প্রতিকার পায়নি ধর্ষিতা; বরং জেলা জজের ছেলে ও তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৫৬:২১ সকাল
বিচারক ও তার ছেলে ধর্ষণ করে কাজে মেয়েকে।বিচার হয়নি এখনো , এমন কি তদন্ত প্রক্রিয়া ২ বছরে ও শেষ হয়নি।
বরিশালে জেলা জজ পদে কর্মরত থাকাকালে চাকরির প্রলোভন দিয়ে বাসার গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ। প্রতিকার পায়নি ধর্ষিতা; বরং জেলা জজের ছেলে আরিফ উল্লাহও তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
গৃহপরিচারিকা ধর্ষণের অভিযোগ: বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্ত শুরু হয়নি দুবছরেও
গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হওয়ার দুই বছর পার হলেও তদন্ত শুরু হয়নি এখনো। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর কেবলমাত্র বিচারককে ওএসডি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত বিচারকের মনোপূত লোক না হওয়ায় পাঁচ দফায় পরিবর্তন হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
বিভাগীয় মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, এ বিচারকের নাম মোঃ শহীদুল্লাহ, ঢাকা শ্রম আদালতের সাবেক চেয়ারম্যান (বর্তমানে ওএসডি)। তিনি বরিশালে জেলা জজ পদে কর্মরত থাকাকালে চাকরির প্রলোভন দিয়ে বাসার গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষিতা নিজেই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তে বিচারকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এরপর বিচারকের বিরুদ্ধে দায়ের হয় বিভাগীয় মামলা। এই মামলা তদন্ত করতে ইতোমধ্যে পাঁচ দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে এই ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ এ এফ এম মোস্তফাকে। আর অভিযোগ উপস্থাপনকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা জজ আলমগীর হোসেনকে। গত বছরের অক্টোবর মাসে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ধর্ষিতার লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, মোঃ শহীদুল্লাহ ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ পদে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি এলাকার মন্নুজান বেগম নামের সাবেক এক ইউপি মেম্বার একই এলাকার সুইটি (২০)কে ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিচারকের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেন। পরে জেলা জজ তাকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন। বিষয়টি জেলা জজের স্ত্রীকে জানানো সত্ত্বেও প্রতিকার পায়নি ধর্ষিতা; বরং জেলা জজের ছেলে আরিফ উল্লাহও তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার আদালতের নায়েব নাজিরের মাধ্যমে ২৫ জুন মেরিস্টোপ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিনই আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় এবং ২০০৯ সালের ৭ জুলাই ডিএ্যান্ডসি (গর্ভপাত) করার জন্য ১২শ’ টাকা জমা দেওয়া হয় এবং মেরিস্টোপ ক্লিনিক থেকে ২২ জুলাই গর্ভপাত ঘটানো হয়। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলে আবারো তাকে ধর্ষণ করা হয়। জেলা জজ মোঃ শহীদুল্লাহ বদলি হয়ে চট্টগ্রামের শ্রম আদালত-২-এ যোগদান করেন। বরিশাল ছাড়ার আগে জেলা জজ ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি ধর্ষিতাকে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তাকে বলা হয় বাড়ি থেকে প্রার্থী হয়ে বরিশালে এসে চাকরির পরীক্ষা দিতে। জজের বাসায় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিলে বদনাম হবে। জেলা জজের এ কথা বিশ্বাস করে মেয়েটি গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। এর কয়েকদিন পর ধর্ষিতা জানতে পারে, জেলা জজ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
এ ঘটনায় সুইটি অভিযোগ পেশ করলে আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয় বরিশালের পরবর্তী জেলা ও দায়রা জজ কেএম সলিমুল্লাহকে। তিনি প্রাথমিক তদন্তকালে বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকা কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের প্রমাণ পান। তদন্ত কর্মকর্তা ধর্ষণ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিচারক মোঃ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়।
আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে (মামলা নং ৫/২০১২)। ওই সময় ঢাকা শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা জজ) পদে ছিলেন মো: শহীদুল্লাহ। তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত (ওএসডি) করা হয়। এরপর বিষয়টি তদন্তের জন্য আইন কর্মকর্তা নিয়োগের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টে সুপারিশ করার পর দ্বিতীয় দফা তদন্ত শুরুর উদ্যোগ নেয় আইন মন্ত্রণালয়।
প্রথমে এ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) আবু আহম্মদ জমাদারকে। কিন্তু এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেন বিচারক মোঃ শহীদুল্লাহ।
এরপর দ্বিতীয় দফায় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) সৈয়দ আমিনুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট ওই তদন্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ মফিজুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তিনি তদন্ত করতে বিব্রতবোধ করেন। আইন মন্ত্রণালয় আবারো যুগ্ম সচিব সৈয়দ আমিনুল ইসলামকে অথবা রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ হোসেন শহীদ আহম্মদকে তদন্তের জন্য নাম প্রস্তাব করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চায়। সুপ্রিম কোর্ট তাদের পরিবর্তে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ এ এফ এম মোস্তফাকে তদন্তের দায়িত্ব দিতে বলেন।
কিন্তু, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রিপোর্ট দাখিল করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। ভিকটিম সুইটির কোনো বক্তব্য বা তার সঙ্গে কোনো কথাই তদন্ত কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত বলেননি। এতে বোঝা যায় যে, তদন্ত কাজ শুরুই হয়নি। উল্টো সুইটিকে বিচারক মো. শহীদুল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্নজন নানা রকমের হুমকি দিচ্ছে বলে সুইটির পরিবার অভিযোগ করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন