শর্মিলা বসু। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষনা ।৭ কোটি থেকে ৩০ লাখ নিহত ?
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৭ মার্চ, ২০১৪, ১১:৪৪:৫৮ রাত
গবেষক শর্মিলা বসু। কলকাতার বিখ্যাত সুভাষ বসু পরিবারের মেয়ে এবং Oxford University এর একজন তুখোড় গবেষক। বাংলাদেশ ঘুরে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষনা মুলক গ্রন্থ 'Dead Reckoning: Memories of the 1971 Bangladesh War' লিখে এখন আলোচনার তুঙ্গে তিনি। বইটি লিখে আমাদের সুশীলদের এখন রীতিমত চোখের বিষ তিনি।তার মতে বাঙ্গালিরা যে ইতিহাস জানে সেটা লিখেছেন বিজয়ীরা আর সেটা মুদ্রার একপিট এবং আংশিক সত্য ।বইটিতে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য যা অনেক বিবেকবান মানুষকে সত্য উদঘাটনে নাড়া দিয়েছে। শর্মিলার মতে ৭১ সালে ৩০ লক্ষ্য মানুষ মারা যাওয়ার ব্যাপারটা নিতান্তই রাজনৈতিক সুবিধাবাধীদের বাড়াবাড়ি। তিনি বাংলাদেশে যে গবেষণা চালিয়েছেন, তা থেকে দেখা যায় স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গেছে ৫o হাজার থেকে ১ লাখের মত লোক। যে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে তাদের সরকারী হিসেব মতে মারা যায় দেড় লাখের মত মানুষ। তাহলে শর্মিলার কথাগুলো কি ফেলে দেওয়ার মত? প্রথমে ব্যাপারটা আমাকেও বিস্মিত করেছে। তারপর চিন্তা করলাম,আমি স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটি লাইফে আমার একজন বন্ধুকেও পাইনি যার স্বাধীনতা যুদ্ধে কেউ মারা গেছে। আমার নিজ গ্রাম এবং নানার গ্রামে মানুষ মারা গেছে মাত্র ৩ জন ,তাও ১ জন আবার পাঠান। আপনিও নিজেকে প্রশ্ন করুন? শর্মিলার মতে, আসুন একটা গানিতিক হিসাব করি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন সংখ্যা ৭ কোটি। এর মধ্যে ভারতে সরনার্থী হয়ে চলে যান কত কোটি ?
আমাদের ইতিহাসবিদদের মতে,
৯ মাসে মানুষ মারা যায় ৩০,০০০০০( ত্রিশ লক্ষ)
তাহলে, প্রতি ১ মাসে মারা যায়, ৩০০০০০০/৯ = ৩,৩৩,৩৩৩ জন (তিন লক্ষ তেত্রিশ হাজার প্রায়, দশমিকের পরের সংখ্যা বাদ দিয়ে )
তাহলে, প্রতি ১ দিনে মারা যায়, ৩,৩৩,৩৩৩/৩০ = ১১,১১১ জন (এগার হাজার একশত এগার প্রায়, দশমিকের পরের সংখ্যা বাদ দিয়ে)
তাহলে, প্রতি ১ ঘন্টায় মারা যায়, ১১,১১১/২৪ = ৪৬২ জন (দশমিকের পরের সংখ্যা বাদ দিয়ে)।
এবার আমরা শর্মিলার কথাগুলো চিন্তা করি-
২য় বিশ্বযুদ্ধ বাদ দিলে সাম্প্রতিক আর কোন যুদ্ধ পাওয়া যাবে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে বলা শুনা যায় ।
২য় বিশ্বযুদ্ধেও যেখানে প্রতিমাস ১ লাখ মানুষ মরার রেকর্ড নেই সেখানে ৭১ এ প্রতি মাসে ৩ লাখ মানুষ মরার ব্যপারটা কি খুব বেশি কাকতলীয় নয়?
ইরাক যুদ্ধে আমেরিকা হাজার হাজার টন ক্লাষ্টার বোমা মেরেছে ,সব ধরনের ভয়ংকর অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
কিন্তু জাতিসংঘের মতে সেখানে ১০ বছরে মারা গেছে মাত্র ৪ লাখ মানুষ।
কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী তো আমাদের বিরুদ্ধে সাধারন যুদ্ধাস্ত্র ছাড়া আর কোন অস্ত্র ব্যবহার করেনি,কারন ক্লাস্টার বোমাসহ কোন ভয়ানক অস্ত্র তখন তাদের ছিলনা।
আজ যদি ঢাকা শহরের ১০০ মানুষকে AK-47 নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয় আর বলা হয়,যাকে সামনে পাবে তাকেই মারার জন্য তারপরও কি তারা প্রতিদিন ১১ হাজার মানুষ মারতে পারবে?
৭১ সালের যে ইতিহাস আমরা জেনেছি সেটা কি পুরোপুরি সত্য নাকি আংশিক সত্যে?
মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশে ফিরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তাঁর প্রথম টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, "দশ লক্ষাধিক মানুষের আত্মাহুতির মাঝ দিয়ে আমরা পশুশক্তির হাত থেকে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ঢাকার বুকে সোনালী রক্তিমবলয় খচিত পতাকা উত্তোলন করেছি"। (দৈনিক বাংলা, ৪ জানুয়ারী ১৯৭২)
২০১১ সালের ২৩ মে, বিবিসির বাংলা বিভাগের উপ-প্রধান সিরাজুর রহমান ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ানে একটি চিঠি পাঠান। তিনি ইয়ান জ্যাকের লেখা একটি প্রবন্ধ যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো, তার উপর নিজের মতামত প্রকাশ করেছিলেন। জনাব রহমান একটি ইতিহাস তুলে ধরেন সেখানে। তিনি লেখেন, “১৯৭২ সালের জানুয়ারীর ৮ তারিখে, আমিই ছিলাম প্রথম বাংলাদেশী যিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করি। তাঁকে হিথ্রো থেকে লন্ডনের ক্ল্যারিজেসে আনা হয় এবং আমি প্রায় সাথে সাথে সেখানে পৌঁছাই তিনি যখন আমার কাছ থেকে জানতে পারেন যে তার অবর্তমানেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এবং তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে, তখন তিনি বিষ্মিত হন। দৃশ্যত তিনি লন্ডনে এসেছিলেন এই ধারণা নিয়ে যে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানিদের যেই স্বায়ত্বশাসনের জন্যে লড়াই করছিলেন পাকিস্তানিরা তা মেনে নিয়েছে।
সেইদিন আমি এবং অন্যরা তাঁকে যুদ্ধের একটি বিবরণ দেই। আমি তাঁকে জানিয়েছিলাম যে এখন পর্যন্ত যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির কোন সঠিক হিসাব জানা যায়নি, তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আমাদের অনুমান, কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন তিনি ডেভিড ফ্রস্টকে বললেন ত্রিশ লক্ষ মানুষকে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে। আমি জানি না কি কারণে তিনি এই সংখ্যাটি বলেছিলেন, হয়তো তিনি মিলিয়ন শব্দটির ভুল অনুবাদ করেছিলেন কিংবা তাঁর অস্থিরচিত্ত এর জন্যে দায়ী হয়ে থাকতে পারে। তবে আজও অনেক বাংলাদেশী বিশ্বাস করেন সংখ্যাটি আসলেই অতিরঞ্জিত।”
(http://goo.gl/AP3k5z)
বিস্তারিত জানতে নীচের লিংকে ক্লিক করুনঃ
১) http://www.guardian.co.uk/world/2011/may/24/mujib-confusion-on-bangladeshi-deaths?INTCMP=SRC
Mujib's confusion on Bangladeshi deaths
http://www.theguardian.com/world/2011/may/24/mujib-confusion-on-bangladeshi-deaths?INTCMP=SRCH
২) http://www.guardian.co.uk/books/2011/jul/01/dead-reckoning-sarmila-bose-review
৩) http://www.dailynayadiganta.com/details/17990।
মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী আমাদের অনেক অত্যাচার করেছে ।কিন্তু সেটাকে বাড়াবাড়ি উপস্থাপন করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করা কিছু দল । মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা জেনে অহংকারের জায়গাটাকে অলঙ্কৃত করতে হবে। কারন মিথ্যা কল্পকাহিনী কখনো অহংকারের মাপকাটি হতে পারেনা।
সেই সময়ের বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রধানের কথা মত বলতে হয়ে কয়েকটা শুন্য বাড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে ভুল তথ্য দিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিসার্সের হিসাবে
১৯৭১ সালের যুদ্ধে মারা গেছে ২ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ।
http://timesofindia.indiatimes.com/world/rest-of-world/269000-people-died-in-Bangladesh-war-says-new-study/articleshow/3147513.cms
৩০ লাখ নিহত সেটা কোনো হিসাবেই মিলছে না ।
বিষয়: বিবিধ
৪৮৭২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন