কার লাশ আজ জাতির কাধে -- কসাই কাদেরের লাশ পাইনি , পেয়েছি আব্দুল কাদেরে মোল্লার লাশ।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৬:৩৮ রাত
আবদুল কাদের মোল্লার সেই জবানবন্দী....
গত বছরের ১৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২-এ ডিফেন্স সাক্ষী হিসেবে দেয়া জবানবন্দীতে তিনি জিবনের ইতিবৃত্ত সব কিছু বলেছেন। বলেছেন মুক্তিযদ্ধের পুরো সময়ই তিনি ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকা তো দূরের কথা গ্রামে অবস্থানকালে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং হাইস্কুলের ছাত্রের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংও নিয়েছে।
জবানবন্দীতে কাদের মোল্লা বলেন, একসময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে একসাথে মিছিল-মিটিং ও রাজনীতি করেছি। যাদের সাথে একত্রে রাজনীতি করেছি তারা জামায়াতে ইসলামী করার কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা ছিল না বা নেই। গত ৪০ বছর সময়ে মধ্যে কোনো পত্রপত্রিকা বা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি।
জবানবন্দী : আমার নাম আব্দুল কাদের মোল্লা, আমার পিতার নাম মোঃ সানাউল্লাহ মোল্লা। আমার জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৪৮। আমার জন্ম স্থান জরিপের ডাংগি, ইউনিয়ন- চর বিষ্ণুপুর, থানা ও উপজেলা সদরপুর, জেলা- ফরিদপুর। আমার বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা- গ্রামঃ আমিরাবাদ, ইউপি ভাষানচর, থানা ও উপজেলা- সদরপুর, জেলা ফরিদপুর।
আমার প্রাথমিক শিক্ষা হয় জরিপের ডাংগি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫৮ সালে আমি প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তিসহ সম্পন্ন করি। আমি ১৯৫৯ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইন্সষ্টিটিউশনে ভর্তি হই, এটি হাইস্কুল। আমি ১৯৬৪ সালে ওই স্কুল থেকে এসএসসি প্রথম বিভাগে পাশ করি। ওই বছরেই সম্ভবত জুলাই মাসে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ওই কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আইএসসি পাশ করি। ওই কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে বিএসসি পাশ করি। এরপর প্রায় এক বছর চার মাস বাইশরশি শিবসুন্দরী একাডেমীতে শিক্ষকতা করি।
১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে এমএসসি কাসে ভর্তি হই। আমি ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। ওই সময় গোটা বছরই প্রায় কাস হয়েছে, মাঝে মাঝে হরতাল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বিঘœ ঘটেছে ফলে প্রায় সময়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ডিসেম্বরে পরীক্ষা ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার তারিখ পড়েছিল সম্ভবত ১২/১৩ মার্চ, ১৯৭১। কিন্তু ঐতিহাসিক ৭ মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক চুড়ান্ত অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়ার কারণে উল্লেখিত তারিখের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। তখন আমরা জিজ্ঞেস করি যে পরীক্ষা কবে হবে। তখন তিনি বলেন দেশের যে পরিস্থিতি তাকে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। আরো বললেন, তোমরা হলে থাক আমি তোমাদের অচিরেই আমার সিদ্ধান্ত জানাব।
আমরা যারা হলে ছিলাম তারা বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পূর্বে আমরা নিজেরাই আবারো তার সঙ্গে দেখা করি। এই পরিস্থিতিতে তিনি আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকায় যাদের থাকার ব্যবস্থা আছে তাদেরকে নিজ নিজ বাসায় চলে যাবার পরামর্শ দিলেন। আর যাদের ঢাকায় বাড়িঘর নেই তাদেরকে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বললেন। যাবার আগে ডিপার্টমেন্টের অফিসে প্রত্যেকের ডাক এবং টেলিগ্রাম ঠিকানা দিয়ে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন।
এরপর ১১/১২ মার্চ, ১৯৭১ আমি আমার নিজ গ্রামের বাড়ি আমিরাবদ চলে যাই। সেখানে যাবার পর প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে পড়–য়া ছাত্ররা যারা বাড়িতে চলে এসেছে তারা এবং স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকগণ আমরা একত্রে আমিরাবাদ হাইস্কুলের মাঠে বসতাম এবং রেডিওতে প্রচারিত প্রতিদিনের খবরাখবর শুনতাম। ইতিমধ্যে আমাদের সাথে অবসরপ্রাপ্ত জেসিও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এভাবে এক সপ্তাহ বা তার কিছু সময় বেশি পার হয়ে যায়।
২৩ মার্চ, ১৯৭১ আমাদের এলাকায় তখনও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি যায়নি। অধিকাংশ বাড়ি ঘরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শুধু থানা হেড কোয়ার্টারে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওই দিন আমরা ১২ টার সময় জেসিও সম্ভবত উনার নাম ছিল মফিজুর রহমানের ডাকে আমরা বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ ছাত্র এবং স্কুলের উচ্চ শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্র একত্রিত হই। মফিজুর রহমান সাহেব আমাদেরকে বললেন, তিনি বিকাল থেকেই আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং দেবেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কিছু কাঠের তৈরি ডামি রাইফেল জোগাড় করেছেন। তিনি আরো বললেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা ওইদিন বিকালে তার পরামর্শ মতো ৩০/৪০ জন একত্রিত হই। তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা নেয়ার পর ২/১ জন বাদে প্রায় সবাই প্রশিক্ষণ নেবার জন্য মনোনীত করেন এবং ঐদিন থেকেই আমরা পিটি, প্যারেড শুরু করি। তিনি প্রথম তিন দিন আমাদেরকে ডামি রাইফেল দেন নাই। পরে ২০/২১টি ডামি রাইফেল আমাদেরকে দেন এবং এই রাইফেলগুলো দিয়েই আমরা প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩০ এপ্রিল বা ১ মে তারিখে ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত আমরা ট্রেনিং চালিয়ে যাই। ফরিদপুরে সেনাবাহিনী পৌছার পর কয়েক দিন আমাদের ট্রেনিং বন্ধ থাকে। এর কয়েক দিন পর আবার ট্রেনিং চালু হয়। যেদিন পাক সেনারা ফরিদপুর থেকে বরিশালের দিকে যায় সেদিন আমরা আমাদের স্কুল থেকে কামানের গোলার শব্দ শুনতে পাই। কামানের গোলার শব্দ শোনার পর আমরা মাঠ থেকে স্কুল ঘরের ভিতরে ঢুকে যাই। এরই মধ্যে একদিন কয়েকটি যুদ্ধবিমান আমাদের মাথার উপর দিয়ে খুব নিচু দিয়ে উড়ে যায় ফলে সবাই সাংঘাতিকভাবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায় এবং আমাদের ওস্তাদ ট্রেনিং বন্ধ করে দেয়। এই সময়ে পাকিস্তান রেডিও থেকে অবসরপ্রাপ্ত অথবা এলপিআর-এ থাকা বা ছুটিতে থাকা সকল সামরিক কর্মকর্তা ও সিপাহীকে কাজে যোগদান করার জন্য নিকটবর্তী থানা অথবা সেনা ছাউনিতে যোগদানের আহবান জানান হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয়ের পর আমি লেখাপড়ার জন্য ঢাকা আসার চেষ্টা করতে থাকি। জবানবন্দীতে উল্লেখিত ব্যক্তি ব্যক্তিদের সাথে ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করি যাতে আমার লেখাপড়ার কোনো ক্ষতি না হয়। তারা তিনজনই আমাকে একযোগে পরামর্শ দেন, এখন ঢাকায় যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলেন তোমার ভূমিকা সম্পর্কে ঢাকায় কারো জানা নাই। সেখানে গেলে বর্তমান অবস্থায় যেকোনো ধরনের বিপদ হতে পারে। আমরা তোমার ভুমিকা সম্পর্কে জানি তাই তুমি বাড়িতে থাকো। আমরা খোঁজ খবর নেই, তারপর সবকিছু জানাশোনার পর এবং বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এলে ছড়ানোর ছিটানো অস্ত্রপাতি সরকারের হাতে জমা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, জান-মালের নিরাপত্তা বিধান হবে, তখন আমরাই তোমাকে ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব।
এরপর তাদের পরামর্শ মোতাবেক আমি বাড়িতে এবং উপরে উল্লেখিত পীর সাহেবের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকি এবং চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতে থাকি। তখন মাঝে মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা হাসান, মাকসুদ, আবদুল হাই প্রমুখের কাছ থেকে আমি চিঠি পেতে থাকি, তারা লেখে যে তোমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় চলে এসো। এই চিঠিপত্র সম্পর্কে আমি সদরপুর থানার উল্লেখিত তিন ব্যক্তিকে জানাই। তারা বললেন, একটু দেখেশুনে যাওয়াই ভালো, এই চিঠি যে তারাই লিখেছেন তার কী প্রমাণ আছে।
১৯৭২ সালের সম্ভবত নভেম্বর-ডিসেম্বরে সদরপুর থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি শাহজাহান তালুকদার নিজেই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং আমাকে শহীদুল্লাহ হলের গেটে নামিয়ে দেন। আমি আসার পর ছাত্রলীগের বর্ণিত নেতৃবৃন্দ আমার ভর্তির এবং হলে থাকার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। কারণ তারা আমার ক্লাসমেট ছিলেন এবং আমি তাদেরকে লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতাম এবং তাদের সঙ্গে আমার আন্তরিকতাও ছিল।
১৯৭১ সালের সম্ভবত জুলাই মাসের শেষের দিকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের অফিস থেকে টেলিগ্রাম এবং ডাকযোগে খবর পাই যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, আমি যেন এসে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দেই। আমি এই বার্তা মোতাবেক জুলাই মাসের শেষের দিকে আমি ঢাকায় আসি এবং হলেই উঠি। সপ্তাহ খানেক প্রাকটিক্যাল কাসও করি। কাস শেষ হওয়ার ২/৩ দিন পর তিন দিনের বিরতিসহ দুই দিন ব্যাপি প্রাকটিটক্যাল পরীক্ষা চলে। পরীক্ষা শেষে সপ্তাহ খানেক পর আবার বাড়ি চলে যাই।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ার কারণে আমার ব্রেক অব স্টাডি হয় এবং এ কারণে পদার্থ বিদ্যায় এমএসসি করা হয়নি। ১৯৭৪ সালে আমি আইইআর (ইন্সটিটিট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ)-এ ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (সোস্যাল সাইন্স)-এ ভর্তি হই। ১৯৭৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন পাশ করি।
আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করি। এরপর ডিগ্রি প্রথম বর্ষে যখন পড়াশোনা করি তখন ইসলাম এন্ড কমিউনিজমের তুলনামুলক পড়াশুনা করতে থাকি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পড়াশুনা করি। পড়াশুনা শেষ করে ওই সালেই আমার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার আগেই আমি কিছুদিন ইসলামী ফাউন্ডেশনে চাকরি করি। পরে বিডিআর সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে চাকরি করি। আমি সেখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। আমি উদয়ন বিদ্যালয়ে ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে শিক্ষকতা করেছি। আমি মানারাত স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলাম।
১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করার পর আমি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করি। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রাম পুনঃপ্রকাশিত হয়। আমি মানারাত থাকা অবস্থায় ওই পত্রিকায় শিক্ষা বিভাগের পাতার পরিচালক ছিলাম। আমার সাংবাদিকতার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ১৯৮১ সালের প্রথম দিকে যোগদান করি, তবে তখনো আমি মানারাত ট্রাষ্টের সদস্য ছিলাম। ইতিমধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রাথমিক সদস্য পদ লাভ করি। ১৯৮২-৮৪ পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলাম তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকি। সম্ভবত ১৯৮৩ সালে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নিয়োজিত হই। ১৯৮৭ সাল আমি ঢাকা মহানগর জামায়াতে আমির নির্বাচিত হই এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে আমি কেন্দ্রীয় লিঁয়াজো কমিটির সদস্য ছিলাম।
কেন্দ্রীয় লিঁয়াজো কমিটির সদস্য থাকার কারণে তৎকালীন এরশাদবিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ উভয় দলের সিনিয়র নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে আমার সখ্যতা গড়ে উঠে। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ জামায়াতের সমর্থন চায়। জামায়াতে ইসলামের সমর্থন পেলেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবেন না। একথা আওয়ামী লীগকে জানানো হয়।
এরপর বিএনপি আমাদের কাছে সরকার গঠনের জন্য সমর্থন চাইলে বিএনপি’কে সমর্থন দেই এবং শর্ত দেই যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেনি এই কারণে আমরা পরে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে একীভূত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করি। আন্দোলনের সময় মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের বাসায় প্রায়ই লিঁয়াজো কমিটির মিটিং হতো, আমি সেখানে উপস্থিত থাকতাম। নাসিম সাহেব এই লিঁয়াজো কমিটিতে গৃহীত আন্দোলনের কর্মসূচী সম্পর্কে ব্রিফিং করতেন। আমি এগুলো নোট করে নিয়ে এসে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতাম। আন্দোলন তীব্রতর রূপ লাভ করলে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাজে আমাকে এবং আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে একইদিনে গ্রেফতার করে, আটকাদেশ দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সপ্তাহ দুয়েক পরে আমি মুক্তি পাই।
আমাদের আন্দোলন চলেতে থাকে। একপর্যায়ে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে আইন পাশ করে। আন্দোলনের কারণে জামায়াতের সাথে বিএনপি’র দুরত্ব সৃষ্টি হয় ফলে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে জামায়াত এবং বিএনপি আলাদাভাবে নির্বাচন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একপর্যায়ে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং আমাকে বললেন আমরা তো সরকার গঠন করলাম, আমাদের কিছু পরামর্শ দেন। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর মূখ্যসচিব ছিলেন এবং তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রিসিভ করেন। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে কিছু গঠনমুলক পরামর্শ দেই যা শুনে তিনি আমাকে সাধুবাদ দেন। একইভাবে তিনি পরে আমাকে আরো দুবার ডেকেছিলেন।
এখন আমি মনে করছি দীর্ঘদিন যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলন করলাম, মিটিং মিছিল করলাম, সুসম্পর্ক রাখলাম, সখ্যতা রেখে চলেছি তারা এখন শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য দীর্ঘ ৪০ বছর পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং নাই এবং আমি কোনোভাবেই ওই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। বিগত ৪০ বছর মধ্যে আমার বিরুদ্ধে কারোর পক্ষ থেকে পত্রপত্রিকায় বা কোনো কর্তৃপক্ষের বরাবরে আনীত কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিষয়: বিবিধ
২০৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন