কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আদালতে প্রমাণ হয়নি। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য জানুন
লিখেছেন লিখেছেন উন্মোচক ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:০১:১৫ দুপুর
ট্রাইব্যুনালে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম চার্জটি হলো মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পল্লবকে হত্যা করা। এই চার্জে রাষ্ট্রপক্ষর দ্বিতীয় সাক্ষী সৈয়দ শহিদুল হক মামা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী প্রদান করেন। তিনি বলেন যে, তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নির্দেশে আক্তার গুন্ডা পল্লবকে ঠাটারি বাজার থেকে ধরে এনে মিরপুরে হত্যা করে। কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্যদেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শাহেরা, তিনি শহীদ পল্লবের ভাবী। তিনি বলেন, তিনি কখনও শহীদ পল্লবের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে কাদের মোল্লার নাম শুনেননি। শুধু তাই নয় তদন্তকারী কর্মকর্তা তার কোনোপ্রকার জবানবন্দি গ্রহণ না করে কাদের মোল্লার নাম জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি জমা দেন।
এই চার্জের অন্যতম সাক্ষী শহিদুল হক মামা,যিনি ১ ও ২ নং চার্জের সাক্ষী, ২০/০৪/২০১২ ইং তারিখে বিটিভি’তে প্রচারিত ‘রণাঙ্গনের দিনগুলি’ নামক এক অনুষ্ঠানে উক্ত চার্জের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন। কিন্তু সে বর্ণনায় আসামীর নাম জড়িয়ে কোন ঘটনার উল্লেখ করেন নি। অথচ ট্রাইব্যুনাল উপরোক্ত চার্জে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরে কারাদণ্ড প্রদান করেন।
দ্বিতীয় চার্জে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার্জে স্বাক্ষী দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের সক্ষী-২: সৈয়দ শহিদুল হক মামা, রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষী-৪: কবি কাজী রোজী, রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষী-১০: সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম। উক্ত সাক্ষীদের কেউই জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার এই ঘটনাটি দেখেন নি এবং তারা কার কাছ থেকে শুনেছেন তাও ট্রাইব্যুনালে বলতে পারেন নি।
রাষ্ট্রপক্ষের-২ নং সাক্ষী বলেন, তিনি শুনেছেন কবি মেহেরুন্নেসাকে কাদের মোল্লার নির্দেশে হত্যা করা হয় কিন্তু তিনি কার মাধ্যমে শুনেছেন কিভাবে শুনেছেন তা আসামী পক্ষের প্রশ্নের উত্তরে জবাব দিতে পারেননি। রাষ্ট্রপক্ষের-৪ নং সাক্ষী কবি কাজী রোজী বলেন, তিনি শুনেছেন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে বিহারীরা শহীদ কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেন। কিন্তু কাদের মোল্লা কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করেছেন কি না তিনি তা শুনেননি। অপরদিকে তার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ নামক বইয়ে তিনি শহীদ কবি মেহেরেুন্নেসার মৃত্যুর ব্যাপারে বিষদভাবে লিখেন। কিন্তু তিনি তার বইয়ে কাদের মোল্লার নাম কোথাও উল্লেখ করেননি। রাষ্ট্রপক্ষের-১০ নং সাক্ষী বলেন শহীদ কবি মেহেরেুন্নেসাকে হত্যা করেছে বিহারী এবং এই হত্যার ব্যাপারে তিনি কোনোভাবেই কাদের মোল্লাকে জড়িত করেননি। এই চার্জে প্রসিকিউশন তাদের মামলা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যার্থ হয়েছে তা সত্ত্বেও জনাব কাদের মোল্লাকে আইন বহির্ভূতভাবে ট্রাইব্যুনাল ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
তৃতীয় চার্জে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আইনজীবী এবং বুদ্ধিজীবী খন্দকার আবু তালেব হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই চার্জে সাক্ষী দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের-৫ নং সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান এবং রাষ্ট্রপক্ষের-১০ নং সাক্ষী সৈয়দ আব্দুল কাউয়ুম। তারা উভয়ে শোনা সাক্ষী এবং তারা কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আব্দুল কাদের মোল্লা জড়িত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে মিরপুরের জল্লাদখানায় সংরক্ষিত শহীদদের জীবনী এবং শহীদ পরিবারের বিভিন্ন জনের জবানবন্দী সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা আসামী পক্ষ সংগ্রহ করে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। উক্ত জবানবন্দীতে দেখা যায় রাষ্ট্রপক্ষের-৪ নং সাক্ষী কাজী রোজী তার লেখা বই ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেছা’তে খন্দকার আবু তালেব হত্যার জন্য বিহারী হালিমকে দায়ী করেন। সেখানে তিনি কেন আব্দুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করেননি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “কাদের মোল্লার ভয়ে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।” আইনজীবীগণ প্রশ্ন করেন, “আপনার বই প্রকাশ হয়েছে ২০১১ সালে আর আব্দুল কাদের মোল্লা গ্রেফতার হন ২০১০ সালে তাহলে তিনি কিভাবে আপনাকে ভীতি প্রদর্শন করলেন?” রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষী কাজী রোজি এর কোন জবাব দিতে পারেননি। অথচ মাননীয় ট্রাইব্যুনাল শুধুমাত্র শোনা সাক্ষীর উপর ভিত্তি করে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে।
পঞ্চম চার্জে পল্লবীর আলোবদি গ্রামে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই চার্জে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের-৬ নং সাক্ষী শফিউদ্দিন মোল্লা এবং রাষ্ট্রপক্ষের-৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষের-৬ নং সাক্ষী তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন, ঘটনার আগে তার পুরো পরিবার প্রাণভয়ে সাভারস্থ সারুলিয়া গ্রামে চলে যায়। তিনি না গিয়ে ঘটনার দিন পার্শ্ববর্তী ঝোপ থেকে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলি করতে দেখেছেন। অপরদিকে তার আপন ছোট ভাই (আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষের-৫ নং সাক্ষী)আলতাফ উদ্দিন মোল্লা বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন যে, ঘটনার পূর্বে তাদের পুরো পরিবার পালিয়ে গিয়েছিল সাভারস্থ সারুলিয়া গ্রামে এবং তার বড় ভাই শফিউদ্দিন মোল্লাও তাদের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সুতরাং তার ঘটনা দেখার কোনো প্রশ্নই আসে না এবং তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের-৯ নং সাক্ষী আমির হোসেন মোল্লা মিরপুর এলাকার ‘লাট ভাই’ হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ ইং তারিখে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ১৫/০৫/২০১২ ইং তারিখে হাইকোর্ট বিভাগের বর্তমান একজন বিচারপতি মহোদয়ের জায়গা দখলের অভিযোগে সম্প্রতি কারাভোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদখল এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে শতাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। তিনি ২৫/০১/২০০৮ ইং তারিখে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যে মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন নিজামী, মুজাহিদ এবং কাদের মোল্লা আলোবদি গ্রাম আক্রমণ করে এবং ঘটনার সময় সে দুয়ারীপাড়াস্থ এক ডোবায় আশ্রয় নেয় যা আলোবদি গ্রাম থেকে ৪ মাইল দূরে অবস্থিত। অথচ ২৬/০৮/২০১২ ইং তারিখে তিনি মাননীয় ট্রাইব্যুনালে এসে বলেন ঘটনার সময় তিনি আলোবদি গ্রামে ছিলেন এবং ঘটনার সময় তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে গুলি করতে দেখেছেন।
উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রসিকিউশনের সাক্ষীবৃন্দ ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে ট্রাইব্যুনালের সামনে অসত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল উক্ত অভিযোগে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
ষষ্ঠ চার্জে প্রসিকিউশন জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হযরত আলী লসকর এবং তার পরিবারকে হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ আনেন, যার একমাত্র সাক্ষী হলো মোমেনা বেগম রাষ্ট্রপক্ষের-৩ নং সাক্ষী। তিনি বলেন যে, তিনি কাদের মোল্লাকে দেখেননি। জনৈক কামাল ও আক্কাস মোল্লার কাছ থেকে শুনেছেন যে, তার বাবাকে কাদের মোল্লা হত্যা করেছে।
একই সাক্ষী মোমেনা বেগম তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা বিষয়ে ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, ঘটনার দুই দিন আগে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। কোর্টে বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত বক্তব্যে দেখা যায় তিনি ঘটনার দুই দিন আগে শ্বশুর বাড়ি চলে যান।
অথচ মাননীয় ট্রাইব্যুনাল উক্ত অভিযোগে মাত্র একজন সাক্ষীর মুখ থেকে শুনে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে তার সাক্ষী-২ সুশীল চন্দ্র মণ্ডল ট্রাইব্যুনালে এসে বলেন যে, জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা স্বাধীনতার পুরো সময় ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফরিদপুরের সদরপুর গ্রামে ছিলেন এবং সেখানকার ধলা মিয়া পীর সাহেবের বাড়িতে থেকে তার সন্তানদের পড়াতেন। আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষের-৩ নং সাক্ষী মোসলেম উদ্দিন আহমেদ যিনি ফরিদপুরে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনিও বলেন কাদের মোল্লা সাহেব স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় ফরিদপুরের সদরপুরে ছিলেন এবং ধলা মিয়া পীর সাহেবের ছেলে মেয়েদের পড়াতেন এবং আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষের ৬ নং সাক্ষী জনাব হাফেজ এ, আই, এম লোকমান যিনি ১৯৭১ সালে শহিদুল্লাহ হলের ইমাম ছিলেন এবং যে হলে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা থাকতেন। তিনি বলেন যে, ৭ই মার্চের পর তিনি জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে দেখেছিলেন এবং কাদের মোল্লা ১৯৭২ সালের শেষের দিকে বাড়ি থেকে আবার প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার পরিচিতি
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা একজন পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সমাজসেবক আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালের ১৪ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পরপর দুই(২) বার ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাকে ১৩ই জুলাই ২০১০ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন থেকে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে পল্লবী থানার মামলা নং-৬০(১)০৮ এবং কেরানীগঞ্জ থানাধীন মামলা নং-৩০(১২)০৭ এ গ্রেফতার দেখায়। এরপর ২২শে জুলাই ২০১০ তারিখে আইসিটিবিডি মিস কেস নং-০১/২০১০ এ কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে আটক রাখা হয় যার কারণে ‘‘ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অব আর্বিট্রেরি ডিটেনশন’’সহ আরো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহ তাকেসহ অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারকে আহবান জানায়।
জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠেনা। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে হলে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। দালাল আইনে ৩৭ হাজার লোকের নামে মামলা করা হলেও তখন তার নামে কোথাও একটি জিডিও করা হয়নি। তিনি ১৯৭৪-৭৫ সালে উদয়ন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন - যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ হলের মাঝামাঝি অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। কোনো হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকলে তিনি সত্তরের দশকের এ উত্তাল সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে অধ্যায়ন করা এবং ঢাকা শহরের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারা কিভাবে সম্ভবপর হয় যৌক্তিক কারণে সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই ৪২ বছর পর বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী বিচারের নামে মিরপুরের কসাই কাদেরকে কাদের মোল্লা হিসাবে চিহ্নিত করে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে দন্ডাদেশ প্রদান করেছে যা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চরম লংঘন । তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো অসত্য ও বিদ্বেষপূর্ণ। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহ সংক্ষিপ্তভাবে পর্যালোচনা করলে সে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে।
দেশবাসীর বিবেকের কাছে কিছু প্রশ্ন:
১. রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব সাক্ষী আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাদের কেউই প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন বরং অন্যদের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছেন মাত্র। এদের সকলেই যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা জেরায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মিথ্যাসাক্ষ্যের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া যায় কিভাবে?
২. গত ৫ই ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল তার রায় ঘোষণা করেন। এই ৫ই ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখটি মাননীয় ট্রাইব্যুনাল ঘোষণার আগে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার মিশরে রাষ্ট্রীয় সফরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রায়ের তারিখ উল্লেখ করেন। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সরকারী নির্দেশনায় এ রায় দেয়া হয়েছে।
৩. আব্দুল কাদের মোল্লা যদি কথিত হত্যাকাণ্ড ও অপরাধের সাথে সত্যিই জড়িত থাকবেন তাহলে কি করে তিনি ১৯৭২ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসাবে হলে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন অব্যাহত রাখতে পারলেন? ১৯৭৪ এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং জগন্নাথ হলের মাঝা মাঝি অবস্থিত উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে কিভাবে কর্মরত থাকতে পারলেন? ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন? তিনি যদি সত্যিই এমন চিহ্নিত অপরাধী হবেন তাহলে কি করে ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ২বার সাংবাদিকদের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন?
মূলত আব্দুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের আটক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের বামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির দীর্ঘদিনের অপপ্রচারের শিকার। আদালতের সামনে তার কোনো অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে।
সুতরাং, ইসলামবিদ্বেষী বামনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আসুন সোচ্চার হই।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন