এক দিকে রাষ্ট্রপতি খুনিদের ক্ষমা করেন , অন্য দিকে বিশ্বজিৎ দাসের হত্যার রায়

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:০৫:২৫ সন্ধ্যা



নিশ্চই মনে আছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খুনিদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা দিলেন এই সরকারের আমলে। একদিনে "ফাঁসির ২০ আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, মুক্তিপ্রাপ্তদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।" ২/৪ দিন কিছু পত্রিকা লিখা লিখি করে তার পর হয়ত আমরা ভুলে গেছি।

আর বিশ্বজিৎ দাসের হত্যার রায় শুধু মাত্র নিম্ন আদালতে হলো , এর পর বিভিন্ন আদালতে শুনানীর পর কি হবে সেটা অনুমান করতেও অসুবিধা নাই। বিচারের বাণী নীরবে কাদবে ? নাকি রায়ের কার্যকারিতা ?

প্রশ্ন - আওয়ামীলীগের নেত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপিরা বলেছিলেন , বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে ছাত্রলিগ জড়িত নয় , কিন্তু টিভি , প্রিন্ট মিডিয়া তে তাদের ছবি ?

এর পর রায় ?

এখন কি আসামীদের পক্ষে কথা বলবেন তারা ?

পুলিশ আসামীদের রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করেনি। কিন্তু বিরোধী দলের হলে দরকার হলে গেরিলা বাহিনী , জঙ্গি তান্ডব এমন কি জড়িতদের মৃত স্বজনদের কেও আসামী করত। ( বিগত কিছু দিন পূর্বে ৩ বছর পূর্বে মৃত একজন কবিকে গাড়ি ভাঙ্গা , লুটপাট , মামলার আসামী করেছিল পুলিশ)

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রকাশ্য তান্ডবে সেই দিন কি ঘটেছিল নিরীহ বিশ্বজিৎ দাসের উপর

গত বছর ৯ ডিসেম্বর সকালে পুরান ঢাকার ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস রোডের বাসা থেকে তাঁতীবাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে দর্জির কাজ করা বিশ্বজিৎ দাসকে (২৪) পুরান ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় চাপাতি দিয়ে উপর্যপুরী কোপানো হয়। প্রাণ বাঁচাতে জীবন ভিক্ষা চেয়ে দৌড়ে পাশের একটি ক্লিনিকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। সন্ত্রাসীরা সেখানেও বিশ্বজিৎকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে পালাতে গিয়েও আবার রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় ।আক্রান্ত বিশ্বজিৎ নৃশংস ও বর্বর এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি।

পথচারীদের কেউ কেউ বিশ্বজিতকে পাশের ন্যাশনাল হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে এতেও বাধা দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর প্রাণ বাঁচাতে আবার দৌড়ে বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারের একটি গলিতে গিয়েই ঢলে পড়েন।

সেখান থেকে রিকশাচালক রিপন তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর বিশ্বজিৎ দাস মারা যান।

শাখারীবাজারে বিশ্বজিতের দর্জি দোকান ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজার। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর।

যারা খুন করে তাদের পরিচয় মিডিয়া বলছে কিন্তু ছাত্র লীগের নাম লিখতে মনে হয় তাদের বাধা / ভয় ?



আদালতে যে ভাবে বর্ণনা করলেন সাক্ষ্যে তদন্ত কর্মকর্তা -


তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে তার দেওয়া জবানবন্দিতে ধারাবাহিকভাবে জানান,

ঘটনার দিন গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এটিএন বাংলা চ্যানেলের সন্ধ্যা ৭টার সংবাদ থেকে ধারণকৃত ফুটেজের ধারাবাহিক ভাষ্য নিম্নরূপ:

সাদা ক্যাপ মুখে রুমাল বাঁধা হাতে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে উপর হতে নীচে নামতে দেখা যাচ্ছে আসামি রাজন তালুকদারকে। লাল গেঞ্জি পরিহিত কাইয়ুম ওরফে টিপুকে অস্পষ্টভাবে ঘটনাস্থলে দেখা যাচ্ছে। হাফ সোয়েটার লাল শার্ট পরিহিত খন্দকার ইউনুস ইনটেনসিভ ডেন্টাল কেয়ারের ভিতর থেকে ইট মারতে মারতে নিয়ে আসতে দেখা যায়। ভিকটিম বিশ্বজিতের শরীরে আঘাতের ফলে রক্ত বারান্দায় পড়েছে তার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

আসামি নাহিদ সাদা ফুল হাতা শার্ট, নীল রং এর সোয়েটার পরা অবস্থায় বাম হাতে ভিকটিমকে ধরে ডান হাতে মারতে দেখা যায়। আসামি আবদুল আজিজ সাদা শার্ট, জিন্সের প্যান্ট পরিহিত সাদা চাদর গায়ে বাম হাতে বিশ্বজিৎকে ধরে ডান হাতে মারতে দেখা যায়। আসামি রাশেদুজ্জামান শাওন ফুল হাতা সাদা হালকা মেরুন কালারের ষ্ট্রাইপ গেঞ্জি পরা অবস্থায় ডান হাতে থাকা রড দিয়ে পেটাতে দেখা যাচ্ছে।

আসামি ইমদাদ সাদা ষ্ট্রাইপ ফুলহাতা গেঞ্জি জিন্সের প্যান্ট পরা অবস্থায় দুই হাতে রড দিয়ে বিশ্বজিতের মাথা লক্ষ্য করে মারতে দেখা যায়। আসামি রফিকুল ইসলাম কালো ফুলহাতা গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পড়া অবস্থায় দুই হাতে রড দিয়ে ভিকটিমকে পেটাতে দেখা যায়।

একুশে টেলিভিশন চ্যানেলে ঘটনার সময় সকাল ৯টায় ধারণকৃত দৃশ্যের ধারা ভাষ্য: আসামি নাহিদ, এমদাদ, কিবরিয়াকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্রলীগের মিছিলের সামনের দিকে দেখা যাচ্ছে। রফিকুল ইসলাম শাকিল ইনটেনসিভ কেয়ারে প্রবেশের দরজায় বিশ্বজিৎকে ডান হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে কোপাতে দেখা যায়। কিবরিয়াকে পাশে দাঁড়ানো দেখা যাচ্ছে।

চ্যানেল ৭১ টেলিভিশনে ধারণকৃত দৃশ্য ও ধারাভাষ্য: আসামি তমালকে ঘিয়া রংয়ের সাফারি পরা অবস্থায় হাতে কাঠের রোল দিয়ে বিশ্বজিতের মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়। ওবায়দুল কাদের তাহসিন লাল শার্ট ও চশমা পরা অবস্থায় বিশ্বজিৎকে ভিতর থেকে টেনে এনে শাকিলকে কোপাতে সহায়তা করে।

আলাউদ্দিন সাদা সোয়েটার যাতে ভিকটিমের শরীরের রক্ত লাগা অবস্থায় বিশ্বজিতের পকেট হাতাইতে দেখা যায়। রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল) কে ভিকটিমের রক্ত তার গায়ে লাগা অবস্থায় বের হয়ে আসতে দেখা যায়। আল আমিন টিয়া রংয়ের ফুলহাতা গলাবদ্ধ গেঞ্জি পরা অবস্থায় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

বাংলাভিশন চ্যানেলে ধারণকৃত ফুটেজে আসামি লিমনকে খয়েরী জ্যাকেট পরা অবস্থায় ঘটনাস্থলে দেখা যায়। সাইফুলের আংশিক ছবি দেখা যায়। যার মুখ দেখা যায়।

রায় -

বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ে ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে ফাঁসির আদেশ এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন বিচারক। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ।

ঢাকার দ্রুত বিচার-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামিরা হলো- রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিয়া, রাজন তালুকদার এবং নূরে আলম লিমন।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- এ এইচ এম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর ওরফে তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাবেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।



রায়ের পর আসামীদের আগাম কিছু বক্তব্য কি সত্যি হবেই ?


রায়ের পর আসামীরা আদালতেই বললো-

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আরেক আসামি জি এম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কারণেই আমাদের এই বিপদ। রায়ে আপনারা খুশি তো? আপনারা খুশি হলেই আমরা খুশি।’

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল তাঁর এক স্বজনের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জজ কোর্টের ওপর হাইকোর্ট আছে। সেখানে কিছু করার চেষ্টা কইরেন। আর আমার লাইগা চিন্তা কইরেন না। আমার কিছুই অইব না।’

বিষয়: বিবিধ

২৪৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File