দেখে এলাম মুসলিম শাসকদের সেই ফিলিপাইন। অথচ আজ তারা সংখ্যালঘু।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ৩০ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:০৭:১১ রাত
ফিলিপাইন এক সময় মুসলিম দেশ ছিল। ফিলিপাইনের স্বাধীন দেশটি তখন তিনটি মুসলিম সালতানাতে বিভক্ত ছিল। ‘ম্যানিলা’ও ছিল ৩টি সালতানাতের একটি। ম্যানিলার সর্বশেষ মুসলিম শাসকের নাম সোলায়মান । খুব ধার্মিক , সমাজ সচেতন আন্তরিক শাসক ছিলেন সোলায়মান । তখন বেশ ভালো জীবন যাপন করতো মিরদীকাই’ বর্তমান ম্যানিলার জনগণ। বর্তমান ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার নাম ছিল ‘মিরদীকাই’। এই ‘মিরদীকাই’কে পরিবর্তন করে বানানো হয় ম্যানিলা। মুসলিম শাসক সোলায়মানের আমলে দলে দলে স্পেনীয় আগ্রাসী বণিকরা ম্যানিলায় ভীড় জমায়।কু-মতলবের স্পেনীয় বণিকদের সঙ্গে সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরে স্পেনের নৌবহরও এসে নোঙ্গর ফেলে। এ সময় সুলতান সোলায়মান সঙ্গে স্পেনীয়রা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১৫৬৫ সালে স্পেনীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে সুলতান সোলায়মান পরাজিত হন। স্পেনীয়রা ম্যানিলা দখল করে নেয় এবং পার্শ্ববর্তী সুলু ও মাগিনদানিউ সালাতানাতও কুক্ষীগত করে। দখলকৃত এ অঞ্চলকে তারা তত্কালীন সাম্রাজ্য বাদী স্পেনের রাজা ফিলিপের নামানুসারে নামকরণ করে ফিলিপাইন।
কিছু নির্মম ইতিহাস। ......
১৫২১ সালে স্পেনীয় নাবিক ম্যাগিলান ভারত মহাসাগরে হয়ে ম্যানিলা পর্যন্ত পাড়ি জমায়। তাদেরকে অনুসরণ করে ইউরোপীয়রা এ অঞ্চলে খুব বেশি আনাগোনা শুরু করে।পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফের্দিনান্দ মাগেলান ১৫২১ সালে ফিলিপাইনে পৌঁছান এবং স্পেনের হয়ে দ্বীপটি দাবী করেন।
১৮৯৮ সালে স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধে মার্কিনীরা ম্যানিলা উপসাগরে স্পেনীয় নৌবহরকে পরাজিত করে। চীনা-বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো নেতা এমিলিও আগিনালদো ঐ বছরের ১২ই জুন ফিলিপাইনকে স্পেন থেকে স্বাধীন ঘোষণা করেন।
ইউরোপে মুসলমানদের ব্যঙ্গ করে ‘মূর’ বলা হতো। সেই ইউরোপীয়রা ফিলিপাইনের বিভিন্ন অঞ্চলে এসে মুসলমানদের ‘মূর’ বলে অভিহিত করত। সেই ‘মূর’ থেকে হয়ে যায় বর্তমানের ‘মরো’। এভাবে ফিলিপাইনের মুসলমানরা মরো নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করে। স্পেনীয়রা ফিলিপাইন শাসন করে ১৮৯৮ সাল পর্যন্ত। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপনিবেশ স্থাপনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপস্থিত হয়। এর ফলে ক্ষমতার জন্যে ১৮৯৮ সালে আমেরিকার সাথে স্পেনীয়দের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে স্পেনীয়রা হেরে যায়। স্পেনীয়দের পরাজিত করার পর মার্কিনীরা ফিলিপাইনের দখল নেয়। স্পেন প্যারিস কথিত শান্তি চুক্তিতে দ্বীপগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়। কিন্তু ১৮৯৯ সালেই মার্কিন শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপিনোরা বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। তিন বছর বিক্ষিপ্ত মার্কিন-ফিলিপিনো যুদ্ধে বহু হাজার ফিলিপিনো ও মার্কিন সেনা নিহত হয়। ১৯০২ সালে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমান ফিলিপিনোদের নিকট ক্ষমতা দেয়ার পূর্বে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকা ফিলিপাইনের অধীনে ছিল। স্পেনীয় ও আমেরিকা ও বর্তমান ফিলিপিনোদের কয়েকশ’ বছরের শাসন আমলে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে মুসলমানদের সংখ্যালঘু বানানো হয়। নারী , পুরুষ নির্বিশেষে লাগাতার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এক সময় প্রায় মুসলমানহীন হয়ে পড়ে ফিলিপাইন। এছাড়াও চলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মান্তরিতকরণ।
যে মুসলিম জাতি কয়েকশ’ বছর আগেও শাসক ছিল, সাম্রাজ্যবাদী ইহুদি , ক্রিস্টানদের চক্রান্তে তারা হয়ে যায় সংখ্যালঘু। ফিলিপাইনের মরো মুসলিমরা মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত হলে ফিলিপাইন সরকার ক্ষমতা জিয়িয়ে রাখতে মুসলিম প্রধান মিন্দানাও, জলো ও পাহলোয়ান দ্বীপপুঞ্জের ১৪টি প্রদেশে ইহুদী ইসরাইলদের মত খ্রীস্টান জনবসতি গড়ে তোলে। যে ভাবে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে মুসলমানদের দমন করতে ইহুদী ইসরাইল যে পদক্ষেপ নিয়েছে ফিলিপাইনও তিনটি মুসলিম দ্বীপে সেই একই পদক্ষেপ নেয় ইহুদি সামান্তবাদিরা।
বিশ্বের কোনো মিডিয়া সেটা তুলে ধরে না। ফিলিপাইনে মুসলমান উপর এমন জঘণ্য নির্যাতন করা হয়, যা কোন বন্য পশুর উপর কর সম্ভব নয়। কিন্তু সেই খবর প্রকাশ করা হয় না মিডিয়ায়। উল্টো ফিলিপাইনের মুসলিমদের জঙ্গি, মৌলোবদি, ইত্যাদি নামে অ্যাখ্যায়িত করা হয়।
নির্যাতিত, নিপীড়িত, গৃহহীন, অধিকারহীন ফিলিপাইনের মরো মুসলমানদের এই কান্না , আর্তনাদ কেউ না শুনলেও মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তো অবশ্যই শুনছেন। হয়ত এর ফলে ফিলিপাইনের সেই জালিম, গণ হত্যাকারী শাসক ও তাদের দোসরদের ধ্বংস করছেন প্রাকৃতিক গজব তথা ভূমিকম্পে। আর সেই ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন হাইয়ান আঘাত হানার ফলে আজ ফিলিপাইনে প্রায় সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন হাইয়ান আঘাত হানার পর দেখা গেছে ফিলিপাইনে গণকবরের প্রস্তুতি। দেশটির মধ্যাঞ্চলে প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি আঘাত হানার এক সপ্তাহ পর ও সরকারি ভবনটির বাইরে সারিবদ্ধভাবে লাশের স্তুপ। অনেক সময় লাশ সংগ্রহ করার জন্য কোন ট্রাক পাইনি।
সংকট মোকাবিলায় সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর সাথে যেহেতু নিজে কাজ করে যাচ্ছি , তাই নিজের চোখের সব দেখলাম। তাদের মৃত্যুতে নিশ্চই মানবিক দৃষ্টিকোন আছে। কিন্তু সেই সব নিরীহ মুসলিমদের গণহত্যার বিচার বিধাতা মনে হচ্ছে করছেন।
( বি : দ্র : নিজের ডায়রির লিখা ম্যানিলা থেকে ২৭ অক্টোবর ২০১৩ )
বিষয়: বিবিধ
৪৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন