হজম করতে পারছেনা আমেরিকা টাকার জন্য ।

নতুন ক্যাচালে যেতে চাইলে ওবামাকে কংগ্রেসের কাছে তার ব্যাখ্যা দিতে হয় ।

যুদ্ধের মত একটা ধ্বংসাত্মক কাজে বিশাল অংকের যে টাকা খরচ হয় তাতে সে দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে । আর আমেরিকা যেহেতু পরাশক্তি ও প্রভাবশালী , তাই তাদের ইকোনমির সাথে বিশ্বের ইকোনমি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।

আর ইরাক , আফগানিস্তান তো আমেরিকাতে এসে যুদ্ধ করে না । তাই সেখানে গিয়ে যুদ্ধের জন্য সোলজার পাওয়া এবং তাদের মোটিভেট করা কঠিন । আর শুধু শুধু শত্রুর সৃষ্টি করতে সাধারণ মানুষও চায় না ।

ইসরায়েলের এই সরে আসা হচ্ছে টাকার ঘাটতির জন্যই । আরও মাস খানেক যুদ্ধ করলে হয়ত জিততোও , তবে ভেতরে ভেতরে ইকোনমি একেবারে ফুটো হয়ে যেত ।

খারাপ লাগে যখন শুনি মুসলমান দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব , আরব আমিরাত , জর্ডান , মিশর এদের ফাইনান্স করছে যুদ্ধের জন্য ।
এসব দেশের জনগনদের সোচ্চার হতে হবে তাদের স্বৈর শাসকদের বিরুদ্ধে । এটাও এক ধরনের যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য ।
০৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:৪৬
196284
কাহাফ লিখেছেন : হাছা কতা..................।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File