ভুলে গেলেন ?সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫২:৪৬ সকাল
মনে পড়ে সেই ১৯৯৪ সালের কথা ? আওয়ামিলীগ এবং শেখ হাসিনা ভুলে গেলেও ইতিহাস লিখা আছে , সেটা জাতি মনে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য , নেদারল্যান্ড , মধ্যএশিয়ার
রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক , তাদের অনুরোধ , উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা লাগাতার আন্দোলন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কিছু মানবো না । এমন কঠোর মনোভাব নিয়ে পথে নামেন। সেই সাথে রাজপথে গাড়ি পুড়ানো চলে। ক্রম এগুতে থাকে দেশ এক ভয়াবহ অবস্থার দিকে।
আজ এখন ক্ষমতায় বসে শেখ হাসিনা বলছেন -
শেখ হাসিনা এবং তার দল এখন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের পক্ষে অবিরাম সাফাই গাইলেও ৫ম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাবকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ও অন্য কিছু মানবেন না স্পষ্ট জানিয়েছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অন্য কিছু মানবো না ।
১৯৯৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকু ৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশ সফর শেষে তিনি আলোচনা শুরু করার জন্য দুই নেত্রীর কাছে ফ্যাক্স বার্তা পাঠান। এরই ধারাবাহিকতায়
১৯৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকু’র বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন।
নিনিয়ান স্টিফেনের ওই প্রস্তাব তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা তিনি মানবেন না।
প্রস্তাবটি ছিল -
ঢাকার আসার পর থেকে তিনি প্রায় মাসব্যাপী উভয় দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের মধ্যস্থতা করেন। সংলাপের এক পর্যায়ে তিনি একটি ফর্মুলা উত্থাপন করেন। এতে স্যার নিনিয়ান সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। এ সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের ৫ জন এবং বিরোধী দলের ৫ জন মন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু উল্টো আওয়ামী লীগ
কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা এনিয়াওকু’র কাছে মন্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে ফ্যাক্স বার্তা পাঠায়।এবং নিনিয়ান স্টিফেন কে বি এন পির পক্ষে কথা বলেন বলে অভিযোগ ও করা হয় শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।
পাকিস্তান সফররত কমনওয়েলথ চিফ ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিনিয়ান কোনো পক্ষপাতিত্ব করেননি। সব মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মিশনের সাফল্য সম্পর্কে কিছুই আমি এই রিপোর্টে পেশ করতে পারব না। এই প্রেক্ষিতে আমি দুঃখজনকভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ঢাকায় আমার অব্যাহত উপস্থিতি আর কোনো প্রয়োজনেই আসবে না। তাই আমি এখন অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি।
সবশেষে - প্রায় মাসব্যাপী উভয় দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় সংলাপের মধ্যস্থতার ।
স্যার নিনিয়ান বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার আগে বাংলাদেশে আসার পটভূমিকার ব্যাখ্যা করে স্যার নিনিয়ান বিবৃতিতে বলেছিলেন , কমনওয়েলথ মহাসচিব চিফ এমেকা আনিয়াওকুর তিন দফা প্রস্তাব সরকারি ও বিরোধী দল উভয় পক্ষ মেনে নেয়ায় সংলাপ প্রক্রিয়ার যে সূচনা হয়, তাকে সহায়তা করতে কমনওয়েলথ মহাসচিবের দূত হিসেবে আমি এখানে আসি। কিন্তু সংলাপে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় আমি অবশ্যই অত্যন্ত হতাশ। সংলাপের সাফল্য সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে স্যার নিনিয়ান স্টিফেন বলেছেন, সহিংসতা ও হাঙ্গামার মাধ্যমে কিছুই অর্জিত হবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মিশনের সাফল্য সম্পর্কে কিছুই আমি এই রিপোর্টে পেশ করতে পারব না। এই প্রেক্ষিতে আমি দুঃখজনকভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ঢাকায় আমার অব্যাহত উপস্থিতি আর কোনো প্রয়োজনেই আসবে না। তাই আমি এখন অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি।
সূত্র -(দৈনিক সংবাদ পত্র গুলো:
২০ সেপ্টেম্বর, ২২ সেপ্টেম্বর,২৭ সেপ্টেম্বর,
১৫ নভেম্বর,২৪ নভেম্বর , ২৫ নভেম্বর,১৯৯৪)।
৫ম জাতীয় সংসদের প্রায় পুরো সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা । শেখ হাসিনা সুপ্রিমকোর্ট বার-এর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য সুপ্রিমকোর্টে যান। এমন কি রাজপথে পিঠিয়ে মানুষ হত্যা করেন।
ফলাফল শূন্য হয়। শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন থেকে সরে আসেন নাই। স্যার নিনিয়ান প্রস্তাবিত সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হাসিনা ।
বিষয়: বিবিধ
২৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন