একাত্তরের পূর্বে পাকিস্তান আর পরে ভারত, একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।
লিখেছেন লিখেছেন রফছান খান ১৮ মার্চ, ২০১৫, ০৮:২৬:০৭ রাত
মূল কথায় যাওয়ার আগে কয়েকটি ব্যাপার দেখে নিই।
বাংলাদেশের সাথে কোনরকম আলোচনা ছাড়ায়
ভারত সরকার এদেশের নদীগুলোর মুখে একের পর এক
বাঁধ দিয়ে চলেছে। গঙ্গার ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার
গজলডোবা বাঁধ, মনু নদীতে নলকথা বাঁধ, খোয়াই
নদীতে চামকঘাট বাঁধ, গোমতি নদীতে মহারানী বাঁধ,
মুহুরী নদীতে কলস বাঁধ, সহ মহানন্দা নদী ও কোদলা
নদীতে যে বাঁধগুলো দেওয়া হয়েছে তার সবগুলোই
জাতিসংঘের আইন বিরোধী।নদী ব্যবহার করা
প্রতিটি মানুষের ঐতিহাসিক অধিকার।জাতিসংঘের
১৯৯৭ সালের সনদ অনুযায়ী প্রতিটি নদীর ঐতিহাসিক
প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে কিন্তু ভারত তা মোটেও
করছে না।ভারতীয় এসকল বাঁধের কারনে বাংলাদেশ
দুই ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শুষ্ক মওসুমে তারা
বাঁধগুলো বন্ধ রেখে পানির নায্য হিস্যা থেকে
আমাদেরকে বঞ্চিত করছে ফলে ফসল ফলাতে
আমাদের কৃষকেরা ব্যর্থ হচ্ছে আর বর্ষায় বাঁধ উন্মুক্ত
করে কোটি কোটি টাকার ফসলসহ আবাদি জমি নদীর
গর্ভে হারাতে বাধ্য করছে প্রতিবেশী এ রাষ্ট্র।
ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশের সাধারণ কৃষকদের
মাতাল বিএসএফ কতৃক যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে এত
নির্দয়ভাবে পশুপাখিকেও হত্যা করা হয় না। অস্ত্র
দিয়ে গুলি ছুঁড়বে না বলে যখন ভারত কথা দিল তখন
হত্যার বীভৎসতা আরো ভয়াবহ আঁকার ধারন করেছে।
লেকে গোসল করতে থাকা ১৫ বছরের ছেলেকে
স্পীডবোডের প্রোপেল দিয়ে হত্যা করা, গরু চোরের
অপরাধে ১৬ বছরের দুই ছেলেকে সরাসরি পাথর ছুঁড়ে
হত্যা করা, নিজ ক্ষেতে ফসল তোলার অপরাধে ২০
বছরের ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে
হত্যা করা সহ জমিতে চাষ করতে না দেওয়া, জমি
থেকে ফসল তুলে নিয়ে যাওয়া, রাতের অন্ধকারে
উল্লাস করতে করতে ফসল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া,
আর স্থানীয় ভারতীয় খাসিয়াদের বাংলাদেশের
জমিতে এনে চাষ করানো, ইত্যাদির মত নির্মম
অত্যাচারগুলো তারা প্রতিনিয়ত করেই চলেছে। এর
বাইরে সীমান্তে অবৈধভাবে বাংলাদেশের কয়েক
হাত ভিতরে ঢুকে জমিতে বেড়া নির্মাণ করছে তারা।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের দেশে
প্রচার পার্লামেন্টে আইন পাশ করে নিষিদ্ধ করা
হয়েছে। অথচ ভারতীয় চ্যানেলগুলোর আগ্রাসনে এ
দেশের সংস্কৃতি আর ভাষা নির্জনগুহা পানে আশ্রয়
নিতে বসেছে। আধুনিক ছেলেমেয়েরা বাংলার
চেয়ে হিন্দিতে কথা বলে বেশী আনন্দ পায়।
আমাদের পোষাক, সংস্কৃতি, নারীদের প্রতি
আমাদের সম্মান, পারিবারিক মূল্যবোধ আজ যেন
রসাতলে যেতে বসেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার
বিনিময়ে তারা আমাদেরকে দিচ্ছে সমাজ আর
সংস্কৃতি বিধ্বংসী বস্তাপচা অনুষ্ঠান।কদিন আগে
ব্লগে এক ভাই লিখেছিলেন, আমাদের দেশে ঔষধ
কোম্পানীগুলোর বিজ্ঞাপন তৈরি করা নিষিদ্ধ।
এদিকে ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে বিরতিহীনভাবে
বাথ,গ্যাস্টিক,চুলকানি,জ্বর ঠান্ডার ঔষধের
বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।আর তা দেখে দেশীয়
ঔষধের প্রতি মানুষের চাহিদা দিনে দিনে কমছে আর
ভারতীয় ঔষধের প্রতি চাহিদা বাড়ছে। এমনো শুনা
যায় যে অনেক পরিবার কুরিয়ার মাধ্যমেও ভারতীয়
ঔষধ নিয়ে আসছে। অথচ বাংলাদেশের ঔষধগুলো
এতটাই মানসম্পন্ন যে ইউরোপের বিশাল বাজার দখল
করে আছে।
ভারত থেকে রাস্তা শুরু হয়ে সে একই রাস্তা
বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে আবার ভারতেই শেষ
হয়েছে। বাংলাদেশের এই পথ ব্যবহারের ফলে
ভারতের ৯০ ভাগ খরচ কম হয়।আর এর জন্য তারা কোন
ভর্তুকিই আমাদের দিচ্ছে না।আবার একই রাস্তা
বেশীরভাগ সময়ে আমাদের দেশ ব্যবহার করার সুযোগ
পাচ্ছে না।এই রাস্তা,কালভার্ট বানাতে আর উন্নয়নে
হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশকে গুনতে হচ্ছে।
আমি এতটাই পাগল আর স্বল্পজ্ঞানী যে এর নাম
কিভাবে ট্রানজিট হয় তা বুঝি না।বিশ্ববিদ্যালয়ে
অনেক বড় ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করেও
জেনেছি, ট্রানজিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের লাভ
কি তা কেউই তারা বুঝে উঠতে পারেন না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের
আইন অনুযায়ী দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় ভারতীয়
চলচ্চিত্র আমদানী বা প্রদর্শন করা যাবে না।অথচ
কিছু চলচ্চিত্র হর্তাকর্তার হাতের ফাঁক দিয়ে
এদেশের বাজারে ঢুকে গেছে ভারতীয় ছবি।গত পরশু
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর ঢাকার অধিকাংশ
সিনেমা হলগুলোর সামনে দেখছি ভারতীয় ছবির
ব্যানার।ভারতের দীর্ঘ্য ৩৮ বছর লেগেছে
বাংলাদেশের ছবির বাজার ধরতে।আর ইদানীং
সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি ঢাকার চলচ্চিত্রে ভারতীয়
শিল্পীদের অভিনয়।এটা কি আগ্রাসন নাকি
ফাঁকাবুলি তা প্রমান সাপেক্ষ।আমাদের দেশের
চলচ্চিত্রে ভারতীয় তারকারা অভিনয় করুক তাতে
সমস্যা নেই কিন্তু যে হারে করতে যাচ্ছে তাতে
আগ্রাসনই বলা চলে।ভারত-বাংলাদেশের যৌথ
প্রযোজনার একটা ছবি কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু
আমার কক্ষে এসে দেখছিল।তাতে কিছুক্ষণ চোখ
রেখেই বুঝতে পারলাম বাংলাদেশী থেকে ভারতীয়
অভিনেতাই বেশী।তাও আবার কোম গুরুত্বপূর্ণ
চরিত্রে; খলনায়ক কিংবা পার্শ্ব চরিত্রে।এভাবে
যৌথ প্রযোজনার নামে নাকের ডগায় মুলো ঝুলিয়ে
বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে তারা।
একসময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অহংকার
ছিল এস্কিউ,ক্রিস্টাল,মাস্টার্ড, হলিউড,
শান্তা,রোজ,ফরচুনা,ট্রাস্ট,স্টারলি,ইউনিয়িন
আজাক্স ইত্যাদি উন্নতমানের কারখানা।কিন্তু অতীব
দুঃখের বিষয় হল তারা আজ আর বাংলাদেশের
কারখানা নেই।নানা ছলে বলে কৌশলে এগুলো কিনে
নিয়েছে ভারতের কোম্পানীগুলো।আর এতে
সহযোগীতা করছে এ দেশে কাজ করতে আসা ভারত
বংশোদ্ভূত কানাডা, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের
নাগরিকরা।প্রথমে তারা কৌশলে শ্রমিক অসন্তোষ
লাগিয়ে এ কোম্পানিগুলোকে লোকশানে নিয়ে
গিয়েছে।তারপর উদ্ধারের নামে তা কিনে নিয়েছে।
আজ ভারত তো তাদের কোটা পূরণ করছেই পাশাপাশি
আমাদের দেশের কোটার সহযোগীতা নিয়ে তাদের
পোশাক আমদানী করছে।এতে বাংলাদেশের বড় সব
কোম্পানিগুলো কোটা পূরণ করার আগেই ভারত এসে
কোটা পূরণ করে ফেলছে।ফলে আমাদের কোটার
প্রকৃত লাভ আমরা তুলতে পারছি না।
আমাদের ইলিশ ছাড়া নাকি তাদের কোন অনুষ্ঠানই হয়
না তাই তারা সমুদ্র থেকেই ইলিশ কিনে নিচ্ছে।তারা
অবাধে আমাদের সীমান্তে প্রবেশ করে মাছ ধরছে।
চোরাই পথে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে
নিচ্ছে আর বিনিময়ে দিচ্ছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা।
তাদের দেশের সীমান্ত জুড়ে এ কারনেই গড়ে উঠেছে
প্রচুর ফেন্সিডিল কারখানা।সমুদ্র সন্ত্রাসে নতুন করে
যোগ হয়েছে তাদের জেলেদের অত্যাচার।আগে
লুকিয়ে লুকিয়ে তারা মাছ ধরত আর এখন আধুনিক
যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে প্রায়ই জোর করে মাছ ধরে
নিয়ে যাচ্ছে।এতে বাংলাদেশী জেলেরা প্রতিবাদ
করতে আসলে তাদের জেলে নেটওয়ার্ক একত্রিত হয়ে
আমাদের জেলেদের ধাওয়া করে আর এতে অনেকসময়
আমাদের জেলেরা সাগরে ডুবে মরে।
তাদের দাবী আমাদের দেশে তাদের
বিচ্ছিন্নবাদীরা ট্রেনিং নিচ্ছে।কোন প্রমাণ
ছাড়াই এমনটি বলছে তারা।অথচ তাদের দেশে
প্রকাশ্যে স্বাধীন বঙ্গভূমীর আন্দোলন চলছে,
স্বাধীন রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করছে
তারা।ভারত কি এগুলো নিয়ে কোন মাথা ঘামাচ্ছে ?
দেখেছেন কোন সংবাদে ?
এবার আসি বাকি কথায়,
অস্ত্র দিয়ে যারা সম্মুখযুদ্ধ করে তাদের আমরা
শত্রুপক্ষ বলি।যেমন ছিল ১৯৭১পূর্বে পাকিস্তান। এর
বাইরেও একরকম শত্রু রয়েছে যারা সুকৌশলে,বন্ধুত্
বের হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশের সম্পদ লুণ্ঠন
করছে,সংস্কৃতিকে আগ্রাসন করছে আর সম্মানে
আঘাত হানছে।স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই
আমাদের সাথে শত্রুতা করে আসছে ভারত।অদৃশ্য এ
শত্রুও কম ভয়ংকার নয়। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে
কলকাতার নায়ক দেবের বাংলাদেশের
সার্বভৌমত্বের প্রতি বিদ্রুপ, গুন্ডে মুভিতে
বাংলাদেশ সৃষ্টীর ইতিহাস বিকৃত,ক্রিকেট
কমেন্টেটর রমিজ রাজার কটুবাক্য আর মওকা মওকা
ভিডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের
অবস্থান আরো বেশী স্পষ্ট হয়েছে।
সময় এসেছে এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার, জবাব
দেওয়ার।ভবিষ্যতে যেন এ অবস্থা আরো বেশী
ভয়ানক না হয় তাই এখনি উচিত ভারতীয় পণ্য,সংস্কৃতি
বর্জন করা।তাদের পোশাক, টিভি চ্যানেল, তাদের
সিনেমা বর্জন করা।আমাদের উচিত এসবের বিরুদ্ধে
আমাদের কন্ঠস্বরগুলো একত্রিত করা।
স্ট্যাটাসটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বড় হয়ে গেল।তবুও
সবটুকু পড়ে যদি কারো অন্তরে চিন্তা সৃষ্টি করে
তবেই লেখাটি সার্থকতা পাবে।
সবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য রইল অনেক
অনেক দোয়া আর শুভেচ্ছা।হৃদয় নিঙড়ানো
ভালোবাসা তাঁদের জন্য,প্রিয় দেশের জন্য,দেশের
সকল মানুষের জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন