শেরেবাংলা ফজলুল হকের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী । নীরবে চলে গেল দিনটি

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:১০:১৮ সকাল



খুব সংক্ষেপে লিখতে গেলে শেরেবাংলা ফজলুল হকের জীবনী লিখতে গেলে উনার প্রতি অবিচার হয়। উজ্বল ইতিহাস অনেক লম্বা।

আসল নেতাদের খোজ নাই , নকল নেতা নিয়ে টানা টানি।

শেরেবাংলা ফজলুল হকের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী

জানেন কেন এই সব নেতার ইতিহাস গায়েব করা হচ্ছে ?

কারণ একটাই। এই সব নেতার ইতিহাস জানলে অন্য কিছু নেতাদের খুঁজে পাবেন না।

জাতির স্ব - ঘোষিত নেতাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না।

এ. কে. ফজলুক হক ১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন।

রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট ‘শের-এ-বাংলা’ এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদে অধিস্তান করেছেন তার মধ্যে কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭ – ১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬ – ১৯৫৮) অন্যতম।যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

“বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ”-এর পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন। এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বৃটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে “ক্লাউড কমিশন” গঠন করে। ১৯৩৮ সালের ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় এবং জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়। ১৯৩৯ সালের “বঙ্গীয় চাকুরি নিয়োগবিধি” প্রবর্তন অরে হম মন্ত্রী পরিষদ মুসলমানদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ চাকুরি নির্দিষ্ট রাখার ব্যবস্থা করে।

ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রুপরেখ নির্ধারণের লক্ষ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার ম্যাকডোনাল্ড (James Ramsay MacDonald) একটি গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহাত্মা গান্ধী এই বৈঠক প্রত্যাখান করেন। কিন্তু, মুসলিম লীগ সেই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। ১৯৩০ – ১৯৩১ সালের প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ফজলুল হক বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিলনে। তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে বক্তৃতা দেন।

বাংলার প্রধানমন্ত্রী,নিখিল ভারত মুসলিম লীগ,বঙ্গীয় আইন পরিষদ,পাকিস্তান আমলে রাজনীতি এবং মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা।

১৯১৩ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে এ. কে. ফজলুক হক বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৫ সালে পুনরায় ঢাকা বিভাগ থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাংলার জনগন বিভক্ত হয়ে পড়লে, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ উপলব্ধি করেন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন দরকার। এই চিন্তা থেকেই ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহবান করেন। এই সম্মেলনে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ নিজে এবং যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন নবাব ভিকারুল মুলক এবং আবুল কাশেম ফজলুল হক।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপক ছিলেন এ. কে. ফজলুক হক। এই লাহোর প্রস্তাবই “পাকিস্তান প্রস্তাব” হিসেবে পরবর্তীকালে আখ্যায়িত হয়।

নিখিল ভারত কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোল নের নেতা।

বাংলার শিক্ষামন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হক।

বাংলার ২ বারের প্রধানমন্ত্রী।

পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ।

বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হক হয়ে জনগনের জন্যে ঐতিহাসিক কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাঙালিদের মধ্যে তিনিই একমাত্র নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

১৯১৯ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত নবযুগ নামক পত্রিকা

কিশোর কিশোরীদের জন্য এ সময় তিনি নিজের সম্পাদনায় “বালক” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি “ভারত সুহৃদ” নামে যুগ্ম সম্পাদনায় আরো একটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশ করেন। এসময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত নবযুগ নামক পত্রিকার সম্পাদল ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রখ্যাত বামপন্থি রাজনীতিবিদ মুজাফফর আহমেদের প্রস্তাবে এ. কে. ফজলুক হক নবযুগের প্রকাশনায় সাহায্য করতে সমর্থ হন। নজরুলের আগুল ঝরানো লেখার কারণে “নবযুগ” হু হু করে বিক্রি হতে লাগলো। কলকাতা হাইকোর্টের ইংরেজ বিচারপতি টিউনন ফজলুল হক সাহেবকে নিজের খাস কামরায় ডেকে নিয়ে বৃটিশ সরকার বিরোধী লেখার জন্য হুশিয়ার করে দেন। কিন্তু ফজলুল হক ভয় না পেয়ে টিউননের কাছ থেকে ফিরেই নজরুলকে খবর দিয়ে বলেন, “আরো গরম লিখে যাও, ইংরেজ সাহেবদের টনক নাড়িয়ে দাও”।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নজরুলের লেখা চলতে থাকলে একসময় বৃটিশ সরকার “নবযুগ” পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করে এবং কাগজটি বন্ধ করে দেয়। হক সাহেবের চেষ্টায় আবার নবযুগ চালু হয়।

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি ছিল। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ এই ২১ দফা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হন। তাদের গৃহিত উল্লেখ্যযোগ্য কর্মসূচি গুলো হল:

১ . বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ।

2. ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা।

৩ . ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিতে ‘শহীদ মিনার’ নির্মান।

৪. বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা।

৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ধমান হাউসকে বাংলা ভাষা গবেষণা কেন্দ্র বা বাংলা একাডেমি ঘোষণা করা।

৬ .জমিদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া।

নিখিল ভারত মুসলিম লীগ

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাংলার জনগন বিভক্ত হয়ে পড়লে, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ উপলব্ধি করেন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন দরকার। এই চিন্তা থেকেই ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহবান করেন। এই সম্মেলনে একটি কমিটি গঠন করা হয়।এই কনফারেন্সে নবাব সলিমুল্লাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন ও সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অবশেষে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের সূত্রপাত ঘটে।

১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল এবং ১৯৪১ সালের ১২ ডিসেম্বর আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্বিতীয় বারের মত মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ও ছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হক।

পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা ‘কপ’-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে এ. কে. ফজলুক হক সমর্থন দেন

মৃত্যু



১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুক হক ৮৬ বছর ৬ মাস বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত তার মরদেহ ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় তার ২৭. এম. দাস লেনের বাসায় রাখা হয়। সেদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকার পল্টন ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে সমাহিত করা হয়। একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর রয়েছে। তাদের তিনজনের সমাধিস্থলই ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত।বাংলাদেশের এক মহান নেতার বিদায়। ইতিহাসে আজ যেন আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।

বিষয়: বিবিধ

২০৪০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214224
২৮ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:১৩
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। আসলে এইসব জাতীয় নেতাদের মানুষ ভুলে যাচ্ছে দিন দিন।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪২
162652
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : এই সব মানুষের কর্মের ফলে আমরা বাংলাদেশী , অতচ তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে ইতিহাস থেকে বিদায় করে দিয়েছে একটি চক্র
214333
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৩
162653
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : পুরো একমত
214335
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শেরে বাংলা সম্পর্কে তার শিক্ষক আচার্জ্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর একটি উক্তি লিখেছেন আবুল মনসুর আহমদ। "ফজলু মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙ্গালি একই সাথে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান"। তিনি আরো বলেছিলেন বাঙ্গালি যদি ফজলুল হক এর মর্যাদা না দেয় তা হলে তার কপালে দুঃখ আছে। এই কথাটিই সত্য হয়েছে আমার জিবনে। একাধিকবার অপমানিত হয়েও তিনি কেবল মুসলিম জনতার স্বার্থেই মুসলিম লিগ এর সাথে আপোষ করেছেন। আজকে তার নামের সাথে আমাদের পরিচয় নাই। অথচ লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনকারি হিসেবে পাকিস্তানেও তার নামে সড়ক আছে।





ছবিগুলি বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল এর সম্পাদক লেফটেনান্ট(অবঃ) আবু রুশদ এর সেীজন্যে প্রাপ্ত।
২৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৫
162656
মাহফুজ মুহন লিখেছেন : তথ্যকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। ওরা ইতিহাস থেকে মুছে দিচ্ছে , কিন্তু আপনার , আমার , আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে বীর সন্তাদেরকে স্মরণ রাখা .
215206
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:১৩
কাঁচের বালি লিখেছেন : খুব সুন্দর লেখা,
যেই সব নেতাদের জন্য আমরা বাংলাদেশ নামক দেশটি পেলাম তাদের কে আওয়ামীলীগ ইতিহাদের আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে ভেজাল মুজিব কে পুজো করে রাত দিন তাহলে আমরা সাধারণ জনগণ নতুন প্রজন্ম কি আদৌ জানবে এই সন মহান ব্যাক্তিদেড় কথা ??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File