আওয়ামীলীগ শাসনামলে সাংবাদিক নির্যাতন ও খুন নতুন কিছু নয়।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৪ জুন, ২০১৪, ১১:০১:১৫ রাত
অতীতের কিছু কথা -
১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বাকশাল কায়েমের সময় চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ায় হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।
জাসদের গণকন্ঠ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয় শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার । গণকন্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদ কে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।
আহমেদ মুসা, হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ সহ বেশ কয়েকজন সম্পাদককে রক্ষীবাহিনী খোলা জিপে চড়ে অস্ত্র হাতে খুজতে থাকে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১০ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। বহু সাংবাদিক হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন।
২০০৯ ও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর
আ’লীগ সরকারের সাড়ে ৫ বছরে ১৯ সাংবাদিক খুন। অপহরণের শিকার কমপক্ষে ৫ জন সাংবাদিক।
দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরোদ্ধে ঝুলছে ৫৫টি মামলা । নির্মম হত্যাকাকান্ড গুলোর মধ্যে শুধু সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতির বিচার ছাড়া বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-সহ বাকি ১৮টি হত্যাকাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। প্রকৃত আসামীরাও গ্রেফতার হয়নি এখনও।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে ৫ বছর শাসনকালে ১৯ জন সাংবাদিক নিহত, কমপক্ষে ৭৫০ জন সাংবাদিক আহত, ২২৫ জন লাঞ্ছিত ও ৩০৭ জন হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ১৯০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়েছে। ৩ জন সম্পাদককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অপহরণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ৫ জন সাংবাদিক। শত শত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায়, আদালতে মানহানি কিংবা ফৌজদারি মামলা দেয়া হয়েছে। এমনকি নারী নির্যাতন ও মাদকদ্রব্যের সাজানো মামলাও দেয়া হয়েছে বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ কর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা হুমকির শিকার হয়েছেন প্রশাসন থেকেও।
অনুসন্ধানে জানা যায়,
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক খুন হন।
২০০৯ সালের জুলাই মাসে ঢাকার পাক্ষিক মুক্তমনের স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম ওরফে রানা খুন হন।
২০০৯ সালের আগস্ট মাসে গাজীপুরে ঢাকার সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক এমএম আহসান হাবিব বারী খুন হন।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে রূপগঞ্জে দৈনিক ইনকিলাব সংবাদদাতা ও রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আবুল হাসান আসিফ খুন হন।
২০১০ সালের ৯ মে গুপ্তহত্যার শিকার হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল খুন হন।
২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হামলার পর ২৮ এপ্রিল নিহত হন সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী।
২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন বরিশালের মুলাদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী।
২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি নয়াপল্টনের বাসায় খুন হওয়া প্রবীণ সাংবাদিক ও দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাদ খাঁ (৬০) ও তার স্ত্রী রহিমা খাঁ (৫৫) খুন করা হয়।
২০১১ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পোর্ট কলোনি এলাকায় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুব টুটুল ও একই দিন ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠের সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কুকরাইল এলাকায় গলাকেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাকের গোবিন্দগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে হত্যা করা হয়।
২০১২ সালে ২৩ অক্টোবর নরসিংদীতে খুন হন নরসিংদীর বাণী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার তালহাদ আহমেদ কাবিদ।
২০১২ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে নিজ ফ্ল্যাটে হত্যাকা কান্ডের শিকার বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক মেহেরুন রুনি। সাগর-রুনি হত্যাকা কান্ডের তদন্ত ও মামলার আসামীদের গ্রেফতারে গত দু’ বছর পার হলেও কিছু হয়নি ।
২০১২ সালের ১০ জুলাই হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে দৈনিক বিবিয়ানার স্টাফ রিপোর্টার জুনাইদ আহমদ জুনেদকে পরিকল্পিতভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করে টুকরো টুকরো লাশ শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশনে ফেলে দেয়া হয়। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল তিনি ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কিন্তু পরে জুনেদের ২০ টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে জিআরপি থানা পুলিশ। কারা তাকে এ রকম নৃশংসভাবে হত্যা করেছে এর কারণ আজও উন্মোচিত হয়নি।
২০১২ সালের ১৬ জুন যশোরের শার্শা উপজেলায় দৈনিক গ্রামের কাগজের শার্শা প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন খুন হন।
২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মূলস্রোত পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমদকে গুলী করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সন্ত্রাসীদের গুলীতে খুন হয়েছেন সাপ্তাহিক অপরাধ দমন পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক দুর্জয় চৌধুরী দীপু। নিজ অফিসে নির্মমভাবে গুলী করে খুন করা হয়েছে তাকে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় সদরুল আলম নিপুন নামে এক সাংবাদিককে হত্যা করে লাশ ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে রাখে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
গুলী ও হামলায় আহত সাংবাদিক
২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত এক মাসে প্রকাশ্যে গুলী ছুড়ে ও হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৮ সাংবাদিককে আহত করে সরকারের পেটোয়া বাহিনী পুলিশ ও দলীয় ক্যাডাররা।
২২ ফেব্রুয়ারি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে রক্ষা পাননি সাংবাদিকরাও। রাজধানীতে পুলিশের গুলী, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে আহত হন অন্ততপক্ষে ২৫ জন সংবাদকর্মী।
পুলিশের গুলীতে গুরুতর আহত হন আমার দেশ-এর চিফ ফটোসাংবাদিক মীর আহাম্মদ মীরু। তার পায়ে সাতটি গুলী লাগে। পরে অস্ত্রোপচার করে তার গুলী বের করেন চিকিৎসকরা। গুলীবিদ্ধ ও আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন আমিনুল হক ভূঁইয়া, এনটিভির রিপোর্টার ফাহাদ মাহমুদ, মাছরাঙা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আব্দুল্লাহ তুহিন, গাজী টিভির রিপোর্টার মাসুদুর রহমান, ৭১ টিভির রিপোর্টার আরিফুজ্জামান পিয়াস, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির নুরুল ইসলাম, জনকণ্ঠের ফটোসাংবাদিক মামুন, সংবাদের রিপোর্টার সাইফ বাবলু, নিউএজের রিপোর্টার নিতাই রঞ্জন, জিটিভির রিপোর্টার মাসুদুর রহমান, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির ক্যামেরাম্যান নুরুল ইসলাম, এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান জাহিদুজ্জামান, বাংলাভিশনের পলাশ ও বিটিভির এক ক্যামেরাম্যান। এদের বেশিরভাগই গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ইটিভির এক ক্যামেরাম্যানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হলের ভেতরে নিয়ে মারধর ও ক্যামেরা ভাংচুর করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।
উল্লেখযোগ্য এইসব ছাড়া ও স্তানীয় পর্যায়ে বহ খবর আছে , যা প্রতিদিন খবরের কাগজে আসছেই। কিন্তু বিচার হচ্ছে না , আর হবেই বা কি করে , যারা নির্যাতন করছে , তারা তো সব আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী।
বিষয়: বিবিধ
৩২৭৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রাস্তায় নামবেনঃ কাজ হবেনা।
যুক্তি দিবেনঃ কাজ হবেনা।
গুলি করবেনঃ কাজ হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন