আমাদের গন্তব্য আজ অন্ধকারে

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৪ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৫৫:৪৬ দুপুর

যোদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই মন্তব্য করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলো - যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।



৩ অক্টোবর,২০১৩ বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি থেকে ভিক্টর মালেঁর লেখা ‘ফ্লড ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়ালস পুশ বাংলাদেশ টু দ্য এজ ( ত্রুটিপূণূ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছে)’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় --

Link: http://www.ft.com/cms/s/0/3e7405cc-2bf7-11e3-acf4-00144feab7de.html#axzz2gd4F8XPa

(বাংলা অনুবাদ হচ্ছে )

ঐতিহাসিক কারণে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষের সমার্থক হলেও গত দুই দশকে দেশটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন অপুষ্টি, শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে শিক্ষা ও গড় আয়ু। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সম্পদশালী প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও কিছুটা এগিয়ে রয়েছে।

প্রায় ১৫ কোটির বেশি জনসংখ্যার জনবহুল ও মুসলিম প্রধান এই দেশটি এখন চীন ও ইতালির পাশাপাশি অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। তবে গত এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১ শতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর পোশাক শিল্পের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের এসব অর্জন এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যোদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলাতে বদ্ধপরিকর। অবশ্য এই ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (নামে আন্তর্জাতিক হলেও আসলে এটি দেশীয় আদালত) বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন এবং গণহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে এই নিয়ে সাতজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে। বাকিরা হলেন বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তাৎক্ষণিকভাবেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আগেই তাড়াহুড়ো করে সরকার বিচারকাজ শেষ করতে চায়।

যোদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্রিটেনের উদারপন্থি গণতান্ত্রিক হিসেবে খ্যাত লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালগুলো বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং এর ব্যবস্থাপনা এতোটাই খরাপ ছিল যে, তা একটি প্রজন্মের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে এবং আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিতর্ককে বিষাক্ত করেছে।’

লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘আমার কাছে যতেষ্ট অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় হয় সরকারের লেখা অথবা বিচারকরা রায়ের খসড়া অনুমোদনের জন্য আগেভাগেই আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল।’

বিদেশি সরকার গুলো সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত হলেও তারা বাংলাদেশে রাজনীতি এবং সম্ভাব্য উগ্রপন্থার বিষয়ে গভীর উদ্বিগ্ন। এজন্য তারা উত্তেজনা প্রশমনে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন দুই নেত্রীকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিএনপি চাচ্ছে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইছেন।

অন্য অনেক কারণেও আওয়ামী লীগ সরকার দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচিত হচ্ছে। সরকার মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জব্ধ করার হুমকি দিয়েছে। কারণ, তিনি রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন।

তবে আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি নিন্দা কুড়িয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার কারণে।

৪২ বছর আগে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তেমন কেউই প্রশ্ন তুলছে না। তবে সরকার ট্রাইব্যুনালকে যেভাবে ভয়ঙ্করভাবে রাজনীতিকরণ করেছে তা আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ এবং উদারপন্থি বাংলাদেশিদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।

জামায়াতে ইসলামীর নিয়োজিত একজন ব্রিটিশ আইনজীবী (যুদ্ধাপরাধ আইনে বিশেষজ্ঞ টমি ক্যাডম্যান) আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ের পর এই বিচারকে ‘রাজনৈতিক প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণভাবে হয়ও, তারপর প্রচুর আশঙ্কা থেকে যায় যে দ্বি - মেরু বিশিষ্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিজয়ীরা সব ভোগ করেন’ সংস্কৃতিতে বিএনপি সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। আওয়ামী লীগও বিএনপির ৫ বছরের শাসনের জন্য প্রতিশোধ নিয়েছে।

লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘যোদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশের প্রধান দুটো দলকে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে গেছে। সরকার পরিবর্তন হলে অবস্থান (বিচার) উল্টে যেতে পারে। কারণ রাজনৈতিক কারণে লোকদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

২৪৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File