ভারতীয়দের চেয়েও বাংলাদেশী ভারতীয়দের কারণে মানচিত্র বদলে যাচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:০২:৫৮ রাত
ভারতীয়দের চেয়েও ভারতীয় -এমন বহু ব্যক্তির বসবাস বাংলাদেশে। বিশেষ করে রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবী নামের বহু মুরগি সাপ্লাইয়ার থেকে কথিত ইতিহাস গবেষক। এমন কি বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ভারতীয় স্বার্থের সেবাটাই তাদের কাছে বড়। সম্প্রতি তেমন এক উদাহরন পেশ করলেন শেখ হাসিনা। সরকারী প্রমান পত্রে দেখা যায় - ভারত মাত্র তিন বিঘা জমি বাংলাদেশকে দিতে রাজী হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা সিলেট-মেঘালয় সীমান্তের তামাবিল এলাকার ২৬১ একর বাংলাদেশী ভূমি ভারতকে দিয়ে দিয়েছেন। এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংসদে কোন আলোচনা হয়নি। বিরোধী দল বা অন্য কারো সাথে তা নিয়ে পরামর্শও করা হয়নি।
তাছাড়া সিলেটের তামাবিলের ভূমি নিয়ে কোন কালেই কোন বিতর্ক ছিল না। ১৯৫৮ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নূনের মাঝে দুই দেশের সীমান্ত ও ছিটমহল নিয়ে আলোচনা হয় এবং আলোচনা শেষে সীমান্ত চুক্তিও হয়। সে সময়ও সিলেটের তামাবিল সীমান্ত নিয়ে কোন কথা উঠেনি। অথচ সেটি বিতর্কিত করা হয় আওয়ামী লীগ আমলে। বিতর্ক পাকিয়ে সে ভূমি অবশেষে ছিনিয়েও নেয়া হল। ভারতও জানে, স্বার্থ উদ্ধারের মোক্ষম সময় কোনটি। তাই যে দাবী পাকিস্তান আমলে উঠলো না, এমন কি যে দাবী বাংলাদেশের অন্য কোন সরকারের আমলেও উঠলো না, সে দাবী উঠলো আওয়ামী লীগ শাসনামলে। এবং সেটি পুরণও হয়ে গেল। অথচ তামাবিল এলাকা দখলের জন্য ২০০১ সালের ১৫-১৬ এপ্রিল তারিখে এক ব্যাটেলিয়ন বিএসএফ সৈন্য নিয়ে ভারত হামলা করে। নিজেদের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের বিডিআর জোয়ানেরা সে হামলা প্রতিহত করে । তারা ২১ জন বিএসএফ সৈন্যকে হত্যা করে এবং বাংলাদেশের বিডিআর জন জোয়ান দেশের জন্যে শহীদ হন । কিন্তু ২০১১ সালে এসে ভারতকে সে ভূমি পেতে কোনরূপ যুদ্ধ করতে হল না। হাসি মুখে ভারতের হাতে সেটি তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশের শেখ হাসিনা।
১৯৭৪ চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছর পর ১৯৯২ সালে এসে তিন বিঘা করিডোরটি ভারত খুলতে রাজি হয়। সেটিও দিনে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য, এবং সেটি লিজের ভিত্তিতে। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ৪,০৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। কিন্তু তিন বিঘার করিডোরটি নিয়ন্ত্রন করেছে অতি কঠোর ভাবে। নির্ধারিত সময় বাদে পারাপারের কোন উপায় নেই। অথচ অঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের ২০ হাজার বাংলাদেশীর ট্রানজিটের প্রয়োজনটি কয়েক ঘন্টার নয়। ভারতের কাছে অসহায় বাংলাদেশের নাগরিক ছিটমহলের বাসিন্দারা। সেখানে কোন হাসপাতাল নেই, থানা এবং কোট-কাছারিও নেই।
কিন্তু বঙ্গদেশ নাম স্লোগানের কথিত কাহিনী ভিন্ন ?
তিনবিঘার করিডোরটি দিবারাত্র খোলা রাখাকে ভারতীয়রা নিজ নিরাপত্তার প্রতি হুমকি ভাবে। অথচ তারাই বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত থেকে পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত শত শত মাইলের ট্রানজিট চায়। ট্রানজিট চায় চট্রগ্রাম ও চালনা বন্দরে যানবাহন নিয়ে পৌঁছার জন্যও। এবং সেটি বছরের প্রতি দিন, প্রতি রাত ও প্রতি মুহুর্তের জন্য। একটি নয়, কয়েকটি রুট দিয়ে। শুধু স্থলে পথে নয়, নৌ-পথেও। এই হল ভারতীয়দের সাম্রাজ্য বাদী এবং আওয়ামীলীগের চুক্তি। গঙ্গার পানি-বন্টন চুক্তিকে সফল চুক্তি বলে উৎসব করে। কিন্তু গঙ্গার পানি-বন্টন চুক্তি নামে আছে কাজে নাই। ভারত চায়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নিরাপদ ট্রানজিট যা উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি প্রদেশে সৈন্য ও রশদ পৌঁছতে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এভাবে ভারতের স্ট্রাটেজী হল, চলমান যুদ্ধের সাথে বাংলাদেশকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা। ১৯৭১ সালে বিজয়ের পরপরই ভারতীয় বাহিনী চট্টগ্রাম বন্দরে স্তূপীকৃত হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য, বিপুল পরিমাণ অটো মোবাইল, লোকোমোটিভ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, অলংকারপত্র, ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বর্তমান বাজর মূল্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী লুটে নিয়ে যায়।
যাচ্ছি কোন দিকে ? ক্ষমতার জন্যে আত্মসমর্পণ
আত্মবিসর্জনের পথ ধরে সিকিম ভারতের বুকে গুম হয়ে গেছে। আর মুজিব ধরেছিলেন আত্মসমর্পনের পথ। শেখ হাসিনার কাছে আজও সেটিই অনুকরণীয় মডেল। ফলে ভারত যা চায় তা পেতে তাদের শেখ মুজিব আমলেও যেমন অসুবিধা হয়নি। হাসিনার আমলেও হচ্ছে না। তাই মুজিব দিয়েছিল দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়ন, আর শেখ হাসিনা দিলেন তামাবিলের ২৬১ একর ভূমি। মুজিব দিয়েছিলেন ফারাক্কার অনুমোদন, আর হাসিনা দিচ্ছেন টিপাইমুখের বাঁধের অনুমোদন।
সুন্দরবনের লিখিত লিজ এখন ভারতীয়দের কাছে। ভারত সরকার কোন দান খয়রাতি প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিটি বিনিয়োগ থেকে মুনাফা তোলাই সেদেশের সরকার সমুহের সরকারি দায়িত্ব। তেমনি মুনাফা তুলছে বাংলাদেশের গত নির্বাচনে তাদের বিশাল বিনিয়োগ থেকেও। সে বিনিয়োগেরও ফল রূপে শেখ হাসিনা থেকে বিনা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের ২৬১ একর জমি নিল। নিচ্ছে বিনা শুল্কে ট্রানজিট, সীমান্ত বাণিজ্যের সুযোগ। ভারত তার একাত্তরের বিনিয়োগ থেকেও একই ভাবে বিপুল মুনাফা তুলেছে। ট্রানজিট দিয়ে ভারতীয় রশদ ও সৈন্য পারাপার শুরু হবে তখন তার উপর ভারতীয় বিদ্রোহীদের যে হামলা হবে সে কথা কে হলফ করে বলতে পারে? সেরূপ হামলা শুরু হলে হামলাকারিদের উপর ভারতীয় ড্রোনের হামলাও যে শুরু হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? আজ বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশী লাশ হচ্ছে। তখন নিরপরাধ মানুষ বিপুল সংখ্যায় ভারতীয় ড্রোনে লাশ হবে দেশের অভ্যন্তরে ।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৫৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন