স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক বিতর্ক এবং আত্ম সমর্পণ
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:২৮:৪৯ দুপুর
আওয়ামীলীগ এখন বলছে শেখ মুজিবই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে গেছেন, তাদের এ দাবীর কোন ঐতিহাসিক প্রমান বা দলিল নাই। কিন্তু আজ যারা বলছেন শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতেই গ্রেফতারের আগে ওয়ারলেছ বার্তার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেছেন এবং তখন তার এ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতারা মাইকিং করেছিল এমন কোন আজগুবী ওয়ারলেছ বার্তার কথা বা মাইকিং এর আওয়াজ তখন কেউ শুনেন নি। ২৫ মার্চ রাতেই হানাদার বাহিনী রাজপথে নামে , তখন কি করে ছাত্র লীগের তৎকালীন নেতারা মাইকিং করেছিল ?
চট্টগ্রামের জনৈক আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হান্নান লিখে দিয়েছিলেন এবং জিয়া শুধু তার পক্ষ থেকে তা পাঠ করেছিলেন মাত্র। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা উল্লেখ করে মাত্র দুই লাইন বাংলা লেখার মত শিক্ষাগত যোগ্যতাও কি মেজর জিয়ার ছিলনা যে আব্দুল হান্নানকে তা লিখে দিতে হয়েছিল ? অথবা আব্দুল হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে নিজে তা কেন পাঠ করলনা অথবা জহুর আহমেদ চৌধুরীর মত চট্টগ্রামের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা কেন তা পাঠ করলেননা, তারা তখন কোথায় ছিলেন ? আর শুধু কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে কি তখন চালু ছিল ? সিলেট বেতার কেন্দ্র ও চালু ছিল , সেখানে কেন আওয়ামিলিগের কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না ? বিকৃত ইতিহাস করার পিছনে কারণ হচ্ছে - যেহেতু মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে হয়েছিল , তাই একটি কল্পিত কাহিনী প্রচার করছে আওয়ামীলীগ গরনার কিছু বিকৃত কথিত ইতিহাস লেখকেরা।
ইন্দিরা গান্ধী ( যোদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমেরিকা সফর ) একবার ও স্বীকার করেন নাই -মুজিবের মুখ থেকে ‘স্বাধীনতা’ কথাটি বের হয়েছে।
২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে স্পষ্ঠ পরিস্কার একটা বর্ণনা পাওয়া যায় লন্ডন টেলিগ্রাফের ঢাকা প্রতিনিধি Simon Dring ৩০ মার্চ ১৯৭১ এর HOW DACCA PAID FOR A UNITED’ PAKISTAN শিরোনামে টেলিগ্রোমে ”Mujib’s arrest: As this was going on. other units had surrounded the Sheikh’s house. When contacted shortly before 1 a.m. he said that he was expected an attack any minute and had sent everyone except his servants and bodyguard away to safety. A neighbor said that at 1-10 a.m., one tank, an armored car, and trucks loaded with troops drove down the street firing over the house. “Sheikh you should come down”, an officer called out in English as they stopped outside. Mujibur stepped out onto his balcony and said. “Yes. I am ready, but there is no need to fire. All you need to have done is call me on the telephone and I would have come”. The officer then walked into the yard and told Mujibur: “You are arrested” (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র: তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৭৯০). এই রিপোর্টের কোথাও লন্ডন টেলিগ্রাফের ঢাকা প্রতিনিধি সাইমন একটি শব্দ বলেন নি যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থকদের আজকের দাবী অনুযায়ী যদি ৭ মার্চের ভাষণেই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন তবে ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য শেখ মুজিব কেন কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রনয়ন করেননি ? কেন ২৭ মার্চ বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা লিখল না যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
বরং পরের দিন হরতালের খবর পত্রিকায় ছাপা হয়
যদি ৭ মার্চের ভাষণেই শেখ মুজিবুর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা হতো, সেই প্রস্তুতি থাকত ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশেরউপর (বিনা বাধায় , প্রতিরোধে) নির্বিচারে গনহত্যা চালাতে পারতনা এবং সশস্ত্র জোরালো প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে পাকিস্তানীরা সশস্ত্র পথ পরিহার করে আপোষ করতে বাধ্য হতো এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য বা লাখ লাখ শরনার্থীকে ভারতে আশ্রয় নিতে হতোনা। লাশের রক্তে বাংলাদেশ ভেসে যেত না।
৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে সাক্ষাৎকার
আমেরিকার NBC টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার প্রচার হয় ২৬ মার্চ ১৯৭১, তাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রশ্ন করা হয় Do you mean Independence?
শেখ মুজিব জবাব দেন, “No, I don’t mean that, I want Autonomy
http://www.youtube.com/watch?v=_ZDs8nBUnRc
সূত্র -
(দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, ১৯৭২)।
৩০ মার্চ ১৯৭১ - লন্ডন টেলিগ্রাফ
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট
মুলধারা ৭১
(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র: তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৭৯০)
আমেরিকার NBC টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকার প্রচার হয় ২৬ মার্চ ১৯৭১,
মেজর জেনারেল সুখান্ত সিং The Liberation of Bangladesh, Vol. 1 (Delhi : Lancer Publishers, 1980)
প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনী মাসকারেনহাস এর লেখা বই- Bangladesh : A legacy of blood
বাংলাদেশে ভারতের প্রথম ডেপুটি হাইকমিশনার জে এন দীক্ষিত (JN Dixit), Liberation And Beyond : Indo-Bangladesh Relations,
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যাবেলা তাজউদ্দীন আহমদসহ আরও কিছু নেতা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে সমবেত ছিলেন। সেখানে এক ফাঁকে তাজউদ্দীন আহমদ নিজের লেখা স্বাধীনতা ঘোষণার ছোট্ট একটা খসড়া ও একটা টেপ রেকর্ডার বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে সেটা তাকে পড়তে বলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, 'এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।' তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাত ৯টার পরপরই ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। (মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন- প্রথমা প্রকাশন, চতুর্থ মুদ্রণ, জুন ২০১১-পৃ. ২৭)। অনুরূপ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ রচিত 'তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা' বইতেও আছে।
বিষয়: বিবিধ
২২৮৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাহলে মহি১১মাসুম ভাইয়ের এই ইমফরমেশন কি ভুল ?
ওয়ারলেছ বার্তার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণার কোনো খবর নাই। এমন কি তখনকার কোনো পত্রিকা এমন কোনো কাহিনী লিখে নাই।
আর ----সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে তাজউদ্দীন আহমদের এ বর্ণনা দিয়েছেন যুদ্ধাকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন আহমদ।
তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান।
তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।
মুজিব কাকুকে স্বাধীনতার ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে রাত ৯টার দিকে আব্বু ঘরে ফিরলেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjA3NzM=&s=MTU=
এমন চাওয়াটা কি খুবই অন্যায় হবে - গবেষনা করে একটা সুরাহা করা যেত না।
তবে আপনার দেয়া তথ্যগুলো সত্যি খুবই অবাক করার।
দৈনতা যে আছে জাতিয়তাবাদিদের তা আবার প্রমান করলো।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপক ছিলেন এ. কে. ফজলুক হক। এই লাহোর প্রস্তাবই “পাকিস্তান প্রস্তাব” হিসেবে পরবর্তীকালে আখ্যায়িত হয়।
নিখিল ভারত কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোল নের নেতা।
বাংলার শিক্ষামন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হক।
বাংলার ২ বারের প্রধানমন্ত্রী।
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ।
বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।
খুব ভালো পোস্ট ধন্যবাদ আপনাকে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন