টাকার পাহাড়ের নিচে গণতন্ত্রের রক্তের বন্যা

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৪ জুন, ২০১৪, ০৭:১২:০৮ সন্ধ্যা



একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নবম জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং মহাজোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সম্পদের হিসাব নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সারা দেশে। এদের সাতজনের সম্পদ অনুসন্ধানে যা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো -

উল্লেখ - এই সব হিসাব শুধু মাত্র নির্বাচন কমিশনে যা জমা না দিলেই নয় , সেই হিসাব। কিন্তু এর বাহিরে হাজার হাজার কোটি টাকা গায়েব করা হয়েছে। পরনে লুঙ্গি থাকলে সেটা যেমন অস্বিকার করা যায় না , অস্বিকার করলে উলংগ বলতে হবে। আর লুঙ্গি তো লোকানো যাবে না। ঠিক তেমনি যা সবার চোখের সামনে তার অল্প হিসাবেই দেখা যাচ্ছে - আওয়ামীলীগের সবাই মাছ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক !!!!





নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ’হলফনামার তথ্য অনুযায়ী সম্পদের হিসাব


আ ফ ম রুহুল হক :

পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক ও তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ। এখন তাঁদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছরে বেড়েছে ১৬৫ গুণ। সঞ্চয়পত্রে এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে নিজের নামে হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৫ টাকা।

আবদুল মান্নান খান : পাঁচ বছর আগেও ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল তাঁর নামে। অল্পদিনের ব্যবধানে তা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ। এ ছাড়া তিনি ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক। হলফনামায় ফ্ল্যাট দুটির মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

এ ছাড়া রয়েছে প্লটসহ অন্যান্য সম্পদ। পুঁজিবাজার বা সঞ্চয়পত্র থেকে আগে তার আয় না থাকলেও এবার আয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। আগে মৎস্য খাত ও রেমিট্যান্স থেকে কোনো আয় না থাকলেও এবার হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন অতীতে নেই উল্লেখ করলেও এবার ‘নেই’-এর স্থলে উল্লেখ আছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার মাছের খামার যুক্ত হয়েছে পাঁচটি।

মাহবুুবুর রহমান : গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমির মালিক থেকে তিনি হয়েছেন ২ হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক। গণমাধ্যমে এই সম্পদ বিবরণী প্রকাশের পর তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর জমির পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে ২৮ দশমিক ৬৫ একর। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ না থাকা স্ত্রীর নামে এখন এক কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ। নিজের নামে রয়েছে ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পদ যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।

আসলামুল হক : আসলামুল হকের জমির পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। ২০০৮ সালে হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তিনি ও তাঁর স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। সে সময় ওই মূল্য ছিল ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনে পেশ করা হলফনামায় তিনি ও তাঁর স্ত্রীর জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) এবং দাম উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র এক কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এনামুল হক : ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তাঁর বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পর এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকানভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর পরিবারের পোষ্যদের সাত লাখ ৫১ হাজার ৬০০ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় পোষ্যদের কোনো আয়ের উৎস নেই উল্লেখ করা হয়। তাঁর নিজের, স্ত্রী ও অন্যদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়।

আবদুর রহমান বদি : হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের হিসাব অনুযায়ী আবদুর রহমান বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। হলফনামায় বলা হয়, গত পাঁচ বছরে তিনি আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। তাঁর বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছিলেন, তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা।

এম এ জব্বার : ২০০৮ সালের হলফনামায় বলা হয়, ওই সময় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল কৃষি খাতে ২০ হাজার, বাড়ি, দোকানভাড়া থেকে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৯ টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪৯ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ২৩ দশমিক ৩৬৬ একর, স্ত্রীর নামে ১১ দশমিক ২৩৫ একর ও নির্ভরশীলদের নামে ৪ দশমিক ০৪৮ একর কৃষি জমি ছিল। অকৃষি জমির মধ্যে নিজ নামে ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০২ টাকার জমিসহ একটি দালান এবং ঢাকা ও খুলনায় ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৬ টাকা মূল্যের চারটি দালান উল্লেখ করা হয়েছিল

মাত্র ৭ জনের টাকার পাহাড়। অন্যদের কি অবস্থা একটু অনুমান করলেই হবে।

সেয়ার বাজার , ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের কাহিনীতো মনেই আছে। হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের পর হয়ত এরাই টাকা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে রেখেছে। ‘কেবলমাত্র সুইস ব্যাংক নয়, অন্য কোনো দেশেও অর্থ পাচার হয়েছে।

সম্প্রতি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি গুরুত্বে সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সুইস সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) নেই। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেতে হলে আগে এমওইউ স্বাক্ষর করতে হবে।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৩ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রয়েছে, যা প্রায় ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা তিন হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সমান।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238439
২৪ জুন ২০১৪ রাত ০৮:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গনতন্ত্র বাধা অর্থের কাছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File