নির্মম সত্য গোপন থাকে না। এই বইটি যতেষ্ট।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩২:৫৯ সকাল
বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান।
সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ গ্রন্থে তাজউদ্দীন আহমদের এ বর্ণনা দিয়েছেন যুদ্ধাকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শারমিন আহমদ।
তিনি আব্বুকে বললেন, বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশু দিন (২৭শে মার্চ) হরতাল ডেকেছি। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান।
২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমদের সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়ে শারমিন আহমদ আরও লিখেছেন, মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে (বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো প্রসঙ্গে) আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ওই শোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন। পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এই সব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন।
তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কারণ কালকে কি হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কি তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোন না কোন জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাবো। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন-‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে।
মুজিব কাকুকে স্বাধীনতার ঘোষণায় রাজি করাতে না পেরে রাত ৯টার দিকে আব্বু ঘরে ফিরলেন বিক্ষুব্ধ চিত্তে। আম্মাকে সব ঘটনা জানালেন।
মুজিব বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, সরকার গঠনের পক্ষে উত্থাপিত যুক্তিবলে যখন বিপ্লবী কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবটি ভেস্তে যায় তখন বিএসএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক রুস্তামজির বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘র’-এর সহায়তায় শেখ মণির নেতৃত্বে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। এক বাক্সে সব ডিম না রাখার পক্ষপাতী ভারত সরকারও মুজিব বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাছে গোপন রাখে। সমগ্র জাতির মুক্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে আব্বুর নিবেদিত কর্মপ্রয়াসের বিপরীতে অনুগত তরুণদের ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে গঠিত মুজিব বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছিল। একপর্যায়ে মুজিব বাহিনীর একনেতা এতটাই হিংসাত্মক ও মরিয়া হয়ে ওঠে যে, সে আব্বুকে হত্যারও প্রচেষ্টা চালায়।
http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjA0NTA%3D&sMg=%3D#.U1hDrEY53Go.facebook
গত ১৮, এপ্রিল ২০১৪ -শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন - ড. কামাল হোসেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন,অধ্যাপক আনিসুজ্জামান , মঈদুল হাসান, তাজউদ্দীন আহমদের বন্ধু এম এ করিম, শেখ মুজিবুর রহমানের একসময়কার ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মুরশেদ, বইটির প্রকাশক আরিফুর রহমান প্রমুখ।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে অন্যদের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের আরেক মেয়ে ও সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হলো শারমিন আহমদ রচিত ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ বইটি। ৪৬০ পৃষ্টার বইটিতে ৭টি অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের জীবনের বিভিন্ন অংশ।
বিষয়: বিবিধ
২৫০০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মেয়েকে একরাশ রজনী ফুলের শুভেচ্ছা দেয়া যায়।
৫৯ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে ইতিহাস বুঝতে হলে ততটুকুই যথেষ্ট।
সেই খবরের লিংক ও আছে। ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। মিথ্যা হবে কেন ?
৫৯ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে ইতিহাস বুঝতে হলে ততটুকুই যথেষ্ট।
৫৯ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে ইতিহাস বুঝতে হলে ততটুকুই যথেষ্ট।
আপনাকে ধন্যবাদ নির্মম সত্য কে আমাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য ।
এসব কত করলো অনেকেই ! কেউ কি একটা পিউবিক হেয়ারও ছিড়ঁতে পেরেছে?
৫৯ নং পৃষ্ঠায় যা লেখা আছে ইতিহাস বুঝতে হলে ততটুকুই যথেষ্ট।
মন্তব্য করতে লগইন করুন