আমার এই পোস্টটা হল তরুণ আলেমদের জন্য
লিখেছেন লিখেছেন তালুকদার ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৪৭:০৯ রাত
শাহবাগ নাটকের শুরু থেকেই আমার স্ট্যাটাসে কমেন্ট দিয়ে এবং আলাদা স্ট্যাটাস দিয়ে অনেক তরুণ আলেম লিখছেন, জামায়াতের বন্দী নেতাদের ফাঁসি হলে পুরা ইসলামি শক্তি রাজাকার বদনাম থেকে মুক্তি পাবে। অতএব তাদের ফাঁসি হওয়াই সময়ের দাবী।
কেউ কেউ লিখেছেন, আমাদেরও শাহবাগ সমাবেশে জমায়েত হয়ে একাত্মতা ঘোষণা করা দরকার। কারণ আমরা ইসলামকে ভালবাসি ঠিক, কিন্তু জামায়াতকে ঘৃণা করি।
আবার কেউ লিখেছেন, ইসলাম তো কখনো ধর্ষক আর খুনির পক্ষ নিতে পারে না। ঐ সব জামাইত্যা রাজাকার ছিল, তারা মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, খুন করেছে অসংখ্য মানুষকে। এদের পক্ষে নয়, বিপক্ষেই কথা বলতে হবে।
আমি আগেই বলেছি, এরা সবাই আমার মতই তরুণ। কারণ, আলেমদের মধ্যে ফেইসবুক ইউজ করেন বেশির ভাগ তরুণেরাই। আর এরা দুই ধারার আলেম। ১ কওমি মাদ্রাসার ২ সুন্নি স্লোগান ধারী বেরেলভি মতাদর্শী আলেম । কওমি মাদ্রাসা পড়ুয়া একজন আলেম হিসেবে আমার পর্যবেক্ষন হল, কওমি মাদ্রাসার যে সমস্ত ভাইয়েরা রাজনৈতিক সচেতন নন, এবং জামায়াত শিবির এর বিরোধিতা যাদেরকে মাওলানা ফরীদুদ্দিন মাসউদের মত অন্ধ করে দেয় নি কেবল তারাই এসব মন্তব্য করেন।
আমি জামায়াত অপছন্দ করি, কিন্তু ইসলামকে তো ভালবাসি। জামায়াত আর মাওলানা মওদুদী এর আদর্শের সাথে আমার আদর্শের সংঘাত আছে ঠিক, কিন্তু যাদেরকে অন্যায়ভাবে খুনী আর ধর্ষক সাজানো হচ্ছে আর যাচ্ছেতাই মামলা এবং রায় দেয়া হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়ার কথা কি ইসলামে নাই ? বর্তমান জালেম সরকারের হাতে এরা কি নিদারুণ জুলুমের অসহায় শিকার হচ্ছেন না? আরে ভাই, এরা তো মুসলমান। হাদিসের ভাষ্যমতে, এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের ছয়টি হক আছে, যার মধ্যে একটি হল 'দাওয়াতাল মজলুম' মানে মজলুমের আহবানে সাড়া দান। কই আমরা সাড়া দেব, আমরা তো আমাদের তৎপরতায় জালেমের হাতকে আরও শক্তিশালী করছি!! আমরা কি এ ব্যাপারটা নিয়ে গভীর চিন্তা করবো???
আরেকটা কথা, তাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, একটারও কোন উপযুক্ত প্রমাণ নেই যে সন্দেহাতীতভাবে তাদেরকে অপরাধী প্রমাণ করবে। আপনি যদি কুরান হাদিসের আলেম হয়ে থাকেন, তাহলে কি এটা আপনার জানা নেই যে একজন মানুষের অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যায় না, বরং তার প্রতি সুধারণা পোষণ করা একজন মুসলমান হিসেবে আপনার উপর ফরজ???
দ্বিতীয়তঃ যাদেরকে আজ খুনী আর ধর্ষক বলে অপবাদ লাগানো হচ্ছে , এরা সবাই একটা না একটা ইসলামি দলের কর্মি ছিলেন। কেউ ছিলেন তখন উদীয়মান ওয়ায়েজ। একজন আলেম হিসেবে আপনি কী করে এ ধারণা পোষণ করতে পারেন যে, তারা খুন আর ধর্ষণের মত জঘন্য গুনাহ করেছে? তারা যদি করেই থাকত, তাহলে তো যুদ্ধের পরপরই তারা সমাজের চোখে জঘন্য হতেন, তারা কী করে এত বড় ওয়ায়েজ হয়?? সাইদি তো তখন কোন দলের নেতা ছিলেন না, ছিল না তার কোন পাওয়ার বা জনশক্তি !! সাইদি সাহবের বিরুদ্ধে কি তখন একটা মানুষ বলার ছিল না যে , সে তো খুনী, ধর্ষক!! তার আবার ওয়াজ শুনবেন কী? চিন্তা করুন, একজন ওয়ায়েজ এর বিরুদ্ধে এরকম ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ আওয়াজ ও যদি উঠত, তাহলে কি তার পক্ষে আর দেশ বিদেশে মাহফিল করে বেড়ানো সম্ভব হতো??? সাইদি সাহেব নিজেও চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, কেউই তো জবাব দেন নি!!!
আজ যখন কাদের মুল্লার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলে, কেউ এটাকে আমলে নেয়ার গরজ বোধ করছে না। এরা যদি প্রকৃতই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হত, তাহলে তো আর সব রেখে এটাকেই জোর দিত। এ থেকেও কি প্রমাণ হয় না, এদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটা বাহানা মাত্র, এদের আসল টার্গেট হল ঐ সব লোক, যারা ইসলামের আদর্শের কথা বলে? আজ যদি এদের ফাঁসিতে খুশী হন, জেনে রাখুন, ফাঁসির দড়ির পরবর্তী টার্গেট আপনি আমি বা আমাদের হুজুররা !!
ফেইসবুকে দিয়েছিলাম। এই লিঙ্ক http://www.facebook.com/mahbubtalukdar/posts/2875374859509?comment_id=2601663
বিষয়: রাজনীতি
১২৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন