নীতি নির্ধারকেরা কেউ কি বলবেন ১৯৭০ এর নির্বাচনের ইতিহাস। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০ কেমন করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বৈধ হয়ে গেল ?

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১১ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২৫:৪৪ সকাল



১৯৭১ সালে বর্তমান বাংলাদেশের জন সংখ্যা ছিল সাত কোটি কেমন করে

নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং প্রায় ৬৫% ভোট পড়েছে বলে পাকিস্থান সরকার দাবী করে।

সর্বমোট ৫৬,৯৪১,৫০০ রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে ৩১,২১১,২২০ জন পূর্ব পাকিস্তানের এবং

২৩,৭৩০,২৮০ জন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভোটার।

তাহলে সহজেই প্রশ্ন জাগে কেন বার বার বলা হয় ১৯৭১ সালে বর্তমান বাংলাদেশের জন সংখ্যা ছিল সাত কোটি। এই হিসাব কি তাহলে আইনত ভুল ? সরকারী হিসাবেই সেটা প্রমান করে তখন ৭ কোটি ছিল না।

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭০

ফলাফল প্রাপ্ত ভোট (%)

আওয়ামীলীগ ৩৮.৩%

পাকিস্তান পিপলস পার্টি - ১৯.৫%

পিএমএল (কাইয়ুম) ৪.৫%

পিএমএল (কনভেনশন) ৩.৩%

জমিয়ত উলেমা -ই- ইসলাম ৪.০%

মারকাজি জমিয়তন-উলেমা-পাকিস্তান - ৪.০%

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি) ২.৩%

জামায়াত-ই-ইসলামী ৬.০%

পিএমএল (কাউন্সিল) ৬.০%

পিডিপি ২.৯%

স্বতন্ত্র ৭.১%

মোট ১০০%

উল্লেখ্য - আওয়ামিলীগ পশ্চিম পাকিস্থানে সুবিধা করতে পারেনি। অন্য দিকে পশ্চিম পাকিস্থানে সব রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহনের ফলে সেখানে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সাথে অন্য রাজনৈতিক দলের ভোট ভাগ হয়ে যায়।

প্রদেশওয়ারী ফলাফল এবং এর পিছনের অজানা কাহিনী। .

যেহেতু ভারতের ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব পাকিস্থানের আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর মিলন মেলা সফল করে ফেলেছেন , তাই এর পর শুরু পূর্ব পাকিস্থানে আওয়ামিলিগ ছাড়া অন্যদের নির্বাচন থেকে দুরে রাখার কৌশল। ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর ফাদে পা দেয় অনেক রাজনৈতিক দল। তাদের জানানো হয় নির্বাচন করার কি দরকার , স্বাধীনের জন্য আন্দোলন করতে হবে।অন্যদিকে আওয়ামিলিগকে নিশ্চয়তা দেয় যেমন করে হোক একটা পাতানো নির্বাচন হবে। এবং আওয়ামীলীগের পক্ষেই খেলবে ভারতের গোয়েন্দারা।



আওয়ামী লীগ --- পশ্চিম পাকিস্তান (মোট) ০

পাকিস্তান পিপলস পার্টি --৮১ - পশ্চিম পাকিস্তান (মোট)

পিএমএল (কাইয়ুম) -

পিএমএল (কনভেনশন)

জমিয়ত ইলেমা-ই-ইসলাম

মারকাজি জমিয়ত-উলেমা-পাকিস্তান

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি)

জামায়াত-ই-ইসলামী

পিএমএল (কাউন্সিল)

সবাই পশ্চিম পাকিস্থানে নির্বাচনে অংশ নেই , কিন্তু পূর্ব পাকিস্থানে সবাই ছিল না। তাই সহজেই আওয়ামীলীগের লাভ হয়।

পশ্চিম পাকিস্তান (মোট ) ১৩৮ আসনের মধ্যে ১১ টি দলের মধ্যে সরাসরি নির্বাচনী লড়াই হয়।

যেহেতু পূর্ব পাকিস্থানের জন প্রিয় রাজনৈতিক দল ভাসানী সহ অন্যরা নির্বাচন বয়কট করেন , সেই ফাকা মাঠে ১৬২ আসনের মধ্যে আওয়ামিলিগ ১৬০ আসন লাভ করে।

এবার শুরু হয় প্রকাশ্যে ইন্দিরা মুজিব মূল মিশন।

নির্বাচনে মোট ২৪ টি দল অংশ নেয়। ৩০০ টি আসনে মোট ১,৯৫৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এরপর কিছু প্রার্থী তাদের দলীয় এবং প্রমাণাদির কারণে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে ১,৫৭৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন । আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে ১৬২টি আসন পূর্ব পাকিস্তানে এবং অবশিষ্টগুলি পশ্চিম পাকিস্তানে।

খুব পরিষ্কার ইতিহাস হচ্ছে আওয়ামী লীগ একসাথে উভয় পাকিস্থানে ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়।

১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচনের সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে একটু কথা বলি। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলিয়ে মোট আসন ছিল ৩০০, তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২ আসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮ আসন। এই সাধারন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৭০ আসনে প্রার্থী দেয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ টি আসনের সব আসনে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ৮ টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়।

১৯৭০-এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায় যে, কোয়ালিশন সরকার গঠন করার মতো আসনের সৃষ্টি করতে পারেনি বলে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগকে দাবার গুটি হিসাবে কাজে লাগানোর পায়তারা চলে ।

পাকিস্তান পিপলস পার্টি মাত্র ১২০ আসনে প্রার্থী দেয়। তার মধ্যে ১০৩ টি ছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে। পূর্ব পাকিস্তানে তারা কোন প্রার্থী দেয়নি। পিএমএল (কনভেনশন) ১২৪ আসনে, পিএমএল (কাউন্সিল) ১১৯ আসনে এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) ১৩৩ আসনে প্রতিদ্বন্দীতা করে।



ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক প্রধান কিছুদিন পূর্বে তার একটি বইয়ে স্বীকার করেছিলেন - ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্থান ভাঙ্গার ফাইল খুলেছিল ভারত। আর সেই ফাইল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ করে ভারত।

১৯৪৬ সালে বাংলার মুসলমানের ভোটে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জন্ম হয়, তার মূল নেতৃত্বে ছিলেন জিন্নাহ তার সাথে আরো অনেকে ছিলেন যেমন বাংলার টাইগার, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সরাওয়ার্দীসহ আরো অনেকে, তবে মূল নায়ক ছিলেন মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ।

ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাথে পরামর্শে

১৯৬৬ সালে যখন ছয় দফা আন্দোলন শুরু হয় তখন সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামীলীগ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

ছয় দফার খসড়া শেরে বাংলার কথা লাহোরের প্রস্তাব ছিনতাই করে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাথে পরামর্শে আওয়ামীলীগের নেতারা করে দিয়েছে।

১৯৬২ সালে নাকি স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি নিউক্লিয়াস গঠন করা হয়। যার কেন্দ্রবিন্দুতে নাকি শেখ মুজিব ছিলেন । কথা গুলো জাসদের , আওয়ামীলীগের নেতাদের। নিউক্লিয়াস গঠনের মূল অংশে ছিলেন কাজী আরিফ, আব্দুর রাজ্জাক এবং সিরাজুল আলম খান

পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা এনে দিল্লিকে দিতে যুদ্ধ

১৯৬১ সালে সিরাজুল আলম খান ভারতের কয়েকটি জায়গায় ভ্রমন করে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সাথে নিলনকশা করে আসেন। সর্বশেষে Bimal Pramanik, the director of Centre for Research in India-Bangladesh Relations, এর কথা থেকে জানা যায় আসলে এই নিউক্লিয়াস ছিল ভারতের এজেন্ট। এরাই পরবর্তিতে মুজিব বাহিনী নাম ধারণ করেছিল।

যারা নিউক্লিয়াস গঠনে মূল ব্যক্তি, তাদের কয়েকজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আর এখন নিউক্লিয়াস নিয়ে যারা লেখালেখি করেছেন বুঝেয়েছিলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা যাবে না।



১৯৬৪ সালে একটি নির্বাচন দেন তার সেই নির্বাচনটি ছিল কনভেশন নির্বাচন।
আইয়ুব খানের নির্বচনী প্রতীক ছিল গোলাপ ফুল, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফতেমাজিন্নাহ। তার নির্বাচনী প্রতীক ছিল হারিকেন। সেই নির্বাচনে আইয়ুব খান প্রচুর টাকা দিয়ে দেশব্যাপী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কিনে ফেলেন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সেই দিন সন্ধ্যার পর রেডিও খবরে জানা গেল যে ভোট কেনার টাকাগুলো জাল টাকা বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ফিল্ডমার্শাল মুহাম্মদ আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে ক্ষমতা গ্রহণ করেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান ।

কেন ভাঙ্গতে হবে ? কারণ পাকিস্থান কে বিভক্ত না করলে ভারতের ক্ষুধা মিটবে না। পূর্ব পাকিস্থানের মেধাবিরাই একসময় সারা পাকিস্থান পরিচালনা করবে। সেই সাথে ১৯৪৭ এর প্রতিশোধ এবং সিকিমের মত নতজানু দেশে পরিনত সম্ভব হবে না।

১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা 'কপ'-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। কাহিনী লুফেনেয় ভারতীয় মিডিয়া এবং আওয়ামিলিগ , বাম রাজনীতি। ১৯৭০-এর নির্বাচন পেছানোর জন্য নানা বাহানা করা হয়েছিল। এমনকি কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। বিশেষ নির্দেশে শেখ মুজিব অনড় ছিলেন। আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ৭০ এর নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন নি।

১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক কারচুপি এবং জাল ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়েছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ বহু আলোচনা সভায় এই তথ্য পেশ করা হয় ১৯৭০-এর নির্বাচনে ব্যাপক জাল ভোট দিয়েছেন। ১৯৭২ এর পরসব ইতিহাস গায়েব করা হয়।

পাকিস্থান সরকারের প্রচারিত ভোটার তালিকা , পাকিস্থানি নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছিল , সেটা কি করে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার হয় ?

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল কিছু আওয়ামীলীগের নেতারা এক হয়ে ১৯৭০ এর পাকিস্থানি সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একত্র হয়ে গণপরিষদ গঠন করে একটি সরকার গঠন করিয়ে দিল। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১-এ সেই সরকার শপথ নিল।

১৪ মার্চ শেখ মজিবুর রহমান ঘোষণা দিলেন যে, তিনি ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন, ১৬ মার্চ সকাল ১১টায় ইয়াহিয়া খানের সাথে শেখ মজিবুর রহমান কোনো সহযোগী ছাড়াই দেড় ঘণ্টা তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরের দিন ১৭ মার্চও শেখ মজিবুর রহমান সহযোগী ছাড়াই দুইজনের মধ্যে আবারও বৈঠক হয়। এর পর তৃতীয় দফা বৈঠক হয় সে দিনটি ছিল শুক্রবার, ঐদিন উভয় পক্ষের ৩ জন করে উপদেষ্টা আলাদা বৈঠকে মিলিত হন। এর পর ২০ মার্চ ৬ জন শীর্ষ স্থানীয় সহকর্মী নিয়ে ইয়াহিয়া খানের সাথে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আলোচনা শেষে ইয়াহিয়া খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আলোচনার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

উপরের তথ্য -

History has come full circle' Mujib Bahini". Times of India. Times of India. 20 November 2009. Retrieved 28 February 2015.

(Source G.W.Choudhury (1974) The last days of United Pakistan p128-129)

AK Khandker sued for 'Mujib Bahini's looting' claim". 10 September 2014. Retrieved 4 March 2015

Jahan, Rounaq (February 1973). "Bangladesh in 1972: Nation Building in a New State". Asian Survey (University of California Press) 13 (2): 199–210. doi:10.1525/as.1973.13.2.01p0305i. JSTOR 2642736.

বিষয়: বিবিধ

৬১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File