রাজীব হত্যার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাকি ওয়েবসাইট ‘নূরানী চাপা’ চালু করে

লিখেছেন লিখেছেন লাল সবুজ পতাকা ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:০৪:২৮ বিকাল

নিহত রাজীব হায়দারের ছদ্ম নামে ‘প্রচার করা’ ওয়ার্ডপ্রেসের ব্লগটি তাঁর নিজের ছিল না। ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ তথ্য ঘেঁটে তা নিশ্চিত হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী রাজীব গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুরের পলাশনগরে খুন হন। রাজীব খুন হওয়ার পর ব্লগে ও ফেসবুকে তাঁর সম্পর্কে প্রচার চালানো হয়, তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে লিখতেন।

বিডিনিউজ খবর দিয়েছে, ‘নূরানীচাপা ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডটকম’ (nuranichapa.wordpress.com) নামে একটি ব্যক্তিগত ব্লগকে রাজীবের ছদ্মনাম ‘থাবা বাবা’ বলে উপস্থাপন করা হয়েছে এসব পোস্টে। ‘থাবা বাবা’ নামে রাজীব বিভিন্ন ব্লগে লিখতেন। রাজীবের ব্যক্তিগত ওই ব্লগ ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই ব্লগে মোট পোস্ট ছিল ১৯টি, যেগুলো লেখা হয়েছে ২০১২ সালের ১৮ জুন থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। সর্বপ্রথম রাজীবের নামে ‘নূরানী চাপা সমগ্রের’ লিঙ্ক প্রকাশ করে পাকিস্তানের একটি ওয়েবসাইট। defence.pk/forums/bangladesh-defence/235241-blogger-thaba-baba-murdered.html এই লিঙ্কে প্রকাশিত খবরে রাজীবের খুনের খবরের পাশাপাশি তাঁকে ‘নূরানী চাপা সমগ্রের’ লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওই পোস্টটি প্রকাশ করা হয়েছিল রাজীব হত্যার দুই ঘণ্টার মধ্যে।

প্রযুক্তিবিদরা বলেন, বিতর্কিত লেখাগুলো রাজীব হায়দারের নয়। আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টকাস্টের (য়ঁধহঃপধংঃ.পড়স) দেয়া তথ্যেও এই প্রমাণ মিলেছে। নূরানী চাপা নামের সাইটটিতে প্রথম ভিজিট করা হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই দিন রাতেই নিজ বাসার সামনে রাজীবকে হত্যা করা হয়। দুই ঘণ্টার মধ্যে ভিজিটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ হাজারের বেশি। এটা পরিকল্পিত বলে মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা। অনলাইন ট্রাফিক ও পর্যবেক্ষণ সাইট এ্যালেক্সায়ও (ধষবীধ.পড়স) ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে এই সাইটিতে ভিজিট করার কোন তথ্য নেই। তবে গত ১০ দিনে বাংলাদেশে এই সাইটের (হঁৎধহরপযধঢ়ধ.ড়িৎফঢ়ৎবংং.পড়স) ট্রাফিক সিরিয়াল ১৩৭ দেখানো হয়েছে। যদিও ব্লগটি এখন বন্ধ রয়েছে। সাইবারযোদ্ধারা বলেন, ‘নূরানী চাপা সমগ্র’ ব্লগ রাজীবের খুনের পর খোলা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জামায়াত-শিবির এই অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। ধর্ম নিয়ে এমন মিথ্যাচার ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে ১২টি ব্লগ ও ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসির সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে বিশেষ টিম (বিডি-সিএসআইআরটি)।

সাইবারযোদ্ধারা মঙ্গলবার সারা দিন অসংখ্য পোস্ট দিয়েছেন। তাদের এই পোস্ট ৭৩ হাজার ৮১৩ জন লাইক দিয়েছে। তারা পোস্টে লিখেছেন, আমরা তরুণ প্রজন্ম এখন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে আছি। সর্বজনীন এ সংগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার কারণেই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আজ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কয়েকটি গণমাধ্যম বাদে শুরু থেকেই আমাদের এই সংগ্রামে আপনাদের আমরা পাশেই পেয়েছি। মুক্তি ও লড়াইয়ে আপনাদের আমরা সহযোদ্ধা হিসেবেই বিবেচনা করছি। আপনারা অবশ্যই জানেন, আমাদের এ আন্দোলনের অন্যতম শপথ ছিল যে যার অবস্থান থেকে জামায়াত-শিবির মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত সব প্রতিষ্ঠান বয়কট করা।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম আমাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তারা টাকার জন্য জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ছেপে যাচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে টানা ২২ দিন ধরে আন্দোলনে আছি। আমাদের আহ্বানকে কোনভাবেই ছোট করে না দেখে এর একটা মূল্যায়ন করা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা এ বিষয়টির কোন প্রতিফলন পাচ্ছি না। মঙ্গলবারও বেশ কয়েকটি পত্রিকার পাতাজুড়ে জামায়াতী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল বিজ্ঞাপন আমাদের হৃদয়ে বিশাল ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া, আগেও লক্ষ্য করেছি গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীর খবর দেখতে হয় জামায়াতী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে। এ কেমন খেলা, ধরি মাছ-না ছুঁই পানির মতো শপথ? আমরা জানি একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে অর্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত সামান্য অর্থের জন্য জামায়াতী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের প্রচারের মতো মানসিক সঙ্কীর্ণতা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনের সঙ্গে আপনারা একাত্মতা পোষণ করলে এইটুকু ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ত্যাগ আপনাদের মেনে নিতেই হবে। আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা জামায়াত-শিবিরের সব প্রতিষ্ঠান যে যার অবস্থান থেকে বয়কট করে এদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিন। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে।

স্বাধীন দেশে যারা এখনও পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়, জাতীয় পতাকা পোড়ায়, শহীদ মিনার ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়, মসজিদের জায়নামাজ পুড়িয়ে বিক্ষোভ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করে তাদের বয়কট না করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। এরপরও কি এদের বাংলার মাটিতে ঠাঁই দেয়া যায়? এদের গাড়িতে এই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেয়া যায়? বাংলার মুক্তবাতাসে এদের ঘুরে বেড়াতে দেয়া যায়? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন সাইবারযোদ্ধারা। বৃহত্তর জনস্বার্থে এবং সত্যিকার চেতনা থেকে যারা আপোসহীনভাবে আন্দোলন করছে এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করতে দিনরাত আন্দোলনে রয়েছিÑ এখন আমাদের অবস্থান কোথায় গিযে দাঁড়ায় এটা একবার ভেবে দেখার জন্য প্রগতিশীল মিডিয়াগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

সাইবারযোদ্ধারা শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ পেজে আরও একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই পোস্টে বলা হয়েছে, মাত্র পাঁচ মাস আগের কথা। মিয়ানমারে এক রাখাইন মহিলা ধর্ষিত হলো। কে কাজটা করেছে তা আজও অস্পষ্ট। ছড়ানো হলো এটা মুসলিম রোহিঙ্গাদের কাজ। ওই রাতেই দশ রোহিঙ্গার লাশ পড়ল। ছড়িয়ে পড়ল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আরও হাজার হাজার লাশ পড়ল। আড়াই হাজার বাড়ি পুড়ল। রোহিঙ্গাদের পুড়ল দেড় হাজারের বেশি বাড়িঘর আর রাখাইনদের হাজারখানেক। পাঁচ মাস পর ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব নামের এক সাইবারযোদ্ধা খুন হলেন বাংলাদেশে। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের তীর জামায়াত-শিবিরের দিকে। নিমেষে চারদিকে ছড়ানো হলো রাজীবের তথাকথিত ধর্মবিদ্বেষী কার্যকলাপ। গ্রামগঞ্জে ছড়ানো হলো রাজীবরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহবাগ আন্দোলনে এবং শাহবাগ আন্দোলন হলো ইসলামের বিরুদ্ধের আন্দোলন। উস্কানি দিল কিছু দেশদ্রোহী মিডিয়া। ফলাফল বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে গেছে। দুটো ঘটনাকে এক সূত্রে বাঁধতে বাধ্য করছে দেশ দুটির ভৌগোলিক অবস্থান। এই এলাকাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে গোটা এশিয়ায় কর্তৃত্ব করা সম্ভব। কার কার লাভ এতে তা বোঝা খুব একটা কষ্টকর নয়। এ কারণেই বেছে নেয়া হয়েছিল রাখাইন-রোহিঙ্গা বিরোধ। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। বেছে নেয়া হলো আস্তিকতা নাস্তিকতার বিরোধ। এই এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগালে ফায়দা কার? বর্মা সরকারকে যারা পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল সেই দেশটার? নাকি বাংলাদেশের সেই পুরনো শত্রুদের? না চাইলেও প্রশ্নগুলো চলে আসে মাঝে মাঝে। মাঝে মাঝেই মনে হয় আমরা নিজেদের অজান্তেই কারও ড্রামের তালে নেচে চলেছি। তাদের সঙ্গে আছে কিছু এ দেশীয় দালাল। যেভাবে নাচাচ্ছে সেভাবে নাচছি।

সাইবারযোদ্ধারা পোস্ট দিয়েছেন, তরুণদের আন্দোলনের ফলে জামায়াতী একটি প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের টাকা তোলার হিড়িক ও বিভিন্ন স্থানে হামলা হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলসি নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই পরিস্থিতিতে অস্তিত্ব রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চেয়েছে ৩০ বছর পুরনো ইসলামী ব্যাংক, জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ ওঠায় যে ব্যাংকের ওপর নজর রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থেকে আন্দোলনের সূচনা পর্বে দাবি ওঠে, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক এই জঙ্গী অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে কোনরূপ সহায়তা করে তবে সেটা অবশ্যই তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। এই প্রতারণা তরুণরা কখনই মেনে নিবে না।

সাইবারযোদ্ধারা জামায়াত-শিবিরের যেসব প্রতিষ্ঠান বর্জন করার আহ্বান জানান, তা হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামিক ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, দিগন্ত টেলিভিশন, সোনার বাংলা অনলাইন, ফোকাস, রেটিনা, কনক্রিট, এক্সিলেন্ট, প্রবাহ, অপটিমাম, সৃষ্টি কোচিং সেন্টার, সাকসেস, রেডিয়াম, ইনডেক্স, ইবনেসিনা হাসপাতাল, ইবনেসিনা ডায়াগনিস্টিক সেন্টার, ইবনেসিনা ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিক্যাল ট্রাস্ট। কেয়ারি সিন্দবাদ, মেট্রো শপিং সেন্টার, কোরাল রিপ, মিশন ডেভেলপারস, ইন্টিমেন্ট হাউজিং, সোনারগাঁও হাউজিং, লালমাটিয়া হাউজিং, সিলভার ভিলেজ হাউজিং, ওয়ান সিটি ও অবসর সিটি, গ্রীনলাইন, পাঞ্জেরী, আবাবিল, অনাবিল ও ছালছাবিল সার্ভিস, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি, এশিয়া ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ টেকনোলজি কলেজ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি ও লাইসিয়াম কিল্ডারগার্ডেন, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কোরাল রিফ মিশন ডেভেলপারস, আবাসন সিটি, লালমাটিয়া হাউজিং ও ওয়ান সিটি, সিলভার ভিলেজ হাউজিং।

সাইবারযোদ্ধারা আরেকটি পোস্টে লিখেছেন শাহবাগের আন্দোলন শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্যই। এ আন্দোলনের সঙ্গে ধর্ম বা অন্য কিছুর সম্পর্ক নাই, শুধু এটুকু বললেই হবে না, শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস ও ধর্ম নিয়ে তাদের লেখালেখির বিষয়টি ক্ল্যারিফাই (পরিষ্কার) করতে হবে... আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বদান-কারীদের বিপক্ষে নাস্তিকতার যে অভিযোগ উঠেছে, তা এখনও প্রমাণিত নয়। এই প্রসঙ্গে একটি পত্রিকার সম্পাদকের বক্তব্য ‘পাবলিক পারসেপশনকেও মূল্য দিতে হবে এভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানাবিধ (কু)কায়দায় শাহবাগের নবজাগরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন টকশোর এই গ্রেট হিরো। গত দুদিনে তাঁর মতো সুশীল সমাজের একটি অংশ একই রকম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মহান সুশীলদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, এ ধরনের কথা বলার আগে পারলে এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিন, ছেঁড়া হয়েছে জাতীয় পতাকা, ভেঙ্গেছে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শহীদ মিনার। ইসলামী ব্যাংকের রংপুর শাখায় ঘর পরিষ্কার করা ঝাড়ুর এক মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে রাখার ছবিও এসেছে। এ নিয়ে সুশীলদের গলা এত নরম কেন? স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে লাল-সবুজ পতাকার এমন অবমাননা দেখেও আপনারা বরফ শীতল কেন? পিপল পারসপেশন কি বলে? দেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির দায় কার? শহবাগ নবজাগরণ চত্বরের, নাকি যুদ্ধপাপীদের? ২২ দিন ধরে লাখ লাখ মানুষ এসেছে শাহবাগে। একটি ফুলের পাপড়ি পর্যন্ত কেউ ছেঁড়েনি। আর এদের বিপক্ষে উন্মাদনা সৃষ্টির অভিযোগ তোলা হাস্যকর। ভাষা আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় উন্মাদনা কারা সৃষ্টি করে আসছে- তা আপনাদের মতো জ্ঞানপাপিরা জানেন। শাহবাগ চত্বরে টানা ২২ দিন, ঘণ্টার হিসেবে ৫ শতাধিক ঘণ্টা মানুষ এসেছে। কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করার পরও শত শত মানুষ শাহবাগেই থেকে যায়। জনগণের পবিত্র স্থানে গিয়ে নামাজ পড়ার অসুবিধা সৃষ্টি না করে ওই জামায়াতীদের ২২ দিন নয়, কোন খোলা জায়গায় টানা ২২ ঘণ্টা কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতে বলেন দেখি? দেখেন কয়টা মানুষ যায়? জনগণের ওপর আস্থা থাকলে কোন খোলা জায়গায় একটা দিন প্রোগ্রাম করতে বলেন। দেখি কেমন সৎসাহস! নাকি বাংলাদেশের সব মসজিদের লিজ আপনারা জামায়াতীদের হাতে তুলে দিয়েছেন! আপনারাই তো জাতির অভিভাবক কি-না? বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান জামায়াতকে অপছন্দ করেন, এটাও মনে হয় আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়? যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তাঁর অসংখ্য ওয়াজে হাজারবার শহীদ জননী জাহানারা ঈমামকে সম্বোধন করেছেন ‘জাহান্নামের ঈমাম’ বলে, এর প্রতিবাদ করে আপনারা একটা কথাও কোনদিন বলেছেন? আচ্ছা গত শুক্রবার জামায়াত-শিবিরের তত্ত্বাবধানে যে গোলযোগ হলো, সেখানে কমপক্ষে তিন ভাগের একভাগ ছিল যারা ১২ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোর। জিহাদের নামে এই যে শিশুদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে এটাকে কি আপনাদের চোখে পারর্ভাসন বিকৃতি কিংবা বিকারগ্রস্ত মনে হয় না? এ নিয়ে কি একটা টুঁ শব্দও করেছেন?

কাউকে মেরে ফেলার পর নাস্তিক প্রচারের উদ্দেশ্য কি? গত ৫-৭ বছর ধরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে অনলাইন যুদ্ধ করে আসছেন অনেকেই। ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার বিপক্ষে আমাদের দেশে যে প্রচলিত আইন আছে, সে পথে না গিয়ে ব্যাপক উস্কানিমূলক কর্মকা- করার উদ্দেশ্য কি? সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানী ভূত যাদের মাথায়, তারা সব অপকর্ম করেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে। এবারে যুদ্ধপাপীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে যখন পুরো বাংলাদেশ প্রকম্পিত তখন আবারও সেই ধর্মের দোহাই দেয়া হচ্ছে। আর সেই চক্রটিই করছে যাদের বুকের মধ্যে বাংলাদেশ নেই, আছে বিশ্বসভ্যতার অচল, নষ্ট এক দেশ পাকিস্তান। সুশীল সমাজের সাহেবরা বলেন, পিপলস পারসেপশন কি বলে? এটা কি ধর্মকে আশ্রয় করে গোলমাল বাধিয়ে জামায়াত-শিবিরের ঘোলা পানিতে মাছ শিকার নয়?

বিষয়: বিবিধ

১৮২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File