দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ আছে , আওয়ামিলীগ বলছে দ্বীপের কোন অস্তিত্ব নেই
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৯ জুলাই, ২০১৪, ০১:৩৮:৪১ দুপুর
দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের ইতিকথা
১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার অদূরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ জেগে ওঠে।
নদীর মোহনা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ১৯৭৪ সালে একটি আমেরিকার স্যাটেলাইটে ২,৫০০ বর্গমিটারের এ দ্বীপটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে।সীমান্তবর্তী হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহনায় ২১ডিগ্রী ৩৬.০উত্তর এবং ৮৯ ডিগ্রী ০৯.১০ দ্রাঘিমাংশ পূর্বে ইউ” আকৃতির এ দ্বীপের অবস্থান।
পরে রিমোট সেন্সিং সার্ভে চালিয়ে দেখা গিয়েছিল দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়ছে এবং একপর্যায়ে এর আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়।
ভারত সরকার এই দ্বীপের নাম দেয় ‘নিউ মুর’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর পরই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারও নতুন দ্বীপের মালিকানা দাবি করে এর নাম দেয় দক্ষিণ তালপট্টি। অবস্থান দেখানো হয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায়।
ভারত সরকারও দ্বীপটিকে তাদের মালিকানা বলে দাবি করতে থাকে। এই এলাকার বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা বিভাজক হাড়িয়াভাংগা নদীর মূলস্রোত যেহেতু দ্বীপের পশ্চিম ভাগ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেহেতু ‘নদীর মূল স্রোতধারার মধ্যরেখা নীতি’ বা Thalweg doctrine অনুযায়ী বাংলাদেশ দ্বীপটিকে নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করছে। অপরদিকে ভারতীয় দাবি হচ্ছে, নদীর মূলস্রোত পরিবর্তনশীল।
অনেকে দাবি করেন, ১৯৫৪ সালে প্রথম দ্বীপটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে। দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশ দাবি করলেও ভারত ১৯৮১ সালে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পতাকা ওড়ায়।বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা দাবি করছে (ভারত একে বলে নিউমুর/ পূর্বাশা দ্বীপ), ভারত দ্বীপের মালিকানা দখল করতে নৌ-জাহাজ এবং আইএনএস আন্দামান নামক ফ্রিগেট পাঠায়। ভারত জোর করে দ্বীপটির মালিকানা দাবি করায় ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে যৌথ আলোচনার আহ্বান জানানো হয়। ওই আহ্বান ব্যর্থ হলে ১৯৭৯ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হয়। পরে ১৯৮০ সালে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয় : স্টাডি ও তথ্য-উপাত্ত নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১১ মে এ বিবৃতি উপেক্ষা করে ভারত সরকার তাদের নৌবাহিনীর আইএসএন সন্ধাক নামের একটি জাহাজ পাঠিয়ে দ্বীপটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করে। ১৩ মে এই দখলদারদের প্রতিরোধ করতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানরে নির্দেশে পাল্টা নৌবাহিনী পাঠানো হয়। রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে ভারত সেখান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।
এই তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা নিয়েই ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে ভারত। এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে পরবর্তীতে ভারতের সামরিক উস্কানির আশ্রয় নিয়েছিল ।
বিবিসির খবর অনুযায়ী দ্বীপটি বর্তমানে ২ মিটার সমুদ্রতলে নিমজ্জিত।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের ৭ জুলাইয়ের রায় অনুযায়ী দ্বীপটি ভারতের সমুদ্র সীমায় পড়েছে।
দক্ষিণ তালপট্টি হারিয়ে সমুদ্র বিজয় বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিজয়ের কথা বললেও দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ হারানোর বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী।
তবে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। রায় অনুযায়ী, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি রায়ে দক্ষিণ তালপট্টি হারালো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে তালপট্টি দ্বীপ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। দক্ষিণ তালপট্টিতে ভারত গড়ে তুলবে আরেক সাম্রাজ্য। সবচেয়ে লাভবান ব্লক গুলো ভারত এবং মায়ানমার ভাগাভাগি করে নিলো।
রায়ে বিরোধপূর্ণ এলাকায় ৫০ কিলোমিটারের মতো জায়গা গ্রে এরিয়া হিসেবে রাখা হয়েছে, যা ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। বাংলাদেশ যে কয়টি ব্লক পেয়েছে তার মধ্যে ৪টির ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
সমুদ্রসীমার রায়ে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় ভারতের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এর পর ও আওয়ামিলীগ বলছে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই জয়লাভ করেছে।
ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য মতে -
হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনা ও মুখের জায়গাটি ভারতের কাছে বিভিন্ন কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ । নদীর বিতর্কিত অংশে যদি ভারতের দাবি আইনি ভাবে নিশ্চিত করা হয় তবে আগামীতে ভারতে অনেক লাভবান হবে। প্রায় গোপনে ২০০৬ সালে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনায় দক্ষিণ মুখের ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে ভারত সরকার জানতে পারে যে এই অঞ্চলে প্রায় ১০০’ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। যেটি অন্ধ্র প্রদেশের কৃষ্ণা-গোদাবারি মোহনায় মজুদ সম্পদের চেয়েও দ্বিগুণ। এবং সেটা যে কোনো উপায় ভারতের হাতে নিতে হবে। পর্দার আড়ালে চলে এই নিয়ে খেলা। অবশেষে বিনা ভোটে ক্ষমতাসীন একটি পুতুল সরকার কে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসিয়ে ভারত তালপটি নিয়ে নিলো।
এই লিখাটি ( ৮ জুলাই ২০১৪) হয়ত অনেকে মানবেন না , কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে ভারত স্বীকার করবে - বাংলাদেশকে হারিয়ে লুট করে নিয়ে গেছে খনিজ সম্পদ। এর পূর্বে মায়ানমারের সাথে ও বাংলাদেশ হারে।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৬৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজের সম্পদ থেকে ঠকিয়ে নিয়ে গেল ভারত আর চাপাবাজি করে আওয়ামি লিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন