সাঁথিয়ায় সরকারদলীয়দের তাণ্ডব : ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের প্রশ্ন ।মন্ত্রীরা কোনো জবাব দিতে পারেননি।

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৭:৫১ সকাল

পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আবার সরকারদলীয়দের তাণ্ডব ।

বাদী বললেন ঘটনার সাথে জড়িতরা কেউ বিএনপি-জামায়াতের নয়।

আমাদের আশ্রয়দাতারা গ্রেফতার কেন?

মন্ত্রীদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হিন্দু সম্প্রদায় ।



ঘটনার পরদিন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই নির্দেশের পর পুলিশ গ্রেফতারের পাল্লা ভারি করার জন্যই বেনামিদের গ্রেফতার করে আসামি করছে।

বিবেকের কাছে কি কোনো জবাব আছে ?



হিন্দু সম্প্রদায়ের বাদীর পরিবারবর্গের সদস্যরা মন্ত্রী ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে যারা আমাদেরকে সেদিন বাড়িতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে প্রাণ ও সম্পদ বাঁচিয়েছিলেন তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা মন্ত্রীর কাছে তাদের মুক্তি দাবি করেন। অথচ আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম দাবি করছেন, গ্রেফতারকৃত ১০ জনই নামভুক্ত আসামী।

ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির পরিদর্শন শেষে তিন মন্ত্রীর নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধিদল গতকাল বনগ্রাম বাজারে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় বেশকিছু স্থানীয় হিন্দু নারী প্রতিনিধিদলের পথরোধ করে দাঁড়ান। এ সময় তারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন—ঘটনার দিন স্থানীয় বিএনপি নেতা রেজাউল ইসলাম ও দাউদ আমাদের রক্ষা করেছেন। অথচ এ দুজনসহ যারা ঘটনায় জড়িত নন, তাদেরকে পুলিশের মামলায় গ্রেফতার করা হলো কেন? হঠাত্ এমন প্রশ্নে বিব্রত মন্ত্রীরা কোনো জবাব দিতে পারেননি।

খবরের কাগজে লিখা --

পরিদর্শন শেষে বনগ্রাম বাজারে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত সুধী সমাবেশে পরিদর্শন টিমের সদস্যরাসহ জেলা ও উপজেলা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে উপস্থিত হননি। এ সময় মাইকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে নাম ধরে ডাকলেও তাদের ডাকে অনেকেই সাড়া দেননি। এক পর্যায়ে মাইক থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, ‘মঞ্চে না আসলে আপনাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে না।’

বার বার বলার পরও সমাবেশে যোগ না দেয়া অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বলেন, ‘যারা সেদিন এ ঘটনা ঘটিয়ে লুটপাট করেছে, তারাই আজ সমাবেশে বড় গলায় কথা বলছে। সেদিন নেতৃত্ব প্রদানকারী অনেকেই প্রোগ্রামে উপস্থিত আছেন। তাই আমরা যাব না।’

এদিকে মামলার বাদী বাবলু সাহা সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আমি চিনি। কিন্তু তাদের কেউ এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে বাবুল দাবি করেন। এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের কেউ জড়িত কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের কেউ জড়িত নেই।’ তাহলে এ ঘটনার সঙ্গে কি আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে জড়িত আছে আমি তা বলতে পারব না। আমার বলতে নিষেধ আছে। তবে এতটুকু বলতে পারি—যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারা কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তারা সবাই নিরীহ মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই আমার এবং আমার পরিবারের প্রাণ বাঁচিয়েছে। যাদের বাড়িতে আমরা আশ্রয় নিয়ে বেঁচে গেছি, তাদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। শুরু থেকেই আমি তাদের মুক্তি দাবি করেছি। কিন্তু তাদের এ পর্যন্ত ছেড়ে দেয়া হয়নি।’

বাবুল সাহা শনিবারের ঘটনার দিন থেকে আতাইকুলা থানা পুলিশের হেফাজতে থাকার ৪ দিন পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘থানা হেফাজতে থাকাকালীন গ্রেফতার করা যে ১০ জনকে আমি দেখেছি, আমার দায়ের করা মামলার একজন আসামিও তাদের মধ্যে নেই।’

সব কিছুর পর এরা --

উল্লেখ্য, শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন শরিফের একটি আয়াত এবং মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিকৃতি ও কটূক্তির খবর ছড়িয়ে স্থানীয় দশম শ্রেণীর ছাত্র রাজীব সাহাকে সন্দেহ করে হিন্দু বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যার পেছনে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নীরব চাঁদাবাজির বিষয়টি জড়িত।

বিষয়: বিবিধ

১৯৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File