পাঞ্জাবী, টুপি ও শাহবাগ
লিখেছেন লিখেছেন সূর্যদীঘল ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৭:৫৯ রাত
শাওন ও জাহিদ বাল্যকালের বন্ধু ।একি মাদরাসায় লেখাপড়া শৈশব কৈশোর পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ও কাকতালীয় ভাবে একি বিভাগে চান্স পেয়ে যায়। শাওন ইদানিং খুব ভয় পায় রাস্তায় চলাফেরা করতে ।সুন্নতি পোশাক ধারণ করা এখন খুব বিপদজনক, কখন কে শিবির বলে মেরে বসে ২/১ঘা তাতো বলা জায়না!জাহিদ কেউ সাবধান থাকতে বলে শাওন । যদি ও তারা কখনই কোন প্রকার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলনা,তারা ছিল সমাজের আর ১০ টা ছেলের মধ্যে অনেক বেশি নিরিহ ও শান্ত প্রকিতির ।চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। সবচে বড় সমস্যা হয়েছিলো ঢাকায় থাকা নিয়ে ।মেধা তালিকায় অনেক আগেই সিট পেলেও নিজেদের পাঞ্জাবী টুপির জন্য ছাত্র লীগের ক্যাডারদের ভয়ে ভীত থাকতো সবসময়। একদিন ওদেরকে হালকা পিটানি দিয়ে হল থেকে বের করে দিলো লীগের ক্যাডার রা । মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । এরপর থেকে আর ভার্সিটির পরিবেশের সাথে নিজেকে স্বাভাবিকভাবে আর মানিয়ে নিতে পারেনা শাওন ,জাহিদ সবসময় পাশে থাকে এই জন্যই কিছুটা মানসিক শান্তি থাকে।
কয়দিন যাবত শাহবাগের পরিস্থিতি দেখে শাওন আর ঘাবড়ে যায়,একবার ভাবে ভার্সিটি তে না যায়, না গেলেও যে হয়না ,পরীক্ষা চলছে যে!
এক পরীক্ষার দিন খুব সকালে শাওন আর জাহিদ ভার্সিটি তে চলে আসে, উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ পড়া রিভিশন দেওয়া । সূর্যসেন হলের মসজিদে যেয়ে বসে পড়া শুরু করে। একটু পরে ঝাঁকড়া চুলের এক লোক পাশ থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে। চোখ নেশায় লাল হয়ে আছে,দেখেই বোঝা যায় বেশ খেয়ে এসেছে শাহবাগ থেকে।মাথায় জয় বাংলা লিখা কাপড় পেঁচানো । টুপি পড়া ২জন হুজুর কে দেখে মাথা গরম হয়ে যায় । ঝাঁকড়া চুল শাওনের দাঁড়ি মুঠ করে ধরে জিজ্ঞেস করে-কিরে রাজাকারের বাচ্চা রা! শাহবাগে গেছিলি?
শাওন বলে- না ভাই যেতে পারিনি, পরীক্ষা ছিল তো!
কি?তুই শাহবাগে যাস নাই? তারমানে তুই শিবিরের বাচ্চা ?দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
হুঙ্কার দিয়েই শাওনের গালে কশে ২/৩ টা চড় মারে মাতালটা ,আর জাহিদের মাথার টুপি কেঁড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে ।
শাওনঃ ভাই ,মাফ করে দেন আজকেই যাবো
এবার জাহিদের পালা,জাহিদের গলা চেপে বলে-বল তুই শিবির করছ না?
জাহিদ ককিয়ে উঠে , না ভাই আমি শিবির করিনা ভাই, আমি শুধু সুন্নত মানি ভাই আমাকে ছেড়ে দেন
উৎকট কণ্ঠে হেসে উঠে মাতালটা ঃ জানিস আমি কয়টা খুন করেছি? তোদের মতো রাজাকারদের খুন করতে আমার ভালোই লাগবে
জাহিদ আর শাওনের কলিজার পানি শুকিয়ে শেষ ।কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে- ভাই আমাদের মাফ কইরা দেন।
মাতালটা আবার শাওনের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়,গাল টিপ দিয়ে ধরে বলেঃ ভালো চাইলে ক্যাম্পাসে আর পাঞ্জাবী টুপি পইরা আসবিনা। যা ভাগ এখান থেকে।এই হলের ৪ সিমানায় যেন তোদের আর না দেখি
জাহিদ আর শাওন নরপশুটার হাত থেকে ছাড়া পেয়েই রুদ্ধ শ্বাসে দৌড় দেয়। জোহরের সময় নামাজে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায়, কারন এছাড়া ওদের আর কিছুই করার নেই।
এই বঙ্গ দেশে এক সময় ইংরেজরা দাঁড়ি রাখার উপর কর আরোপ করেছিল,নামাজি মুসলমানদের উপর অত্যাচার করা ছিল তাদের শখ । বর্তমান নাস্তিক বাম আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগরা কি সেই ইতিহাসের ই পুনরাবৃত্তি করতে চায়? শাওন ভাবে। কোন কুল পায়না ভেবে।কারন ইসলামকে ধ্বংসের জন্য ওরা মরিয়া ,সামনে শুধুই সীমাহীন আধার দেখতে পায়।
বিষয়: বিবিধ
১৯৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন