আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে ও আপনাদের সাথে থাকতে পারলাম না কারণ
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৩৬:০৬ দুপুর
আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে ও আপনাদের সাথে থাকতে পারলাম না কারণ I আমার লিখা পড়ে অনেকে বলতে পারেন আমি এইসব কি বলছি , কিন্তু আমার কথা কোনো দলীয় লেজুর ভিত্তিক নয় I
যারা মুক্তিযোদ্ধ দেখেনি বা যেতে পারিনি বয়সের কারণে তারা তো মা , বাবার কাছে থেকে নতুবা ইতিহাস থেকে জেনেছি স্বাধীনতার কথা , সেই সময়ের কথা কিন্তু সেই ইতিহাসকে এত বিকৃত করা হয়েছে যা ভাবতে অবাক লাগে ।
যারা ভারতে আনন্দ ফুর্তি করেছেন, এমনকি যারা দেশ বিরোধী ছিল তারা আজ দেখি রাজাকারের বিচার দাবি করেন , যারা রাজকার বাহিনী ঘটন করেছিলনে পাকিস্তানি সরকারের চাকুরী করে তারা আজ মন্ত্রী , এমপি ।
সে যাক আসল কথাই বলি --আমি মানুষের অধিকার , রাষ্ট্রীয় , সামাজিক বৈষম্য দূর করার লক্ষে যেকোন এসব গণজাগরণকে সমর্থন জানাই এবং তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি।শাহবাগের মঞ্চে যেতে পারিনি , বা তাদের সমর্থন করতে পারিনি তার কারণ আমি এই সব সত্য কথা জানতে পেরে কি করে যাই , কাদের বিচার দাবি জানাবো ?
কেন আমি
(১) মূলইস্যু আজ যাদের বিচার দাবি করা হচ্ছে তাদের কেন এত বছর বিচার করা হলো না , কেন তাদের নামে ১৯৭১ এরপর দালাল আইনে বিচার করা হলো না ।
(২) ১৯৭১ এরপর কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হলো কেন তাদের কে গ্রেফতার করা হলো না ।
(৩ ) ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছিলেন কিন্তু সেই সময় কেন তাদের কারো নামে দেশের কোনো থানায় মামলা হলো না ।
(৪ ) ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের লক্ষে ঘটিত আদালতের চীপ প্রসিকিউটর এখনো জীবিত(খন্দকার মাহবুব হোসেন) তিনি নিজে বার বার বিভিন্ন গণ মাধ্যমে বক্তব্য দিতেছেন আজ যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের কারো নাম তখন আসামির লিস্টে ছিল না ।
(৫) বিচার করবেন ভালো কথা কিন্তু আদালতকে কেন এত বিতর্কিত করা হলো , কেন আমরা দেখলাম বিচারক বললেন রায়ের জন্যে সরকার পাগল হয়ে গেছে ।
(৬) ৩৬ হাজার হোক আর ১৮ হাজার হোক , কিন্তু রাজাকারদের লিস্ট লোকানো কেন --সে সম্পর্কেও খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্য :
আমি ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ছিলাম। ওই সময় দালাল আইনে বিচারের জন্য পাকিস্তান আর্মির এদেশীয় ২৮ হাজার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে, ওই ২৮ হাজার বন্দীর মধ্যে এরা কেউ ছিলেন না। এরা যদি এতই ভয়ঙ্কর অপরাধী হতেন, তাহলে এদের একজনকেও ওই সময় গ্রেফতার তো দূরের কথা, এদের কারও বিরুদ্ধে দেশের কোনো একটি থানায় একটি জিডিও করা হলো না কেন?
(৭) আমি নিজে যাদের দেখেছি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধে আজ সরকারের সমালোচনা করার কারণে তাদের রাজাকার বলা হচ্ছে ।
(৮) আমাদের আবেগ নিয়ে আজ যারা লাফালাফি করতেছেন তাদের বেশির বাগ মুক্তিযুদ্ধে যাননি , তখন তারা বাংলাদেশে বা পাশবর্তীদেশে বেশ আরামে ছিলেন ।
(৯ ) আজ যারা বিচার দাবি করতেছেন তারা কেন আগে ক্ষমতার জন্যে এদের সাথে ছিলেন ।
(১০ ) ডক্টর জাফর ইকবাল নিজে উনার পিতার জন্যে ট্রাইবুনালে যাননি কিন্তু বড় বড় বক্তৃতা করছেন অথচ সাক্ষী দিতে ট্রাইবুনালে গেলেন না। এমন অনেকে আছেন নাম উল্লেখ করলাম না ।
(১১ ) সরকারের বিশেষ নির্দেশে , সরকাররের প্রটেকশন নিয়ে এমন মঞ্চ হবে সেটা তো জাতির কাছে একটা রহস্য ।
(১২ ) যারা জাতীয় বিষয় নিয়ে একটা মানব বন্ধন করতে পারেননি সেই সম্মানিত অনু মোহাম্মেদ সহ শিক্ষকদের পিটানো হলো , মানবাধিকার কর্মীদের ধরে ধরে পিটানো হলো , কিন্তু এই শাহবাগের মঞ্চে জামাই আদর সেটা আরেক রহস্য ।
(১৩ ) রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র দখলের এত সহজ দয়া সরকার দিয়ে দিলো, অথচ নিরীহ শিক্ষক নিরব প্রতিবাদের জন্যে রাস্তা , ফুটপাথ , উদ্যান কোথাও জায়গা পেলেন না , তাদের বেওয়ারিশ প্রাণীর মত তাড়িয়ে দেয়া হলো মরিচের স্প্রে মেরে, এমনকি ২ বার ২ জনকে শিক্ষককে হত্যা করা হলো রাজপথে ।
(১৪ ) সরকার যখন চারদিক থেকে বিপদে , দেশী , বিদেশীদের কাছে লাঞ্চিত , ঠিক তখন একটা মঞ্চ এত কম সময়ে ।যে কাদের মোল্লাকে এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিনিই স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতরে উদয়ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি যদি ‘কসাই কাদের কিংবা জল্লাদ কাদের’ হন, তাহলে আজ যারা তার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা কেন তাকে ওই সময় আটক করে পুলিশে দিলেন না?
(১৫) আমরা শুনলাম শাহবাগের মঞ্চ নির্দলীয় , কিন্তু আসল চিত্র হলো দেখলাম মন্ত্রী , এমপি , দলীয় লোকজন নিজদের দলের বাণী প্রচার , স্লোগান , এমন কি বিরোধী দলের বিরদ্ধে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে হামলার মত উস্কানি বক্তব্য দিলেন , রাজনৈতিকভাবে এটি ব্যবহৃত মঞ্চ ।
(১৬ ) আমাদের তারণ্যদের আমি দোষারোপ করতে পারিনি , কারণ তারা অনেক কিছু জানে না , তাদের আবেগ বেশি , কিন্তু যারা জন্মদাতা তাদেরকে তো আমরা কিছুটা আঙ্গুল নির্দেশ করতে পারি ।
হাজার হাজার আইনের লঙ্গন, খুন , হত্যা , দুর্নীতি , শিক্ষকদের উপর এসিড নিক্ষেপ সহ সব কিছু ম্লান করার জন্যে এই সব হচ্ছে অনেকের ধারণা , কিন্তু এইসব ধারণা তো উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা ।
(১৭ ) বাম নেতাদের কথা যদি বলতে হয় তাহলে উনাদের কথা আর কাজের মিল নাই । যেমন এখন তারা যে সরকারের হাতে তাদের দাবি মত ৪০ হাজার নেতা কর্মী নিহত হয়েছিলেন এখন তারা মন্ত্রী হয়ে নিজেরা মজা নিচ্ছেন , এমন বিষয় বহু আছে ।
(১৮)দলীয় আইনজীবী, দলীয় তদন্ত কর্মকর্তা ও দেশীয় বিচারকদের নিয়ে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরোধী দলের কেউ মন্তব্য করলেই হামলা , মামলা দেয়া হয় , কিন্তু মন্ত্রীরা যা ইচ্ছে তাই বলেন , এমনকি কার কবে রায় হবে সেটা ও বললেন , রায় হবার পর মন্ত্রীরা বিচারকের নাম ধরে রায় নিয়ে এমন সব সমালোচনা করলেন যা সম্পূর্ণ আদালত বিরোধী ।
(১৯) মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আরেকটি বাকশালী ফ্যাসিবাদে জর্জরিত হবে দেশ।গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে যেসব ভয়াবহ উচ্চারণ করানো হয়েছে তা দেশে ডেকে আনবে নৈরাজ্য, বিপর্যয় ও গৃহযুদ্ধ। মঞ্চের সূচনা করে দিয়ে মাইক্রোফোন ও মঞ্চ তুলে দিয়েছে আওয়ামীলীগের হাতে। সরকারি ছক অনুযায়ী শাহবাগ স্কোয়ারের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন সরকার এবং অনুগতদের দখলে।
(২০)সরকার নৃশংসতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পুলিশ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করছে ছেলেদের, তুলে নিচ্ছে চোখ, পশুর মতো পিটিয়ে করে দিচ্ছে বিকলাঙ্গ করতেছে , নারী ধর্ষিত হচ্ছে , শিক্ষক ছাত্রী ধর্ষণ করে যাচ্ছে কিন্তু সুশীলরা চুপ , কিন্তু আজ তারা শাহবাগের মঞ্চে বিষয় তা লজ্জার মনে করি ।
প্রবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, রায়ের পর পুলিশ প্রটেকশনে বিক্ষোভ হচ্ছে। মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে বলেছেন—এ রায় মানি না। তাহলে বিচারকরা কী করে তাদের রায় দেবেন? যেভাবে ফাঁসির দাবি উঠেছে, বিচারকদের তো ফাঁসি না দিয়ে কোনো উপায় নেই। ভবিষ্যতে যে রায় দেবেন তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।সেটা কি আমাদের মনে পড়ে ?
পরিশেষে ---
হয়ত এখন আমাদের তরুনদের চোখে রঙিন আলো, কিন্তু অমানিশা খুব কাছে কারণ এই সব রাজনৈতিক ফায়দাই হবে , জাতির জন্যে কিছু না , লাভ হবে সরকারের , আজ আমার লিখা পড়ে আমাকে অনেক কিছু বলবেন , কিন্তু এই লিখাটি মাত্র ১/২ মাস পর আবার পড়বেন, আমাকে সেই সময় উত্তর দেবেন ,আমি নিশ্চিত আমাকে তখন আপনাদের ভাই মনে করে বুকে নিবেন , কিন্তু এখন আপনাদের পাশে রাখবেন না সেটা নিশ্চিত ।
এসব মঞ্চ তৈরির পিছনে একদিন দেখা যাবে ভারতের অর্থ। আওয়ামীলীগের সাথে বাম রাজনীতির সিঁড়ি , গণহারে মানুষ হত্যা , আটক , গুম , ক্রস ফায়ার করেও ক্ষমতায় থাকার একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা।
শাহবাগের বিরিয়ানি মঞ্চের আর্থিক সকল প্রকার বিনিয়োগ করতেছে ভারত এবং আওয়ামীলীগ। হয়তো একসময় সেটা বের হবে , প্রকাশিত হবে। ভারতের মিডিয়ায় আসবে বিরিয়ানি মঞ্চের পেছনে কত কোটি রুপি ভারত খরচ করেছে। এক সময় এসব বিরিয়ানি মঞ্চ মাদকাসক্ত যৌন মঞ্চে রূপ নেবে। আজ আমার সাথে বিতর্ক করতে পারেন , কিন্তু মাত্র কিছুদিন পর যৌন মঞ্চের অপকর্ম প্রকাশ্য আসবেই।
এইসব মঞ্চ তৈরির পিছনে একদিন দেখা যাবে ভারতের অর্থ। সেই সাথে দেশি বিদেশি চক্র প্রথমে অর্থিক সহায়তা , মাদক সব কিছু সাপ্লাই করে সুদে আসলে মুনাফা তুলে নেবে।
এর পর দেয়া হবে ট্রানজিট , দেয়া হবে সুন্দরবন , দেয়া হবে সহজে সবকিছুতে অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীতে নামে বাংলাদেশি কিন্তু নিয়োগ পাবে ভারতের মানুষ। আদালত অবমাননা , কথিত চেতনার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশকে লীজ দেয়া হবে।
সরকারি / বেসরকারি চাকুরীতে জায়গা মত সেট করা হবে এজেন্ট। তারপর দেশে তান্ডব চালাবে ক্ষমতায় থাকার লোভে বিশেষ গুষ্ঠি।
এক সময় সারা বিশ্বের বাংলাদেশিরা বলবে শাহবাগের যৌন জাগরণ মঞ্চ।
আজ যারা রাষ্ট্রীয় অনিয়ম , অবিচার অন্যায়ের বিরোধিতা না করে চুপচাপ আছেন , তারা একদিন কারাগারেই যাতে হবে। তখন কি করবেন ? যে সব রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা নেত্রী মনে করছেন উনাদের জেলে নেয়া হবে না , সেটাও একদিন উল্টে যাবে। কারাগারেই থাকবে হবে। এর জন্য কি করবেন ?
উপরের বিষয়গুলো আমাকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করেছে ।
বিষয়: বিবিধ
২২৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন