ক্রিমিয়া নিয়ে কেন আগ্রহী রাশিয়া , কোন স্বার্থে ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৩৯:৫৪ সকাল
ঐতিহাসিক ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৮৫৩ সালে। রাশিয়া ও অটোম্যান সাম্রাজ্যের সাথে এই যুদ্ধে অটোম্যানদের মিত্র ছিল ফ্রান্স ও ব্রিটেন। ১৮৫৬ সালে রাশিয়ার পরাজয়ের মাধ্যমে এই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।
ক্রিমিয়ায় রুশপন্থী সৈন্যরা দুটি নৌঘাঁটি দখল করে নেয়, যার মধ্যে ক্রিমিয়ার ইউক্রেনের নৌ সদর দপ্তরও রয়েছে।ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে একটি চুক্তি সম্পাদন হবার পরের দিনই এসব ঘটনা ঘটছে।
এর পর সর্বশেষ নৌঘাঁটি দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।
ক্রিমিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ন্যাটো।
ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে এক বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন।
ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্ত এলাকাতে রাশিয়া ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য সমাবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটাকে ইউক্রেন ও পাশ্চাত্যের জন্য বিশাল হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার শহর সেভাস্তপল নিজেদের রাশিয়ার অংশ ঘোষণা করেছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীকে পদত্যাগপত্র লিখতে বাধ্য করেছেন কয়েকজন এমপি। তারা জোর করে তার কক্ষে প্রবেশ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি সভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভিতালি চুরকিন বলেছেন, মস্কো চায় না যে ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে কোনো রকম যুদ্ধের সূচনা হোক। ইউক্রেনের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি প্রশ্নোত্তরে এ কথা বলেন চুরকিন।
ক্রিমিয়া নিয়ে কেন আগ্রহী রাশিয়া কোন স্বার্থে ?
ক্রিমিয়ার ২০ লাখ অধিবাসীর ৫৮.৫ শতাংশই রাশিয়ান বংশোদ্ভূত। এছাড়া ২৪.৪ শতাংশ ইউক্রেনীয় এবং ১২.১ শতাংশ তাতার মুসলিম।
ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করে নিয়ে পুতিন বক্তৃতায় বলেন,রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর মধ্য দিয়ে এ সময় পুতিন এবং ক্রিমিয়ার নেতারা এ উপদ্বীপকে রাশিয়ান ফেডারেশনের অংশ করে নেয়ার চুক্তি সই করেন।
৬০ বছর আগে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়া ভুল ছিল। চুক্তি সইয়ের পর ঘোষণায় বলা হয়, জনগণের হৃদয়মনে ক্রিমিয়া সবসময়ই রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই আছে।
রাশিয়ার যেসব প্রতিবেশি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকছে তাদেরকেপ্রতিপক্ষ মনে করছে রাশিয়া । আবার সাম্রাজ্য বাদী হয়ে মাথা তুলে দাড়াতে চায় রাশিয়া। যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি হচ্ছিল তখন ভিক্টর ইয়ানোকোভিচ চায়নি এ চুক্তিটি হউক। রাশিয়া তাদের কাছে নত জানু প্রসাশন কে ক্ষমতায় বসিয়ে রাশিয়ার পক্ষে ক্রিমিয়ার ৯৫.৫ শতাংশ ভোটার দেখিয়ে পাতানো গণ ভোটের আয়োজন করে। এর পর পরই কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব এই গণভোটকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে।
রাশিয়ার একটা বড় অংশ গ্যাস ইউক্রেনের ওপর দিয়ে ট্রানজিট হয়। ট্রানজিট পথটা রক্ষা করার জন্য রাশিয়া সরকার চায় ইউক্রেন একমাত্র রাশিয়ার কথামত চলুক।
ক্রিমিয়াতে রাশিয়ার একটি গুরত্ব পূর্ণ নৌবন্দর আছে।
রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে এমন অনেক লোক ইউক্রেনের নাগরিক। তারা অনেক সময় ইউক্রেনে নিরাপত্তা বোধ করে না এমন ভুয়া অজুহাত তুলে এবং সবসময় রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশসহ সাবেক অংশগুলোতে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখতে মরিয়া । নিজেদের সামরিক ঘাঁটি ও সীমান্ত সুরক্ষার মতো ব্যাপারে রাশিয়া অতি সতর্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরেকটি শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে আভির্ভূত হচ্ছে রাশিয়ার সামনে।
ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে - ০৩ এপ্রিল,২০১৪
বিষয়: বিবিধ
৮০৩৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন