ছেলের লাশ কাঁধে উঠানো বাবাটিকে দেখ, কি শান্ত আর সাহসী সে...!
লিখেছেন লিখেছেন হরবোলা ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪১:৫৯ রাত
৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবার মরদেহ কাঁধে নেয়ার কথা ছিল ৪০ বছর বয়সী ছেলে সালেহ'র। কিন্তু বিধিবাম, আজ বৃদ্ধ বাবাটিকেই নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়ে কবরে শোয়াতে হবে। এ বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। নিজের যৌবনের হাতে জন্ম থেকে বড় করে তোলা সন্তানটিকে আজ ৭৫ বছর বয়সী দুর্বল হাতে মাটি দিয়ে আসতে হবে। শহীদের পিতা হামিদ আলী এ কাজটিই করবেন।
সন্তানটির স্বাভাবিক মৃত্যু হলে হয়তো কিছুটা মেনে নিতে পারতেন পিতা। কিন্তু রাস্তায় রক্ত ঝরতে ঝরতে এমন করুণ মৃত্যু বুঝি বাবার বুকটা তছনছ করে দিয়ে গেল। এ পিতাটি দেখল-সে এমন এক রষ্ট্রের বাসিন্দা যে রাষ্ট্র নিজে মানুষ খুন করে। রক্ত ঝরিয়ে উল্লাস করে। শুধু উল্লাসেই থেমে থাকে না লাশ নিয়েও রাজনীতি করে!
লাশটা কাঁধে নিয়ে মাঠে নামাতে নামাতে ওদরের সন্তান সালেহ এর সাথে হয়তো কথা হবে পিতাটির। ছেলেটি হয়তো-বাবাকে বলে যাবে, দু:খ করো না দেখা হবে জান্নাতে। সে সান্তনায় মন গলতেও পারে পিতার।
কিন্তু আমাদের মনতো গলবে সে দিনই, যেদিন শহীদ সালেহ'র অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন হবে। ইসলামি হুকুমাত এ দেশে প্রতিষ্ঠা পাবে। আমরা যেদিন আমার ভাইদের খুনীদের বদলা নেব সে দিনই কেবল তাদের আত্মা শান্তি পাবে। হয়তো সালেহ ভাইদের পিতাদের মুখে অজান্তেই হাসি ফুটবে সেদিন...
যে বাবা ছেলের লাশ কাঁধে নিয়ে তকে কবরে শোয়াবে দেক সে কি শান্ত আর সাহসী
ছেলের লাশ কাঁধে নেয়ার কষ্ট সইবেন কিভাবে হামিদ আলী
ছেলের দেওয়া শেষ গোসলে ছেলের কাঁধে ভর করেই কবরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হবে না। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ছেলের লাশই আমার কাঁধে নিতে হচ্ছে।
কথাগুলো বলছিলেন শুক্রবার জুমার নামাজের পর কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহা ফজুর পাড়ার বাসিন্দা হামিদ আলী (৭৫)।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাচঁটার সময় নিজ বাড়িতে এ কথাগুলো বলার সময় বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
হামিদ আলী বলেন, “আমার ছেলে আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন। জালিম সরকারের কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাইব না। শেষ বিচারের বিচারক আল্লাহর কাছেই ছেলে হত্যার বিচার চাই।”
সূত্রে প্রকাশ, হামিদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ ছালেহ দীর্ঘ দিন থেকেই কক্সবাজার শহরে একটি স্টেশনারীর দোকানে চাকরি করে আসছিলেন। জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় কর্মী হলেও কোন দিনই কারো সাথে ঝগড়া করেননি। শান্তশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবেই অধিক পরিচিত তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিজ গ্রাম ফজুর পাড়ার ছড়িয়ে পড়লে মোকের মাতম শুরু হয় পুরো গ্রামে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গ্রামবাসী। তারা বিকাল চারটার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হাসমত আলী সিকদারের দোকান এলাকায় সড়কে গাছের গুড়ি ও গাছের গুড়িতে আগুন দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে সড়কের উভয় পার্শ্বেই শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন সিদ্দিকী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাঈল পিপিএমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সড়কের অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নিহতের ভাতিজা ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “আমার চাচার সাথে গত শনিবারে আমার দেখা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন দেশের অবস্থা ভাল নয়। সাঈদী সাহেবসহ বড় বড় আলেমদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমার ইচ্ছা যদি ফজুর পাড়া থেকে কেহ শহীদ হয় তাহলে আল্লাহ যেন আমাকেই কবুল করেন। আল্লাহ তাকে কবুল করেছে”- এ কথাগুলো বলে অঝরে কাদঁছিলেন মাহমুদুল হক।
মাহমুদুল হক জানান, নিহত মোহাম্মদ ছালেহ আহমদরা চার ভাই্ তিন বোন । ভাইদের মধ্যে ছালেহ আহমদই বড়। ছালেহ আহমদের স্ত্রী, দুই ছেলে ও এ মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ রিদুয়ান বলেন, “বাবা রবিবারে বাড়ি থেকে কক্সবাজারে গেছে। আসার সময় আমাদের জন্য স্কুল ব্যাগ ও জুতা আনার কথা ছিল।”
ছালেহ আহমদের বাড়ির উঠানে মানুষের ভীড় দেখে ছোট বোন বেবী আক্তার বিলাপ করে কাদঁতে কাদঁতে বলছিলেন, “সবাই আছে কিন্তু আমার ভাই কই আমার ভাই কবে আসবে।”
স্থানীয় জামায়াত নেতা মাওলানা নুর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের জানান, “কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ ছালেহ জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি এলাকায় একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।”
বিষয়: বিবিধ
১৪২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন